সম্প্রতি রাবির ছাত্রলীগ পুলিশের যৌথ হামলায় ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আহত হয়ে হসপিটালে ভর্তি হওয়া এই মুহূর্তে অনলাইনে হট নিউজ। তাই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নিয়ে ও মেধাবীদের পশু হয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রক্তাক্ত করা নিয়ে পোস্টটি লেখার চিন্তা মাথায় এলো।
চলুন উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা স্মৃতিচারণ করিঃ
এর আগেও বিসিএসসহ সকল সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল এবং ৩৪তম বিসিএসের ফল বাতিল করে পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নামা চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলে দফায় দফায় হামলা করেছে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ। বিসিএস পরীক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রাজধানীর শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শাহবাগ অবরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেন। পরে মিছিলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তারা ভিসি বাসভবনসহ ক্যাম্পাসে ভাংচুর করেন। শিক্ষার্থীদের 'পিছু হটাতে' কয়েক রাউন্ড গুলি এবং কয়েকশ' রাউন্ড টিয়ার শেল ছোঁড়ে পুলিশ।
যদিও এটিই ব্রত হওয়া উচিৎ যে শিক্ষাঙ্গন রাখিব সন্ত্রাসমুক্ত তারপরও আমরা দেখি তার উল্টোটা । এমন অবস্থা যেন সন্ত্রাস শিক্ষাঙ্গনের একটি অংশ। যদি সাধারণকে প্রশ্ন করা হয় শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের সাথে জড়িত কারা আওয়ামীলীগ বামপন্থিরা বলবে শিবির আর বাকিরা বলবে ছাত্রলীগ।
ব্লগার অন্ধ বাউল একসময়ের ঢাবি মেধাবী ছাত্র মানিককে তার বাবার সামনেই নির্মম ভাবে মারা ও পুলিশের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট বাস 'চৈতালী' অথবা একদল অমানুষের গল্প এই হৃদয় বিদারক পোস্টটির কথা কার কার মনে আছে? এই পোস্ট পড়ে মনে হবে যেন মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেই অমানুষ হয়ে যায়। পোস্টটি পড়ার কোন এক পর্যায়ে আপনার চোখে পানি আসবেই।
২০১১ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। ঘটনা কুয়েটের। মনে পড়ে? ন্যায্য দাবিতে কি নির্মম ভাবে মেরে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উলটো আসামি করা হয়েছিলো! সেসময় সামুর ব্লগার প্রতীক্ষিত
কুয়েটের একজন আসামী বলছি এক হৃদয় স্পর্শী পোস্ট লিখেন যা ফেসবুকে-ব্লগে অনলাইনে সাড়া জাগিয়েছিলো। প্রায় ২০ হাজার বার পঠিত পোস্টটি পড়লে চোখে পানি আসবেই। যদি আপনি মানুষ হয়ে থাকেন। লীগ বিরোধীরা তো বটেই সাধারণ লীগ সমর্থকরাও ছাত্রলীগের সে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলো।
ছাত্রলীগের হামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের নিরীহ ছাত্র যুবায়ের আহমেদকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। যুবায়ের পরীক্ষা শেষে হলে ফেরার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা গড়ে তুলে তীব্র প্রতিবাদ। প্রতিবাদের মুখে "ভিসি ছাত্রলীগ কর্মীদের বললেন, আমারে বাঁচাও ।ছাত্রলীগ কর্মীরা শ্লোগান দিল,ভিসি তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই ।"জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জোবায়ের হত্যার জন্য কে দায়ী ?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন আহত হয়েছিল গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসান উল্লাহ হলের প্রধান ফটকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিলো। বুয়েটের শেষ সেমিস্টারে থাকা ’০৬ ব্যাচের শেষ সপ্তাহ উপলক্ষে চলছিল র্যাগ সপ্তাহ। এর অংশ হিসেবে ২৮শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় র্যাগ কনসার্ট। সব সময়ের মত এবারও র্যাগ কনসার্ট চলছিল বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে। ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে শুধুমাত্র প্রবেশাধিকার ছিল ’০৬ ব্যাচের। তবে অন্যান্য ব্যাচের স্টুডেন্টরা ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণের বাইরে থেকে ঠিকই উপভোগ করতে পারবে কনসার্ট। এর এক পর্যায়ে ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে প্রবেশের চেষ্টা করে সুজিত(’০৮ ব্যাচ, MME), দ্বীপ(’০৯ ব্যাচ, ME), মিঠুন(’০৮ ব্যাচ, ME)। যারা বুয়েটের ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। যদিও জুনিয়র ব্যাচের সবাই চত্বরের বাইরে থেকে কনসার্ট উপভোগ করছিল, এরা ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে বাঁধা দেয় ঈশান(’০৬ ব্যাচ, CSE)। