আগের পর্ব--->>
সেই রাজ্যে বাস করত এক কুমার। তার ছিল এক কৃষ্ণবর্ণ কুমারী মেয়ে, নাম তার আনন্দা। আনন্দ বিতরন করাই তার কাজ। মানুষের মনে আনন্দ আনতে তার জুড়ি নেই। সব সময় হাসি-খুশী থাকে সে। তার গুণের শেষ নেই। বিদ্যা সাধনা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সব কাজ-কর্মে সে পটু। প্রতিবেশীদের মুখে তার গুণের ফুলঝুরি। তার গুণকীর্তন শুনে যে কেউ তাকে না দেখেই ভালোবেসে ফেলবে।
রসায়নবিদের প্রেমের কথা যখন রাজ্য জুড়ে, তখন কালো-ধলা কোন মেয়েই বসে থাকে নি। সবাই একটি বারের জন্য হলেও চেষ্টা করেছে। তবে আনন্দার এ বিষয়ে কোন উৎসাহ ছিল না। তার সখীরা তার কাছে বার বার বর্ণনা করেছে রসায়নবিদের রূপের কথা। আনন্দা সব কথা এক কান দিয়ে শোনে আর আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। তবে রসায়নবিদের সাথে প্রেমে ব্যর্থ সখীরা নাছোড়বান্দা, তারা চাই আনন্দাও তাদের মত ব্যর্থ হয়ে তাদের মনের দুঃখ বুঝুক। তাই তারা এক ফন্দি আঁটল।
একদিন সকালে আনন্দা ও তার সখীরা বনের ধারে নদীতে পানি আনতে গেল। ফেরার পথে সখীরা রসায়নবিদের বাগানে লুকালো। আনন্দা তার সখীদের খুঁজতে খুঁজতে রসায়নবিদের বাগানে চলে আসলো। সে তার পানির পাত্র বাগানের প্রবেশমুখে রেখে সখীদের খুঁজতে গেল বাগানে। একসময় সে দীঘির কাছে পৌঁছাল, দীঘির পরিষ্কার পানি দেখে সে চমকে উঠলো। দিঘীর জলে ফোটা নীল পদ্মের সৌন্দর্য সে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে লাগল।
এমন সময় গবেষণাগারের চৌ-কাঠ খুলে বের হল রসায়নবিদ। একটি সফল গবেষণা শেষ করে উৎফুল্ল সে। তার কাছে আজ যেন সব কিছু অন্যরকম ভালো লাগতে লাগল। বাগানের প্রতিটি পাতা, প্রতিটি ফুলকে সজীব মনে হতে লাগল। পুব আকাশের সূর্যকেও আজ অষ্টাদশী চাঁদের মত সুন্দর মনে হতে লাগল। বাগান পেরিয়ে যখন সে দীঘির দিকে আসলো, তার সময় থমকে গেল। কে সে রমণী? ঢেউ কাটানো শরীরের গড়ন, চুল মাটি ছুঁই ছুঁই। রমণীর সম্মুখে এসে তার আবেগী চোখে রসায়নবিদের মন গলে যায়।
সে যে কৃষ্ণবর্ণ এক মেয়ে, তাতে কি? তার চোখ তাকে যে প্রশান্তি দিয়েছে তা কি অন্য কিছু দিতে পারবে! রসায়নবিদের হৃদয়ে ফুলের বাগানের সৃষ্টি হল। যেখানে হাজার রকমের ফুল, হাজার প্রজাপতি-পাখির আনাগোনা আর তার মাঝে মায়াবী কৃষ্ণবর্ণ মেয়েটি। রসায়নবিদ আনমনে মেয়েটির হাতে চুম্বন করল। আনন্দা হঠাত এ যুবকের চুম্বনে চমকে উঠলো। তবে তার দৃষ্টি সরে না। সে তখনো জানে না যুবকটি কে? তবু এক পলকেই যুবকের প্রেমে পড়ে গেল আনন্দা। লজ্জায় নিজেকে ছাড়িয়ে পালালো সে। আনন্দার সখীরা এ দৃশ্য দেখে আনন্দাকে হিংসে করতে লাগল। তবে রসায়নবিদ ও আনন্দার প্রেম থেমে থাকল না।
রাজ্যের আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল রসায়নবিদের প্রেমের কথা। এ ঘটনায় রাজা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন, এক রাজভোজের আয়োজন করতেও ভুললেন না। অন্যদিকে এ সংবাদে রাজকুমারীর মন যন্ত্রণায় ভরে উঠলো। তবে রসায়নবিদের প্রতি তার ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমে না। রসায়নবিদের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিল।
[চলবে......]
পরের পর্ব--->>
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৬