ভৌগোলিক অঞ্চল:
বঙ্গ, বাঙ্গালাহ, বাংলা, বঙ্গাল বা বঙ্গদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরপূর্বে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল। এই বঙ্গ বর্তমানে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা গঠিত। কিন্তু পূর্বে অবিভক্ত বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল (ব্রিটিশ রাজের সময় কালে) বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্য বিহার, অসম ও ওড়িশা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বাংলার অধিবাসীরা বাঙালি জাতি হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকেন এবং বাংলা ভাষা এই অঞ্চলের প্রধান ভাষা।
এই অঞ্চলটি অধিকাংশ গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্র নদী ব-দ্বীপ বা গাঙ্গেয় ব-দ্বীপেঅবস্থিত,যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ। দক্ষিণ ব-দ্বীপের অংশটিতে সুন্দরবন অবস্থিত — যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গরান অরণ্য এবং যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমি। এই অঞ্চলের জনজীবন মুলত গ্রাম্য হলেও কলকাতা এবং ঢাকা এই দুটি মহানগর এই বাংলা অঞ্চলটিতে অবস্থিত।
ব্যুৎপত্তি ও জাতিতত্ত্ব:
বাংলা বা বেঙ্গল শব্দগুলির আদি উৎস অজ্ঞাত, কিন্তু বিশ্বাস করা হয় যে শব্দটি বং অথবা বাং নামক একটি দ্রাবিড়ীয়-ভাষী উপজাতি বা গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বং জাতিগোষ্ঠী ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। অন্য তত্ত্ব বলছে যে শব্দটির উৎপত্তি ভাঙ্গা (বঙ্গ) শব্দ থেকে হয়েছে, যেটি অস্ট্রীয় শব্দ "বঙ্গা" থেকে এসেছিল, অর্থাৎ অংশুমালী। শব্দটি ভাঙ্গা এবং অন্য শব্দ যে বঙ্গ কথাটি অভিহিত করতে জল্পিত (যেমন অঙ্গ) প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেমনঃ বেদ, জৈন গ্রন্থে, মহাভারত এবং পুরাণে। "ভাঙ্গালা" (বঙ্গাল/বঙ্গল)-এর সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ রাষ্ট্রকূট গোবিন্দ ৩-এর নেসারি প্লেট্সে উদ্দিষ্ট (৮০৫ খ্রিস্ট-আগে) যেখানে ভাঙ্গালার রাজা ধর্মপালের বৃত্তান্ত লেখা আছে।
অঙ্গ
অঙ্গ প্রাচীন ভারতের একটি রাজ্য। খ্রিষ্টপূর্ব ৬ শতকের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে এটি বিকাশ লাভ করে কিন্তু ওই শতাব্দীতেই এটি মগধ দ্বারা অধীকৃত হয়। প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থসমূহ যেমন: অঙ্গুত্তরা নিকায়াতে উল্লিখিত ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে অঙ্গ অন্যতম। প্রাচীন জৈন গ্রন্থ ভৈক্ষপ্রাজনাপ্তির (যা ভগবতী সূত্র নামে সাধারণত পরিচিত) প্রাচীন জনপদের তালিকাতেও অঙ্গের উল্লেখ আছে। কারো কারো মতে, অঙ্গের বাসিন্দারা ছিল মিশ্র জাতিসত্ত্বার, বিশেষত: পরবর্তী কালে।
আদ্য-অস্ট্রালয়ডেরা একটি বঙ্গের সবচেয়ে প্রথম অধিবাসী। দ্রাবিড়ীয় জাতি দক্ষিণ ভারত থেকে বঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন, যখন তিব্বতী-বার্মিজ জাতি হিমালয় থেকে প্রবেশ করেছিলেন, ও ইন্দো-আর্য জাতি প্রবেশ করেছিলেন উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে। যেহেতু জনগোষ্ঠীর গোড়াপত্তনের আপেক্ষিক ক্রম এখন জিন-তত্ত্ববিদগনের গবেষণাধীন, তাই এই বিষয় এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুমান সাপেক্ষ। অধুনাতন বাঙালিরা এই জাতিগুলির সংমিশ্রণ। যদিও বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। পাশতুনেরা, এবং তুর্কীরাদেরও সংমিশ্রণ, যাঁরা এইখানে খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতক ওর তৎপরবর্তীকালে প্রবেশ করেন। ইরানিরা ও আরবেরা মূলতঃ নৌপথে ব্যবসায়িক কারণে উপকূল-সংলগ্ন অঞ্চলে (যেমন চট্টগ্রাম) বঙ্গীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশ্রিত হন মধ্যযুগের বিভিন্ন সময়ে।
চলবে.....
(তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৮