somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারসাম্যহীন অর্থব্যবস্থা : পোষা কুকুরের খরচ নিম্নবিত্তের আয়ের তিনগুণ!

২৯ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার হাল হকিকাত দেখুন -০ দারিদ্র্য নির্মূলে আসে হাজার হাজার কোটি, সিংহভাগ যায় প্রভাবশালীর পকেটে
০ গরিবের ঋণে সুদ কয়েকগুণ বেশি
ঘটনাটি গত বছরের (২০১১) ২৫ নবেম্বরের। অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত রাজধানীর ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের। তখন পড়ন্ত বিকেল। ভয়াবহ যানজট। আবাসিক এলাকার প্রান্ত সড়কেই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আটকা পড়েছে আলিশান গাড়ির মালিকরা। একটির পর আরেকটির সারি। এরই একটিতে মাম্মীর (মা) সঙ্গে বিরক্তি নিয়ে বসা ছিল উচ্চবিত্তের টিনেজ দুটি মেয়ে। ওদের সঙ্গে ছিল টমিও। হাইব্রিড জাতীয় একটি কুকুরের আদুরে নাম হচ্ছে টমি। দেখতে সাদাটে ও নাদুস-নুদুস। স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী। জানা গেল, ওই পরিবারটি ওকে লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছে। টমির সঙ্গে ওদের খুব ভাব। দৃশ্যত যা দেখা গেল তাতে মনে হয়েছে ওই পরিবারের কারোরই ওর প্রতি যতœ-আত্তির কমতি নেই।
ওদিকে সড়কের পাশ ঘেঁষেই দেখা গেল সিটি কর্পোরেশনের একটি ডাস্টবিন। ময়লা-আবর্জনা, পঁচাবাসি কিংবা ঝুটা ফেলা হয়েছে ওই ডাস্টবিনে। এ সবের ওপর ভনভন করছে পোকা-মাকড় ও মাছি। এখানেই বিষ্টা খাবারের ভাগাভাগি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে বেওয়ারিশ কয়েকটি কুকুর। কুকুরের খাবার কুকুরে খেলে দোষের কিছু হয় না। দোষ হয় ওই খাবারে কোন মানুষ ভাগ বসালে।
এমন দৃশ্য দেখে জাত কুল মান যাওয়ার উপক্রম প্রত্যক্ষদর্শী ওই বিত্তবান পরিবারের। প্লাস্টিকে করে ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়া পচাবাসি খাবার এক হতভাগ্যকে খেতে দেখে টিনেজ মেয়ে দুটি ও-য়া-ক্, ও-য়া-ক্ করে থুঁথু ছিটাল। ওদের একজনের মন্তব্য ছিল এমন ‘ছিঃ এই আবর্জনা কিভাবে খাচ্ছে লোকটি। আমার তো বমি আসার অবস্থা।’ অপর টিনেজ মেয়েটি আরও নির্মমভাবে বলল, ‘তোমার খারাপ লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক। দেখ না আমাদের টমিও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।’
দীর্ঘ জটে আটকে থাকা ওই গাড়ির চালক পাশেই একটি টং দোকানে প্রভুপতœীর জন্য পান নিতে এলে স্বল্প সময়ের জন্য কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শী এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ‘ভাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সারাদিন গাড়ি চালিয়ে মাস শেষে পাই মাত্র সাত হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে আমি নিজে চলি, একই সঙ্গে পরিবারের অপর তিন সদস্যকেও চলতে হয়। অথচ ওই গাড়িতে যে কুকুরটিকে দেখছেন ওর পেছনে মালিক মাসে খরচ করেন কম করে হলেও বিশ হাজার টাকা। প্রতিদিন ওর গোসলে ব্যবহৃত শ্যাম্পুটিও বিশেষ বিবেচনায় কেনা হয়। রাখা হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। তার বেডরুম পরিষ্কারে প্রতিদিন একজনকে কাজ করতে হয়। খাওয়ানো হয় উচ্চমাত্রার প্রটিনসমৃদ্ধ খাবার!’
প্রাণী প্রেমের প্রতি প্রভুর এই সখ্য প্রশংসাযোগ্য। প্রকৃতি প্রেমেও এটি অনন্য নজির। কবি লিখেছেন, ‘জীবে দয়া করে যেই জন; সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ বিত্তবানরা এই ভেবে তুষ্ট যে তারা একটি জীবের প্রতি প্রেম দেখাচ্ছেন। আর এ প্রেম দেখাতে লাখ টাকায় আমদানি করা কুকুর এখন বিত্তবানদের ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে। এতে সামাজিক মর্যাদাও নাকি বাড়ছে।
তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বিপরীত মেরুর এ নির্মম সত্যটিকে বিচার করতে চান ভারস্যাম্যহীন অর্থব্যবস্থাপনা দিয়ে। তাঁদের মতে, বহু বছরের কুক্ষিগত অর্থ ব্যবস্থার লাগামহীন দৌরাত্ম্যের কারণেই কিছু মানুষকে এখনও এ নিষ্ঠুর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে কখনও কখনও বেছে নিতে হচ্ছে ডাস্টবিনের পচাবাসি উচ্ছিষ্ট (অখাদ্য)। মানবিকতার বিচারে বিত্তবানরা এর দায়ভার কিছুতেই এড়াতে পারেন না।
আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দীর্ঘবছর ধরে চলতে থাকা ভারসাম্যহীন অর্থব্যবস্থা, শোষণ, শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থ’ান না থাকা, উত্তরাধিকারবঞ্চিত হওয়া কিংবা ভাগবাটোয়ারায় সম্পদের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস এবং পারিবারিক চাহিদা বৃদ্ধিতে অবশিষ্টটুকুও ধরে রাখতে না পারায় বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এ ধরনের হতদরিদ্রের দেখা মিলছে।
