somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় ব্লগারগণ, আসুন চিঠি লেখাকে বাঁচিয়ে রাখি, চিঠি পাওয়ার আকুলতাকে বাঁচিয়ে রাখি। খামে ভরা আবেগকে বাঁচিয়ে রাখি।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


করুণা করেও হলে চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।
- মহাদেব সাহা


কত আকুলতা একটা চিঠি পাওয়ার জন্য! অথবা আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর 'মাগো ওরা বলে' কবিতাটা পড়েছেন না? কেঁদেছেন তো অবশ্যই। কিংবা রফিক আজাদের "প্রস্থান" এ পড়েছেন না-

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷

এগুলো শুধু কবিতায়। ওইদিকে গদ্য সাহিত্যে চিঠির বিস্তৃতি, পড়েছেন না? মেমসাহেব, নিমাইয়ের একখানা জীবন চিঠি। একাত্তরের চিঠি বইটা পড়েছেন নিশ্চয়ই। কোন চিঠিটা পড়ে আপনার চোখের কোণে দু'ফোটা জল জমে নি, বলুন তো?

কেন এতক্ষণ শুধু বই-কবিতা আর গল্প থেকে উদাহরণ দিতে হলো বলুন তো? কারণ, বাস্তবিক জীবনে চিঠি কি, চিঠির প্রয়োজনীয়তা কি এইগুলো আমাদের প্রজন্মের কেউ আমরা জানিই না, বুঝি না। আমাদের ফেবু আর ব্লগ হলেই দিন চলে যায়। একটা চিঠি লেখার সময়কার হাতের কাঁপন কিংবা হলুদখামে একটা চিঠি পাওয়ার পর ঊর্ধ্বগামী হৃদস্পন্দন কখনও অনুভব করার সুযোগ হয়নি আমাদের। আমরা চিঠির কথাগুলো পড়েছি ওই শুধু বইয়ের পাতায়।

হ্যা, জীবনের গতি বেড়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম অনেক দ্রুতগামী হয়েছে, সময় হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। কিন্তু তাই বলে কি চিঠির গুরুত্ব কিংবা আবেগ হারিয়ে যাবে! অন্তত আমাদের কাছে। প্রয়োজনীয় জরুরী কাজগুলোয় আমরা হৃদয়হীন নিত্যনতুন প্রযুক্তিগুলোর সাহায্য অবশ্যই নিবো, কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া কি জীবনে কিছুই নেই!! কত কাজই তো করি শুধু ভালো লাগে বলে। সারারাত ফেসবুকে চ্যাট করে যে ছেলেটি সে কি জানে এতঘন্টা ধরে চ্যাট করার চেয়ে একটা চিঠির উত্তর পাওয়ায় কতটা ভালোলাগা জড়িয়ে থাকবে!! প্রিয়তমাকে প্রেমিকার সাথে যে সারাদিন-রাত ফোনে কথা বলে সে কি জানে, তার দুই লাইনের একটা চিঠি তার প্রেমিকার সারা জীবনের ডায়রির একান্ত গোপণ কোণে আশ্রয় পাবে? এই জিনিস গুলো আমাদের জানানো হয় নি, আমাদের কাছ থেকে এই আবেগ গুলো শুকনো মাংসের মত শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে। আমরা কিভাবে জানব!!



আমার বড়আপা বলত, একেকটা চিঠির নিজস্ব প্রাণ আছে, হৃদস্পন্দন আছে। আর একেকটা ভালবাসার চিঠি, মায়ের কাছে লেখা সন্তানের চিঠি, বোনের কাছে লেখা ভাইয়ের চিঠি একেকটা মহাকাব্য হয়ে বেঁচে থাকে। আর সত্যি কথা বলতে, একেকটা গল্প-উপন্যাসের চেয়ে একটা ক্ষুদ্র সাধারণ চিঠির উপর আমার আকর্ষণ কেন যেন ঢের বেশি।

আমাদের যারা অনলাইন কমিউনিটিতে যুক্ত, ব্লগ কিংবা ফেসবুকে তাদের আমি মনে করি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, অলংকার, সামাজিক দর্শন, বর্তমান সমাজ প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সবচেয়ে সচেতন একটা গোষ্ঠী। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার আমরা সারাদিন অনলাইনে থেকেও বাঙ্গালীর জীবনের অলংকার, ঐতিহ্য থেকে চিঠি নামক যে একটা প্রাণ হারিয়ে গেছে সে কথা বেদম ভুলে গেছি। অথচ এই আমরাই সাহিত্য- সমাজ নিয়ে চর্চা করি সবসময়। আচ্ছা, একটা চিঠি যে কোন সাহিত্যের চেয়ে কোন অংশে কম??

