কিছু ইন্টারেস্টিং খবর আর মজার কিছু ছবি দেখে মনে হলো সেগুলো সবার সাথে শেয়ার করি।
১) অপেক্ষাঃ
আর্জেন্টেনিয়ান মিগুয়েল গুজম্যান ২০০৫ সালে তার ১৩ বছরের ছেলে ডেমিয়েনকে একটি জার্মান শেফার্ড কিনে দেন। কুকুরের নাম রাখা হয় “Capitan”। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তী বছর অর্থাৎ, ২০০৬ সালের মার্চ মাসে গুজম্যান মৃত্যু বরন করেন।
অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার পর বাসায় ফিরে গুজম্যানের পরিবার আবিষ্কার করে Capitan নিখোঁজ। এদিক সেদিক অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কুকুরটাকে না পেয়ে সবাই ধরে নেয় Capitan হয়ত পালিয়ে গেছে অথবা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরেছে। গুজম্যান মৃত্যু শোকে সবাই তখন মুহ্যমান। সামান্য একটা কুকুর নিয়ে মাথা ঘামানোর মত মানসিক অবস্থা বা সময় কারো ছিল না। শেষমেশ পুলিশকে ঘটনাটা জানিয়ে তারা তাদের “খোঁজ”-দা সার্চের ইতি টানেন।
কিন্তু তারা ভুলেও ভাবতে পারেননি তাদের জন্য কি বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে। সাতদিন পর কবরস্থানে যাবার পর তারা অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করেন, তাদের হারিয়ে যাওয়া জার্মান শেফার্ড, গুজম্যানের কবর পাহারা দিচ্ছে। Capitan ডেমিয়েনকে চিনতে পেরে এগিয়ে আসে। ডেমিয়েনের কাছে মনে হল Capitan যেন তার ভাষায় ওর বাবার মৃত্যুশোকের কাতরতা প্রকাশ করছে।
হতচকিত পরিবারটিকে কবরস্থানের পরিচালক হেক্টর জানান, হঠাৎ করেই একদিন তারা কুকুরটিকে গোরস্থানের চারপাশে ঘুরতে দেখেন। এক পর্যায়ে কুকুরটি গুজম্যানের কবর খুঁজে বের করে তার পাশে বসে পড়ে। অবাক করা ব্যাপার হল, প্রতিদিন ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায় কুকুরটি কবরের ওপর থাবা গেড়ে শুয়ে পড়ে এবং সারারাত সেভাবেই জেগে থাকে। যেন জেগে থেকে গুজম্যানের কবর পাহারা দিচ্ছে।
ঘটনা জানতে পেরে আবেগাপ্লুত পরিবারটি চেষ্টা করে Capitan কে ঘরে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু প্রতিবারই Capitan বাসায় কিছুক্ষণ থেকে ঠিক সন্ধ্যা ছয়টার আগেই কবরস্থানে গিয়ে হাজির হয় এবং প্রতিরাতেই পরলোকগত প্রভুর কবরের ওপর শুয়ে থাকে। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২ সালের ডেইলি মেইল নামক অনলাইন পত্রিকা থেকে জানতে পারলাম, Capitan গত ছয় বছরে তার নিয়মের ব্যাতিক্রম করেনি। হয়তো আজো খবর নিলে জানা যাবে মৃত প্রভুর প্রতি একবুক ভালবাসা নিয়ে Capitan তার কবরের পাশে অসীম ধৈর্য্য নিয়ে বসে আছে। কিসের অপেক্ষায় কে জানে? মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হয়ত সে তার প্রভুর মায়া কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
অদ্ভুত এই খবরটা আমাকে প্রচণ্ড ভাবে নাড়া দিয়ে গেল। সাত সমুদ্র তের নদীর পারে, আর্জেন্টিনার ভিলা কার্লোস পাজ সিমেট্রিতে, গুজম্যানের কবরের পাশে অপেক্ষারত একটা জার্মান শেফার্ডের জন্য আমার মন আর্দ্র হয়ে রইল সারাদিন। প্রতিটা মুহূর্তেই মনে হল, জীবনের মানে কি সত্যিই আমরা বুঝি? আমরা কি আসলেই জানি ভালবাসা কাকে বলে?
