somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দালাল আইন/ রাজাকারদেরক্ষমা : বঙ্গবন্ধুর কস্টলি ভুল 2

২৯ শে আগস্ট, ২০০৬ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[প্রথমভাগেই যথেষ্ট আভাস রয়েছে। মূল রচনাটাই শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক এক ভুল নিয়ে। এ নিয়ে আলোচনার মাঝখানেই একদল চেচাচ্ছেন তার বঙ্গবন্ধু উপাধি কেড়ে নেওয়ার জন্য। এখানে তারা ভুলে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু উপাধিটি তার স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে পাওয়া। একটি দেশকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখানো ও তা বাস্তবে পরিণত করার জন্যই তিনি শতাব্দীর কিংবা কারো মতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। তার শাসনকাল অবশ্যই বিতর্কিত। যা এক পর্যায়ে এনে দিয়েছে 15 আগস্টের মতো নির্মম পরিণতি। কোন প্রেক্ষাপটে তার কী সিদ্ধান্ত, কী রাজনীতি বা কূটনীতি ও স্বজনপ্রীতি কাজ করেছে- তার ব্যবচ্ছেদ এই রচনায় প্রাসঙ্গিক নয়। আমরা আলোচনা করছি সুনির্দিষ্ট দালাল আইনটি, তার ফাঁকফোকড় ও বঙ্গবন্ধ ুর ক্ষ মা প্রসঙ্গটি নিয়ে। এর পক্ষে-বিপক্ষে সুচিন্তিত যুক্তি নিয়ে আলোচনায় আসুন স্বাগতম। গালাগালির শখ হলে ব্লগের উপশিরোনামটা আবার পড়ে নেবেন। আর যদি মাথাগরম ও একপেশে আবেগ নিয়ে ঝাপান, তাহলেও ওই প্রাগুক্ত। এক্ষেত্রে ফলস নিক বা নকল আইডিদের প্রতি ব্যবহারটা একটু কটুই হবে। কারণ এই ব্লগে দীর্ঘ বিচরণের সুবাদে তাদের মন্তব্যের জন্য ব্যবহৃত আইডিগুলো আমার খুব চেনা। যখন নিজের নিকে বিতর্কে আসতে এত ভয়, তখন মন্তব্যগুলো খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে মুছে ফেলার অধিকার নিশ্চয়ই আমার থাকবে। শুধু একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, আমি মুজিববাদী ছাত্রলীগের দীর্ঘকালীন কর্মী- বলতে পারেন বঙ্গবন্ধুরে বাপ মানি। কিন্তু তারেও ছাইড়া কথা বলতেছি না এই পোস্টে ]

বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যার স্বাধীনতার এক দশক না পেরুতেই এর শাসনভার চলে গেছে একাত্তরের দালালদের হাতে। নয় মাসের দীর্ঘ যুদ্ধক্ষেত্রে সে অর্থে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাজ করেনি। কথিত আছে আওয়ামী লিগ নেতারা কলকাতায় গিয়ে ভারতীয় ভাতায় মৌজ ফুর্তি করেছেন। দেশে ফিরে এই মাঝারিপাল্লার নেতারাই কেউকেটা হয়ে নতুন দালালি নিয়েছেন। সেই দালালিটা একাত্তরের দালালদের বাঁচানোয় মধ্যস্ততার ভূমিকা পালনের। মুজিব যখনই তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়েছেন, তখন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের দোহাই দিয়ে তাকে নমনীয় হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। 18 ডিসেম্বর স্টেডিয়ামে কাদের সিদ্দিকীর দুষকৃতিকারী মুক্তিযোদ্ধা হত্যার (এব্যাপারে আগে পোস্ট দেওয়া হয়েছে) সরাসরি সমপ্রচার, দেশের বাইরে থাকা গোলাম আযম ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশের নেতিবাচক প্রচারণায় সফলভাবে ব্যবহার করে।
এবং সেই যুক্তি দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করা ও পাইকারী দালাল হত্যার মতো সিদ্ধান্তগুলো নিতে মুজিবকে প্ররোচিত করা হয়। এখানে বড় একটা ভূমিকা ছিল খন্দকার মোশতাক আহমেদের। আর অদ্ভুত এক কৌশলে নজরুল ইসলামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটা দূরত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছিল। যুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান নজরুল ইসলাম যখন বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই অপরাধীদের শাস্তির ঘোষনা দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের সব আয়োজন সেরে ফেলেছেন, তখন তাতে নানান খুত বের করে তা পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়।

