হায়দারাবাদের ডায়েরী….
লাইফ ইন এনআইআরডি ক্যাম্পাস (০৬/০৫/২০১৫)
প্রচন্ড গরম পড়েছে। হাসফাস অবস্থা। হায়দারাবাদে আজ দিনের বেলা তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রী। এখন অবশ্য একটু কম। মোবাইল অন করে দেখলাম ৩৭ ড্রিগ্রী। রাত ১টার মতো বাজে। কিন্তু ঘুম আসছে না। একবার ভাবলাম ল্যাপটপে সিনেমা দেখব। আগ্রহ পাচ্ছি না। দুইরুমের কোয়ার্টারে এরুম-ওরুম হাটছি। ভালো লাগছে না। কেন যেন অস্থির লাগছে…
দরজা খুলে বের হলাম। কোয়ার্টারের সামনে লাগোয়া রাস্তা। রাস্তা ঘেসে দাড়িয়ে আছে একটি ল্যাম্পপোষ্ট। ল্যাম্পপোস্টের একটু দূর দিয়ে নিম গাছের সাড়ি। এনআইআরডি ক্যাম্পাস জুড়েই অসংখ্য নিম গাছ। আমি রাস্তায় এসে দাড়ালাম। সরলরেখা রাস্তার দু’পাশে সমান দূরত্ব রেখে ডুপ্লেক্স স্টাফ কোয়ার্টার। আমার কোয়ার্টার নম্বর এ-১০। রাস্তার একদম শেষ প্রান্তে। তারপরই ক্যাম্পাসের বাউন্ডারি। অন্যপাশে আরএকটি প্রতিষ্ঠান। টাটা ইনসটিটিউট অফ সোসাল সাইন্স এর ক্যাম্পাস। হায়দারাবাদ হচ্ছে ডেভলপমেন্ট রিলেটেড বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস নগরি। ছোট-বড় প্রায় ৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস রয়েছে হায়দারাবাদে…
এখনও অনেক কোয়ার্টারে লাইট জ্বলছে। গরমের কারনে হয়তো আমার মতো তারাও ঘুমোতে পারছে না। জেগে আছে। আমার কোয়ার্টারের পাশেই আমার ক্লাসমেট শ্রীলংকার রোকসান তিলাকারত্নের কোয়ার্টার। রোকসানের রুমের ঠিক ওপরে থাকে ঘানার জন। দু’জনের রুমেই লাইট জ্বলছে। তারমানে ওরাও ঘুমায়নি।
রাস্তার ওপাড়ে একপাশে ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে লুকি ও অন্যপাশে ফিজির মেলে। ওপরে ভিয়েতনামের কুয়ান। লুকি ও মেলে ছুটি নিয়ে ঘুড়তে গেছে গোয়ায়। ওদের রুমের লাইট অফ। কুয়ানের রুমের লাইট তখনও জ্বলছে…
আমি আস্তে-আস্তে হাটছিলাম। বাইরে ঘরের থেকে তুলনামূলক গরম একটু কম। হাটতে ভালই লাগছিল। হঠাৎ একটা পাখি ডাকার শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি নিমগাছের একটি ডালে দুটি প্যাঁচা বসে আছে। অনেক-অনেক দিন পর প্যাঁচা দেখার সৌভাগ্য হলো। কিন্তু প্যাঁচার ডাক যে এরকম ভয়ন্কর তাতো ভুলেই গিয়েছিলাম। দাড়িয়ে-দাড়িয়ে প্যাঁচার কান্ড দেখছিলাম।
দেখলাম রোকসান বেরিয়ে এসেছে। তার একটু পরে আমাদের শব্দ পেয়ে ঘানার জনও বেড়িয়ে এল। সবার বক্তব্য একটায়- ইট ইজ ভেরি মাচ ডিফিকাল্ট টু স্লিপ… জন ডাকলো কুয়ানকে। কুয়ানও বেড়িয়ে এল। রাস্তায় দাড়িয়ে আমরা গল্প করছিলাম। শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম,ঘানা ও বাংলাদেশ। গল্প চলছে। আমরা সবাই বিবাহিত। সবারই সন্তান আছে। ঘুরেফিরে শুধু পরিবারের কথা চলে আসছে। সবাই অপেক্ষা করছে কবে দেশে ফিরবে।
ভিয়েতনামের কুয়ান আসার পর থেকেই ভাষাগত সমস্যাই ভুগছে। একদমই ইংরেজী বলতে পারে না। তবে আস্তে-আস্তে জড়তা কাটছে। নিজের কথা, তার দেশের কথা আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। জনের বয়স ৪৩। সেও তার পরিবারকে খুব মিস করছে। আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতা হযেছে শ্রীলংকার রোকসানের সাথে। অসাধারন একটি ছেলে। রোকসানও ফেডআপ। সবাই-সবাইকে সান্তনা দিলাম এই বলে যে, আর মাত্র আড়াই মাস। কাউন্ট-ডাউন্ট শুরু…
গল্প করতে-করতে কখন দুইটা বেজে গেছে আমরা বুঝতেই পারিনি। সবাই যে যার মতো গুড নাইট জানিয়ে রুমে ফিরে এলাম। কিন্তু তখনও ঘুম আসছে না। ছেলে ও আব্বার কথা খুব মনে পড়ছে..।
স্কাই পিতে যখনই ছেলের সাথে কথা বলি। তার বক্তব্য একটাই তার জন্য খেলনা গাড়ি,ট্রেন,বিমান কিনে নিয়ে কেন তাড়াতাড়ি আসছি না। কবে আসব? তুমি ওখানে কি কর? যদি বলি লেখাপড়া করতে এসেছি। তখন বলে এত লেখাপড়া কর কেন? অসংখ্য প্রশ্ন। বুঝতে পারি আমার ছেলে আমাকে খুব মিস করছে। যেমনটি করছি আমি…।
লাইট বন্ধ করে একরকম জোড় করেই বিছানায় আসলাম। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় মগ্ন হলাম….ঘুম আসছে না… ভাবছিলাম, পরিবার-পরিজন ছেড়ে লাখ-লাখ মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার মতোই প্রবাস জীবন যাপন করছে…সবার কষ্ট এরকমই… আমি তাদের কষ্ট অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম……