somewhere in... blog

পরী ও প্রলয়ের গল্প - তৃতীয় পর্ব

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিসেম্বর ১৬, ২০১০।

পরী,

আজ আপনার সাথে বলতে গেলে প্রথম দেখা। জানি খুব কষ্ট পেয়েছেন আমার আচরনে। আসলে আমি এমনই নিভৃতচারী। তার উপর আপনাকে দেখে সত্যি আমি খুব হতচকিত হয়ে গেছি। আমাকে ভুল বুঝবেন না। অসম্ভব সুন্দর আমি সহ্য করতে পারিনা। সেবার দেখেছিলাম আলো - আঁধারীতে। এবার অনেক খানি ঝলমলে আলোয়। আপনার নানু আপনার নামটা ভুল রাখেন নি। আচ্ছা, আপনার চিবুকের ওটা কি তিল?

নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে আজ। জানি তার চেয়েও বেশি রাগ আপনি করে আছেন।

খুব বেশি কিছু আর বলার নেই আজ। আপনার কবিতাটি আনিসুল হকের লিখা ছিল।

ক্ষমা করবেন আমার অপরিপক্কতার জন্য। আমি সত্যি অনুতপ্ত।

ক্ষমাপ্রার্থী,

প্রলয়।

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ॥
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ॥
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ॥



পুনশ্চ : চশমা দিয়ে আপনার চোখকে কেন আড়াল করেন? এক মুহুর্তের চশমা খুলেছিলেন মোছার জন্য। সেই এক মূহুর্তে মনে হল অমন সুন্দর চোখ কতকাল দেখিনি।

--------------------------------------------------------------------

ডিসেম্বর, ২০১০।

প্রলয়,

আমি জানিনা আপনি নিজেকে কি ভাবেন? কতখানি উন্নাসিকতা আপনার মাঝে আছে তাও জানিনা। জানতেও চাইনা। কিন্তু আপনি যতখানি অপমান করেছেন সেটা আমাকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়েছে আশা করি বুঝতে পারছেন।

আমি সেদিন সত্যিকার অর্থেই আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছি। যেটুকু সময় বসে ছিলাম আপনার সাথে কথা বলতেই বসে ছিলাম। আপনি একটি শব্দও করেন নি। শেষমেশ সব অস্বস্থি ঝেড়ে নিজেই জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? সে কথার উত্তর দেবার সৌজন্যবোধ টুকুও আপনি দেখান নি। প্রচন্ড অপমানিত হয়ে পুরো পথে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছি। আমাকে এতখানি অপমান করার কোন অধিকার আপনার নেই।

এসব কথা আপনাকে বলাটা উচিৎ হচ্ছেনা জানি, তবু কোনদিন যাতে আমাকে দোষ দিতে না পারেন তাই বলছি। আর কখানো আমাকে লিখবেন না। আমাকে আমার মত করে থাকতে দিন। আমি স্বপ্ন দেখিনা, কবিতা পড়ি না, গান শুনিনা। আমাকে আর স্বপ্ন দেখাবেন না, কবিতা পড়াবেন না।

ভাল থাকবেন।

পরী।

পুনশ্চত্তর : আমার চোখ দেখেছেন। অথচ চোখের পানি দেখেন নি। আমি তখন চশমা মোছার ছলে চোখের পানি মুছেছি। আপনি কেন আমার সাথে অমন করলেন??


----------------------------------------------------------------------


ডিসেম্বর, ২০১০।

পরী,

তোমার চোখে জল দেখিলে সারা ভুবন আধার দেখি!
তুমি আমার প্রাণের অধিক জেনেও তাহা জান নাকি?


তারাশংকরের ছোট্ট দুটি লাইন কিন্তু মনে হচ্ছে আমার সমস্ত কথা বলে দিয়েছে।

আমাকে ক্ষমা করবেন সেদিনের অমন ব্যবহারের জন্য। আমি আগেই বলেছিলাম আমি মোটেই বাকপটু নই। কিন্তু সেদিন যেমনটা করেছি আমি তেমনটাও নই। বিশ্বাস করুন। আপনাকে দেখার জন্য সেদিন দুপুর থেকে ঠায় বসেছিলাম। প্রতি মুহুর্ত ঘড়ি দেখেছি । একের পর এক নিকোটিনের আশ্রয় নিয়েছি। আপনি এলেন। আমার সমস্ত কিছু যেনো স্থবির হয়ে গেল। আপনি আড্ডায় বসলেন। সবাই নানা কথা জিজ্ঞেস করছে আপনাকে। আপনি খুব ধীরে একটু একটু করে কথা বলছেন। আমি মুগ্ধ হয়েই শুনছিলাম। আমাকে আপনি কখন জিজ্ঞেস করেছেন ভাল আছি সত্যি আমি শুনতে পাইনি। আমি যেনো এক ঘোরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক যে মুহূর্তে আপনি বিদায় নেবার জন্য উঠে দাড়ালেন তখনি যেন আমার ঘোর কাটল। চলে যাবার সাথে সাথেই আমি তোমার পিছু পিছু আসছিলাম। কিন্তু তুমি ততক্ষনে রিক্সা নিয়ে চলে গেলে ঝড়ের বেগে। তোমাকে অপমান করব সে সাদ্ধ আমার নেই। আমি নিতান্তই সাধারন, উড়নচন্ডী অপরিনত মানুষ। যে কিনা নিজের ভাল লাগা বলতে পারেনা, যে কিনা কাছে পাবার আকুতি করতে পারেনা, যে কিনা নিজের করে চাইতে পারেনা। কেবল একটা জিনিস পারি, প্রিয়জনকে অবলিলায় কষ্ট দিতে। আমার কাছে কেবল এই একটাই অপ্রতুল। কষ্ট। যেটা যে কেউ আমার কাছে আসলেই সহজেই পায়। আজ তুমিও তার প্রমান পেলে।

ভাল থেকো। আজ আর ক্ষমা চাই না। কেবল শাস্তি।

আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে অমন কেন যত্ন করে
লাগিয়ে দিতে ?
অমন কেন শরীর থেকে আসতে আমার
ক্লান্তিগুলো উঠিয়ে নিতে ?
তোমার বুকের নিশিথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে ?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতন তুমি উড়িয়ে নিতে ?
বেলজিয়ামের আয়্নাখানি কেন তুমি ঘোর না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে ?
রেখে দিতে ?
আমার এখন চাঁদ দেখতে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম,মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে

কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা ...
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর আমি এখন কষ্টে আছি, কষ্টে আছি বুঝলে পরী
আমার দাঁতে আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষণ
চতুর্দিকে দাবী আদায় করার মতো মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ
বুঝলে পরী,
হাসি খুশী উড়নচন্ডী মানুষ আমার তাইতো এখন খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
আর তাছাড়া আমি কি আর যীশু না হাবিজাবি
ওদের মতো সব সহিষ্ণু ?
আমি অনেক কষ্টে আছি, কষ্টে আছি;
কষ্টে আছি আমি অনেক।


পুনশ্চ : বড্ড বেশি এলোমেলো হয়ে আছি। কোথাও আপনি কোথাও তুমি। আমি বড্ড ক্লান্ত নিজেকে নিয়ে। জীবনট কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর মনে হয়।

-------------------------------------------------------------------

ডিসেম্বর, ২০১০।

প্রলয়,

জানতাম আপনি না করার পরও চিঠি লিখবেন। মনে মনে তাই ঠিক করেছিলাম লিখলেও আর উত্তর দিবনা। কিন্তু কেন জানি পারলাম না। ভুলটা হয়ত আমরই ছিল। অনেক বেশি প্রত্যাশা করে ফেলেছিলাম। অনেক বেশি অধিকার বোধ জেগেছিল মনে। যতখানির যোগ্য আমি নই তারচেয়েও বেশি দাবী করেছিলাম।

আপনি কথা বলবেন কি বলবেন না সে তো কেবল আপনারই ব্যপার। আমি নাক গলাতে যাবই বা কেন আর আশাই বা করব কেন। আপনি খামোখা নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন। আমি এমন কেউ নই যে যার জন্য আপনার এত অন্তঃদহন হবে বা হওয়া উচিত।

আবুল হাসান এর কবিতাটি আপনাকে মানায় না। ওটা কেবল আমার জন্যই। নিজেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন ভাবতে শুরু করেছিলাম। ভুলটা ভাঙ্গার পর এখন এই কবিতাটি আওড়াতে বেশি ভাল লাগছে। হাহা হাহা হাা। মানুষ কতভাবেই না কতকিছু বুঝতে পারে। আমারো বোঝা দরকার ছিল।

ভাল থাকবেন। আর আমর অতি উচ্ছাসের জন্য কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন।

পুনশ্চত্তর : জীবনটা দীর্ঘ হো্উক আপনার আরো। সে কামনাই করি।

----------------------------------------------------------------------

ডিসেম্বর, ২০১০।

পরী,

আপনার চিঠি পাওয়ার জন্য যে ব্যকুলতা ছিল এ কদিন আজ পাওয়ার পর মনে হল এ চিঠি না পেলেই হয়ত ভাল ছিল। ডাক পিয়ন এত কিছু হারায় আজ না হয় এই চিঠিটাও হারাতো। কত সহজ ভাবে কথা গুলো বললেন অথচ তার প্রতিটি অক্ষর বুকের ভেতর শেলর মত বিঁধতে লাগল। নিজেকে কত নিচে নামিয়ে এনেছি আপনার কাছে। কতখানি পুড়ছি প্রতিনিয়ত হয়ত আপনি বুঝতেও পারেন নি। যদি বুঝতে পারতেন ক্ষমা না করুন ইচ্ছে মত বকে দিতেন। আপনি তাও করেন নি। নিজেকে বরং দোষারোপ করে আমার অপরাধের মাত্রার পরিমাপ টা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

