মায়ের কোলে শুয়ে আমরা আধো বোলে কথা বলতে শুরু করি। আর চারপাশে চোখ বুলিয়ে শিখে নিয়েছি, পৃথিবীর আচরণবিধি। ধীরে ধীরে আকাশের মেঘেরা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আর আমাদের বয়স বাড়ে। আমরা শিখে নেই যতসব নিয়মকানুন, পৃথিবীতে টিকে থাকার। আমরা সংস্কৃতি বুঝি। আমাদের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি থাকে। সুন্দর এবং চেনা।
আজকের দিনে আমাদের জানার পরিধি স্যাটেলাইটের তরঙ্গ বেয়ে অনেকদূর চলে গেছে। আমরা জেনে গেছি, অনেক কিছু। কিন্তু আমরা এখনো ভালোমন্দ বুঝতে শিখিনি। যা আমাদের গেলানো হয়েছে, আমরা তা গিলেছি। আমাদের প্রতিবেশী আমাদের ঘরে দিয়ে গেছে, তাদের উচ্ছিষ্ট। আমরা দাঁত বের করে তা নিয়েছি। ভাবিনি, আমরা কি পাচ্ছি? আমাদের সন্তানেরা কি পাচ্ছে?
আমাদের আধুনিক নারীরা আজ বড় বেশি ব্যাস্ত সময় কাটান। সারাদিন সিরিয়ালে চোখ রেখে প্রতিজ্ঞা, গোপী বউদের কি পরিণতি হলো সেটা নিয়ে ভাবনার ভুবনে ডুবে যান। নিজেদের সংসারের খবর নেয়া হয়না।
সিরিয়ালে শিখে গেছেন, দজ্জাল শ্বাশুড়ীকে কিভাবে শিক্ষা দেওয়া যায়। তাই বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি ভুল করলে, তাকে সিরিয়ালে হতে শেখা শাস্তি দিতে বেশী দেরী হয়না। ননদকে শায়েস্তা করার উপায়ও বাতলে দিয়েছে, সিরিয়াল। সিরিয়ালময় সংসার চলবেই চলবে। সিরিয়াল দিয়েছে, নতুন ফ্যাশনের পোষাকের ধারনা। আধুনিক সময়ের সাথে তাল মেলাতে, তাই ফ্যাশনের অংশ হওয়া চাই। স্বামীকে টাকা কামাতে আরো বেশি বাধ্য করা হয়। কারন টাকা ছাড়া এই ফ্যাশনের সাথে তাল মেলানো বড় দায়। আগে দেখতাম বিভিন্ন উপলক্ষ্যে পোষাক কেনা হতো। আর আজ পোষাকের জন্য উপলক্ষ্য হলো, সিরিয়ালের নায়িকার পোষাক বদলানো। মানে ফ্যাশন বদলে গেলো, পোষাকও বদলে নাও। স্বামী বেচারার বেতন হলো কি? খেয়াল করে দেখবেন, আজকের দিনে সঞ্চয় করা হয়না। খরচের খাতায় হিসেব মিলিয়ে জমার খাতা শূন্য থাকে। আর রুচি? ওরা শিখিয়েছে নগ্নতাই রুচিবোধ।
নারীকে এখন আর পুরুষ দ্বারা শাসন করা যায়না( শাসন কি?)। তাদেরকে সন্তানের প্রতি নজর দিতে বলাতো যায়? নারীদের সামনে বসিয়ে টাকা কামানো বাণিজ্যিক চ্যানেলগুলো যে বোকা না। তারা তা প্রমান করে বাচ্চাদেরকেও, হিন্দি চ্যানেলে বসিয়ে দিয়েছে। ডোরেমন বিষ এখন প্রতিটি বাচ্চার শরীরে। সুকুমার রায়ের বইয়ের চেয়ে গাধাউদ্দিন ঘোষের লেখা "ডরেমনের সাথে একদিন" বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
তাই আসুন, বন্ধুগণ। আমরা এখন থেকে বাংলায় নয়, হিন্দিতে কথা বলি। বাংলা ভাষা আমাদের কি দিয়েছে?