দারিদ্র্য বিষয়ে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সমাজবিজ্ঞানীরা অর্থনৈতিক মানদ-ের বাইরে দারিদ্র্যের বহুবিধ কারণ খুঁজে পেয়েছেন। ওইসব গবেষণায় বলা হয়েছে, সমাজে বহু বিবাহ, একই পরিবারে অধিক সন্তান, সন্তানদের অপরিণত রেখে পিতামাতার মৃত্যু, অশিক্ষা, অনর্থক ভোগ-বিলাস, অপচয়, জুয়া, সামাজিক কলহ ও মামলাবাজি, পারিবারিক বিরোধ, সুদ প্রথার কু-প্রভাব, বিবাহবিচ্ছেদ, পেশা পরিবর্তন/ভুল পেশা গ্রহণ, দুর্ঘটনা/দুরারোগ্য ব্যাধি, বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত মানুষ এ জাতীয় দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা ভারসাম্যহীন অর্থব্যবস্থার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা থেকে উঠে আসতে পারেনি। এ ধরনের দেশে আর্থ-সামিজিক বৈষম্য খুবই প্রকট। বিশেষ করে সম্পদের মালিকানা ও আয়-ব্যয়ের ব্যবধান এবং সার্বিক বণ্টন ব্যবস্থা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। একদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আবার কর্মসংস্থান যাই-ই আছে তাতে দক্ষ শ্রমিক ও মজুরি মূল্য হতাশাজনক। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বাজার ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা। পণ্যের গায়ে আগুন। অথচ কৃষক তার ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। অন্যদিকে বাড়ছে কৃষি উপকরণের দামও। সে অনুযায়ী ফলন না মেলায় সারাদেশে চাষাবাদের পরিমাণও কমে আসছে। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বরাবরই দাবি করে আসছেন দেশে খাদ্যের কোন সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। অবশ্য বিগত কয়েক বছরের বাম্পার ফলন খাদ্যমন্ত্রীর এ দাবিকে অগ্রাহ্যও করা যায় না।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে ওই উদ্বৃত্ত খাদ্য সবার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। খাদ্যের যোগান, বণ্টন কিংবা সরবরাহ সর্বোপরি বিভিন্ন খাতে অর্থব্যবস্থাপনার চরম অনিয়ম দেশের চরম দরিদ্র শ্রেণীর প্রায় ৬ কোটি লোককে প্রতিনিয়ত অনিশ্চিয়তায় ফেলে দিচ্ছে।
যদিও সরকারী হিসাবে দেশে দারিদ্র্যের হার সংখ্যানুপাতে কমে এসেছে। বিগত তিন বছরে সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকা-ে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশে বেসরকারী ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও দরিদ্র কমে আসার প্রমাণ মিলেছে।
তবে নানা কারণে সরকার অর্থব্যবস্থাপনায় উন্নতির ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না। দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার কমে আসলেও প্রতিবছরই চুইয়েপড়া অর্থনীতির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় নতুন করে দারিদ্র্য সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী গত এক দশকে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। এসব কারণে দেশে এখনও ৫ কোটি ৭৫ লাখ লোক চরম দরিদ্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে।
২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় দেশের সার্বিক অর্থব্যবস্থাপনার বৈষম্য জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, দেশের অর্থব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে পরিচালিত হচ্ছে কেন্দ্রীয়ভাবে শহরকেন্দ্রিক। যে কারণে মানুষের শহরমুখী প্রবণতা বাড়ছে। ১৯৭১ সালে শহরকেন্দ্রিক জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২.৬৪ মিলিয়ন যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। কিন্তু সেটি ১৯৯১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ মিলিয়নে এবং বর্তমানে এ সংখ্যা ৫০ মিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। প্রসঙ্গত, ১৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা শুধু ঢাকাতেই বাস করছে।
ওই গবেষণায় অর্থনৈতিক জরিপ ২০০৩-এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, শহরমুখী এসব জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ মেট্রোপলিটন শহরে, ৪২ শতাংশ জেলা শহরে এবং ১৬ শতাংশ উপজেলা শহরে বসবাস করছে।
পিপিআরসির ওই গবেষণায় এটাই স্পষ্ট হয় যে, দেশের সিংহভাগ কর্মসংস্থানের উৎসই হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই সুষম শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা। এটিও দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে পিপিআরসির প্রধান নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শহর ও গ্রামের সুষম উন্নয়ন ও সমবণ্টন নীতি না থাকায় বৈষম্য যেমন বাড়ছে, তেমনি দরিদ্রকেও উসকে দেয়া হচ্ছে। তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, সুষম উন্নয়ন ও বণ্টন না হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতানুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না। অভাব-অনটন এদের নিত্যসঙ্গী। শিক্ষা-চিকিৎসার মতো মৌল অধিকারগুলোর জন্যও এদেরকে শহরমুখী হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জীবন ও জীবিকার জন্য যারা শহরমুখী হচ্ছেন তারা গ্রামে থেকেও দারিদ্র্য মোকাবেলা করছেন, আবার স্বপ্ন নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো শহরে এসেও দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছেন। কাজ ও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় নতুন গন্তব্যও তাদের জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এদিকে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দারিদ্র্য বিমোচনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা প্রতিটি পরিবার থেকে একজনের চাকরিতে নিয়োগকে দারিদ্র্য নিরসনের কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারের চার বছর পার হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া এ প্রতিশ্রুতির ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নেই। দারিদ্র্য নিরসনে এ যাবত প্রতিটি সরকারেরই নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। বেসরকারীভাবেও বিভিন্ন এনজিও দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচী নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছে। কিন্তু দেশের দরিদ্রতার মূলোৎপাটন হয়নি।
