somewhere in... blog

পরী ও প্রলয়ের গল্প - চতুর্থ পর্ব

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিসেম্বর ২৫, ২০১০।

পরী,

পুরোটা সন্ধ্যা যেন ঘোর লাগা ছিল। সময় গুলো যেনো চোখের পলকে চলে যাচ্ছিল। ঠিক মেলাতে পারছিলামনা, মেনেও নিতে পারছিলাম না সময়ের এত দ্রুত চলে যাওয়াটা। রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশটাও যেনো বদলে গিয়েছিল। হেড়ে গলায় গান গাওয়া যে ছেলেগুলোকে সব সময় অসহ্য লাগত আজ কেন জানিনা তাদের গান গুলোও ভাল লাগছিল। বাদাম ওয়ালা বার বার করে বিরক্ত করত অন্যদিন আজ কেন জানি তারাও এলোনা। জানিনা কখন তোমার হাতে আমি হাত রেখেছিলাম। জানিনা কখন তুমি আমার কাঁধে এলিয়ে দিয়েছিলে মাথা। বার বার তোমার চুল বাতাসের ঝাপটায় আমার নাকে, গালে এসে লাগছিল। কিছুই টের পাইনি।

রিক্সা যখন তোমার বাসার কাছে এলো.. যখন তুমি বললে যেতে হবে তখন অামার ঘোর কাটল। খুব কষ্ট লাগল। পথটা কেনো আরেকটু দীর্ঘ হলনা, ঘড়ির ঘোড়াটা কেন একটু লাগাম টেনে চললনা, কেন তোমাকে যেতেই হবে....। তোমার চলে যাওয়া পথটুকুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি দুবার ফিরেও তাকিয়েছিলে। সে মূহুর্তে ইচ্ছে করছিল ছুটে গিয়ে তোমকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি... কেন তোমকে যেতেই হল....।

আজো কোন কথাই হলনা। আজ তুমিও কিছু বলনি। অথচ না বলার মাঝেই যেন সব কিছু বলা হয়ে গেল। সবকিছু যেনো থমকে গিয়েছিল। এত অদ্ভুত অপরুপ চাঁদ যেনো আজ কেবল আমাদেরই আলো দিয়ে গেছে। লেকের পানিতে চাঁদের ছায়া তার একুট নিচেই আমাদের জলচ্ছবি। যেনো চাঁদের আর্শিবাদ পুষ্ট হচ্ছি। সব যেনো ঘোর লাগা।

আচ্ছা পরী, তুমি কি সত্যি এসেছিলে? সত্যি কি তোমার শীতল হাতে আমার হাত ছিল? পায়ের নখ দিয়ে আঁকাবুকি করছিলে? তুমি কি সত্যি আমার কাঁধে মাথা রেখেছিলে? আমার শার্টের ভেজা অংশে কি তোমার চোখের পানি ছিল? তুমি কেন কেঁদেছিলে? সব কি সত্যি ছিল নাকি স্বপ্ন। এখানো কেমন যেনো মনে হয় কোন এক ঘোরের মাঝে আছি।


প্রলয়।

যবে হাত ধরেছিলে হাতে
এ-প্রাণ ভরেছে অকস্মাতে
সকল বিস্ময়
তখনই তো ধ্বংসের সময়,
তখনই তো নির্মাণের জয়।

তোমার হাতের মাঝে আছে পর্যটন-
একথা কি খুশি করে মন?
একথা কি দেশ ঘুরে আসে
স্মরণীয় বসন্তবাতাসে!

এবার হলো না তবু ছুটি
দুলে ওঠে মোরগের ঝুঁটি
বেলা গেলো – বুকে রক্তপাত

বাগানে কি ধরেছিলে হাত
বাগানে কি ধরেছিলে হাত?


পুনশ্চ: দেখা না হলেই মনে হয় ভাল হত। খুব অস্থির লাগছে। বার বার মনে হচ্ছে তুমি পাশে বসে আছো, ওড়না দিয়ে নাক মুছছো, আর মাঝে মাঝে আড় চোখে আমাকে দেখছ।


-------------------------------------------------------------------------


ডিসেম্বর, ২০১০।

প্রলয়,

আপনাকে ফেসবুকে এড করছি। তবে একটা শর্ত। চিঠি বন্ধ করা যাবেনা। যদি বন্ধ করেন তখনি কিন্তু ব্লক করে দিব। এড করলাম কেন জানেন? ২৬ তারিখের স্ট্যটাস টা দেখানোর জন্য। "Awesome evening".

