সে দেশের রাজা তাকে অনেক ভালোবাসতেন, অবশ্য তার সুন্দর চেহারার জন্য নয়, রসায়নশাস্ত্রে তার অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য। এজন্যই বনের ধারে এক সুন্দর গবেষণাগার বানিয়ে দিয়েছিলেন রাজা, যার চারপাশ ফুলের বাগানে ঘেরা, আর আছে একটি সুন্দর দীঘি। দেশ-বিদেশের অনেক অভিজ্ঞ টেকো রসায়নবিদেরাও রসায়নবিদ্যায় তার কাছে হার মানতো।
তবে বিপত্তি দেখা গেল যখন রাজপ্রাসাদে কানাঘুষো শুরু হল স্বয়ং রাজকুমারী রসায়নবিদের প্রেমে মশগুল। কথাটা রাজার কানে আসতেও দেরী হল না। রাজা গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। রাজা তার একমাত্র মেয়েকে সরাসরি কষ্টও দিতে পারে না, আবার সহজ-সরল জ্ঞানী রসায়নবিদকেও তার খুব দরকার। এজন্য ঘনিষ্ঠ ক’জন রাজকর্মচারী নিয়ে সলাপরামর্শ করতে বসেন রাজা।
কেউ বলে, ‘আটকাও রসায়নবিদকে।’
কেউ আবার বলে, ‘হলে সম্বন্ধ রসায়নবিদের সাথে, দোষ কি তাতে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তারতো জুড়ি নাই।’
সবার কথা শেষে রাজা বলেন কেশে, ‘রাজকর্ম জটিল কর্ম, হবে না ও মাথায়।’
হবে কি তবে এখন? অবশেষে বারো দিন বারো রাতে বের হল এক পন্থা, যে পন্থায় রসায়নবিদও বাঁচবে, রাজাও তাতে নাচবে।
রাজার নির্দেশে খুঁজে আনা হল রাজ্যের সেরা সুন্দরীদের। অবনী, শ্রাবণী, অনুরাধা সবাই গেল রসায়নবিদের কাছে রসালাপ জমাতে। তবে কারো রসেই ভিজল না রসায়নবিদের মন, সারাদিন-সারারাত রসায়নের রসেই ভিজে রইল সে। রাজ্যের সেরা সুন্দরী অরনাও গেল তার কাছে। সে তার মায়াময়ী কণ্ঠে, তার জাদুকরী ভঙ্গিমায় রসায়নবিদকে বধের সব চেষ্টা করতে লাগল। রসায়নবিদের গবেষণাগারে আলোর ঝলকানি হয়ে ঘুরে বেড়াত সে। রাজা অরনাকে দামী প্রসাধনী, জমকালো পোশাক দিলেন। তবু বধ হয় না রসায়নবিদ। রাজা পড়লেন বিপাকে। যদি না হয় রসায়নবিদের প্রেম, তবে কেমনে ঠেকাবে রাজকুমারীকে?
এবারে রাজা ঘোষণা করেন, যে রসায়নবিদের সাথে প্রেম করতে পারবে, তার রসায়নবিদও মিলবে, ধন-সম্পদও মিলবে।
হাওয়ার বেগে কথাটা ছড়িয়ে পড়ল দেশ-বিদেশে। এরপর দিনের পর দিন সুন্দরীরা আসতে লাগল এই আজব প্রেমের খেলায় মাততে। তবে কিছুতেই কিছু হয় না, রসায়নবিদের মন রসায়নেই পড়ে রইল।
এত সব ঘটনা আর রাজকুমারী জানবে না, তা কি হয়? রাজকুমারী সব জেনে আরো বেশী ভালোবেসে ফেলল রসায়নবিদকে।
রাজপ্রাসাদে অশান্তি বেড়েই চলল। রাজার ঘুম হল কাবার, রাজকুমারী হল গৃহবন্দী।
[চলবে......]
পরের পর্ব--->>
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