একজন সহ ব্লগার হুতুম ভাইয়ের “এই চেতনা লইয়া আমরা কি করিব”—নামক পোস্টটা পড়ে কিছু মন্তব্য করার ইচ্ছা হলো, কিন্তু মন্তব্যের আকার বড় হয়ে যাচ্ছে দেখে আলাদা পোস্ট আকারে দিলাম।
একজন সহ ব্লগারের পোস্টে পড়লাম, ফারুকী সাহেব বলেছেন, "হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন আরব ভূখণ্ডে চালু পূর্বতন সব ধর্মগ্রন্থকেই স্বীকৃতি দিয়ে নিলেন। "---- ভাই এ রকমতো আমার জানা নাই। নবীজী কখন অন্য ধর্মগ্রন্থকে অর্থাৎ ধর্মকে স্বীকৃতি দিলেন? যেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।
এখানে আমার মতামত হলো, ইসলাম ধর্ম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সুতরাং এর সঙ্গে অন্যান্য নিয়মের জীবন ব্যবস্থার পার্থক্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। ইসলাম একটি ধর্ম, নিয়ম আর মুসলিমরা হলো একটা জাতি। মুসলিমদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, রয়েছে চলার পথে প্রতিটি কার্যকলাপ কিরুপ হবে তার দিক নির্দেশনা। সুতারাং ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিটি মুসলিম তার সংস্কৃতির বিপরীত সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করার অধিকার রাখে।
তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে বাঙ্গালী জাতি আর মুসলিম জাতির এই পার্থক্য কিভাবে ঘুচবে? সত্যি কথা বলতে, আমি বিশ্বাস করি,
হয় এর যেকোনো একটাকে বিলীন হতে হবে। কারন দুইটা বিপরীত সংস্কৃতি কখনই একজন মানুষের ধর্মীয় স্বকীয়তা বজায় রেখে পালন করা সম্ভব নয়।
নতুবা, সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে হবে, যেমন বাঙ্গালী হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি এবং বাঙ্গালী মুসলিম সংস্কৃতি।
আমি আগেই বলেছি, ধর্মের পার্থক্যের কারনেই সংস্কৃতি সার্বজনীন হতে পারে না, সেই সাথে সংস্কৃতির উৎসবগুলো। একজন হিন্দু যেমন কোনো ভাবেই কুরবানীর ঈদকে গ্রহন করতে পারে না, তেমনি একজন মুসলিমও পূজা পার্বন বা এর সংগে সংগতিপূর্ণ কোনো আচার ব্যবস্থা মেনে নিতে পারবে না। মসজিদে আযান দিলে যেমন একজন মুসলিমের হৃদয়ে আল্লাহর এবাদতের টানে ব্যাকুল করে, তেমনি মন্দিরে ঢোল বা শঙ্খধ্বনি হলে একজন হিন্দুর অন্তরও নেচে উঠে। সুতরাং এখন যদি আমি মসজিদে আযান দিয়ে সকল হিন্দুদের মসজিদে সেজদা দিতে বলি এটা যেমন অসামঞ্জনস্যপূর্ণ তেমনি মুসলিমদেরও ঢোল ও শঙ্খধ্বনিতে নাচাও সমানভাবে অসামঞ্জনস্যপূর্ণ।
তাহলে অনেকেই হয়তো বলবেন, মুসলিমরাতো তাহলে বাঙ্গালী সংস্কৃতির নয় বা তাহলে তো তারা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নয়।এখানে আমার একান্ত মতামত হচ্ছে, (আমি আবারো বলছি এটা আমার একান্ত মতামত, এতে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে এই অধম বান্দা আন্তুরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।)এরকমটা কখনই হওয়া উচিত ছিলনা। বাঙ্গালী সংস্কৃতি যদি শুধু হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি হয় তাহলে মুসলমানরা তার সাথে একাত্মতা কিভাবে জানাবে? বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে আমরা এই ভূখন্ডের দুইটি প্রধান সংস্কৃতি যথা হিন্দু ও মুসলমান সংস্কৃতির মধ্যে মিলিয়ে ফেলেছি। আমরা তেল আর জলকে এক সঙ্গে জোড় করে মিলিয়ে ফেলতে চাইছি।তেলকে তেলের জায়গা আর জলকে জলের জায়গা ছেড়ে দিলেই বিবাদ কিন্তু মিটে যায়। কিন্তু আমরা তা করছি না। আমরা জোড় খাটাচ্ছি।
তাহলে প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি কি হবে? অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো একক সংস্কৃতি হতে পারেনা যতদিন বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকজন বাংলাদেশে বাস করছে। অবশ্যই মুসলিম, হিন্দুয়ানী, ক্রিষ্চিয়ান, বৈদিক সকল সংস্কৃতি বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং যে যার যার সংস্কৃতি পালন করবে।সেখানে যদি হিন্দু জনগষ্ঠির সংখ্যা বেশি থাকে বা মুসলিম জনগষ্ঠির সংখ্যা বেশি থাকে তাহলে হয়তো রাষ্ট্রে গঠনে সেই জনগষ্ঠির প্রভাব পড়বে, তারাই হয়তো নেতৃত্ব দিবে বাংলাদেশকে। এখানে বিবাদের কিছু নাই। এভাবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে কোনো নির্দিষ্ট একটা সংস্কৃতির রীতিনীতি পালন করা বা তা রাষ্ট্রের প্রধান সংস্কৃতি
করে তা যারা পালন করবে না তাদের জাতীয়তা নিয়ে পশ্ন তোলা মোটেও উচিত হবে না।