somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্য সুর

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফটোগ্রাফি বিষয়টার প্রতি আমার একটা অন্যরকম শ্রদ্ধা আছে। কারণ কিছু কিছু ছবি আছে যে ছবিগুলো শুধু ছবি হয়ে থাকেনা। ওই এক মুহূর্তের ভেতরেই যেন অনেক কথা, অনেক না বলা গল্প বলা হয়ে যায়। ইদানিং ইন্টারনেটে ঘুরতে ঘুরতে তেমনি কিছু ছবি পেয়ে গেছি। ছবিগুলো দেখে আমার মনে তীব্র আবেগ তৈরি হয়েছে। আমি আজ চেষ্টা করবো আপনাদের মাঝে এই আবেগ কিছুটা হলেও ছড়িয়ে দিতে। তাতে আমার মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
১) বলা হয়ে থাকে একজন পিতার জন্য সবচেয়ে কষ্টের ঘটনা হল তার সন্তানের লাশ নিজের কাঁধে বহন করা। কথাটা কতখানি সত্যি সেটা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবেন। কিন্তু সন্তানকেও যখন তার পিতার লাশ বহন করতে হয়, সেই বেদনা কি তার চাইতে কোন অংশে কম? কষ্ট পরিমাপের কি কোন যন্ত্র আছে? থাকলে হয়তো জানা যেত।
নিচের ছবিটাতে যে বালককে দেখছেন তার নাম ক্রিশ্চিয়ান গ্লোকজিনিস্কি। বয়স আট বছর। পিতার নাম সার্জেন্ট মার্ক গ্লোকজিনিস্কি। যিনি পেশায় একজন মার্কিন মেরিন সেনা।



মার্ক যখন দ্বিতীয়বারের মতো ইরাকে অভিযানে যায় তখন সে তার ছেলেকে কথা দিয়েছিল এবার আর আগের মতো দেরী হবে না। এবার সে আগেভাগেই ফিরে আসবে। কেউ একজন হয়তো ওর কথাটা শুনে ফেলেছিল। কারণ সে তার ছেলের কাছে ফিরে আসলো ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। বাড়িতে ফিরে আসার মাত্র এক সপ্তাহ আগে, রুটিন পেট্রোলে বেরিয়ে আততায়ীর গুলিতে মার্ক প্রাণ হারায়। মার্ক জানতো না বিধাতা অত্যান্ত নিষ্ঠুরভাবে রসিকতা করতে পছন্দ করেন।
এই ছবিটা মার্কের মেমোরিয়াল সার্ভিসের দিনে তোলা। সেদিন আট বছরের ক্রিশ্চিয়ানের হাতে তার বাবার পতাকাটি তুলে দেয়া হয়।
আগের দিন ছোট্ট ক্রিশ্চিয়ানের মা হয়তো তাকে বলে দিয়েছিল, “বাবা, তুমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছ। এখন তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। মেমরিয়ালের দিন তোমার হাতে যখন তোমার বাবার পতাকাটা দেয়া হবে, তখন তুমি অবশ্যই কাঁদবে না।”
ক্রিশ্চিয়ান তার মায়ের কথা যে রাখতে পেরেছিল সেটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ছবিটা দেখে আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আট বছরের এক বালকের কাছে আমি হেরে গিয়েছি।

২) দ্বিতীয় ছবিটা খুবই মজার। ছোট্ট হ্যারল্ড হুইটেলস কানে শুনতে পেত না। “কেন” সেটা জানা গেল না। ডাক্তার তার বাঁ কানে শ্রবণযন্ত্র লাগিয়ে দেবার পর, প্রথমবারের মতো “শুনতে” পেরে তার কেমন লেগেছিল সেটা ছবিতে তার বিস্ময়াভিভূত অভিব্যাক্তিতেই স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে; কিছু বলার প্রয়োজন নেই।




৩) আমরা আমাদের আশে পাশে এমন অনেক লোক খুঁজে পাবো যাদেরকে আমরা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখি। আদর করে আমরা তাদের “তারছেঁড়া” বলে সম্বোধন করি।
এই ছবিটায় এমনই একজন “তারছেঁড়া”কে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে (ডানে)।
তার নাম হোরেস গ্রিজলি। হোরেস গ্রিজলি কি করেছে সেটা জানার আগে তার উল্টো পাশে কে দাঁড়িয়ে আছে সেটাও আপনাদের জানা দরকার। এই লোকের নাম হাইনরিখ হিমলার। নাৎসি কয়েদখানায় বন্দী অবস্থায় থাকার পরও হোরেস যে অবজ্ঞা মেশানো দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে, তারছেঁড়া না হলে তার দিকে এভাবে কেউ তাকানোর সাহস করার কথা না।




হোরেস নিজেও কম যায় না। হোরেস বোধহয় মনে মনে ভেবেছিল, ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি। জার্মান বাহিনী এই ডানপিটে ছেলেকে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে রাখতে পারে নি। সে বীরদর্পে বন্দিশালা থেকে পালিয়েছে। শুধু তাই না। সে পরবর্তীতে কমপক্ষে ২০০ বার লুকিয়ে এই বাঘের খাঁচায় ঢুকেছে তার জার্মান প্রেয়সীর সাথে দেখা করার জন্য।
শালা বাঘের বাচ্চা!

