somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কেন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছি?

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ যাবার পথটুকু সাধারণত পায়ে হেঁটেই যাই। দূরত্ব বেশি নাহলেও এটুকু পথেই দুই থেকে তিনবার জ্যামে আটকে থাকতে হয়। এর চেয়ে হেঁটে যাওয়া শরীরের জন্য উপকারী এবং সময় বাঁচে। গত ১৮ নভেম্বর রাতেও হেঁটে ফিরছিলাম। তখন বাংলামোটর মোড়ের কাছাকাছি। দেখলাম, নিষেধ থাকা স্বত্বেও কয়েকটি রিক্সা-ভ্যান এই রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। এটা অবাক হবার মতো বিষয় নয়, সয়ে গেছে। অবাক হলাম তখন, যখন দেখলাম, বস্তাবোঝাই একটি ভ্যানকে থামানো হলে এক কথা-দুই কথায় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ভ্যানচালক ট্রাফিক পুলিশের সহকারির গায়ে হাত তুললো! হ্যাঁ, চর-থাপ্পড়-ঘুষি! প্রথমে সে একা, তারপর ভ্যানের বস্তার ওপর বসে থাকা দুজন যাত্রী নেমে এসে সদলবলে! সুযোগ বুঝে সাথের আরেকটি বস্তাবোঝাই ভ্যানের চালক-যাত্রীরাও এসে তাদের সাথে যোগ দিল। বেচারা হতবম্ব হয়ে মার খেয়ে যাচ্ছে, হাতের লাঠি তাঁর রাস্তায় পড়ে গেছে, তুলতে পারছে না। আরও অবাক করা ব্যাপার, এই দৃশ্যটি পাশের ফুটপাথের পথচারীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না। যেন বাঁধা দিয়ে ব্যাটা বড্ড বেআইনি কাজ করে ফেলেছে! ওর যেন মার খাওয়াটাই উচিৎ! অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা দুজন পথচারী যখন তাঁকে উদ্ধারে ব্যস্ত, ভ্যান নিয়ে তাদের ততক্ষণে কেটে পড়া সারা। পুলিশের সেই সহকারি তখনও হতভম্ব, যেন ভয় পেয়েছেন। আমরা তাঁকে অভয় দিয়ে বললাম, “আপনি যদি নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে না পারেন, তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন কিভাবে?”

আপনি ভাবছেন, তিনি সততার পরিচয় দিয়েছেন? নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে, যে মুচলেকা নিয়ে বনিবনা হয়নি! অসম্ভব কিছু না। আবার, ঢাকায় গাড়ি যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে বাড়েনি সড়ক। যে যার ইচ্ছামতো গাড়ি চালায়। হঠাৎ লেন পরিবর্তন করে, যেখানে খুশী গাড়ি পার্ক করে। ফিটনেস নেই বেশিরভাগেরই। যেন দেখার কেউ নেই। সিগনাল বাতিগুলো জ্বলে আর নেভে, তাতে সংযুক্ত ডিজিটাল ঘড়ির সময় গণনা শেষে আবার শুরু হয়। কিন্তু তাতে ‘ট্রাফিক কন্ট্রোল’ হয়না, শুধু শুধু অনেকখানি বিদ্যুৎ খরচ হয়। ফুটপাথ হকারদের দখলে, মাঝে মাঝে দখলে যায় বাইকেরও! পথচারীও তাই রাস্তায় নেমে আসে, ঘটে দুর্ঘটনা। এভাবেই অনিয়মে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে সবাই। এই অভ্যস্ততার পরিণাম ভালো নয়।