বহুকাল পর... জানিনা কতদিন পর.. এমন একটা সন্ধ্যা কাটালাম। বলেও হয়ত বোঝাতে পারবনা। আপনার সাথে কেবল চিঠিতেই পরিচয়। তবু জানিনা মনে হচ্ছিল বহুদিন থেকেই চিনি আপনাকে। ভেবেছিলাম খুব রাগ দেখাবো। আপনি এমন ভাবে হেসে আমাকে কাছে দুহাত জড় করলেন নিজের কাছেই লজ্জা লাগছিল। ভেবেছিলাম অনেক কিছু বলব। কিন্তু কেন জানিনা চুপ থাকতেই খুব ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি খুব কাছের কারো সাথে আছি। কোন ভয় কাজ করছিলনা, কোন দ্বিধা কিংবা কোন সংকোচ। আপনি আমার হাতের উপর আলতো করে হাত রাখলেন.. মনেই হয়নি আজ প্রথমবার আপনি ছুলেন আমাকে... বরং মনে হচ্ছিল এই প্রথমবার কেউ আমার হাত এক গভীর মমত্ববোধ নিয়ে ছুয়েগেল। সত্যি বলছি আমি নিজেও জানিনা কখন আপনার কাঁধে মাথা রেখেছি। শুধু মনে আছে গাছের ফাক গলে আসা চাঁদের আলো.. ঝির ঝির বাতাস.. লেকের পানির কুলকুল ডাক, কাছেই কোথায় গিটারের টুংটাং শব্দ আর আপনি আমার আঙ্গুলের নখ খুটছিলেন। প্রচন্ড ভাল লাগায় চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছিল। যখন আপনি অবাক হয়ে মাথায় হাত রাখলেন তখন মনে হল কতকাল পর কেউ আমার মাথায় হাত রাখল এত দরদ দিয়ে। ভাগ্যিস তখন আপনি কিছুই বলেন নি.. বললে হয় ভ্যা ভ্যা করেই কেঁদে ফেলতাম।

সেদিন বাসার ফিরে যা করিনি কখনো তাই করেছি। হরবর করে কথা বলেছি, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেছি। জোরে শব্দ দিয়ে টিভি দেখেছি... আর মাঝে মাঝে বারান্দায় গিয়ে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বলেছি ধন্যবাদ জীবনে এমন একটি সন্ধ্যা এনে দেবার জন্য। চাঁদ যেনো কোন এক অবসরে তোমাকে কথাটা যেনো বলে দেয়।

শক্তি চট্টোপধ্যায় এর বাগানে কি হাত ধরেছিলে কবিতাটি ভেবেছিলাম এবার আমি দিব। সে সুযোগটাও দিলেনা। আমার কথা গুলো কিভাবে বলে দেও?

ভালো থেকো।

পরী।

পুনশ্চত্তর : আমি নিজেই অস্থির টাইপের। যদিও সবাই উল্টোটা জানে। কিন্তু আমার ভেতরটা আমিই জানি.. আমার অস্থিরতা না হয় আমার কাছেই থাকুক।


------------------------------------------------------------------------


জানুয়ারী, ২০১১।

পরী,

শুভেচ্ছা নতুন বছরের। বছরের প্রথম দিনই তোমার চিঠি পেলাম। কেমন আছ? আচ্ছা আমরা কি এভাবেই চিঠি চালাচালি করে যাব? কথাও তো বলতে পারি? ডাক পিয়নের অপেক্ষায় থাকাটা যেন দিন দিন খুব বেশি দীর্ঘ মনে হয়।

কেমন আছ তুমি? কেমন চলছে দিন? একটা কথা জিজ্ঞেস করি? রাগ করোনা.. তোমর চিবুকের ওটা কি তিল? আগেও একবার জানতে চেয়েছিলাম.. রেগে ছিলে তখন। তাই হয়ত উত্তর দেওনি। আরো একটা কথা.. তুমি চশমা না পড়লে তোমাকে বেশি ভাল লাগে। চশমা পড়লে মনে হয় স্কুলের টিচার এক্ষুনি বকে দিবে। তুমি কখনো চুল কেটোনা.... তোমার চুল অনেক সুন্দর। নাপিতের কেঁচির নিচে ওটা মানায় না।

