পরশু রাতের সেই পুলিশী ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে গিয়েছিলাম তেজগাঁও থানায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সৌজন্যমূলক আচরণ ভালো লেগেছে। সেই পুলিশ কনস্টেবলকে তিনি নিজেই একদিনের ভেতর খুঁজে বের করে সামনে এনেছেন এবং থানাভর্তি সাধারণ মানুষ ও পুলিশদের সামনে সতর্ক করেছেন, সংশোধন হতে বলেছেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে একটি হাদিস শুনিয়ে ক্ষমার মহত্ত্ব বর্ণনা করে তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখি। আমার দৃষ্টিতে 'ক্ষমা মহৎ গুণ' কথাটা ঠিক আছে, কিন্তু দুষ্টের দমন না করলে তো সে আবারও দুষ্টুমি করার সুযোগ পাবে এবং তার কারণে শিষ্টের পালন সম্ভব হবে না। তাই তো যেকোনো সভ্য দেশেই আইন থাকে এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিচার ব্যবস্থা থাকে, সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থাকে।
আসলে আমার দৃষ্টিতে ক্ষমা করা না করাটা এখানে মুখ্য বিষয় নয়, বরং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যাতে না ঘটে সেটাই কাম্য। আমি স্পষ্ট ভাষায় দাবি করেছি, এমন অভিজ্ঞতা যেন আর কারো নাহয় সেই দিকে তিনি যেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কঠোর দৃষ্টি রাখেন। পরে তাঁর আদেশে সেই রাতের গোটা টহল টিমসহ সেই কনস্টেবল হাজির হয়ে সবার সামনে তার দুর্ব্যবহার এবং অযথা ভোগান্তির কথা শিকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। আর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজল ভাই দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন, তাঁর এলাকায় এই ধরণের ঘটনা আর ঘটবে না।
আমার চাওয়াটা ছিলো এটাই, আর কেউ যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়। আমি তো একা নিজের জন্য থানায় যাইনি। আমি গিয়েছিলাম গোটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে। আমার গত স্ট্যাটাসে অনেকেই একইরকম বাজে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন কমেন্টে। আমি তাঁদের পক্ষ থেকে গিয়েছিলাম। আমরা বেশিরভাগ মানুষই এক-দুইজন পুলিশের দুর্ব্যবহারের কারণে সব পুলিশকে দোষ দেই, কিন্তু কেউ থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে চাই না। অভিযোগ না জানালে ব্যবস্থাটা নেবে কীভাবে?
সত্যিই, কিছু পুলিশের কর্মকাণ্ডের কারণে সব পুলিশের বদনাম হয়। এটা মোটেও ঠিক না। অনেক অনেক সাফল্যের মুকুট আছে বাংলাদেশ পুলিশের ঝুড়িতে, ভুলে গেলে চলবে না। পুলিশ জনগণের বন্ধু। তাঁদের থেকে সাধারণ জনগণ সুন্দর ব্যবহার ও সেবা আশা করে। পুলিশের সঙ্গে জনগণের তো কোনো শত্রুতা নেই।
তবে আইনগতভাবে রাস্তাঘাটে পুলিশের অধিকার আছে আপনাকে চেক করার। আপনি তাদেরকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করুন। কিন্ত আপনার কোনো দোষ না থাকার পরেও এবং কোনো ত্রুটি পাওয়া না গেলেও যদি কেউ বাড়তি ভোগান্তি সৃষ্টি করে বা বাড়তি কিছু চায়, তবে সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করুন। আমার আশা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার কথা মনযোগ দিয়ে শুনবেন এবং ব্যবস্থা নিবেন। না নিলে তখন আপনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যাবেন। কিন্তু প্রতিবাদ তো করতে হবে। ছেড়ে দিলেই অন্য কারো সাথেও এমনটা করার সাহস পাবে।
পুলিশের নিচের পোস্টগুলোতে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষাগত যোগ্যতার কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়; যার কারণে অনেকের থেকেই আশানরূপ ভদ্র ব্যবহার ও সেবা পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন একজন এসআইকেও ন্যূনতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরিতে প্রবেশ করতে হয়। আর বিসিএস দিয়ে এএসপি পদে তো দেশের সবচেয়ে যোগ্য ছেলেরা আসছেই। তাই আমি আমাদের পুলিশদের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।
আরেকটা কথা, ওসি কাজল ভাই বলেছেন, আমার মতো ছেলের নাকি বিসিএস দিয়ে পুলিশে জয়েন করা উচিৎ! আমার মতে সেটা ভাইয়ের অতিরঞ্জন, আমি এর যোগ্য নই। আসলে আমার একার পক্ষে তো গোটা সিস্টেমকে বদলানো সম্ভব না। তবে আমি আমার জায়গা থেকে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে আমার কাজটা করার চেষ্টা করি এবং আগামীতেও করবো-- এটুকু কথা দিতে পারি। আপনারাও যার যার জায়গা থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখুন, সত্য ও সুন্দরকে উৎসাহিত করুন। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে অচিরেই সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবো, এই স্বপ্ন আমি দেখি।
গত দুইদিন যারা সঙ্গে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:১২