৪) প্রেয়সীর কথা যখন উঠলোই তখন আরও একটি অসাধারণ ছবির কথা বলতে হয়। ছবিটা হয়তো অনেকেই দেখেছেন। তারপরও এটা নিয়ে কিছু কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না।
ভ্যাঙ্কুভার, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া। সম্মানজনক Stanley Cup এ Boston Bruins যখন Vancouver Canucks কে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় তখন ব্যাপারটা কানাডিয়ানদের কাছে ভালো লাগেনি। শুরু হয় মারামারি, দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে দাঙ্গা বেঁধে যায় মুহূর্তেই।
দাঙ্গা ভয়াবহ আকার ধারন করলে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকেও একসময় মারমুখী অবস্থান নিতে হয়। সেই গোলেমালে পুলিশের ঢালের আঘাতে সুন্দরী এলেক্স থমাসও মাটিতে পড়ে যায়।
এই ছবিটায় অস্ট্রেলিয়ান স্কট জোন্সকে তার কানাডিয়ান প্রেয়সী এলেক্স থমাসকে চুমু খেতে দেখা যাচ্ছে।



সামন-পেছনে রায়ট পুলিশের মারমুখী অবস্থান, স্ট্রিট লাইটের ঘোলাটে আলোতে ভালবাসায় আলিঙ্গনাবদ্দ এই দুই মানব মানবীর চুমু খাবার দৃশ্যটা গায়ে কেমন যেন নিষিদ্ধ শিহরণ জাগিয়ে তোলে। বারবার তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে। মাস্টার পিস।

৫) Earthrise (বাংলায় ভালো কোন নাম খুঁজে পেলাম না।)

১৯৬৮ সালে অ্যাপোলো-৮ অভিযানের সময় নভোচারী উইলিয়াম অ্যান্ডারসের তোলা চন্দ্রপৃষ্ঠে পৃথিবীর উদয় হবার ছবি। বড়ই আচানক দৃশ্য।



৬) ২০১১ সালে সুনামিতে জাপান বিধ্বস্ত হবার পর, ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকৃত একটি কুকুরকে তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেবার সময়কার আবেগঘন দৃশ্য।



৭) এটাও সুনামিতে সব কিছু হারানো এক নিরুপায় মানুষের কান্নার ছবি। ধ্বংসস্তূপের মাঝে সে হয়তো একমাত্র এই ছবির অ্যালবামটিই খুঁজে পেয়েছে। তার হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের ছবিগুলো কি এই দুঃখী মানুষটাকে একটুও সান্ত্বনা দিতে পেরেছে?




৮) আবারো সুনামি।
৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধারকারী সৈন্যরা ইট-সুরকির জঞ্জালের তলা থেকে এই চার মাস বয়সী শিশুটিকে সুস্থ্য অবস্থায় একটি আরামদায়ক নরম গোলাপি কাঁথায় মোড়ানো অবস্থায় অবিস্কার করে। সুবহানাল্লাহ!



৯)“La Jeune Fille a la Fleur”
ছবিটা ১৯৬৭ সালের ২১শে অক্টোবর তোলা। মার্ক রিবাউডের তোলা বিখ্যাত এই ছবিটায় দেখা যাচ্ছে, শান্তিকর্মী তরুণী জেন রোজ পেন্টাগনের সামনে দাঁড়ানো সশস্ত্র সৈনিকদের বেয়নেটে ফুল গেঁথে দিচ্ছেন।





ওই দিন ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার প্রতীক পেন্টাগনের সামনে সাধারন মার্কিন জনগন প্রতিবাদ জানাচ্ছিল।
এই ছবিটা পরবর্তীতে এতোই জনপ্রিয়তা পায় যে সেটা “Flower Power movement” এর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।


১০) ছবিটায় একজন রাশিয়ান বৃদ্ধকে একটি ট্যাংকের সামনে নতজানু হয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই বৃদ্ধ সমরযোদ্ধা একসময় এই ট্যাংকে করে নানান যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কালক্রমে তার প্রিয় ট্যাংক ঠাই নিয়েছে জাদুঘরে। কিন্তু তিনি তার প্রিয় ট্যাংকে কাটানো তার জীবনের স্বর্ণালী সময়গুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি।






১১) সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার প্রাক্কালে “সুদান পিপলস লিবারেশন আর্মি”-র একজন সৈন্যকে স্থির আর ঋজু ভঙ্গীতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। মুখটা যেন পাথর কুঁদে বানানো। ভালো করে তাকালে ভাবলেশহীন এই সৈনিকের রক্তচক্ষুর আড়ালের মানুষটাকে যেন হঠাৎ হঠাৎ খুঁজে পাওয়া যায় এই ছবিটায়।




১২) ৯/১১ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। সেই মর্মান্তিক ঘটনায় বহু লোক তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।
নিচের ছবিটা দিয়ে আজকের গল্প শেষ করবো।
রবার্ট পেরেজা ৯/১১ এ তার ছেলেকে হারিয়েছেন। ছেলের দশম মৃত্যু বার্ষিকীতে তিনি এসেছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত গ্রানাইটের স্মৃতি স্তম্ভে। ছবিটায় রবার্ট পেরেজা যেন তার হারানো ছেলেকে আরেকবার নিজের বুক আলিঙ্গন করে তার ললাটে স্নেহের স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছেন। পিতৃস্নেহের কাছে গ্রানাইটের সমাধ-ফলকের কাঠিন্যও যেন হার মেনেছে। এমন হৃদয়স্পর্শী ছবি দেখে আমি আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×