পরী.... তুমি কি জানো এখনো আমি মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই সেই সন্ধ্যা বেলাটায়। খুব ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।

ভালো থেকো। আর কখনো মন খারাপ করবেনা। যদি কখনো খুব মন খারাপ হয় বা রাগ হয় কোন কারনে আমাকে খুব বকা দিয়ে চিঠি দিও। তবু মন খারাপ করোনা।

তোমাকে আমি বুঝিনা.. বোঝার চেষ্টাই করিনা.. তবু কেন জানিনা তোমার ভেতরের সব কথা শুনতে পাই।

ভাল থেকো।

প্রলয়।

একবার ডাক দিয়ে দেখো
আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজন্ম ভেতরে আমার।

তুমি ডাক দিলে নষ্ট কষ্ট সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো।
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।

তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

একবার আমন্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশ্যে দেবো উজাড় উড়াল,

অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো-
খাবো মৌনতা তোমার।


পুনশ্চ : খুব লোভ হচ্ছে তোমার কন্ঠের গুনগুন করে গান শুনতে।


---------------------------------------------------------------------


জানুয়ারী, ২০১১।

প্রলয়,

আগের সব গুলো চিঠি আবার পড়লাম। ঠিক কবে আপনি থেকে তুমি তে এলাম খোঁজার জন্য। হঠাৎ করেই মনে হলো। আচ্ছা কে আগে তুমি করে বলেছে। দেখলাম তুমিই বলেছ।

আমার ঘোর লাগা দিন গুলো যেনো এখনো কাটেনি। আচ্ছা.. তোমাকে তুমি করে বলাতে রাগ করছো নাতো? থাক.. আপনি করেই বলি।

আপনার তো কোন মুঠো ফোনই নেই। আগে সেটা হোউক তার পর ভেবে দেখা যাবে। তবে মুঠো ফোন হোউক বা না হোউক আমার চিঠি কিন্তু চাইই চাই। প্রতিটি দিন অপেক্ষায় থাকি.. কখন চিঠি পাব..। এ যুগে চিঠি চালাচালি করছি মানুষ শুনলেও হাসবে। তা হাসুক। গুহা মানব বলে গাল দিক। তবু আমাকে চিঠি দিতেই হবে।

কি ভেবেছিলেন সুচিত্রা সেন কিংবা মেরলিন মনরোর মত তিল ওটা। নাহ্ ওটা তিল না। মাশা। চশমা সচারাচর পড়িনা। মাইগ্রেন এর ব্যথা উঠি উঠি করলে পড়ি, অথবা বাইরে বেরুবার সময়। আর চুল যে হারে উঠছে তাতে কাটাই লাগবেনা.. একদিন বেল্লু হয়ে যাব। ভয় পাবেন না তো? কিংবা পালিয়ে যাবেন না তো? গেলেও কিছু করার নেই। আপনাকে আটকাবো সে সাদ্ধ কোথায় আমার। তবু সারাজীবন মনে থাকবে সেই কয়েক ঘন্টার কথা।

আচ্ছা আপনার হাত অত গরম ছিল কেন? জ্বর ছিল? শরীর খারাপ ছিল না তো? কি অদ্ভুত মেয়ে আমি দেখলেন তো.. আজ এতদিন পর জিজ্ঞেস করছি। অথচ প্রতিদিনই একবার করে মনে হত। সেদিন কি আপনি জ্বর নিয়ে এসেছিলেন !!

