somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। একে 'দ্বীপ' বলা হলেও এটি মূলত একটি 'চর'। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন।মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো।বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য।


নিঝুম দ্বীপে বেড়ানোর মূল আকর্ষণ এখানকার বন। ভালোভাবে জঙ্গল দেখতে হলে ‘নামা’ বাজারের পাশের খাল ধরে নৌকায় চড়ে যেতে হবে চৌধুরীর খালে। এই খাল একেবারে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। বেশি হরিণ দেখতে হলে নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে নীরবে অপেক্ষা করতে হবে। জঙ্গলে ট্রেকিংয়ের সময় যথা সম্ভব সবাই হালকা রংয়ের সুতি পোশাক পরবেন। বন্য প্রাণীদের দৃষ্টি খুব প্রখর। অতি উজ্জ্বল পোশাকের কারণে দূর থেকে দেখে ফেলে বন্যপ্রাণীরা।এছাড়া নিঝুম দ্বীপে আছে সমুদ্র সৈকত।


জীববৈচিত্র্যঃ
চিত্রা হরিণ নিঝুম দ্বীপের প্রধান বন্যপ্রাণী। নিঝুম দ্বীপে একর প্রতি চিত্রল হরিণের ঘনত্ব সুন্দরবনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। বাঘের মতো কোনো মাংসাশী প্রাণী না থাকায় দ্রুতগতিতে এদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে উদয়ী নখরবিহীন উদবিড়াল, মেছো বাঘ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে রয়েছে নিশি বক, দেশি কানিবক, গোবক, দেশি পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, কালোহাঁস, কোড়া, তিলা লালপা, তিলা সবুজপা ইত্যাদি।এই উদ্যান দেশি গাঙচষার অন্যতম প্রধান বিচরণস্থল।সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে দেশি গুঁইসাপ ও নানান জাতের সামুদ্রিক কচ্ছপ। সামুদ্রিক কচ্ছপের গুরুত্বপূর্ণ প্রজননস্থল এই নিঝুম দ্বীপ।

This video is posted by Mr.Monjurul Hoque on Youtube

কীভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে দুই পথে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যায়। তুলনামূলক আরামদায়ক ও সহজ পথ হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দী।

সদরঘাট থেকে একটি করে লঞ্চ প্রতিদিন তমরুদ্দীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো হল এম ভি টিপু ৫ (০১৭১১৩৪৮৮১৩) ও এমভি পানামা (০১৯২৪০০৪৬০৮),

এমভি ফারহান ৩ (০১৭৮৫৬৩০৩৬৬) এবং ফারহান ৪ (০১৭৮৫৬৩০৩৬৯)।

লঞ্চে ডেকে জনপ্রতি ভাড়া সাড়ে ৩শ’ টাকা। প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা।

ঢাকা থেকে বিকেল পাঁচটায় ছেড়ে তমুরুদ্দী পৌঁছাতে পরদিন সকাল হয়ে যায়। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে বন্দরটিলা ঘাট। রিজার্ভ নিলে ভাড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। যাওয়া যাবে তিন থেকে চারজন। সেখানে ট্রলারে চ্যানেল পার হলেই বন্দরটিলা।

এরপর আবার নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার যেতে হবে রিকশা কিংবা অটো রিকশায়। ভাড়া ৮০ থেকে দেড়শ টাকা। তারমানে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে যাত্রা করে পরদিন দুপুরে পৌঁছানো যাবে নিঝুম দ্বীপে। নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার অন্য রাস্তা হল সড়ক পথে। প্রথমে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুর। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে চর জব্বার ঘাটে। এরপরে সি ট্রাক কিংবা ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। সেখান থেকে আবার বাস কিংবা অটো রিকশায় জাহাজমারা বাজার। জাহাজমারা বাজার থেকে আবার ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে নিঝুম দ্বীপ। এছাড়া হাতিয়া ঘুরে বেড়িয়ে নিঝুম দ্বীপ যেতে চাইলে ও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে নেমে ওছখালী যেতে হবে।ওছখালীতে থাকার মতো বেশ কিছু মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল আছে।



কোথায় থাকবেনঃ


নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য একমাত্র ভালো মানের জায়গা হল অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসোর্ট। এখানে দুই শয্যার কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ টাকা। তিন শয্যার কক্ষ ১ হাজার ৮শ’ টাকা। চার শয্যার কক্ষ ২ হাজার টাকা। ৫ শয্যার ডরমিটরির ভাড়া ১৮ হাজার টাকা। ১২ শয্যার ডরমিটরি ৩ হাজার টাকা।

ঢাকা থেকে এ রিসোর্টের বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ: অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শামসুদ্দিন ম্যানশন, ১০ম তলা, ১৭ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। ফোন: ০২-৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ০১৫৫২৪২০৬০২।


কেন যাবেন নিঝুম দ্বীপঃ

১)অভয়ারণ্য দেখতে

২)আধুনিক সময়েও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কিভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে সেটা দেখতে।আমরা সামান্য সর্দিতেও হুট করে প্রফেসর সাহেবের সাহেব এর সাক্ষাত নিতে পারি।কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন এই দ্বীপে যদি কোন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়,তবে অসুস্থ ব্যক্তি কম করে হলেও তিন ঘন্টার জল-স্থলপথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতেলের দেখা পাবেন!!!


