কিন্তু কে শোনে! যাহোক, মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরের দলিলপত্রে পাওয়া গেছে একটি লিফলেট। এতে রাজাকার ও বদর বাহিনীর বাঙালীদের প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের তরফ থেকে যে ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা তুলে দিলাম :
সমগ্র বাঙ্গালীজাতি আজ মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছে। ঘৃণ্য পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাজিত নিশ্চিহ্ন করে মুক্ত করতে হবে সোনার বাংলাদেশ। তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ভাই, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করেছে বিজাতীয় পাকসেনারা, বাঙ্গালী মা-বোনদের উপরে এসকল দস্যুরা করেছে পাশবিক নির্মম অত্যাচার, শহরে ও গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় স্তুপীকৃত হয়েছে বাঙ্গালীর মৃতদেহ। ভাইসব, বাঙ্গালী হয়ে দেশের ও জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে তোমরা যোগ দিয়েছ বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে বিদেশী শাসক গোষ্ঠীর সাথে। শত্রুর পুতুল সেনা হয়ে নিজের জাতির এবং নিজের ভাই-বোনদের উপরে নির্যাতন মুখ বুজে মেনে নিতে এবং এই অন্যায় কার্যে শত্রুর সহায়তা করতে তোমাদের কি লজ্জা করে না?
পাকসেনারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসন বজায় রাখার জন্য তোমাদের বলির পাঠা বানিয়েছে। তোমার জীবনের বিনিময়ে তুমি তোমার আত্মীয় স্বজন ও স্বদেশবাসীর নিকট পাবে ধিক্কার, অপমান ও লাঞ্ছনা। তোমরা আমাদের ভাই, আমাদের জাতীয় স্বার্থ অভিন্ন। স্বেচ্ছায় তোমাদের অনেকেই হয়ত রাজাকার বা বদর হয়ে বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করনি। অবস্থার চাপে পড়েই হয়ত করতে হয়েছে।
তোমাদের নিকট একান্ত অনুরোধ, তোমরা শত্রুর চক্রান্ত বানচাল করে দাও। তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে নির্ভয়ে মুক্তি বাহিনীর নিকটস্থ শিবিরে চলে এসো। এ পর্যন্ত রাজাকার ও বদর বাহিনীর বহু বাঙ্গালী যুবক মুক্তি বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। তারা প্রত্যেকে পেয়েছে ক্ষমা এবং তাদের অনেকে আজ মুক্তি বাহিনীর বীর সৈনিক। তোমরাও মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের ও জনসাধারণের সেবা করে তোমাদের জীবন ধন্য কর। প্রতি সপ্তাহে দুই শতাধিক রাজাকার ও বদর অনর্থক প্রাণ হারাচ্ছে মুক্তিফৌজের হাতে শুধু এই রণাঙ্গনে। পেশাদার ঝানু দালালদের আমরা ক্ষমা করি না, কিন্তু যেসকল বাঙ্গালী যুবক অবস্থার চাপে পড়ে বা ভুলবশতঃ শত্রুর চক্রান্তে পড়ে রাজাকার বা বদর দলে যোগ দিয়েছে তারা আমাদের কাছে চলে এলে পাবে ক্ষমা, বিশ্বাস, উপযুক্ত সম্মান ও স্নেহ।
জয় আমাদের অনিবার্য্য। বাংলাদেশের সকল জনসাধারণ, সকল দেশপ্রেমিক ও সকল চিন্তাশীল নাগরিক আমাদের পক্ষে। বিশ্বের সকল সৎ ও ন্যায়বান মানুষ আমাদের পক্ষে, কারণ আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতিতের সংগ্রাম। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা ন্যায় ধর্মের পক্ষে। তিনিই আমাদের সহায়ক। লক্ষ লক্ষ শহীদের শক্তি আমাদের সহায়ক। ইনশাল্লাহ, বাঙ্গালী জাতি অচিরেই বিজয়ের, স্বাধীনতার ও গৌরবের অধিকারী হবে। এসো মুক্তির ও ন্যায়ের সংগ্রামে শরীক হয়ে তুমিও সেই গৌরবের অধিকারী হবে।
জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৮ ভোর ৬:২৭