![]()
জাতির গর্ব, সোনার সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্ম ২৯শে অক্টোবর ১৯৪১, ঢাকায়। পিতা মৌলভী আব্দুস সামাদ ছিলেন সরকারী চাকুরে এবং মা মোবারকুন্নেসা ছিলেন গৃহিণী। নয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মতিউর ছিলেন অষ্টম। ১৯৫২ সালে মতিউর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। সাধারন জীবন যাপন দিয়েই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সবার থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করেন নিজেকে মতিউর। ১৯৫৬ সালে ভর্তি হন পাকিস্তান বিমান বাহিনী স্কুল, সারগোদায় এবং ১৯৬০ সালে সেখান থেকেই প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৬১ সালের ১৫আগস্ট ৩৬তম জিডি (পি) কোর্সে ফ্লাইট ক্যাডেট হিসাবে যোগদান করেন পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমি, রিসালপুরে। একাডেমিক বিষয়ে এবং খেলাধূলাতে তার দক্ষতার ছিলো উল্লেখ করার মতো।
গৌরবময় শিক্ষাজীবন ও মুখর কর্মময় মতিউর ১৯৬৩ সালের ২৩ জুন তিনি ফ্লাইট ব্রাঞ্চে কমিশন লাভ করা ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীতে দারুন দক্ষতার সাথে নিজের ভূমিকা পালন করেছেন।
![]()
তার সার্ভিস নাম্বার দেওয়া হয়, পিএকে-৪৩৬৭, বিমান বাহিনীতে তিনি ২ নং ট্রেনিং স্কোয়াড্রন-মৌরিপুর, ফাইটার লিডারশীপ স্কুল-করাচী এবং ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর স্কুল-এ সফল ভাবে প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেন। চাকুরী জীবনে তিনি এফ-৮৬ জঙ্গী বিমানের পাইলট হিসাবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ১৯নং ফাইটার স্কোয়াড্রন ও ২৫ নং স্কোয়াড্রনে। প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিমান বাহিনী একাডেমি, রিসালপুরে ও ২ নং স্কোয়াড্রনে। এছাড়া তিনি কিছুকাল অন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সদর দফতর, ইসলামাবাদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে এক পাঞ্জাবী পাইলটের সাথে প্রশিক্ষন কামান আকাশ যুদ্ধে লিপ্ত হলে দূর্ভাগ্যজনকভাবে তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তিনি বেইল আউট করেন। এতে তাদের উভয়কেই কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হয়। বিচারে পাঞ্জাবী পাইলটের শাস্তি না হলেও তাকে এক বছরের জন্য গ্রাউন্ডেড করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৯শে এপ্রিল তিনি মিলি খানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৯সালের ২৩ এপ্রিল তাদের প্রথম কন্যা সন্তান মাহিন ও ১৯৭০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দ্বিতীয় কন্যা সন্তান তুহিনের জন্ম হয়।
![]()
[পরিবারের সাথে মতিউর রহমান]
১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বাৎসরিক ছুটিতে তিনি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। এসময় তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে স্বাধীকার আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১লা মার্চ কর্মস্থলে ফিরে যাবার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। ২৫শে মার্চ গ্রামের বাড়ি নরসিংদী গমন করেন এবং সেখানকার স্বাধীনতাকামী জনতার প্রশিক্ষনের বন্দোবস্ত করেন। ৪ঠা এপ্রিল পাকিস্তান বিমান বাহিনী নরসিংদীর উপর বিমান হামলা চালালে তিনি ভৈরব হয়ে নানার বাড়ি গোকুল নগরে গমন করেন। পাকিস্তান থেকে বিমান সংগ্রহের মানসে ৯ই মে ১৯৭১, তিনি সপরিবারে কর্মস্থলে ফিরে যান।
কর্তৃপক্ষের কাছে দেরিতে যোগদানের কারন দর্শানোর পর তাকে ফ্লাইং সেফটি অফিসারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নিয়মিত কাজের আড়ালে তিনি একটি বিমান ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ নিয়ে তিনি কয়েকজন দেশপ্রেমিক বাঙালি অফিসারের সাথে আলোচনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০শে আগস্ট ১৯৭১ সকাল ১১.১৫ মিনিটে পাঞ্জাবী পাইলট অফিসার রাশেদ মিনহাজসহ টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান (কল সাইন ব্লু-বার্ড-১৬৬) ছিনতাই করে ভারত অভিমূখে উড্ডয়ন করেন। অপর পাইলটের সাথে কন্ট্রোল নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সিন্ধুর বেদিনে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে উভয়েই শাহাদত বরণ করেন। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে মশরুর বিমান ঘাটির ৪র্থ শ্রেণীর কবরস্তানে অত্যন্ত অমর্যাদার সাথে দাফন করে।
[রাজাকার-বেঈমানদের মুখে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান এর বিরুদ্ধে খিস্তি খেউড় ও অপবাদের সামান্য চিত্র তুলে ধরা হলো। উনি ছিলেন সমস্ত দেশপ্রেমিক বাংলার সৈনিকদের জন্য অনন্য উদাহরণ! ]
![]()
![]()
![]()
বাংলাদেশ সরকার সব জেনে তাকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে।
শাহাদতের ৩৫ বছর পর ২৪শে জুন ২০০৬ মতিউরের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবর স্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়। বাংলা মা তার মহান এ সন্তানকে ফিরে পেয়ে হলো গর্বিত এবং লজ্জিত হয়েছে এতোদিন তাকে বুকে ধারন করতে না পেরে।
২০ আগস্ট, ১৯৭১, আজকের এ দিনে ভারতীয় সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। তার প্রতি জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
[লেখাঃ বিভিন্ন আর্টিকেল ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত,
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া,
ছবিঃ ইন্টারনেট, ব্লগ ইত্যাদি ]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