ক্ষমা করবেন... স্বার্থপরের মত কেবল নিজের টাই বুঝি.. নিজের কথাই বলি। আপনার খোঁজটুকুও নেওয়া হয়নি আজো। কেমন আছেন আপনি? রাতে বুঝি ঘুমান না? চোখের নিচে কি পরিমান কালি জমেছে দেখেছেন? রাত জাগবেন না। ঘুম না এলে খুব বোরিং কোন বই পড়তে বসবেন। দেখবেন আপ্না আপ্নি ঘুম চলে আসবে। পরের বার দেখা করতে আসলে নেইল কাটার নিয়ে আসবেন। অত বড় নখ কোন ছেলে মানুষ রাখে?? ছি:! মনে হয় বাঘের থাবা। আর শুনুন.. এমন ধব ধবে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পড়ে আসবেন না। মনে হয় ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন হাহ হাহ হাহ। আমাকে দেখতে স্কুলের টিচার মনে হলেও আমি নই.. বকা তো দূরে থাক.. নিজের কথাটাও বলতে পারিনা ঠিকমত।

প্রলয়, হেলাল হাফিজ আমার খুব প্রিয় একজন কবি। তুমি ডাক দিলে কবিতাটি পড়ে এক সময় বিভোর হয়ে যেতাম। বহুকাল পর কবিতাটি মনে করিয়ে দিলেন। নিজেকেই আজকাল খুব অচেনা মনে হয়।

পরী।

পুনশ্চত্তর : আমি গান গাইতে পারিনা এখন আর। কোনদিন গলা সাধাও হয়না, তার বদলে বুয়ার সাথে হয় উচ্চাঙ্গ ঝগড়া। এখন গান শুনলেও ভাববেন ঝগড়া করছি। হাহ হাহ হাহ।


-----------------------------------------------------------------------


ফেব্রুয়ারী, ২০১১

পরী,
প্রথমেই ক্ষমা চাচ্ছি.. আবারো দেরি করে ফেল্লাম। বছরের শুরুতে খুব কাজের চাপ থাকে। ভেবেছিলাম দু-লাইন লিখে জানিয়ে দিব একটু দেরি হবে। পরে ভাবলাম দু-লাইন দেখে যদি তুমি রাগ কর। সেজন্যই আর লিখিনি।

তুমি আমাকে তুমি বা আপনি কিংবা তুই যাই বল আমার তাতে কোন আপত্তি কিংবা অভিযোগ নেই। তুমি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ বোধ কর তাতেই আমি খুশি। তুমি কি নামে ডাকছ বা কি সম্বোধন করছ তার চেয়ে বড় হচ্ছে তোমার কাছে আমার অবস্থানটকু।

অনেক দিন আগে বলেছিলাম মনে আছে হয়ত.. মানুষের জীবনটা খুব অদ্ভুত। খুব অল্প কিছু ভাল লাগার মূহুর্ত পাবার জন্য সারা জীবন ছুটে বেড়ায়। সেদিনের সেই দিনটাই ছিল তেমনই একটা ভাল লাগার মূহুর্ত। অনেকদিন আগে একটার হিন্দি মুভি। ব্লাফমাস্টার। জানিনা দেখেছিলে কিনা। সেখানে একটা দৃশ্যের ডায়ালগগুলো আমার মনে তীব্র ভাবে দাগ কেটে আছে। কথাটা ছিল এমন যে আমরা পুরো জীবনে কয়টা দিনের কথা মনে করতে পারি যেটা আমাদের এখনো ভাল লাগা দিয়ে যায়.. এমন কয়টা দিনের কথা মনে করতে পারি। পুরো জীবনে হয়ত ৩০ বা ৪০ দিনের কথা। সেই ৩০ বা ৪০ টি দিনের কথা আমাদের পুরো জীবন কে রাঙ্গিয়ে রাখে। আমরা চাইলে প্রতিদিন অন্যান্য সাধারন দিনের মত বাতিলের খাতায় রেখে দিতে পারি অথবা প্রতিটি দিন কেই যোগ করতে পারি সেই রেড লেটার ডে গুলোর সাথে। একটা বিখ্যাত উক্তি আছে.. জানিনা কার.. “ডাই উইথ মেমোরিস, নট ড্রিমস”। সেদিন টি ছিল আমার জীবনের তেমনই একটি দিন। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় বলি তোমাকে... আমরা কি প্রতিটা দিন কে এভাবে স্বরনীয় রাখতে পারিনা। খুব ইচ্ছে হয় তোমার হাত ধরে নদীর তীর ধরে হাটব.. একটা শান্ত নিরিবিলি নদী... সবুজ ঘাস.. শেষ বিকেলে হালকা কুয়াশা.. ঝির ঝির বাতাস.. তুমি আমি খালি পায়ে ঘাসের শিশিরে পা ভিজিয়ে হাটব। সন্ধ্যা লাগলে কোন এক টং দোকানে বসে গরম চা খাবো। কিংবা এমনও হতে পারে কোন একদিন অফিস ফাকি দিয়ে হুট করে চলে আসব। রিক্সা করে লালবাগের কেল্লায় গিয়ে মোঘল সম্রাট হয়ে যাব। তারপর আনবিক শক্তি কমিশনের ভাত.. বই মেলায় গিয়ে বই কিনব.. সাথে রেশমী চুড়ি। হাওয়াই মিঠাই খেয়ে তোমার ঠোট জিভ লাল হয়ে যাবে সেদিন। আবার ভাবি শিশু পার্কে নিয়ে যাব তোমাকে। সেদিন আমরা শিশু হয়ে যাব। জানো... আমার প্রচন্ড হাইট ফোবিয়া আছে। তবুও নাগরদোলায় চড়ব। তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখ। তাতেই ভয় কেটে যাবে। কাপে উঠে ইচ্ছে মত ঘুরাব। তোমার হয়ত মাথা ঘুরাবে। ইচ্ছে মত কিল ঘুষি মারবে। তবুও ঘোরাবো। তোমার কিল ঘুষি খাবার জন্যই ঘোরাব। আচ্ছা আমাদের কি ঘোড়ায় চড়তে দিবে? না দিক। দাড়িয়ে গান টা শুনব। আমাদের দেশটা স্বপ্ন পুরি। তোমার হাত ধরে চোখ বন্ধ করে মূহুর্তে ছোটবেলায় চলে যাব। আমি আসলেই স্মৃতি নিয়ে মরতে চাই.. স্বপ্ন নিয়ে না।

