আজ থেকে প্রায় চার বছর আগের কোন এক স্বাভাবিক দুপুরের কথা। অফিসে বসে সহকর্মীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করছিলাম। তার কাছে থেকেই প্রথম শুনলাম যে, তার বন্ধুরা অনুবাদের মাধ্যমে বেশ টাকা উপার্জন করছে। ঢাকায় নাকি অফিসও নিয়েছে। আগ্রহ শুরু হলো সেখানেই।
ব্যাপারটা কী? ও কীভাবে?
অনলাইনে টাকার রোজগারের ইচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় সবারই হয়। কিন্তু সবাই হয়তো সে ব্যাপারে দক্ষ নন। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা গ্রাফিক্স –এর কাজ করতে হলে, সে ব্যাপারে বেশ খানিকটা মৌলিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতারও দরকার। তা না হলে, সে ভাবে কাজ না পেয়ে অনেকেরই হতাশ হবার সম্ভাবনা আছে (বা ইতোমধ্যেই হতাশ হয়েছেন)। আবার ডাটা এন্ট্রির মত কাজগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেমেন্ট পরিশ্রমের তুলনায় বেশ কম। এই সুযোগে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী লোক আমাদের না জানার সুযোগে অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে অনুবাদের মত তুলনামূলক কম জনপ্রিয় আউটসোর্সিং -এর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ নিজের ভাষা ও ইংরেজি জ্ঞান সম্পর্কে মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা ও চর্চা থাকলে যে কেউই কাজটি অল্প শ্রমে সহজে করতে পারেন।
অনুবাদ কী ও কেন?
খুব সহজে, বললে একভাষা থেকে অন্যভাষায় ভাবের রূপান্তরই অনুবাদ। একজন বাংলাভাষী হিসাবে আমাদের স্বাভাবিক ভাষার জোড়া ইংরেজি>বাংলা অথবা বাংলা>ইংরেজি। এছাড়াও অন্য ভাষাতে দক্ষতা থাকলেও সেটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অনুবাদ কেন করবে- এ প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগতে পারে। বিভিন্ন কারণেই নানারকম নথিপত্র, বই, চিঠি, নির্দেশিকা বা যেকোন রকম লিখিত ও কথিত ভাবেরই অনুবাদ করা দরকার পড়তে পারে। বিশ্বায়নের এই যুগে, বাজার সংস্কৃতির সাথে তাল রাখতে নিজ নিজ পণ্য ও সেবা পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের কাছে পৌছানো আজকালকার ব্যবসার উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তাই এই অনুবাদশিল্প।
কেমন উপার্জন?
বাপারটা আপেক্ষিক। আপনি যদি একটা পর্যায় পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে বিশ্বস্ত ক্লায়েন্ট জোগাড় করে ফেলতে পারেন, তাহলে ফুল-টাইম কাজ করা লাগতে পারে আপনার। সেক্ষেত্রে আপনার মাসে টাকা ১ থেকে ২ লাখের মত রোজগার হতে পারে।
![:-/](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_24.gif)
![:D](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_05.gif)
ক্লায়েন্ট ভেদে, অনুবাদের দর উৎস ভাষার শব্দ প্রতি ০.০২ ডলার থেকে ০.১০ ডলার বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। কিন্তু, ভারতীয়রা এই ক্ষেত্রে আগে থেকেই এগিয়ে এবং ওদের দরও খুব কম (এমন কি ৫০ পয়সারও কম) থাকায় বাংলাদেশিরা মার খেয়ে যাচ্ছে
![X(](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_17.gif)
![:|](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_18.gif)
(পাঠকের সম্ভাব্য কৌতুহল মেটাতে বলতে হচ্ছে, আমার নিজের পেশাগত ক্ষেত্র নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকি বলে, এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পার্ট-টাইম সময় দিতে পারি, এতে আমার মাসিক ১০-১৫ হাজার টাকার মত রোজগার হয়। তবে, পাঠকের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ এই ব্লগলেখক বর্তমানে করতে পারছেন না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত)
কী কী দরকার?
আগেই বলেছি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় মোটামুটি জ্ঞান থাকলে যে কেউই এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও, বিজয় ও অভ্রের ফন্টে দ্রুত বাংলা টাইপিং জানা থাকাটাও জরুরি। একটা জিনিষ মনে রাখা প্রয়োজন, এখানে উৎস ভাষার ওয়ার্ড/পিডিএফ ফাইলের ফরম্যাটিংও (ফন্ট-এর আকার, রং, ধরণ ইত্যাদি) অনুদিত ভাষায় একই থাকা চাই। বানানে হতে হবে একদম নির্ভুল।
অনুবাদের জন্য বেশ কিছু সফটওয়ার পাওয়া যায়, যেমন ট্রাডোজ ও ওয়ার্ডফাস্ট। এগুলো জোগাড় করেও শিখে ফেলতে পারেন।
ভবিষ্যত কেমন?
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। গুগল ট্রান্সলেটর হয়তো অনেকেই ব্যবহার করেছেন, আর এতে দেখেছেন যে, কোন কিছু অনুবাদ করতে দিলে সে উলটা পালটা ফলাফল দেয়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে গুগল ট্রান্সলেটর নির্ভুল অনুবাদ দিতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। সেক্ষেত্রে, মানবীয় অনুবাদের চাহিদা খুবই কমে আসবে। তবে, সেই দিন বেশ দূরে এখনও। তাই, দীর্ঘমেয়াদি কোন উপার্জন প্রক্রিয়া হিসাবে এটিকে গ্রহণ না করাই ভালো। তবে, যারা কাজ না পেয়ে একদম বসে আছেন, বা ছাত্র অথবা বাসার গৃহিনী, তাদের জন্য এই অনুবাদ ক্ষেত্রে বাড়তি একটা রোজগার পথ তো অবশ্যই খুলে দিতে পারে।
কী ভাবে শুরু করবেন?
গুগল!
গুগলে সার্চে লিখুন "English to bangla translation” অথবা প্রোজ.কম বা ট্রান্সলেটরস্ক্যাফে.কম ধরণের ওয়েবসাইটে প্রোফাইল খুলে একটু সময় নিয়ে ব্যাপারগুলো বুঝে, প্রফেশনাল বিড করা শুরু করুন।
ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে সফল তো হতেই হয়!
তো শুরু করে দিন এখনই!
![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)
বাংলাদেশি হিসাবে নিজে কাজ করুন- অন্যদের উৎসাহিত করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ২:২৬