সূত্রঃ
Loyal Dog
২) সন্ধ্যাতারা
২০০৪ সালের চৌদ্দই জানুয়ারি ডেল্টা টু রকেটে চেপে মঙ্গলের লাল মাটি স্পর্শ করে মার্স এক্সপ্লোরেশন রবোটিক রোভার-এ, যার ডাকনাম রাখা হয়েছে স্পিরিট। চলাফেরার জন্য ছয়টি চাকা রয়েছে এর। প্রতিটি চাকার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা মোটর। এর মুল চালিকা শক্তি সৌর বিদ্যুত। গায়ের সাথে সাঁটানো সৌর প্যানেলগুলো সূর্যালোককে বিদ্যুতে পরিণত করে জমা রাখবে শক্তিশালী লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ সন্ত্রাসী হামলায় মাটিতে মিশে যাওয়া “ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার” এর ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে এর বর্ম বানানো হয়েছে। এই বর্ম, ড্রিল করার সময় স্পিরিটের বেরিয়ে থাকা কেবলগুলোকে রক্ষা করবে। অন্তত ৯০ মঙ্গলীয় দিবস যেন অভিযান পরিচালনা করা যায় সেরকম করেই স্পিরিটকে ডিজাইন করা হয়েছে। ৯০ দিনের এই অভিযানে মূলত তিনটি বিষয় পরীক্ষা করে দেখবে এটিঃ
১) মঙ্গলের মাটির গুণাগুণ।
২) মঙ্গলে কোন কালে পানি ছিল কিনা এবং
৩) যদি পানি থেকে থাকে তাহলে সেটা জীবন ধারণের সহায়ক ছিল কিনা।
কাল বিলম্ব না করে স্পিরিট কোমর বেঁধে তার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথমেই সে মঙ্গলের লাল পাথুরে মাটির রঙ্গিন ছবি পাঠিয়ে আমাদের বিস্মিত করে দিল।
এরপর বিভিন্ন সাইজের পাথর সংগ্রহ করে তার মিমোস-টু আর এক্সরে স্পেক্ট্রোমিটারে সেই পাথর এন্যালাইজ করে গুরুত্বপুর্ন তথ্য পাঠানো শুরু করল। পৃথিবীর ল্যাবরেটরিতে আর সুপার কম্পিউটারে চলতে লাগলো সেই তথ্য উপাত্ত নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে রোবট হয়েও স্পিরিট যেন মহা উৎসাহ পেয়ে গেল। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে মঙ্গলের উঁচুনিচু পথে চলতে চলতে স্পিরিট আমাদের মঙ্গল সম্পর্কে আরও নানান অজানা তথ্য জানাতে লাগলো।
বিজ্ঞানীদের ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে স্পিরিট তার ৯০ দিনের বিরতিহীন অভিযান সমাপ্ত করার পর আরও দীর্ঘ পাঁচ বছর কার্যক্ষম ছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ২০০৯ সালের পহেলা মে মঙ্গলের কাদা মাটিতে স্পিরিটের একটি চাকা দেবে যায়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ আট মাস পৃথিবীতে অনেক সিমুলেশন চালিয়ে দেখার চেষ্টা করেন কোনভাবে একে উদ্ধার করা যায় কিনা। কিন্তু তাদের সে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। অবশেষে ২৬শে জানুয়ারি, ২০১০ এ নাসার বিজ্ঞানীরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ঘোষণা দেন যে স্পিরিটকে উদ্ধার করা আর হয়ত সম্ভব হবে না।
মঙ্গলের কাদা মাটির মৃত্যুকূপে আটকা পরেও স্পিরিট তার সাহস হারায়নি। আটকা পরার আরও প্রায় ৫৩ দিন পর পর্যন্ত সে অনবরত তার চারপাশের ছবি তুলে গেছে। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালের ২২শে মার্চ স্পিরিটের সাথে আমাদের সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মঙ্গলের অভিযানে অচেনা মঙ্গল গ্রহের ছবির প্রতিই আমার আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমার চোখ আটকে গেল অন্য একটা ছবিতে। স্পিরিটের তোলা যে ছবিটা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগলো সেটা হল মঙ্গলের মাটি থেকে তোলা পৃথিবীর একটা ছবি। সাদা কালো ছবিটাতে অস্পষ্ট ভাবে আমাদের পৃথিবীটাকে দেখা যাচ্ছে। ছবিটা দেখে কল্পনা করতে কষ্ট হয় ছোট্ট ওই সাদা ফুটকিটাতে ৭০০ কোটি মানুষ বাস করে। কি আশ্চর্য, তারমধ্যে একজন আবার আমি। ছবিটা দেখে বোঝার উপায় নেই, কত হাসি-কান্নায়, আনন্দে-অভিমানে আমাদের দিন কেটে যাচ্ছে।
ছবিটা দেখে হঠাৎ আমার মনে হল - স্পিরিট কি আমাদের দেখতে পাচ্ছে? বেচারা রোবট একা একা মঙ্গলের মাটিতে পড়ে আছে। আমি জানি স্পিরিট একটা নিষ্প্রাণ আবেগহীন রোবট। তারপরও স্পিরিটের তোলা পৃথিবীর ছবিটা দেখার পর থেকে ওর জন্য আমার একটু মায়া মায়া লাগছে। আজকাল হয়ত সেজন্যই আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মঙ্গল গ্রহটা খোঁজার চেষ্টা করি।
আচ্ছা, লাল পাথরের ওই বিরানভূমিতে ওর কি মাঝে মাঝে নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ লাগে?