পরী, তোমাকে আমি সুচিত্রা সেন বা অন্য কারো সাথেই তুলনা করিনা। তুমি যেমন আছ যেভাবে আছ তাই আমি ভাবি। তোমার চুল আর চোখ আমার খুব ভাল লাগে। তার মানে এই না যে কোনদিন বেল্লু হয়ে গেলে পালিয়ে যাব বা হারিয়ে যাব। আমার কাছে মনটাই বড়। মন এর সামনে বাকি সবই ফিকে।

জ্বর ছিলনা। আমি খুবই হাইপারটেনশন টাইপ মানুষ। তোমার সাথে দেখা করব.. যদি এবারো কোন গুবলেট করে ফেলি আবার দেখা হওয়ার উত্তেজনা.. আনন্দ এসব মিলিয়ে কেমন যেন জ্বর জ্বর ভাব এসে গিয়েছিল। পরে ঠিক হয়ে গেছে। এই অন্ধকারের মাঝেও যে তুমি আমার চোখের নিচে কালি দেখেছো তাতে খুব অবাক হলাম্। কেন জানি ঘুম হয়না। চেষ্টা করি। তোমার কথামত গতকাল ইংরেজি একটা গল্পের বই নিয়ে শুয়েছিলাম। কাজ হয়েছে। বিরক্তির চোটে ঘুম চলে এসেছে।

পরী, এত অধিকার নিয়ে তুমি নখের কথা, ঘুমের কথা, চোখের নিচে কালির কথা বল্লে কেন জানিনা চিঠিটা পড়তে পড়তে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। অনাদরে বড় হইনি সত্যি তবে বড় হওয়ার পর কেউ অমন করে বলেনি কখনো।

ভাল থেকো।

প্রলয়।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : 'তোমার চোখ এতো লাল কেন ?'



পুনশ্চ: মুঠোফোন টা আজই নিলাম। বহুকাল পর আবারো হাতে আসল। নিজেকে সব সময় বন্দী মনে হত। নিজস্ব বলে কিছু নেই। যখন তখন ফোন। পালাবার কোন উপাই নাই। তাই ব্যবহার করতাম না। আজ কেন জানি নিজেকে স্বেচ্ছায় বন্দী হতে ইচ্ছে হল। মনে হল যখন তখন অন্তত একজন যেনো আমাকে ফোন করে, অভিমান করে, শাসন করে আবার একটু খানি....