মুজিবের কথা ও কাজে যে পরিবর্তন আসছে তার প্রথম প্রমাণ মেলে '72 সালের মাঝামাঝি। 6 মে আমেরিকান ব্রড কাস্টিং কর্পোরেশন (এবিসি)তে এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি অবশ্যই তাদের বিচার করব, এ ব্যাপারে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। যেখানে তারা ত্রিশ লাখ লোককে হত্যা করেছে সেখানে কোনো দেশ কী তাদের ছেড়ে দিতে পারে?' একই সাক্ষাৎকারে একই প্রসঙ্গে আবার নমনীয় এবং ভিন্ন সুর মুজিবের, 'দালালদের কেসগুলো একটি তদন্ত কমিশন কতর্ৃক বিবেচিত হবে। আমরা তদন্ত করছি এবং নির্দোষ লোকদের ছেড়ে দিচ্ছি। অবশ্য যারা অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী তাদেরকে নিশ্চিতভাবেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।' (আজাদ, 15 মে '72)

শেখ মুজিব ও তার সতীর্থরা যখন বক্তৃতাবাজি চালাচ্ছেন তখন অন্যদিকে চলছে দালালদের সুরক্ষার আয়োজন। চারদিক থেকে তখন সরব আওয়াজ উঠছে সংক্ষিপ্ত আদালত গঠন করে দ্রুত বিচারের। কিন্তু 24 জানুয়ারি সেসব দাবিকে উপেক্ষা করে জারি হলো 'বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) অধ্যাদেশ 1972'। অভিযুক্ত প্রমাণ হলে 2 বছর কারাবাস থেকে সর্বোচ্চ মৃতু্যদন্ড হলো শাস্তি। আসামীদের হাইকোর্টে আপিল করার সুযোগ থাকল, যদিও কেড়ে নেওয়া হলো অন্য কোনো আদালতে বিচার চাওয়ার অধিকার।

অনেক ফস্কা গেড়ো। সবচেয়ে বড় ছিল 7ম ধারাটি। বলা হয়েছে থানার ওসি যদি কোনো অপরাধকে অপরাধ না বলেন তবে অন্য কারো কথা বিশ্বাস করা হবে না, অন্য কারো অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার করা হবে না এই ট্রাইবুনালে। অন্য কোনো আদালতেও মামলা করা যাবে না। মামা বাড়ির আব্দার যাকে বলে আর কী! দালাল যারা তাদের তো অঢেল অর্থকড়ি। ওসি কিনতে আর কত লাগে? সেটা স্বজনহারানো শোকপিড়িত সবখোয়ানো দরিদ্র জনগনের ছিল না তো।

28 মার্চ নাগাদ মোট 73টি এ ধরণের ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। সারাদেশের সমস্ত জেলা ছিল এর আওতায়। এবং অন্য কোনো আদালতের এতে নাক গলানোর অধিকার রইল না বিশেষ অধ্যাদেশে। এপ্রিল মাসে শুরু হলো বিচার। আর স্পষ্টই বোঝা গেল দালাল আইন দালাল ধরতে নয়, দালালদের বাঁচাতেই প্রণয়ন করা হয়েছে। 30 নভেম্বর 1973 সালে কুখ্যাত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে 31 অক্টোবর পর্যন্ত 37 হাজার 471 জন অভিযুক্তের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছিল 2 হাজার 848 জনের মামলা। এদের মধ্যে দন্ডাদেশ পেয়েছে 752 জন, বাকি 2 হাজার 96 জনকে দেওয়া হয় বেকসুর খালাস। মৃতু্যদন্ডে দণ্ডিত হয় মাত্র একজন রাজাকার! (চলবে)

ছবি : বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুকের সঙ্গে গোলাম আযম
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৮ ভোর ৪:৫৪
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুনাজাত

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৫

ধরতে ধরতে হয়না ধরা,
ফসকে গেল শেষে।
মান-অভিমান দিলাম ঝেড়ে,
তোমার কাছে এসে।

ঠকতে ঠকতে যায়নি ঠেকা,
অতলে গেলাম ভেসে।
ধূলির মতো জীবন হেসে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।

কত শতবার পাশ কেটে যাই,
অবহেলার মন ঠেসে।
হোঁচট খেলেই ফের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

লামিয়ার আত্মহনন: রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা, সামাজিক নিষ্ঠুরতা ও মনুষ্যত্বের অন্তর্গত অপমান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১


সেদিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫। পটুয়াখালীর দুমকীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। সে বাবা, যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩



সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'! তৈরি হচ্ছে সূর্যালোক ছাড়াই, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা:—

♦️সমুদ্রের ৪ হাজার মিটার তলদেশ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক জগৎ। আর সেখানেই নাকি রয়েছে অক্সিজেন! বিজ্ঞানীরা যাকে ডাকছেন 'ডার্ক অক্সিজেন' নামে। 'নেচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


আজ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়ায় এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশ কি তবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×