আপনি মোটেই অতি অধিকার বা অনাধিকার চর্চা করেননি। আপনার সম্পূর্ন অধিকার ছিল। বরং আমি এক অকালকুষ্মান্ড সেটা বোঝাতে পারিনি। অনেক কিছুই বলতে চেয়েছি, একটা কথাও বলতে পারিনি।

এ কী শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা !
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই -
এই কি আমার অপরাধ !
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো -
আসা-যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না;
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূণ্যতা, শূণ্যতা ।
তোমার শূণ্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না -
আজ সারাদিন বিষাদপর্ব,সারাদিন তুষারপাত…
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই ।


অনুগ্রহ করে আমার অপরাধ কি ক্ষমা করবেন? আর একটি বার কি সুযোগ পেতে পারিনা আমি?

প্রলয়।

পুনশ্চ : আমি ঠিক কি করলে ক্ষমা পেতে পারি? আকাশের চাঁদ এনে দিতে পারবনা, ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরতে পারবনা কিন্তু জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আপনার ক্ষমার জন্য আকুতি করে যেতে থাকব। একবার কি ক্ষমা করবেন?


------------------------------------------------------------------------

ডিসেম্বর, ২০১০।

প্রলয়,

না, ক্ষমা করবনা।

মহাদেব সাহার মন ভাল নেই কবিতাটি মাঝ খান থেকে দেওয়ার মানে কি? এর আগে আবুল হোসেন এর কবিতায় যুথীর জায়গায় আমার নাম বসিয়েছেন। কবিতাও কি নিজের ইচ্ছেমত ব্যবহার করবেন? ইচ্ছে হলে ডাকবেন, ইচ্ছে হলে কথা বলবেন, ইচ্ছে না হলে ফিরেও তাকাবেন না। পৃথিবীকি আপনার ইচ্ছের দাস?

অনুগ্রহ করবনা। আমি আপনাকে অনুগ্রহ করার কে? বরং আপনি তো আমাকে অনুগ্রহ করছেন, করুনা করছেন। মানুষের ঘৃনার দৃষ্টি সহ্য করা যায়.. করুনার নয়।

পরী।

পুনশ্চত্তর : ঘটে বুদ্ধি থাকলে আকাশের চাঁদ ও হাতে এনে দেখানো যায়। আর ছাদ থেকে লাফ দিবেন না সে আমি জানি। নিজের জীবনের মায়া কার না আছে। আমিও অত সস্তা মানুষিকতার নই যে এসব উদ্ভট কথা বল। যত্তসব।

--------------------------------------------------------------------------

ডিসেম্বর, ২০১০।

পরী,

হাতে পানি নিয়ে তাতে চাঁদের ছায়া ফেলে দেওয়া যায়। কিন্তু সে তো মিথ্যে দেওয়া। হ্যা সত্যি জীবনকে আমি ভালবাসি। আর এ জীবনে অনেক কিছু করার বাকীও আছে। একি সাথে এটা সত্যি যেনো... এ বেঁচে থাকার মানেই স্বপ্নকে ছোঁয়ার চেষ্টা করা, বেঁচে থাকা মানেই তোমাকে দেখতে পাওয়ার আশা থাকা, বেঁচে থাকা মানেই কাউকে কখনো হয়ত একবার বলার সুযোগ থাকা "ভালবাসি"।

আমি তোমাকে করুনা করিনি কখনো। তুমি একটি বার চোখে চোখ রেখো.. দেখো.. এ দৃষ্টি করুনার নয়.. কখনোই নয়।

তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে ।

তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।

তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।

তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।



পুনশ্চ: আর কিছুই বলার নেই। শুধু অপেক্ষায় থাকা। যদি কখনো বলার কিছুমাত্র সুযোগ তুমি দেও।

---------------------------------------------------------------------------

ডিসেম্বর, ২০১০।

প্রলয়,

আবুল হাসানের আকাঙ্খা কবিতাটি খুব পড়তাম। কতকিছু ভাবতাম তখন। আমি এখন স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। কোন সুখ স্বপ্ন দেখে যখন ঘুম ভাঙ্গে খুব মন খারাপ হয়। কারন ওটা স্বপ্নই ছিল বলে। মাঝে মাঝে খুব কান্না পায়। ইশশ্ স্বপ্নটা কেন স্বপ্ন ছিল।

জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছি একাকী আমি। দুই ভাই মহানন্দে ঘুরে বেড়াতো আর আমি ঘরকন্না। অথচ মজার ব্যাপার কি জানেন.. মা আমাকে ভাইদের মত আমাকেও একি রকম জামা পড়াতেন। নানা। সে নিয়ে কোন দুঃখ নেই। মনে হলে বরং হাসিই পায়। সে সময় কখনো মনেও হয়নি নিজের জন্য জামা দরকার। আমার নিজের বলে কিছু আছে সেটাই বুঝতাম না এখনো বুঝিনি। মাঝে মাঝে জানালার গ্রীল ধরে বৃষ্টি দেখতাম। মাঠে সবাই ছুটোছুটি করছে সেই বৃষ্টিতে। মন ছুটে যেত.. কিন্তু যেতে বারন। মেয়ে আমি। আমার এসব মানায় না। আমার স্বপ্ন দেখা বারন তাই। ফেরিওয়লা যখন ফিতে চুড়ি নিয়ে ফেরি করে বেড়াত সবাই গোল হয়ে ঘিরে থাকত। আমি মাঝে মাঝে চুপিচুপি সেই ভিড়ের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেখতাম। কিন্তু কোনদিন বলিনি খুব ইচ্ছে করে লাল ফিতে দিয়ে চুল বাধঁতে। আমি মেয়ে। আমি চাইতে পারিনা। যা দিবে তাই নিতে হবে। এটাই শিখেছি দিনে দিনে। সকাল বেলা কখনো শিউলি ফুল কুড়াতে যাইনি। শরতের বিকেলে নদীর পাড় থেকে যখন ভাই দুটো কাশঁফুল নিয়ে এসে দিত মনে মনে নদীর তীরের ছবি আঁকতাম। না জানি কতই সুন্দর হয়ে আছে। আমি কখনো নদীর ধারে কাঁশ ফুল দেখিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডী পেরিয়েছি তাও একাকী। রুমের কারো সাথে তেমন কথাও হতনা। খুব দেখতাম কত অনুষ্ঠানে ঘটা করে যাচ্ছে, হৈচৈ করছে। আমি হয়ত রুমের এক কোনে বসে হুমায়ুন কিংবা সুনীল এর কাছে নিজের স্বপ্ন সাজাচ্ছি। সেই যে আমাকে সেখানো হয়েছে.. আমি মেয়ে। আমার তো অনেক কিছুই বারন।

তবু এর মাঝে প্রাপ্তি বলতে গান আর আবৃত্তি শেখা। হয়ত বিধাতা আরো কষ্ট দেবার জন্যই একটা ভাল কন্ঠ দিয়েছিলেন। খুব ভাল গান গাইতাম হয়ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে যেতো গান আর আবৃত্তি করানোর জন্য। এমনকি যখন মফস্বল শহরে ছিলাম তখনো আমাকে ঘিরেই যেনো সব অনুষ্ঠান হত। হায়রে... ওই যে বললাম। বিধাতা আরো কষ্ট দেবার জন্যই হয়ত এমনটা দিয়েছেন। এখন আর কিছুই নেই অবশিষ্ট।

একটা ছোট্ট চাকরী করতাম। ভালই সময় কাটতো। নিজেকে নিজের খোলস যখনি ভেঙ্গে বেরুনোর চেষ্টা করছিলাম তখনি পায়ে যেনো আবারো বেড়ি পরল। চাকরী টা ছাড়লাম। কারন আমি মেয়ে।

তাই এখন আর স্বপ্ন দেখিনা। স্বপ্ন দেখতেও চাইনা। ভয় হয়। স্বপ্ন দেখার কষ্টে না, স্বপ্ন ভাঙ্গার ভয়ে।

প্রলয়, আপনাকে ক্ষমা করব সে যোগ্যতা আমার নেই। আপনি বরং আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনার সাথে অনেক রুঢ় হয়েছি। বরং আপনি আমার নিস্তরঙ্গ জীবনে একটা দোলা দিয়েছেন। আমি যা নই তাই ভাবিয়েছেন। এই তো আমার অনেক পাওয়া। সব হারিয়ে এখন ছোট ছোট এই প্রাপ্তিগুলোই অনেক বড় মনে হয়।

পরী।

পুনশ্চত্তর : আগামী ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অর্চাড পয়েন্টে থাকব কিছু ঘরের কেনা কাটা করতে।

(চলবে)

পরী ও প্রলয়ের গল্প - প্রথম পর্ব

পরী ও প্রলয়ের গল্প - দ্বীতিয় পর্ব

বি:দ্র: অসহিষ্ণু বৃষ্টিধারা সহ ও আরো যারা আছেন তাদের জ্ঞ্যাতার্থে বলছি আর সর্বচ্চো ৩ কিস্তি বাকী।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩২
৪৫৬ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×