-------------------------------------------------------------------------

মার্চ ২০১১।

প্রলয়,

চিঠিটা আজ পেলাম। প্রায় এক মাস পর। প্রতিটা দিন কি পরিমান অস্থিরতায় কেটেছে তুমি কি জানো সেটা। খুব রাগ হচ্ছিল। ফেসবুকে তো অন্তত জানাতে পারতে। আচ্ছা তুমি এত ছেলেমানুষ কেন? আমার রাগটাই দেখলে অথচ আমার অস্থিরতাটুকু দেখলে না??

ডাক পিয়ন যখন চিঠি নিয়ে এলো এক ছুটে ছো মেরে নিয়ে পড়লাম এক নিঃশ্বাসে। কতদিন পর তোমার লেখা এল। নির্মেলেন্দু গুনের তোমার চোখ এতো লাল কেনো কবিতাটি দিলে কেন? আমাকে কষ্ট দেবার জন্য?? আর কক্ষনো এমন অসহায় এর মত কিছু বলবে না।

আচ্ছা প্রলয়... তুমি কি আমার ভেতর টা দেখতে পাও? চিঠি পড়ে প্রতি মূহুর্তে তাই মনে হয়েছে। তুমি কেমন করে আমার স্বপ্নগুলোর কথা এমন অবলীলায় বলে দিলে? যে কথা গুলো তোমাকে বলব ভেবেছি সেগুলোই যেনো তুমি বলে দিলে। মনে হচ্ছিল তুমি যেনো আমার ভেতরের কথাগুলো শুনতে পাচ্ছ।

আমার আরো কি ইচ্ছে করে জানো? ইচ্ছে করে প্রচন্ড বৃষ্টিতে তোমার হাত ধরে সমুদ্রের তীর ধরে হাটতে। ইচ্ছে করে একুশে ফেব্রুয়ারীতে রাত জেগে আলপনা করতে। আমি আলপনার রং তোমার মুখে লাগিয়ে দিব দুষ্টমি করে। আমি কখনো প্রভাত ফেরী তে যাই নি। নিয়ে যাবে আমায় তুমি? কখনো কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায় নি? ঘুম পাড়াবে আমাকে? আমি কোনদিন রাজ হাসের পেছনে ছুটিনি.. আমাকে ছুটতে দেবে? আমার হাত ধরে একবার তুমি কোন এক শরতে কাশফুল ঘেরা কোন এক নদীর তীরে নিয়ে যাবে? যদি কিছুই না পার তবে অন্তত একটি বার আমার হাত ধরে চুপ করে বসে থেকো... আমি খুব কাঁদব। আমার সমস্ত কষ্ট নিংরে কাদঁব। কিছুই বলোনা তখন, শুধু হাতটি ধরে বসে থেকো। স্বপ্ন দেখতে খুব ভয় পাই, তাই আর স্বপ্ন দেখতে চাইনা, তবু মাঝে মাঝে মনে হয়, কেবল তোমাকেই বলি, তুমি কি আমার স্বপ্নগুলো স্মৃতি করে দিতে পারবে?

মন খারাপ করে দিলাম কি? আমি ছিটিয়াল। পাগলামী করতে পারিনা তাই করিনা, শুধু তোমার কাছেই পাগলামী ইচ্ছে গুলো বলি। কেবল তোমাকেই যে বলা যায়।


পরী।

পুনশ্চত্তর : আমি কেবল শাসনই করি? আর একটু খানি কি? থেমে গেলে কেন বলতে গিয়ে? ভীরু। হাইপারটেনশন খুব খারাপ। বয়সের আগেই বয়স্ক রোগ বাধিয়ে বসে আছ।একদম টেনশন করবে না কিছু নিয়ে। ১৪ তারিখ নেইল কাটার নিয়ে এসো। তোমাকে তো দেখি বাচ্চাদের মত মানুষ করতে হবে। এত উদাসিন কেন তুমি নিজের ব্যাপারে?

(চলবে)


পরী ও প্রলয়ের গল্প - প্রথম পর্ব

পরী ও প্রলয়ের গল্প - দ্বীতিয় পর্ব

পরী ও প্রলয়ের গল্প - তৃতীয় পর্ব
৪৫৬ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×