২. অনেকগুলো প্রাণ নিয়ে পদ্মায় ডুবে গেল এমভি পিনাক-৬। ভিডিওতে লঞ্চটির ডুবে যাওয়া দেখে শিহরিত হননি- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই ঘটনায় অনেকেই গালি দিয়েছেন যাত্রীসাধারণকে। বলেছেন, এতজন একসাথে উঠেছো কেন? অথচ, প্রশ্নটা হওয়া উচিৎ- ‘এতজন একসাথে উঠিয়েছে কেন?’ প্রশাসন দুর্ঘটনার পর কিছুটা তৎপরতা দেখায়, অতঃপর কিছুদিন গেলে ঐ যা-তাই। ঈদ-পূজার ভীরের সুযোগে লঞ্চে বেশি যাত্রী ‘ওরা’ ওঠাবেই। ফেরী পর্যাপ্ত নয়। আপনাকেও উঠতে হবে ঐ ভীরের মাঝেই। পর্যাপ্ত লাইফজ্যাকেট নেই, বেঁচে পার হওয়া অনিশ্চিত জেনেও আপনি উঠবেন। কারণ, না উঠে পাড়ে বসে থাকাটা কাজের কথা নয়। আর সেখানে প্রতিবাদ করতে গেলে আপনি হবেন অপমানিত-লাঞ্ছিত।

৩. সত্যি বলতে কি, এখানে নিয়ম করাই হয় যেন ভাঙ্গার জন্য! জীবিকার তাগিদে জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পথে বের হই আমরা। প্রথম প্রথম কেউ কেউ চেষ্টা করি ‘সিস্টেম’কে বদলাতে। কিছুদিন পর ‘সিস্টেম’ নিজেই আমাদেরকে বদলে দেয়। তারপর আমরা হয়ে উঠি আত্মকেন্দ্রিক, যেকোন উপায়ে ‘বড়’ হতে চাই। দেশটাকে নিয়ে ভাবি না কেউ। এভাবেই চলতে থাকে যদি, তবে একবার ভাবুন তো- এই দেশের ভবিষ্যৎ কি?

-দেব দুলাল গুহ
[ ছাপা হয়েছে ২৩/১১/২০১৪ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাক এর দৃষ্টিকোণ পাতা: Click This Link ]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন আলো

লিখেছেন মোরতাজা, ০২ রা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১১


ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া

দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ, রাজনীতিতে নতুন দিনের সূচনা করতে সক্ষম হবে, এটা রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমার পর্যবেক্ষণ।
যে দেশের মানুষ বৃদ্ধ-নেতৃত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হোয়াইট হাউস ‘ঘাড়ধাক্কা’ দিলেও বুকে টেনে নিল ব্রিটেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:২৪




ওভালে অনর্থর পর কী হবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির পরবর্তী পদক্ষেপ? তা ছিল লাখ টাকার প্রশ্ন। আমেরিকার সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ-চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে কার্যত ঘাড়ধাক্কা... ...বাকিটুকু পড়ুন

গভীর অরন্যে! Into the wild

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০২ রা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭



“Into the Wild” ২০০৭ সালে সত্য ঘটনার উপর নির্মিত হলিউডের একটি মাষ্টারপিস ছবি। ছবির পেক্ষাপট কিছুটা এরকম- সদ্য ইউনিভার্সিটি শেষ করা, আমেরিকান আলালের ঘরের দুলাল ক্রিস্টোফার জীবনের মানে খুঁজতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইফতারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১৩



খুব ছোট বেলায় রোজার দিনে সকালে উঠে হাউকাউ শুরু করতাম আমাকে সেহরিতে ডাকা হয়নাই কেন । সবাই হাসত , আমি আরও খেপতাম । তারপর একদিন উঠেই পড়লাম ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কার কার্যক্রম ঢিলেঢালা ভাবে চলার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ ভোর ৬:১৮


ইন্টেরিম সরকার ছয়মাস পার হয়ে সপ্তম মাসে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। সরকারের দেশ চালানোর ক্রিয়াকর্মে যেমন ভালো দিক রয়েছে ঠিক মন্দ ঘটনা ঘটেছে প্রচুর। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ইন্টেরিম সরকার যেহেতু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×