সামুতে আসার পর আমি ভাবতাম কেবল তরুণ যুবকেরা ব্লগিং করেন । ব্লগারদের বয়স কত ? নিশ্চয়ই ত্রিশের কম হবে । এর বেশি বয়স হলে কি মনের ভেতর ব্লগিং করার মত আয়েশ থাকে । কিন্তু অচিরেই আমার ভুল ভাঙল । ব্লগে এমন প্রবীণ/প্রবীণা ব্লগার আছেন যাঁদের বয়স আমার সর্ব্বোচ্চ ধারণার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ।
এনিওয়ে, সামুর বয়ষ্কদের নিয়ে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয় । আজ আমি অন্য একজন বৃদ্ধা ব্লগারকে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো । হয়তো উনাকে অনেকে অলরেডি চেনেন ।
উনার আসল নাম ড্যাগনি কার্লসন । ব্লগে উনার নিক- বোজান । এ পর্যন্ত আটাশ লাখ একাত্তর হাজার ভিউয়ার উনার ব্লগ দেখেছেন । আপনি যখন উনার ব্লগ দেখবেন তখন সংখ্যাটা আরো বেশি দেখতে পাবেন, কারণ প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থী তাঁর ব্লগ ঘুরে যাচ্ছে । উনার বয়স কত জানেন ? মাত্র একশো ছয় (১০৬) বছর ! জী, এই বয়সে মানুষ কবরে থাকে, আর উনি থাকেন অনলাইনে । আমি হৃদি ব্লগে এক সপ্তাহ না এলেও কেউ কিছু মনে করেন না, কিন্তু এই বৃদ্ধা একদিন যদি ব্লগে না আসেন তাহলে হায় হায় রব উঠে । উনি এমন জনপ্রিয়, উনাকে একদিন অনলাইনে না পেলেই সবাই ভাবে- আহা বুড়ি মনে হয় মরেই গেল । এটা আমার কথা নয়, স্বয়ং তিনিই বলেছেন ।
ভাবছেন একশো ছয় বছর ধরে ব্লগিং করলে তো জনপ্রিয় হবেন- এটা স্বাভাবিক । আরে না ভাই, উনি ব্লগিং শুরু করেছেন একশো বছর পূর্ন হবার পর । একশোতম জন্মদিনে তিনি একটি কম্পিউটার উপহার পেয়েছিলেন । তারপর একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে কম্পিউটার চালানো শিখে নেন । বুঝুন তবে । আমাদের দেশের মানুষ যে বয়সে সব শিক্ষা ভুলে যান সেই বয়সে উনি কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করেন । তিনি বলেন, ‘লোকে বলে নব্বই বছর হয়ে গেলে নাকি কম্পিউটার কেনার কোন মানে হয় না । অথচ কম্পিউটার আমার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । কম্পিউটার থাকায় আমার বান্ধবিদের সাথে আলাপ করতে পারি । খবর পড়তে পারি । কম্পিউটার আমার খুব ভালো লাগে ।’
ভারি আশ্চর্যের ব্যপার । কম্পিউটারের কি-বোর্ডের বিন্যাস কি যে জটিল, যারা কম্পিউটার নতুন চালানো শুরু করেন তারা সবাই বোঝেন । একটা Key টিপ দিয়ে আরেকটা Key খুঁজে বের করতে ঘাম বের হয়ে যায় । কোনদিকে কোন Key আছে তা বৃদ্ধা ড্যাগনির মনে থাকে ? আমাদের বয়ষ্করা তো সবই ভুলে যান, কম্পিউটারের Key দূরে থাক, বাসার কোনদিকে বাথরুম থাকে তাও উনাদের মনে থাকে না ।
তিনি আরো বলেন, ‘নয় বছর বয়সের ছেলেমেয়েরা আমাকে বলে- তুমি খুব কুল । আমার খুব গর্ব হয় ।’
ড্যাগনি কার্লসন নামক এই বৃদ্ধা ব্লগারের দেশ সুইডেন । যৌবনে তিনি একজন দর্জি ছিলেন । খুব বেশি সুখে জীবন কাটিয়েছেন তা কিন্তু বলা যাবে না । মায়ের কাছে রূঢ় ব্যবহার পেতেন । তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল একজন খাটাশ প্রকৃতির মানুষের সাথে, সেই বিয়েটা বেশিদিন টিকেনি । দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন । কোনমতে সুখে অসুখে মিলে সাধারণ একটি জীবন পার করে এসেছেন তিনি । কিন্তু এই বয়সে ব্লগিং করে তিনি অসাধারণ হয়ে গেছেন । এখন তাঁর দেশে তিনি অনেক সম্মান পাচ্ছেন । এই বয়সেও সিনেমা পরিচালকগণ তাদের সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য বৃদ্ধা ড্যাগনিকে নিতে চান, অভিনয় করেছেনও । টক-শো তে তিনি আলোচনা করেন । অনেক অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মান জানানো হয় । সম্প্রতি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির বার্ধক্যবিদ্যা সমিতি তাঁকে পুরষ্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
হায় বৃদ্ধা, তোমার মত থুরথুরে বুড়ি হবার ইচ্ছে আমার নেই । তোমার মত বিখ্যাত হতে পারলে আমি মনে হয় অল্প বয়সেই খুশিতে মরে যাবো ।
তথ্যসুত্রঃ
১. বাংলাদেশ প্রতিদিন
২. আল-জাজিরা ইংলিশ
৩. ড্যাগনি কার্লসনের ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