(FYI: পৃথিবী থেকে মঙ্গলের নিকটতম দূরত্ব ৫৪,৬০০,০০০ কিলোমিটার (৫৪.৬ মিলিয়ন); যা সর্বোচ্চ ৪০১,০০০,০০০ কিলোমিটার (৪০১ মিলিয়ন) পর্যন্ত হতে পারে যখন পৃথিবী এবং মঙ্গল নিজেদের কক্ষপথের সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানে থাকে।)
তথ্য সূত্র
কিছু ইন্টারেস্টিং ছবিঃ
৩) শান্তির জন্যঃ
ছবিটাতে গেরুয়া কাপড় পরিহিত একজন ইন্ডিয়ান সাধুকে দেখা যাচ্ছে, যিনি হাসি হাসি মুখ করে তার ডান হাত উপরে তুলে রেখেছেন। ভদ্রলোকের নাম, অমর ভারতী। কথিত আছে, একদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর অমর ভারতীর মাথা নষ্ট হয়ে যায়। চারপাশে ঘটতে থাকা যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখে জগতের সমস্ত কিছু ওপর থেকে তার মোহমুক্তি ঘটে যায়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্ব শান্তি জন্য তিনি তার ডান হাত তুলে ধরে রাখবেন। সেই থেকে গত ৩৮ বছর ধরে তিনি তার ডান হাত তুলে রেখেছেন বিশ্ব শান্তির জন্য। ছবিটা ভালো করে দেখলে বুঝতে পারবেন যে অমর ভারতী বিশ্ব শান্তির জন্য শুধু হাত তুলেই ধরেননি আসলে তিনি তার ডান হাতটা কুরবানি করে দিয়েছেন। তুলে ধরে রাখতে রাখতে তার ডান হাতটা অকেজো হয়ে গেছে।
প্রতিবছর হরিদুয়ারে যে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধুসন্তরা সব এসে জড়ো হন। অমর ভারতী সেখানে বিশ্ব শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য হাত তুলে রাখার জন্য ইয়াং সাধুদের অনুপ্রাণিত করেন। তার মহৎ কাজে সাড়া দিয়ে অনেকেই নিজেকে একাজে নিয়োজিত করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই গত ৭,১৩ এমনকি ২৫ বছর ধরে হাত তুলে ধরে রেখেছেন। যারা মনে করছেন যে “হাত তুলে ধরে রাখাটা এমন আর কি কাজ?” –তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, এভাবে হাত তুলে রেখে এই সাধুরা শুধু তাদের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গকেই শুধু বিসর্জন দেন নি, বরং প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণাও সহ্য করছেন।
খবরটা জানার পর অমর ভারতীর প্রতি আমি স্রদ্ধাবনত হলাম। আমি আশা করি তার এই আত্ম ত্যাগ আমাদের জন্য একটি শান্তিপুর্ন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ উন্মোচন করবে।
৪) পরাপারের পথেঃ
১৯০০ সালে ইন্ডিয়ার কাশ্মীর থেকে তোলা ছবিটিতে একজন ফকিরকে (ধার্মিক লোক, ভিক্ষুক না) দেখতে পাচ্ছেন। নিজের বানানো কবরের পাশে বসে এই ফকির তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।
“আমাদের কে একসময় মরতে হবে” কথাটা আমরা জানি, কিন্তু সত্যিকার অর্থে কি কেউ অনুধাবন করতে পারি কথাটা কতখানি নিষ্করুণ সত্য? নিজের খোঁড়া কবরের পাশে বসে থেকে এই বৃদ্ধ কি আমাদের সেই কথাই মনে করিয়ে দিতে চাইছেন?
৫) সাহসঃ
পিচ্চির কারবারটা দেখেন একবার!
৬) বেহেশতের কাছাকাছিঃ
ছবিটা দেখে কি বিশ্বাস হচ্ছে এটা পৃথিবীরই কোন একটা জায়গা? আমার বিশ্বাস হয় না। অন্তত নিজের চোখে একবার দেখার আগে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করবো না এই জায়গার অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে।
এটা উত্তর ভারতের প্রসিদ্ধ শহর লাদাখের জানসকারের (Zanskar) ফুকতাল আশ্রম (Phuktal Monastery)। গাংসেম সেরাপ সাম্পো নামে এক তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মগুরু ১২ শতকে পাহাড়ের চুড়ায় এই মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে নদীর গভীর সরু পথ
এটি একটি পাহাড়ের উঁচু খাড়াই এর ওপর একটি গুহার মুখে অবস্থিত, যার পাশ দিয়ে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে লুংনাক Lungnak (Lingti-Tsarap) নদীর প্রধান শাখা নদীর একটি গভীর সরু পথ চলে গেছে।
৭) কৃত্তিম উপগ্রহঃ
ছবিটায় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান সনাক্তকৃত মহাজাগতিক ধ্বংসাবশেষের অবস্থান দেখান হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কক্ষপথে আবর্তিত মাছির পাল।