সেমিস্টার ফাইনালের পিএল চলছিল সম্ভবত। চিলেকোঠার ঘরটি থেকে নেমে দুপুরের খাওয়ার জন্য হোটেলে যাচ্ছিলাম দুই বন্ধু।বাড়িতে বেকারি থাকায় গেটের সামনে প্রায় সবসময়ই রিকশা, গাড়ি থাকত।সেদিনও একটা রিকশার পাটাতনে বসে হাসফাস করছিল প্রায় ৬০ বছরের এক বুড়ো চাচা। ভাবলাম প্যাডেল মেরে হাপিয়ে গেছেন বোধহয়। ভালভাবে লক্ষ করে দেখলাম তার হাতে একটা ইনহেলার।জিজ্ঞেস করাতে বলল তার হাপানির টান ঊঠছে। সকালে রিকশা নিয়ে বের হইছেন কিন্তু হাপানির জন্য ভাড়া মারতে পারছেন না। ইনহেলারের দাম ১৮০ টাকা। পকেটে অত টাকা ছিল না। তবে ড্রয়ারে গ্রুপের ফান্ডের কিছু টাকা ছিল।২০০ টাকা নিয়ে এসে বললাম ‘১৮০ টাকা দিয়া ঔষধ কিনবেন আর ২০ টাকা রিকশাভাড়া। আমাদের পকেটগেটে রেখে আসেন’।
দুইটা প্যাডেল মারতেই বুঝে গেলাম তিনি অসহায়। রিকশা থেকে নেমে গেলাম।
তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলল চাচা ‘বাবারে! কালকে দুপুরে শ্যাষ ভাত খাইছি। বাড়িত বউ, ছেলেমেয়ে না খেয়ে আছে। বাড়িত বলছি চাউল নিয়া বাড়িত যাব। কিন্তু দুপুর হয়ে গেল একটাকাও রোজগার হইল না। এখন সমস্যা নাই। ঔষধ টা নিয়াই ভাড়া মারা লাগবে’।

কিছু বলি নাই শুধু জিজ্ঞেস করলাম ‘চাচা, এই শরীর নিয়াও আপ্নে এই স্বপ্ন দেখেন যে চাউল কিনে বাড়ি যাবেন!!!?’ উত্তরটা এত দারুণ ছিল ‘পরিবারের আমিই একমাত্র ভরসা রে বাপ। সবাই না খেয়ে আছে।কি হইবে হউক! চাউল না কেনার আগে বাড়ি যাব না।‘ :-&
সেদিন থেকেই দিনমজুর-শ্রমজীবী মানুষের উপর শ্রদ্ধাটা অনেক বেড়ে গিয়েছে। নিজেরই বাচা-মরার ঠিক নাই অথচ ইতিনি চাউল কিনেই বাড়ি যাবেন! কি দারূণ দায়িত্বশীলতা! এমন লোককে শ্রদ্ধা করব নাতো কাকে করব!
কিন্তু আজ দেখলাম এক রিকশাওয়ালার রিকশা ভেঙ্গে ফেলছে পিকেটাররা। শ্রদ্ধার মানুষগুলো আমাদের কাছে শ্রদ্ধা না পেলেও তাদের চলবে কিন্তু তাদের জীবনযাপনের হাতিয়ারটিও কেড়ে নেয়ার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে!রাস্তাঘাটে কত অপমানই তো সহ্য করেন তারা! কোন প্রতিবাদই করেন না, নিজের পেট বাচানোর জন্য, তার দিকে চেয়ে থাকা ঐ ক্ষুধার্ত মুখগুলোর জন্য।
দালালগুলো, নরপিশাচগুলো, হায়েনাগুলোকে থামানোর জন্য আমি কিছুই করতে পারব না।কিন্তু আপনারা যারা নিজেকে সচেতন ফেসবুক ইউজার ভাবেন তারা আসুন খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য একটু শ্রদ্ধার জায়গা রাখি।এইটুকু তো আমরা করতেই পারি , তাই না? যদিও এগুলো ছাড়াই তারা খেটে যাবেন নিদারুণ দায়িত্বশীলতা নিয়ে।