বরং এ সম্পর্কিত তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি শাসকগোষ্ঠী, রাজনৈতিক নেতা, ক্যাডার, সরকারী আমলা, এনজিও, বিদেশী দাতা সংস্থা কর্তৃক দারিদ্র্যকে লালন করা হচ্ছে। সরকার থেকে শুরু করে এনজিও পর্যন্ত সকলেরই কথার ফুলঝুরি হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। এজন্য প্রতিবছর ‘দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের’ (পিআরএসপি) আওতায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও ও অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে দেশে প্রতিবছর আসছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সরকারী বাজেটেরও এক বৃহদাংশ বরাদ্দ থাকছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। ব্যাংকগুলোও যথেষ্ট না হলেও দরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করছে। সবারই লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। তারপরও কেন দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না এমন প্রশ্ন এখন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশই চলে যায় মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারী আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও মালিক-কর্মকর্তাদের পকেটে। অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণের বণ্টন ব্যবস্থায়ও ন্যক্কারজনক বৈষম্য চলে আসছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্রঋণ নিচ্ছেন ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে। এখানে বৈষম্যের লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে দরিদ্রদের যেখানে বিনা সুদে ঋণ দেয়া উচিত ছিল, সেখানে ক্ষুদ্রঋণের সুূদের হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আর রফতানি খাতে শিল্পপতিদের ঋণ দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ সুদে। শিল্পপতি কোটিপতিদের চেয়ে দরিদ্রদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৪ গুণ বেশি সুদ! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীন অর্থনীতির এটি একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এনজিও ঋণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘চোরাবালিতে আটকা পড়েছে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা।’ এত ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার পরও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত মনে করেন, দারিদ্র্য তাড়াতে হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনা সুদে কিংবা স্বল্পসুদে ঋণ দিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে উন্নয়নশীল দেশে প্রতিদিন গড়ে ১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলারের কম আয় করে এমন লোকজনই চরম দরিদ্র। আর মধ্য আয়ের দেশে ২ ডলারের কম আয় করে এমন লোক চরম দরিদ্র। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত (মার্চ-২০১২) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এলেও বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা এখনও সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের ৩৬ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমিত ভৌগলিক অবস্থানে বৃহদাংশ জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার এখনও শঙ্কিত পর্যায়ে।
ব্র্যাকের উদ্যোগে পরিচালিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক গবেষণায়ও দেশে অতিদরিদ্রের হার ৪০ শতাংশ বা ৬ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের এক গবেষণায় দেশে দারিদ্র্যের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি তাঁর গবেষণা প্রবন্ধে বলেছেন, দেশে ৯ কোটি ৮৯ লাখ মানুষই দরিদ্র। তবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হবে আরও বেশি। কারণ বাজার অর্থনীতিতে যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান তদানুসারে বৃদ্ধি না পায় এবং প্রকৃত আয় হ্রাস পায় তখন নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও আসলে দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত হিসেবে গণ্য হয়। সে হিসেবে তাঁর মতে দেশে ১২ কোটি ৪৩ লাখ মানুষই দরিদ্র।
অবশ্য সর্বশেষ প্রকাশিত জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে যেখানে অর্ধেক জনগোষ্ঠীই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান এক-চতুর্থাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টেফান প্রিসনার বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমে ৪৯ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশ এসে ঠেকেছে। তবে এই সাফল্য দেশের সব জায়গায় সমানভাবে আসেনি। এখানে সমতার আবহ দেখা যাচ্ছে না।
কিভাবে এই দেশে অর্থনৈতিক এই বৈষম্যের চিত্র কমানো যায় !!!!

৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন সরকার কি ইসলাম কুপানোর নতুন মিশন নিবে?

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭

নতুন সরকারে এনজিও পন্থী লোকজন দিয়া ভরপুর। তারপর আছে লালনবাদী আর আছে পাক্কা নাস্তিকগণ। দেশে ইসলাম কুপিয়ে ইন্ডিয়া আর পশ্চিমা দেশগুলোকে খুশি রাখা ছিল তার ক্ষমতার মূল উৎস। খবরে দেখলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষ পর্যন্ত ভারতে ইলিশ পাঠাইতে বাধ্য হইলো?

লিখেছেন অনুপম বলছি, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮

আবরার ফাহাদ আর আসিফ নজরুলকে অপমান করলো এনজিওগ্রাম সরকার। ৫০০ মেট্রিক টনের জন্য তারা আন্দোলন করেছিলো কিন্তু এখন ৩ হাজার মেট্রিক টন পাঠাইলো। ভালো হইছে জাতি এখন ভন্ড মিথ্যুকদের নিজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা সময়ের কাছে একদিন.....

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮


আমার ছেলেবেলায় আমি বাংলাদেশের নানাস্থানে ভ্রমন করেছিলাম। এর পেছনে কারণ ছিলো আমার কিছু পরমাত্মীয়ের সরকারী কর্মকর্তা হবার সুবাদে আমাদের ছেলেবেলার গরমের ছুটি, শীতের ছুটি ছাড়াও নানাবিধ আচার অনুষ্ঠান পালনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের পরিচয় পরিস্কার হওয়ার পরে দেশ থ'হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



কোমলমতিরা সাহসের পরিচয় দিচ্ছে, ক্রমেই নিজের পরিচয় দিচ্ছে। ব্লগের ১ কোমলমতি নিজের পরিচয় দিয়েছে; বাকীরা কি লজ্জায় ভেঁড়ার চামড়া পরে থাকবেন, নাকি নিজেদের পরিচয় দেয়ার শুরু করবেন?

শেখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নয় বছর সাত দিন (নবম বর্ষপূর্তি পোস্ট)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩২

এ ব্লগে আমার প্রথম পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, রাত ১১টা ২৬ মিনিটে। তারপর, ২০১৬ সাল থেকে আমি নিয়মিতভাবে বর্ষপূর্তির এই দিনটিকে স্মরণ করে পোস্ট লিখে এসেছি। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×