সেপ্টেম্বরে বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা পেশের পরপরই সরাসরি পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ এ উদ্দেশ্যে আলবদরদের সুসংগঠিত করে তুলতে থাকে। এ সম্পর্কে নিউ এইজ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, আলবদর সংগঠনটি সম্পর্কে অতি সম্প্রতি কিছু জানা গেছে। রাজনৈতিক দিক থেকে এই সশস্ত্র দলটি প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দল জামাতে ইসলামীর দোসর। আলবদর বাহিনীর সদস্যদের (প্রধানত ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণরাই এর অন্তর্ভুক্ত) মাথায় এ কথাটাই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামী ও ভারতীয় চরদের দ্বারা ইসলাম বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিগত গ্রীষ্ম ও শরতে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত জনপ্রিয় গেরিলা তৎপরতা যখন চরমে পৌঁছে, তখন পাকিস্তানী জেনারেলরা স্থানীয় পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর শক্তি বাড়ানোর ব্যবস্থা নেন। রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে লেখা ছিল- পুলিশ বাহিনীকে উঠিয়ে নিতে হবে। আলবদরদের ব্যবহার করতে হবে। এদের অবশ্যই উন্নত অস্ত্র দিতে হবে।
আলবদর বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে আরেকটি দলিল দেয়া যেতে পারে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে ‘সম্পাদক সমীপেষু’ কলামে আব্দুল বারী নামে এক আলবদর কমান্ডারের এই চিঠিটি ছাপা হয় :
জনাব,
স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আলবদর বাহিনীর নাম আজ প্রদেশের প্রত্যন্ত প্রান্তরে পৌঁছে গেছে। গত ২৭ জুন জামালপুর মহকুমায় আলবদর বাহিনী গঠিত হবার পর আজ সমগ্র মোমেনশাহী জেলা ও প্রদেশের আরো দুয়েকটি জেলায় এর কাজ শুরু হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আলবদর বাহিনী পাকিস্তানবাদী ইসলামপন্থী দেশপ্রেমিক ছাত্রদের দ্বারা গঠিত। এতে ইস্কুলের ১২ বছরের ছেলে থেকে আরম্ভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র রয়েছে।
যতদূর জানা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে জামালপুর মহকুমাতেই পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৪০% থেকে ৫০% ছেলে পরীক্ষা দিয়েছে। জামালপুর মহকুমার শেরপুর, নলিতাবাড়ি, ইসলামপুর, দেওয়ান গঞ্জ ও জামালপুর শহরে দুষ্কৃতিকারীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।
জামালপুরের বিভিন্ন জায়গায় সীমান্তবর্তী এলাকায় আলবদর বাহিনী সাহসিকতা ও সাফল্যের সঙ্গে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের মোকাবেলা করেছে। আলবদর বাহিনীর তৎপরতা দেখে ভারতীয় অনুচর নাপাক বাহিনীর লোকেরা জামালপুর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে বলে ক্রমাগত সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আলবদর বাহিনীর বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি ছেলেই শিক্ষিত এবং নামাজ পড়ে। ধনসম্পদ ও নারীর প্রতি কোনো লোভ নেই। বদর বাহিনীর গত তিনমাসের কাজে কোনো চারিত্রিক দূর্বলতা দেখা যায়নি। এজন্যই জনগণের কাছে আশার আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের প্রিয় নাম আলবদর। জামালপুরে রেজাকার, পুলিশ, মুজাহিদ ও রেঞ্জাররা পুল ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাহারা দিচ্ছে আর পাক ফৌজ ও আলবদর বাহিনী অপারেশন করছে।
আমি পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক ইসলামপন্থী ছাত্রজনতার কাছে আহবান জানাচ্ছি সামরিক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও সাহায্য নিয়ে দ্রুত প্রদেশের সর্বত্র আলবদর বাহিনী গঠন করতে। বদর বাহিনী ছাড়া শুধু রেজাকার ও পুলিশ দিয়ে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি আয়ত্বে আনা সম্ভব নয়। আমাদের কাছে রেজাকার, বদর বাহিনী ও মুজাহিদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা সবাইকে মনে করি সমান। ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ও তার দালালদের শায়েস্তা করতে আজ তাই প্রদেশের সর্বত্র আলবদর বাহিনী গঠন করা প্রয়োজন।
দেশের বর্তমান নাজুক ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি আলবদর বাহিনী প্রদেশের সর্বত্র গঠিত হয় ততই দেশ ও জাতির মঙ্গল। আল্লাহ আমাদের তার পথে কাজ করা তৌফিক দান করুন। আমিন।
মোহাম্মদ আব্দুল বারী
ইনচার্জ, আলবদর ক্যাম্প, ইসলামপুর থানা, মোমেনশাহী
ও প্রচার সম্পাদক, জামালপুর মহকুমা শান্তি কমিটি
স্বাধীনতার পর এই আব্দুল বারীর ব্যক্তিগত ডায়েরিটি উদ্ধার করা হয়। ১৯৭২ সালের ১০ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকে মুদ্রিত ডায়েরির প্রধান বিবরণগুলি হচ্ছে :
টাঙ্গাইলে successful operation হয়েছে। হাজার দেড়েকের মতো মুক্তিফৌজ মারা পড়েছে আলবদর ও আর্মির হাতে।
1.Haidar Ali 2. Nazmul Haque. Rs 2500.00
তিতপল্লার শিমকুড়া গ্রাম- জব্বারের কাছে ২৯/১০/৭১ আর তিন হাজার নেওয়ার পরিকল্পনা আছে
24-10-71… … Prostitution Quarter
26-10-71… Raping Case… Hindu Girl
(চলবে)