ক্ষুধার্ত ভারত
মধ্য ভারতের খাণ্ডোয়া।
এখানেই মাস চারেক আগে পৃথিবীর আলো দেখেছে উজালা। চার মাস পেরিয়ে এই শিশু ওজন এখনও মাত্র দেড় কিলোগ্রাম! মাতৃজঠর থেকেই চরম অপুষ্টি নিয়ে জন্মানো শিশুটির পেটের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট অপুষ্টির ছবি। শুধু উজালার নয়, গোটা ভারতবর্ষের।
‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার সাংবাদিক ম্যাট ওয়েড খুঁজে পেয়েছিলেন ‘ঝলমলে ভারতের পেটের ভিতর এমনই এক ক্ষুধার্ত ভারতের’!
অথচ, এই ফেব্রুয়ারির ‘ফোর্বস’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিশ্বের প্রথম দশ ধনী ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে দু-দু’জন ভারতীয়ের নাম। এই পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের কোটিপতির সংখ্যা এখন একশো ছুঁই ছুঁই। ঠিক যে মুহূর্তে দেশের প্রায় দশ লক্ষ শিশু না খেতে পেয়ে ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। আশ্চর্য এক বৈষম্য!
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এই ভারতে যে আর্থিক সংস্কারের ধুয়ো তুলে শুরু হয়েছিলো মারণযজ্ঞ, তা তো আসলে ধনীকে আরো ধনী বানিয়েছে। বিত্তশালীদের সম্পদের পরিমাণ ক্রমশ ছুঁয়েছে আকাশ। স্বাধীন ভারতে কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ৫০বছর ১৭মাস। অথচ, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে মানব উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ১৮২টি দেশের তালিকায় ভারতের স্থান এখন ১৩৪তম। শেষ ৬বছরে ভারতের স্থান ৭ধাপ তলানিতে তলিয়ে গেছে। আর বিশ্বের ক্ষুধাসূচীর তালিকায় ভারতের স্থান ১১৯টি দেশের মধ্যে ৯৬তম। যার অর্থ, ক্ষুধার্ত বিশ্ববাসীর তিন ভাগের এক ভাগের বাস এই দেশ। যেখানে স্রেফ খিদের শিকার হয়ে একবছর বয়স হওয়ার আগেই অপুষ্টিতে মারা যায় ২০লক্ষ শিশু!
ভাবুন একবার, এ এমন এক দেশ যেখানে গরিবের জন্য রেশন চালু করার নামে গরিবরাই বাদ পড়ে যান রেশনের আওতা থেকে। গরিবী হটানোর নামে গরিব হটানোর ব্যবস্থার মতোই। ছিল সকলের জন্য রেশন। নয়া-উদারবাদের পথে সংস্কার হলো রেশন পরিকাঠামোর। নির্দিষ্টভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে-থাকা মানুষদের কাছে কম দামে খাদ্যশস্য পাঠানোর মতো করেই রেশন পরিকাঠামো তৈরি হলো। এলো বি পি এল, এ পি এল, অন্ত্যোদয়-সহ রকমারি ভাগাভাগি। এই ভাগাভাগির অন্তিম ফল দরিদ্র মানুষই বাদ পড়ে গেলেন রেশনের সুযোগ থেকে। এই চিত্র পশ্চিমবঙ্গের নয়, গোটা দেশেরই। তা স্বীকার করা হয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় রিপোর্ট ও আদালতে পেশ-করা কেন্দ্রীয় তথ্যেও। বছর-পাঁচেক আগেই তৎকালীন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া স্বীকার করেছিলেন, ভরতুকি দেওয়া খাদ্যশস্যের ৫৮শতাংশ পৌঁছায় না গরিব পরিবারে। এমন কী রেশন ব্যবস্থার বেহাল চিত্র নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও ভৎসিত হতে হয়েছে কেন্দ্রকে।
সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থার পাট চুকিয়ে তা লক্ষ্যভিত্তিক রেশন ব্যবস্থা বা টি পি ডি এস চালু হয়েছিল ১৯৯৭-এ। এরপর কেটে গেছে এক দশক। গরিব এবং অত্যন্ত গরিব, তাঁদের জন্য রেশন বলে গাল-ভরা প্রচার হলেও আদৌ তা পৌঁছায়নি গরিবের ঘরে। বাধ্য হয়েই সুপ্রিম কোর্ট গণবণ্টন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে সি ভি সি (সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন)-কে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। ঐ মামলায় সি ভি সি অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার, দিল্লি, গুজরাট, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, ওড়িশা, রাজস্থান এবং উত্তরাখণ্ড-সহ যে’কটি রাজ্যের রিপোর্ট দিয়েছে, সেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচের তালিকা বা বি পি এল তালিকা নিয়ে প্রচুর গরমিল রয়েছে বলে জানিয়েছে সি ভি সি। বি পি এল তালিকার গরমিল রোধে এ পি এল তালিকাটাই তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সি ভি সি। তাদের মতে, সমস্ত এ পি এল-কে নিয়ে আসা হোক বি পি এল তালিকায়। ১লক্ষ টাকা বছরে আয় আছে, এই জাতীয় পরিবারেরও বি পি এল-এ আসা উচিত বলে মত সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের। সি ভি সি-র মতে তালিকার গরমিল পুরোপুরি বন্ধ হলে রেশন ব্যবস্থা চাঙ্গা করা সহজ হবে। এ দাবি তো বামপন্থীরাই করে আসছে।
কানাডিয়ান ‘গ্লোব অ্যান্ড মেল’ পত্রিকার সাংবাদিক স্টিফেনি নোলেন সম্প্রতি তাঁর এক নিবন্ধে লিখছেন, ভারতের মতো দেশে স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য শিশুদের যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন, সেই প্রাথমিক পরিকল্পনাই নেই সরকারের। কাজেই যেটা হওয়ার দরকার ছিলো সেই চাহিদাকে দূরে সরিয়ে রেখে চলছে লোকদেখানো সব কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী।
তথ্য প্রযুক্তির ব্যপ্তি, শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভিতর তৈরি করে দেওয়া এক অসাম্যের প্রতিযোগিতা, বড় এবং মাঝারি শহরকে কেন্দ্র করে ঝকমকে রাস্তাঘাট তৈরির ব্যস্ততা, চোখধাঁধানো শপিং মল এবং মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত বাড়বাড়ন্ত। সবমিলিয়ে সামগ্রিক সমাজের চেহারাই হয়ে পড়েছে দুর্বোধ্য। এখন একজন রিক্সাচালকও অনায়াসে ব্যবহার করছেন মোবাইল ফোন। কিন্তু তাতে কী অপুষ্টি এবং চরম ক্ষুধার স্রোতকে রোধ করা সম্ভব? এই সস্তাদরের চমকই খতম করে দিচ্ছে শৈশব। প্রতিদিন প্রতি পাঁচজন শিশুর একজন অপুষ্টির শিকারে পরিণত হয়, পাশাপাশি তিন হাজার জন্ম নেওয়া শিশু মুহূর্তে খোয়ায় প্রাণ!