এখন মূলকথায় আসি। মূলকথা হলো, চিঠি লেখাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। একটা ছোট গোষ্ঠীর মাঝে হলেও চিঠি লেখাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই কয়েকজনার মঝেই চিঠির আদানপ্রদান হোক, তবু চিঠি বেঁচে থাক। একদিন হয়ত এদের দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়ে চিঠি লিখবে প্রেমিক-প্রেমিকাকে সারারাত ফোনালাপের পরও, মাকে চিঠি লিখবে আদরের ছেলেটি, অকারণেই লিখুক। সাহিত্য কিংবা বেঁচে থাকার কোন কারণ লাগে না।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিভাবে আমরা চিঠি লিখাকে বাচিয়ে রাখতে পারি? আমার প্রস্তাব এমন - একটা কমিউনিটি গ্রপ টাইপ খুলতে চাচ্ছি, সেই গ্রুপের যারা মেম্বার তারা একে অপরকে চিঠি লিখবে, ভাব বিনিময় করবে, কবিতা পাঠাবে, গল্প পাঠাবে। অর্থাৎ কয়েকজনের মাঝে হলেও চিঠি বেচে থাকবে, খাম বেচে থাকবে।
যেমনঃ
১। সর্বপ্রথম একটা ক্লোজড গ্রুপ খোলা হবে ফেসবুকে। দেখেশুনে মেম্বার এড করতে হবে, কেননা কিছু আবাল অযথাই বিরক্ত করে।

২। এই গ্রুপের একটা ডক ক্রিয়েট করা হবে। সেই ডক ফাইলে গ্রুপের প্রত্যেকটা মেম্বারের চিঠি লিখার ঠিকানা আপলোড করা থাকবে। নতুন মেম্বার এড করা হলে সে নিজে তার পূর্ণ ঠিকানা ডকে আপলোড করবে।

৩। ডকের ঠিকানা দেখে যার যাকে ইচ্ছা হয় সে তাকে চিঠি লিখবে। পত্রমিতালি গড়বে।

৪। অনেকে আছে শুধু মেম্বার হয়েই বসে থাকে। এক্ষেত্রে সেটা চলবে না। প্রত্যেক সপ্তাহে একটা পিন পোস্ট করা থাকবে সেখানে গত সপ্তাহে কে কয়টা চিঠি লিখেছে সেটা লিখবে।


গ্রুপের কিছু রুলস অবশ্যই থাকবে। যেমনঃ অনেকে দেখা যাবে উল্টো-পাল্টা চিঠি লিখবে। তাদের ক্ষেত্রে প্রাপক ইচ্ছে হলে আইনানুগ সহায়তা ্নিতে পারবেন। গ্রুপে কে কেমন চিঠি পেয়েছে সে ব্যাপারে লেখা যাবে কিন্তু প্রাপক না চাইলে তার নাম উল্লখ করা যাবে না, এতে প্রাইভেসি তার নষ্ট হতে পারে।
এককথায়, একটা কমিউনিটির ভেতরে হলেও চিঠি লেখাকে, চিঠি পাওয়ার জন্য মধুর অপেক্ষাকে বাচিয়ে রাখতে হবে।

আমি একা সাহস পাচ্ছি না। আপনারা অন্তত কয়েকজন সহমত হলেই শুরু করা যেতে পারে। ইতোমধ্যেই দু'য়েকজন সিনিয়র ব্লগারদের সাথে কথা বলেছি। তারা অনেক সাহস দিয়েছেন। এখন আপনাদের হাতে।

আরেকটা কথা, চিঠিও কিন্তু একধরণের ব্লগিং। চিঠির কাজ কি? মনের ভাব লিখে দেয়া, পছন্দের একটা গল্প পাঠিয়ে দেয়া, অনেক রাত ধরে লেখা একটা কবিতা প্রেয়সীকে উপহার দেয়া। এগুলোই তো। শুধু ব্লগে আপনার অনেক পাঠক থাকে, আর চিঠি একজনই পড়ে। কিন্তু এটা আপনাকে শতভাগ গ্যারান্টি দিতে পারি এই শত শত পাঠক এর চেয়ে যে একজন আপনার চিঠি পড়বে সে বেশি নাড়া খাবে, তার হৃদয়ে বেশি কম্পনের তৈরী হবে।

"ভালো আছি ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ।"


_আপনাদের মন্তব্য এবং পরামর্শের অপেক্ষায় থাকলাম।


পুনশ্চঃ

চিঠি নিয়ে অনেক ব্লগারের অনেক দারুণ দারুণ সব পোস্ট আছে।
* ব্লগার মামুন রশিদ ভাইয়ের পোস্ট চিঠি লিখেছে সে আমায় ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে

* ব্লগার স্বপনবাজ অভি ভাইয়ের পোস্ট চিঠিঃ সহস্র মাইল দূর থেকে চন্দ্রাহত প্রেমিক !!!! , একটি অসমাপ্ত চিঠি !! এবং এলোমেলো চিঠি !

* ব্লগার আরজু পনি আপুর পোস্ট প্রিয়তমেষু (প্রেমপত্র নয়, ব্ষপূর্তিতে এটি একটি অভিমানি পত্র)
আমি বেশি খুজি নাই, খুজে পেলে আরও লিঙ্ক দিব।

নোটঃ

##প্ল্যানের কিছু কারেকশন করা যেতে পারে। যেহেতু ঠিকানা পাবলিক করে দেয়া সবার জন্য মোটেও কমফর্টেবল না। এক্ষেত্রে গুগল ডকে সবার এড্রেস নেয়া যে্তে পারে। এবং নাম্বারিং করে ঠিকানাগুলো গ্রুপে থাকতে পারে। পুরুষদের ঠিকানা এক কোডের এবং মেয়েদের ঠিকানা এক টাইপ কোড দিয়ে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১১
৩৬টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×