সতর্কতাঃ


১)যেহেতু চলাফেরা অনেকটাই জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভরশীল; তাই বেড়াতে গেলে অবশ্যই হাতে কয়েক দিন সময় নিয়ে যাওয়া ভালো।

২)দ্বীপে দল বেঁধে যাওয়াটা জরুরী।

৩)দ্বীপে অর্থলেনদেন এর ক্ষেত্রগুলো যেমন-আবাসন , যানবাহন ভাড়া সম্বন্ধে ভালোভাবে জেনে ও বলে তারপরে চুক্তিতে যাবেন।

৪)দ্বীপবাসীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি যেহেতু এই লোকগুলো বাইরের দুনিয়া থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন থাকে এবং শিক্ষার হারও কম তাই এরা অনেকটাই অনমনীয় ধরনের ( ভালো বাংলায় বললাম) উপযুক্ত শব্দটা পাবলিকলি লেখতে চাচ্ছি না।


তথ্যসূত্রঃ

http://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article891524.bdnews

http://goo.gl/jZfR7i

http://www.noakhali.gov.bd/

ছবিসূত্রঃhttp://google.com



৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

১. ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:০২

কাঠ পাতা বলেছেন: ২০১৩ এর জানুয়ারীর দিকে নিঝুম দীপ গিয়েছিলাম ঐখানকার চে্য়ারম্যান খুব একটা সুবিধার মনে হয় নাই। হোটেল অবকাশ এ রুম নেওয়ার কিছুখনের পরেই চেয়ারম্যান আর তার সাথে আরেকজন আমাদের রুম এ ঢুকে , আমাদের অনুমতির ধার ধারেনাই। তারপর রুমের ভিতর আমাদের সামনেই পাশের বেডে বসে উনারা সিগারেট খাওয়া শুরু করলেন আমার চরম বিরক্তি ধরেছিল। নিঝুম দীপে একটা ছেলে আমাদেরকে রিসিভ করেছিল সে কিছু বলতে মানা করেছিল , তার কাছ থেকে শুনলাম লোকটা নাকি অনেক খারাপ আর নিঝুম দীপ এ তার সাথে কেউ ঝগড়া্য় জড়া্য় না। পরে অবশ্য রুম থেকে যাওয়ার সময় সরি বলেছিল।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫১

লেখক বলেছেন: মন্দের ভালো যে বড় কোন ঝামেলা করেনি।

২. ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১৯

জ্বি হুজুর বলেছেন: হাতিয়া থেকে যাওয়ার কথা বললেন ওটা ঢাকা থেকে যাওয়ার জন্য।
সন্দীপ থেকে যাওয়া যায় কিনা ,একটু জানান

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

লেখক বলেছেন: আমি আসলে সন্দীপ থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার পথ জানি না।
আপনি ভ্রমন বাংলাদেশ এর ফেইস বুক পেইজ এ জানতে চাইতে পারেন।
আমার ধারনা উনারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।

https://www.facebook.com/VromonBangladeshpage

৩. ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০

লেখক বলেছেন: আপনাকে স্বাগতম।

৪. ২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:১৮

ফোনেটিক বলেছেন: নিঝুম দ্বীপ - Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিচারের জায়গা না পেলে মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)

মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একদিন এসো সন্ধ্যে ফুরোলেই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫



ভালোবাসা ছড়ানো পাতায় পাতায়, সবুজাভ স্নিগ্ধ প্রহর আমার
এখানে উঁকি দিলেই মুগ্ধতারা চুয়ে পড়ে টুপটাপ;
ধূসর রঙ প্রজাপতিরাও এখানে রঙিন ডানায় উড়ে,
কেবল অনুভূতির দোর দিতে হয় খুলে, চোখগুলো রাখতে হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কোনো চকচকে ল্যাব বা বিলাসবহুল ফ্যাক্টরিতে জন্মায়নি

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

চীনের জে-১০ এর পেছনেও রয়েছে সেই ত্যাগ আর সংকল্পের গল্প—
১: গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) দলের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২: বাইসাইকেলে চেপে কাজে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সু চিশৌ।
৩: প্রথম উড্ডয়নের পর কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Bangladesh bans ousted PM's Awami League under terrorism law

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬





হায়রে এরেই বলে কর্মফল। ১৭ টা বছর গুম , খুনের মাধ্যমে এক ভয়ের রাজ্য তৈরী করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের বাকশক্তি। চোখ, কান, মুখ থাকতেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিন গেলে আর দিন আসে না ভাটা যদি লয় যৌবন

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১২ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬


এমন কোনো ইস্যু আছে, যা নিয়ে জাতি পুরোপুরি একমত? ৫০%ও একমত এমন কোনো বিষয় চোখে পড়ে না। একপক্ষ রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করে, আরেক পক্ষ বদলাতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×