প্রিয় ব্লগার,
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকায় এবং বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে পালিত হল, ১৯শে ডিসেম্বর ৪র্থ বাংলা ব্লগদিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও যেমন লন্ডন, আমেরিকা, মালয়েশিয়ায় ব্লগ দিবস পালিত হচ্ছে। ব্লগিং এর শক্তি ও সম্ভাবনাকে আরো নিবিড়ভাবে বিস্তৃতির জন্য বিগত তিন বছর ধরে বাংলা ব্লগ দিবস পালিত হয়ে আসছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলা ব্লগ দিবস অনুষ্ঠানে বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের ব্লগাররা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। বৈচিত্র্যময় ব্লগ, ব্লগার ও ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের পেছনের কারিগরদের মধ্যে সেতুবন্ধন এবং এর বাইরের বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিবসটি ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বাংলা ব্লগ দিবস অনলাইনে সকল বাংলা ব্লগ ও কমিউনিটি সাইটের যোগদানের জন্য উন্মুক্ত। এবারের ব্লগ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়, “বাক স্বাধীনতা; বাক দায়িত্বশীলতা”। ব্লগের প্রতিপাদ্য বিষয় এবং আরো নানান প্রসঙ্গ নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনায় মেতে ওঠেন আলোচকবৃন্দ এবং বাংলা ব্লগাররা।
এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯শে ডিসেম্বর ২০১২তে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার বিল্ডিং এর আর. সি. মজুমদায় মিলনায়তনে। সামহোয়্যার ইন...ব্লগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটির সার্বিক আয়োজনে আরো যুক্ত ছিলেন বেশ কয়েকটি ব্লগ প্লাটফর্ম, কম্পিউটার জগৎ, শব্দনীড় ব্লগ, ডাঙ্গুলি ব্লগ, মুক্ত ব্লগ, উপজেলা ব্লগ।
এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন, ডঃ আনিসুজ্জামান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম খান, সচিব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, এটুআই প্রোগ্রাম, আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক, মাননীয় উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জনাব আক্কু চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, ডঃ মো: গোলাম রহমান,অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সামাজিক গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, ডঃ মোবাসসের মোনেম, অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ডঃ ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সামাজিক গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর,সামহোয়্যার ইন নেট লিমিটেড, রেজাউর রহমান, আইন বিশেষজ্ঞ এবং বাক স্বাধীনতা এক্টিভিস্ট, বিশিষ্ট ব্লগার রাসেল, বিশিষ্ট ব্লগার আরজুপনি, বিশিষ্ট ব্লগার কৌশিক আহমেদ।
ডঃ আনিসুজ্জামান বলেন, “ইন্টারনেট বিশ্বে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বাংলা ব্লগ পরিসর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। একই সাথে বাক স্বাধীনতার বিকাশে এবং মানুষকে নিজের ভাষায় কথা বলতে দেবার নতুন সুযোগ করে দিয়েছে এই পরিসর। বাক স্বাধীনতার সুষ্ঠু ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এই আয়োজনের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেন”।
ডঃ ফাহমিদুল হক বলেন, “বাক স্বাধীনতার এই পরিসর ব্লগারদের শক্তিশালী করে তুলেছে নানান দিক দিয়ে। এর মধ্যে এক্টিভিজম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথাগত গণমাধ্যমের অনেক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সহায়তা করেছে বাংলা ব্লগ। আর এর মধ্য দিয়েই এমন একটি কমিউনিটি তৈরি হয়েছে যারা সচেতন, সতর্ক এবং বাস্তব জীবনেও খুবই সক্রিয়”।
সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা বলেন,“বাংলা ব্লগ কমিউনিটি ক্রমশ বিকাশমান একটি ক্ষেত্র। এটির বিকাশে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাবার কোন বিকল্প নেই। একই সাথে নানান জনকল্যাণমূলক কাজে বাংলা ব্লগারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করেন”।
রেজাউর রহমান বলেন, “আইন করে সারা বিশ্বে বাক স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে ব্লগারদের কাছে আরো পরিষ্কার করে উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। বাক দায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে বা কারা বাক স্বাধীনতা বাক দায়িত্বশীলতার সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে সেই বিষয়টির উপর তীক্ষ্ণ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন”।
ব্লগার রাসেল বলেন, “বাক স্বাধীনতার পরিসর এখনো একটি ছোট গন্ডীতে আবদ্ধ, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট এক্সেস পৌছে দেয়া একটি জরুরী বিবেচ্য বিষয়। এছাড়া বিশেষ ইস্যুতে ব্লগারদের বিভাজন দূর করার বিষয়টির উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি”।
ব্লগার আরজুপনি বলেন, “নারীরা ব্লগে কিংবা স্যোশ্যাল মিডিয়াতে অংশগ্রহণে নানাভাবে এগিয়ে আসছেন। যদিও পুরুষতান্ত্রিকতা সামগ্রিকভাবে সেই বিকাশে বাধা তৈরি করছে। নারীদের সহ ব্লগারদের চাইতে অনেক বেশি জবাবদিহিতা আর প্রশ্নের সম্মুক্ষীণ হতে হয়। এই অবস্থার পরিবর্তনে সহ ব্লগারদের সহযোগীতা এবং নারী ব্লগারদের দৃঢ়তার উপর গুরুত্ব দেন তিনি”।
ব্লগার কৌশিক বলেন, “ব্লগিং নিশ্চিত করেই আয়ের একটি উৎস হতে পারে। বাংলাদেশে নানান এনজিও, কর্পোরেট চাহিদার মধ্য দিয়ে এই পরিসর ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে। এই পরিসরে অংশ নেবার জন্য ব্লগারদের পেশাদারী মনোভাব ও দক্ষতার অন্য কোন বিকল্প নেই”।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় এই ব্লগ দিবসে রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করা হয় এবং ব্লগাররা স্বতস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে লাইভ ব্লগিং, লাইভ টেলিকাস্টিং, এর মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে ব্লগ দিবস কিভাবে পালিত হচ্ছে সেটার সাথে উপস্থিত ব্লগারদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ব্লগাররা বিদেশ থেক ফোন করে , ব্লগে লিখে, ছবি তুলে এই আয়োজনের সাথে তাদের অনুভূতি ও সম্পৃক্ততা ব্যক্ত করেন।
নিজ নিজ ব্লগ সর্ম্পকে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রদান এবং নিজ নিজ সেরা ব্লগারদের পুরুষ্কার প্রদান করেন ব্লগের এডমিনরা। বাংলা ব্লগের নানান সম্ভাবনা এবং প্রতিকূলতার বিষয় নিয়েও তারা আলোচনা করেন। ব্লগারদের চিন্তা ও আয়োজনে ছোট্ট একটি নাটিকা পরিবেশন করা হয়, যা উপস্থিত দর্শকদের বিনোদিত করে। অনুষ্ঠানে হালকা খাবারের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর বাংলা ব্লগিং এর জন্য ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যে বাংলা কমিউনিটি ব্লগিং এর যাত্রা সূচিত হয়েছিল তারই অবদান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে ২০০৯ সালের ১৯শে ডিসেম্বর থেকে পালিত হয়ে আসছে বাংলা ব্লগ দিবস। ৪র্থ বাংলা ব্লগ দিবস, বাক স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার জন্য ব্লগারদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহবানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
বি:দ্র: ব্লগ দিবসের ছবি সহ আপডেট দেয়া হবে।
ধন্যবাদ, হ্যাপী ব্লগিং