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা মীমাংসা করে ’০৬ এর নাহিয়ান, যে র্যাগ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের একজন। অবশেষে কথা কাটাকাটি হলেও চলে যায় ওই তিনজন।ওইদিন রাতেই নজরুল হলে গিয়ে নাহিয়ানকে খুঁজে বের করে লাথি দেয় তারা।অবশেষে পরের দিন সকালে নজরুল হলে আবারো ’০৬ ব্যাচের ছাত্রদের খুঁজতে যায় সুজিত, দ্বীপ, মিঠুন। তবে কাউকেই খুঁজে না পেলেও সামনে পেয়ে যায় ঈশানকে। হকিস্টিক দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হাত এবং পা থেঁতলে দেয়া হয় ঈশানের। বাম হাতের জয়েন্টও খুলে যায় তার।ঈশান এখন স্কয়ার হসপিটালের ইমার্জেন্সি ইউনিটে ছিলও।
এছাড়াও আমার স্মৃতিতে থাকা আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে আহত ১০ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ, আটক ১ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৫ দেহ ব্যবসা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা মানিকের ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুককে হত্যার পর ম্যানহোলের ভেতরে ফেলে দেয় শিবির
বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য এক ছাত্রলীগ কর্মী মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্যদের সামনে ছাত্র-মৈত্রীর নেতা জামিল আক্তার রতনকে প্রকাশ্যে হত্যা
২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
১৯৮১ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে শিবির।
২০১০ সালের ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছে দুই ছাত্রীকে,
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ শিবিরের হামলায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মীর মোশতাক এলাহী।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির - ছাত্রলীগ সংঘর্ষ
শাবিপ্রবিতে শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ ,
ছাত্রলীগ নেতার রগ কেটে দিয়েছে শিবির, ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে শিবিরের নেতা নিহত
এরকম সংবাদ দিতে গেলে সংখ্যাটা অন্তত ৫০০০ ছড়িয়ে যাবে। সব গুলো এখানে দেওয়া সম্ভব হলে দিতাম।
আমরা সাধারণ বেশি কিছু চাইনা। শুধু চাই নিরাপদ ক্যাম্পাস । এসব নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় আমরা হতবাক,আমরা বাকরুদ্ধ!! হলেও তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাধারণরা কিছুই করতে পারিনা। আজ কার কাছে বিচার চাইব?,যখন অন্যায়ের প্রতিবাদ কারীর শাস্তি পেতে হয় আর অন্যায়কারী বহাল তবিয়তে থাকে।আজ মানবতা কোথায় ? মানবিক মূল্যবোধ গুলো কোথায়?? সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বলছি... আমরা আর কতো অপমানিত হব?? আর কতভাবে আমাদের হেয়,অপদস্থ করা হলে আমরা চুপ করে থাকবো? আমাদের মনুষত্ব্,মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার সময় কি এখনও হয়নি? আমরা কি পারিনা নিজেদের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি ক্যাম্পাস উপহার দিতে?? অবশ্যই পারি কারণ,পৃথিবীতে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।আজ হোক কাল হোক ন্যায়ের জয় অনিবার্য। এ জন্য দরকার সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে বিপ্লব। যে বিপ্লব সাধিত হলে ছাত্র নামের নরপশু সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে কোন অসহায় শিক্ষার্থীকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারবেনা। সে বিপ্লব সাধিত কোন ছাত্র নামের নরপিশাচের মাধ্যমে ধর্ষিতা হবনা আমাদের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বোন। যে বিপ্লব সাধিত হলে ঢাবির মানিক কিংবা বুয়েটের ঈশানরা আর রক্তাক্ত হবেনা। প্রাণ দিতে হবেনা চমেক এর আবিদ অথবা জাবির জোবায়েরকে। এ বিপ্লব সফল করার জন্য হয়তো প্রাণ দিতে। প্রাণের বিসর্জনের পর সফলতাও আসবে।
চে গ্যেভারার সে বিখ্যাত উক্তি দিয়েই শেষ করি " ওদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আমার প্রিয় এম-২ রাইফেলটা অকেজো হয়ে গেছে। তবে আমার পরাজয় এই নয় যে, বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। এভারেস্ট বিজয়ের অভিযানেও অনেকে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আজ মানুষ জয় করেছে। ফিদেলকে বলো_ আমার মৃত্যুতে বিপ্লব পরাজিত হয়নি। বিপ্লবের মৃত্যু নেই। শোষিত মানুষের জয় অনিবার্য।"
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০৩