সামাজিক আন্দোলনকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় এমন কোনো একক সংজ্ঞা নেই। বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আন্দোলন বলতে আমাদের চোখের সামনে যা ভেসে উঠে, তা হল গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং সবচেয়ে সুস্থ ধারণা হলেও তা হবে রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া! আসলে এরকমটি মনে হওয়ার কারণ আছে যথেষ্ট। আমরা এসব দেখে দেখেই বড় হয়েছি। সহিংস আন্দোলন ছাড়া আমাদের দাবি আদায় হয় না, এ ধারণাটি আমাদের মনের ভিতর পাকাপোক্ত ভাবে গেঁথে গেছে।
ছাত্রছাত্রীরা তাদের সহপাঠীদের হত্যার বিচার চাচ্ছে। বিচার চাইতে গিয়ে তারা রাস্তায় পাবলিক যানবাহনসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন যানবাহনও ভাঙচুর করেছে। আবার আজকে দেখলাম কিছু ছাত্র বাঁশ হাতে নিয়ে ট্রাক, বাস স্টান্ডে গিয়ে গিয়ে তাদের লাইসেন্স আছে কিনা সেটা চেক করছে। এটা চেক করার সময় একটা ট্রাক বেপরোয়াভাবে ছাত্রদের গায়ের উপর ট্রাক উঠিয়ে দিয়েছে, এতে একজন ছাত্র মারা যায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। জানিনা এদের মাথায় এই বুদ্ধি কিভাবে এসেছে! ট্রাক-বাসের লাইসেন্স চেক করলে এটা থেকে কি ফল পেতে পারে তারা? এটা কি কোন প্রতীকী প্রতিবাদের অংশ কিনা সেটাও আমি নিশ্চিত না, তবে কাজটি মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি। কোন দাবী আদায় করতে হলে মানুষ আগে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করে, মধ্যপন্থায় কাজ না হলে মানুষ চরমপন্থায় দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। আমাদের দেশে হয়ে যাচ্ছে উল্টোটা। আমরা প্রথমে চাই চরমপন্থায় দাবি আদায় করতে, সেটা না হলে মধ্যপন্থার কথা মিনমিনিয়ে বলতে থাকি।
শেখ হাসিনা সরকার যে অবস্থায় আছে, এখানে জোর করে তার কাছ থেকে কিছু আদায় করা যাবে না। বেশি জোরজবস্তি করলে তার আশেপাশের মানুষ তাকে জামাত-বিএনপি'র বড়ি খাইয়ে দেয়, ফলে আন্দোলন মাঠে মারা যায়। আমরা অল্প কয়দিন আগে দেখেছি কোটা আন্দোলনের মতো একটি অরাজনৈতিক ইস্যুর আন্দোলন কিভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে।
ছাত্রছাত্রীরা এত উগ্র মনোভাব না দেখিয়ে তাদের মধ্য থেকে ৪০-৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে যেতে পারত। আমার ধারণা প্রধানমন্ত্রী তাদের বাধা দিতেন না, অন্ততপক্ষে তাদেরকে আশ্বস্ত করতেন। শেখ হাসিনা যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থা থেকে উনি যত যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন হোক না কেন, সহিংস আন্দোলন হলে উনি সেটা পছন্দ করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