প্রয়োজন রেশন ব্যবস্থা চাঙ্গা করা। কিন্তু এর পিছনে আছে বাজার শক্তি পুরোমাত্রায় প্রভাব বিস্তারে সরকারের ‘মতাদর্শগত দায়বদ্ধতা’! তাতে সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় ঘটলেও কেন্দ্রের কিছু যায় আসে না! তাই দেশের বিভিন্ন গুদামে পড়ে থাকে ৪৭৪.৬৫লক্ষ টন চাল ও গম। যেখানে ২০০লক্ষ টন রাখাই যথেষ্ট। একে কী মজুতদারী বলবেন? তবে কী ফিরে আসবে তেতাল্লিশের মন্বন্তর! ভাবুন একবার, এই অস্থির সময়ে রাজস্থানে, পাঞ্জাবে খোলা আকাশের নিচে খাদ্যশস্য পচে নষ্ট হচ্ছে। নিজের গুদাম ভাড়া দিয়ে এফ সি আই ধ্বংস করছে নিজের গুদামজাতকরণের পরিকাঠামো। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ সরকার মদ প্রস্তুতকারকদের ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছে মদ তৈরির জন্য। আর খাদ্যের দাবিতে এই বাংলার ৩৮হাজার গ্রাম আন্দোলনের লেলিহান শিখায় জ্বলেছে।
রেশন গরমিল নিয়ে যতোটা পশ্চিমবঙ্গে হইচই হয় সংবাদমাধ্যমে, ততোটা অন্য রাজ্য নিয়ে হয় না। অথচ কেন্দ্রীয় রিপোর্টই বলছে, রেশন-দুর্নীতিতে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে একেবারে পিছনের সারিতে। রিপোর্টে উল্লেখ, রেশনে বরাদ্দ শস্য গুদাম থেকে ৭৫শতাংশ চোরাবাজারে যাচ্ছে, এরকম রাজ্যের মধ্যে রয়েছে বিহার এবং পাঞ্জাব। ৫০শতাংশের মতো চোরাবাজারে রেশনের খাদ্যশস্য পাচার হওয়া রাজ্য হলো হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশ, আসাম, হিমাচল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান। মাত্র ২৫শতাংশ খাদ্যশস্য চোরাবাজারে চালান হয় বাকি ৭৫শতাংশ রেশনে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছায়, এরকম রাজ্য হলো পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু।
কেন্দ্রের ঐ রিপোর্টই বলছে, ভুয়ো রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি—এরকম রাজ্যের মধ্যে রয়েছে আসাম, হিমাচল প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ। ৩০শতাংশ ভুয়ো রেশন কার্ডে রেশন তোলা হয় এসব রাজ্যে। ১০শতাংশের মধ্যে ভুয়ো রেশন কার্ডে রেশন তোলা রাজ্য হলো পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, গুজরাট, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ। ১০শতাংশের কম ভুয়ো কার্ড আছে, এমন রাজ্যগুলি হলো, অন্ধ্র প্রদেশ, হরিয়ানা, কেরালা, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু।
কেন্দ্রে বিভিন্ন রিপোর্টে রেশন ব্যবস্থার গোড়ায় গলদের বিষয় নিয়ে বারে বারে প্রশ্ন উঠেছে। বামপন্থীরা এই বিভাজিত রেশন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থার জন্য সরব হয়েছেন সংসদে ও সংসদের বাইরে। বামপন্থীরা বলছে, আগের মতো সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থায় খোলাবাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে প্রভাব সৃষ্টি করে। রুখে দেওয়া যায় চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজার। কিন্তু এই দায়িত্ব তো কেন্দ্রেরই। অথচ, কেন্দ্র নীরব। তিলে তিলে মরতে হচ্ছে উজালাদের! এই নীরবতার জবাব মিলবে ২৭শের হরতালে।
চলছে সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থার দাবিতে দেশের আনাচে কানাচে ১৩দলের ডাক পৌঁছানোর প্রস্তুতিও।
চাঁদ গাজীর ব্যান তুলে নিন/ ব্লগ কর্তৃপক্ষ ‼️
আমি যদি গাজী’ ভাইয়ের যায়গায় হতাম জিবনেও সামু’তে লেখার জন্য ফিরে আসতাম না।
হয় বিকল্প কোন প্লাটফর্ম করে নিতাম নিজের জন্য। অথবা বাঁশের কেল্লার মত কোথাও লিখতাম।
নিচে ব্লগার মিররডডল-এর করা পুরো... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা বরাবরই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য প্রকাশ, জনমতের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)
সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।
জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.
ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?
আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন
কখনো বিদায় বলতে নাই
ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন