আমার চোখের নীচে একদলা পাপ
আরো কিছু পাপকে আমন্ত্রণ জানায়
বাসা বাধবার জন্যে। আমি অনুভব করতে পারি, আমি ঢের
বুঝতে পারি আজকাল
অশান্তির বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে শস্যময় ভাতঘুম
কেমন ক্লিশে হয়ে আসে!
কেমন করে ভাঙে স্বপ্ন বিষাদ; অজানা সন্ধ্যার
পলাতক ইতিহাস, আমি জানি
আমাকে বলে গেছে অন্ধকারের প্রেতশরীরেরা।
আমি ওপরে তাকাই, খুঁজি ছায়াসান্ত্বনার উদার করতল। মাথার উপরে উলঙ্গ আকাশ, ঝকঝকে সূর্য। ছায়া ছায়া পালককুঞ্জ উধাও। জোড়শালিখেরা উড়ে গ্যাছে খয়েরি ডানার অহংকারটুকু নিয়ে। পাখনাদুটো কেমন দুর্বলতা দেখায়, করুণাও করে বোধহয়- নিজেকে উর্বর করে যায় পাপার্ত হায়ারোগ্লিফিকে। বিপাশার সাথে অমীমাংসিত পাপযজ্ঞের শিলান্যাস আজও হল না আমার।
বেদনা চূর্ণ ঘিরে থাকে শুধু, যেন প্রীতির পলাশ। আমি তবুও একা, বনময়ূরের মত। হতাশা কাটাতে কেউ দেয় সুখটান, আমি হাঁটি। হাঁটি উষরতার সীমান্তের কাছাকাছি। এত এত শাদা বালুকণার বীভৎস হাসি দেখে চেতনারা কঁকিয়ে ওঠে আর্তনাদে। ধাঁধানো শাদার অসহ্য সমুদ্রে একবিন্দু কালো চোখে বাধে- কি এক চারপেয়ে আগায়, একটু একটু করে! চোখের দিকে চোখ রেখে এগিয়ে আসে সে। কাছে আসতেই মনে পড়ে যায় সেই কালো বেড়ালটা, বিপাশার কল্পনার সেই হুলো বেড়ালটা!
বিপাশা, প্রিয়তম অনুভব, ঝড়বিষাদের অতলান্তিকতায় বুঝি তোমার বসবাস! মেঘ, ফুল আর হাওয়ায় উড়ে উড়ে কবে হলে নৈঃশব্দ সন্ধ্যার সারথি, জানে মহাকাল। আমার বেদনার অবিন্যস্ত উঠোনে তোমার দীঘল চুলে, খেলা করে শারদ-রৌদ্রের রাগ। বড় বড় হাওয়াই মিঠাই কাশের ফুল, নুয়ে পড়ে পেলব কোলে। সূর্যমুখীর মত অবিচল ভালবাসা, যেন কথা ও কবিতার অনন্ত সঙ্গম।
জানুতে হঠাৎ আঁচড়- কালো বেড়ালটা স্থির। স্মৃতির পেলিক্যান মুখ থুবড়ে পড়ে; শাদা বালির অশ্লীল খামারে। অন্তহীন শাদায় বিড়ালের ওই কালো পশমগুলো মনে করিয়ে দ্যায়, আমার এখন- শোকের কাঠগোলাপ, বেদনার অপরাজিতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করার কথা কবিতাকে, কবিতার মত স্বপ্নময় বিপাশাকে; আমার পরাবাস্তবতার অনুবাদ জগত প্রবল ব্লাকহোলটাকে। এত এত বিষাদ নিত্যদিন পেঁচিয়ে ধরে থাকে, তবু আমি কেমন একা। সুতোকাটা ঘুড়ির মতন, মাঝ আকাশে ঘুরি উদ্দেশ্যহীন।
কবিতা, তোমার কোলে ঘুমিয়ে গেছে আমাদের প্রেমের মিথ, কাকভোরে যার ঘুমপুরাণের মৃত্যু। ব্যক্তিগত আকাশের উদারতায় নক্ষত্রেরা তোমায় চাঁদচপলা ডেকে পূজো দিত। অপাপবিদ্ধ ওই জোছনা-বিলাসী মুখ বুকপাজরে লুকোনো দুধশাদা আয়নাতে দেখতে ইচ্ছে হয় অজস্রবার। হারিয়ে যাওয়া হাওয়াগাড়ি থেকে তাই শব্দকে কুড়িয়ে এনে আবিষ্কার করি জপের নতুন মন্ত্র। শূণ্যশোক ভোলা ধূসর সময়ের এ মন্ত্রই বিপাশা নামের এক অমর কবিতা। সে এখন আকাশ, সুখটুকু নিয়ে গেছে বাদামী ফানুসের উৎসবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