আমি ব্লগার না। আমি ব্লগারদের মতো সাজিয়ে-গুছিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে জানিনা। আমি একজন প্রবাসী শ্রমিক। আমি জানি কিভাবে পরিশ্রম করে, নিজের শরীরের রক্ত-মাংস পানি করে রোজগার করে উপার্জন করতে হয়। এবং করিও সেটা। কষ্টে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠায় বৈধ (ব্যাংক এর মাধ্যমে) নিয়মে। কারন আমি হুন্ডি ব্যাবহার করিনা। স্বল্প আয় করি। তবুও দেশে ফোন করার জন্য VOIP সিস্টেম (কম খরচ) ব্যাবহার করিনা। হুন্ডি ও VOIP call ২টায় আইনত অবৈধ। কারন আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমি আমার দেশের আইন ও বর্তমানে যেখানে অবস্থান করছি অই দেশের আইনকে সম্মান করি। আমি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও অক্ষুন্ন রাখতে চাই বিদেশীদের কাছে।
আজ থেকে ৩ বছর আগে আমি যখন প্রথম প্রবাসে আসি তখন আমি অনেক সমস্যার মধ্যে ছিলাম। যেই ভিসায় এসেছি অই ভিসাতে কাজ ছিলোনা বলে। প্রায় ১৪ মাসের মতো বেকার (মাঝে মাঝে ২-১দিন পেতাম) ছিলাম। তখনকার সময়ে এমনও এমন দিন কাটিয়েছি পুরো সপ্তাহে ২বেলা ভাত, ২-৩বেলা নাস্তা আর সাদা পানি পান করে জীবন অতিবাহিত করেছি।
কিন্তু আমাকে তো এই দেশের সরকার প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করেনি !!
এমন কি এখানকার পুলিশও ও কখনো আমার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকায়নি। কেন জানেন ?? কারন আমি আমার কর্মসংস্থানের বেদুইন নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করিনি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের গুদামে ডাকাতি করিনি।
বুঝে আসতেছে তো আমি কি বলতে চাচ্ছি ??
সম্প্রতি প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করা হয়েছে ৮জন বাংলাদেশী নাগরিক কে। তাদের অপরাধ ছিল তারা ২০০৭ সালে তাদের কর্মসংস্থান (বৈদ্যুতিক
সরঞ্জামের গুদাম) এ ডাকাতি করার চেষ্টা ও সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী (মিশরীয়) কে হত্যা করেছে। সৌদি আরবের প্রচলিত আইন নিয়ে কথা বলাটায় বেকার। কারন আমার লেখাতে তাদের কিচ্ছু হবেনা। আমি মানি তাদের বিচারব্যাবস্থা মধ্যযুগীয় ও বর্বর।
আমরা যে যেখানে থাকি (দেশে-বিদেশে)। সবাই নিজ নিজ
দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখি & রাখা উচিৎ। যদি আপনি একজন মানুষ হন তাহলে অবশ্যয় রাখবেন। আমরা বিদেশে শখ করে আসিনাই। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমান কর্মসংস্থান নেই বলে আমরা
বাধ্য হয়ে অন্যের গোলামী করার জন্য মা, বাবা, ভাই, বোন ছেড়ে দেশ ছেড়েছি। তারমানে হল আমাকে অবশ্যয় জাগ্রত থাকতে হবে। যাতে করে আমার দ্বারা এমন কোন কাজ সংগঠিত না হয়, যার কারনে আমার মা, বাবা কে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে হয়। আমার কাজের জন্য
সকল বাংলাদেশীদের মাথা নিচু করতে হয়।
সাজাপ্রাপ্ত ৮ বাংলাদেশী কি ঘটনারদিন রাতে সৌদি আরব গিয়েছিলো যে তারা ওখানকার আইনকানুন সম্পর্কে অজ্ঞ। বাংলাদেশে এমন মানুষ অনেক কম আছে যারা সৌদি আরবের কানুন সম্পর্কে জানেনা।
তারা কেমন মানুষ ছিল ?? যাদের নিজের দেশের অস্তিত্ব
রক্ষার চিন্তাতো ছিলইনা , এমনকি প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ হওয়ার ভয় ও ছিলোনা।
ঘটনা ঘটার পর সমস্ত পেপার-পত্রিকা/ ব্লগে দেশপ্রেম আর
মানবতার হিড়িক পরে গেছে। কেউ ব্যাস্ত সৌদিদের গোপন কিচ্ছা কাহিনী নিয়ে। কেউ ব্যাস্ত তাদের পুরাতন মন মানসিকতার বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে। গোপন কাহিনী কি আমাদের নেই ?? কোথায় ছিল মানবতা ?? যখন বাংলাদেশে প্রকাশ্যে কোন শিক্ষককে পিটিয়ে মারা হয়েছিলো ?? আপনারা মানবাধিকার কর্মীরা আগে কোথায় থাকেন ??
যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজের ছাত্রদেরকে নির্বিচারে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সাধারণ মানুষ নিজেদের দাবী আদায় করতে গিয়ে পুলিশের মার খেয়ে ঘরে ফিরে।
মানবাধিকার কর্মীরা তখন কেন সক্রিয় হয় যখন কোন অপরাধীর বিচার করা হয়। কোন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে ক্রস ফায়ারে
মারা হয় ??
মিশরের অই নাগরিককে কি আপনাদের কাছে মানবের মতো লাগেনি ?? যে নিজে ডাকাতি/মানুষ হত্যা না করে নিজের কাজ করতে গিয়ে জান দিয়েছে।
পৃথিবীকে এক চোখে দেখেন কেন ?? আর এক চোখা হয়ে যদি বেঁচে থাকতে হয় তাহলে ব্লগিং করে সময় নষ্ট না করলে পারেন। আপনার কাছে কি আমার এই প্রশ্নের উত্তর আছে ??
সৌদি আরবে যদি এক মিশরীয়কে হত্যার শাস্তিতে ৮ বাংলাদেশীকে শিরচ্ছেদ করার বদলে যদি এক বাংলাদেশীকে হত্যার শাস্তিতে ৮ মিশরীয় কে শিরচ্ছেদ করতো, তাহলে আপনি আপনার ব্লগ কিভাবে লিখতেন ??
আমাদের নিজেদের দোষে নিজেরাই ঘৃণিত। আমরা সমস্ত পৃথিবীকে
নিজের ঘরের মতো মনে করি। তাইতো তাশ খেলা নিয়ে ঝগড়া করে ভিনদেশে খুন করি আমার জাতি ভাইকে। যার কারনে অই দেশে অবস্থানরত হাজার হাজার বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
নতুন ভিসা বন্ধ করা করা হয়। পুরাতন ভিসার নবায়ন বন্ধ করা হয়। হাজার হাজার মানুষকে আবারো ঠেলে দেওয়া হয় দরিদ্রসীমার নিচে। মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী মানুষদের জন্য লজ্জা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় কোটিকোটি শান্তিপ্রিয় মানুষকে।
আপনারা যারা বর্তমানে অই ৮ অপরাধীর সাফায় গাইছেন। তাদের ৯০% ই দেশে থাকেন। তাইতো নিজের মনের মতো রাজনৈতিক মনোভাব ও নাস্তিক/আস্তিকের চিন্তা ভাবনা নিয়ে লিখতে ব্যাস্ত। কখনো কি ভেবেছেন অই সকল প্রবাসীদের কথা। যারা দিনরাত/মানুষিক-অমানুষিক পরিশ্রম করে জিবিকা নির্বাহ করে, দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠায়।
আছেন তো ভাবের মধ্যে। ব্লগিং করতে তো আর পয়সা লাগেনা।
একবার এসে দেখুন বিদেশ। বুঝবেন ব্লগিং কারে বলে। যখন রাস্তায় নামবেন আপনাকে যখন খুনি বাঙালি বলে খেপাবে অন্য দেশিরা। জরুরী কাজে পুলিশের কাছে গেলে কপাল কুচকাবে বাংলাদেশী দেখে। তখন কেমন লাগবে ??
আর এই ব্যাপারটি নিয়ে তো আমাদের সরকার প্রধান দল ও বিরোধী দলের কোন বক্তব্য নেই। কেন নেই এটা নিয়ে লিখুন। আগে নিজেদেরকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করুন।
লোক দেখানো মানবতাবাদী না হয়ে সত্যিকারের দেশ প্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করুন...
(অনেক কষ্ট নিয়ে লিখাটা লিখলাম। কারন এতোসব সতর্কতা অবলম্বন করে বেঁচে থাকার পরেও যদি খুনি বাংলাদেশী বলে গালি শুনতে হয়, তাহলে আপনার ও কষ্ট হবে। এই ব্যাপারে লিখতে গেলে অনেক কথা এসে যাবে। যুক্তিতর্কের ও শেষ হবেনা। আমার আবার রাতে ডিউটি আছে। না হয় আরও একটু লিখতাম)