অনুজপ্রতীম সাদিক মোহাম্মদ আলম জটিল একখানা পোস্ট ঝেড়েছেন। সামহোয়ারের এলিট ব্লগাররা পরস্পরের পিঠ চুলকানির জন্য একটি বৈঠকখানা খুলেছেন। বক্তব্য যেটুকু অনুধান করা গেলো, এইসব এলিট সেখানে লিখবেন, এখানে ভিন্ন নিকে এসে গালি দেবেন। বলিহারি যাই সাদিক মশাইরে বিশ্লেষণে।
সচলায়তন নামে যে বাংলা ব্লগটির কাজ চলছে (এখনো পরীক্ষমূলক পর্যায়েই আছে) সেটির স্বপ্নবীজ রোপন হয়েছিল বছরখানেক আগেই। সামহোয়ারে ভালো লেখকরা লিখতে পারছিলেন না (এখনো পারেন না), সবাই আমার মতো কাছা খুলে খিস্তি নিয়ে লড়ে যাওয়ার রুচি রাখেন না তাই। তারা যাতে স্বস্তিতে লিখতে পারেন, যুক্তি তর্কে মাততে পারেন- সেজন্যই বিকল্প একটি প্লাটফর্ম হিসেবে ভাবা হয়েছিল সচলায়তনের কথা। মজার ব্যাপার হলো এর উপজাত ক্ষেত্রগুলো ইতিমধ্যেই সক্রিয়। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আলাদা একটা বিভাগ রাখার চিন্তা ছিল (এখনো আছে), সেখানে জন্মযুদ্ধ এসেছে। সচলায়তনের সদস্যরাই নিজেদের উদ্যোগে বের করেছেন, কাজ করেছেন বীক্ষণ, হাজারদূয়ারী, শস্যপর্বের মতো চমকপ্রদ ওয়েবসাইট নিয়ে, এগুলোর প্রকাশনায়।
সামহোয়ারের সমস্যা কি? লেখার অনুকুল পরিবেশের অভাব। ধর্মবিরোধী পোস্ট আসলে অনেক ব্লগারই যুক্তি দিয়ে তা খণ্ডনের প্রয়াস নিয়েছেন, সেগুলো ব্যর্থ হয়নি কখনোই। গালাগালির ট্রেন্ডটা এসেছে রাজাকারদের কারণে। নব্য রাজাকার। যারা গোলাম আযম নিজামী মুজাহিদদের ৭১ কালীন বচনগুলো নতুন করে বলার ধৃষ্টতা দেখায়। তারা জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলে, জাতীয় পতাকার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে যায় আওয়ামী লীগ ও ভারতের দালাল। শালাদের গালি দিতেই তো সময় চলে যায়, সৃজনশীল লেখালেখির সময় কোথায়?
সাদিক যাদের এলিট ব্লগার বলেছেন সেই মূল্যায়নটা একেবারে ভুল নয়। সচলায়তনে তারাই লিখছেন যারা সামহোয়ারকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসার সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবীদার। এই মানুষগুলাই এখানে লেখালেখি বন্ধ করে দিলে জামাতি ম্যানিফেস্টোতে ভরে যাবে সামহোয়ার। একা রাগইমন তার বহুমাত্রিক প্রতিভা ও সাদিক তার সুফীবাদ নিয়ে খুব বেশী সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে হয় না।
আসি পিঠ চুলকানির কথায়। পিঠ চাপড়ানিটা সামহোয়ারেও আছে। ব্লগাররা লেখেনই এখানে উতসাহ পাওয়ার আশায়। সেটা পরিচিত, অপরিচিত যে জনই হোক। রেটিং সিস্টেমো একারণেই রাখা। এখন সাদিকের পোস্টে ত্রিভুজ আর ছাগুদল ছাড়া আর কারো পিঠ চাপড়ানি নেই সেটা সাদিকীয় ব্যর্থতা। ইসলামী ঐক্যজোটের দূর্বলতম সদস্যকে এটুকু সইতেই হবে।
সচলায়তন সামহোয়ারের বিকল্প নয়। সচলায়তনের সদস্যরা সামহোয়ারে ঠিকই লেখেন, লিখছেন। আমি আমার কথা বলতে পারি, আমি লিখছি। তবে সামহোয়ার কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই সুষ্ঠ লেখালেখির পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তাহলে সৃজনশীল লেখার জোয়ার বইবে এটুকু নিশ্চিত বলে দিতে পারি। আর এলিটরা এখানেও পিঠ চুলকাবেন, সচলায়তনেও। নখের চুলকানি আর খুড়ের চুলকানিতে যে পার্থক্য আছে, সাদিক সেটা শিগগির অনুভব করতে পারবেন আশা রাখি। খোদা তার মঙ্গল করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৪৯