• সাম্প্রতিককালে জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা কি আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে কোন ধরনের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের স্বীকার হয়েছে?
• এরকম ঘটনা কি আমরা শুনেছি যে পাইকারি হারে রাতের আধাঁরে জামায়াত-শিবির কর্মীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুম করে দিচ্ছে তাদের প্রতিপক্ষ?
• সর্বোপরি এমন কোন ঘটনার (বিচ্ছিন্ন বা ) নজির কি আছে যে জন্য জামায়াত-শিবিরের স্বশস্ত্র কার্যক্রম ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না?
একটা গৎ বাঁধা কথা জামায়াত-শিবির তো বিরতীহীনভাবে প্রচার করে যে তারা সরকারের নির্মম নির্যাতনের স্বীকার। তো এই নির্যাতন তো কমবেশি সব সরকারই বিরোধীদলের প্রতি করে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলও প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু সেই সব প্রতিক্রিয়া আর বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের প্রতিক্রিয়া কি এক? সহিংসতার মাত্রা কি এক? কিংবা এর পরিধিটা (মানে সহিংসতার বলি কারা)?
আসলে ওদের এ সময়কার সব কার্যক্রমই পূর্বেই করা পরিকল্পনার বা বেশ কিছু স্ট্যানডিং ইন্সট্রাকশনের ফলাফল মাত্র। এতো সুনিপুনভাবে, এতো সিস্ট্যাম্যাটিকভাবে যে ধ্বংস ও হত্যাকান্ড তারা চালাচ্ছে তা কোনভাবেই কোন সতর্স্ফুত রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হতে পারে না। তাদের এই কার্যক্রমে একটা বিষয় একেবারেই নিঃসন্দেহ হওয়া যায়, তা হলো জীবনের কোন একটা সময়ে তাদের ৭১ এ করা কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে, এই চরম সত্যটি তারা জানতো।
একটা প্যাটার্ন লক্ষ্য করেছেন? ৭১ এ পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর এই জামায়াত-শিবিরের(ইসলামী ছাত্র সংঘ) প্রতিপক্ষ নিছক কিছু রাজনৈতিক দল ছিল না, ছিল বাংলাদেশের সকল জনগন। এই ২০১৩ তেও তাদের সহিংসতার বলি কিন্তু সাধারন জনগনই। কিন্তু সাধারন জনগনকে প্রতিপক্ষ বানালে তার ফলাফল বা পরিনতি কি হয়, তা জামায়াত ৭১ এই দেখেছে। সে সময় অসংখ্য নিরীহ মানুষ হত্যা করেও তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ২০১৩ তে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে তারা করছে তা কোন বিশ্বাসের কারনে করছে? হতে পারে তারা এখন এই আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান যে ৭১ এ পর্যুদস্ত হলেও ২০১৩ তে তার পুনরাবৃত্তি হবে না। তাদের দৃঢ় বিশ্বাসঃ ৭১ এ বাংলাদেশের জনগনের যে মেরুদন্ড ছিল তা এখন নেই, তারা বিভিন্ন মতাদর্শ বা ভাবাদর্শে এতটাই বিভক্ত যে অভিন্ন জাতীয় স্বার্থও তাদের এক সুতায় বাধঁতে পারেনা, ব্যক্তিগত জীবনে তারা “চাচা আপন প্রান বাঁচা” এর বাইরে আর কিছু চিন্তাই করতে পারেনা এবং গত ৪২ বছরে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক সরকারে সাহচর্য ও পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাক্ষেত্র, অর্থনৈতিক এমনকি সামরিক দৃষ্টিকোন থেকে তারা যে মজবুত অবস্হানে এসেছে, সে অবস্হানটা চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা কারোরই নেই।
জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম এবং এর পেছেনে যে চিন্তাধারা কাজ করে তা কি স্বাভাবিক?
• কাউকে এলোপাতাড়ি কোপানো আর বেছে বেছে হাত পায়ের রগ কেটে দেয়ার মধ্যে কি কোন তফাৎ নেই? কাউকে আগে থেকে যদি দেখিয়ে দেয়া না হয় যে এটা হাতের বা পায়ের রগ, সে সত্যিকারের ময়দানে গিয়ে কি করবে? শল্যবিদ্যার প্রাথমিক এই জ্ঞানটুকু নিয়েই কিন্তু একজন প্রশিক্ষিত জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মী ময়দানে নামে। এই রকম জ্ঞান সম্পন্ন কর্মী কেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ন?
• জামায়াত-শিবিরের সাধারন কর্মীরা সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বয়ান দেয়, কাজও করে (তাদের ভাষ্যমতে)। কিন্ত সে জন্য যুদ্ধপরাধী নেতারা তাদের কাছে অপরিহার্য কেন? তাদেরকে বাদ দিয়েও তো তারা সে কাজ করতে পারে। সেটাই কি স্বাভাবিক ছিল না? নাকি সেই সব চিন্হিত যুদ্ধপরাধী নেতারা ৭১ এ যে চিন্তাধারায় বিশ্বাসী (যেমন বাংলাদেশের অস্তিত্ত মেনে না নেয়া) ছিলেন, জামায়াত-শিবিরের এ প্রজন্মের কর্মীরাও সেই চিন্তাধারায়ই বিশ্বাসী? বাংলাদেশের অস্তিত্তে বিশ্বাস না করে সেই বাংলাদেশেরই সকল নাগরিক সুবিধা ও অধিকার ভোগ করাটা কি স্বাভাবিক?
• যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ত বিশ্বাসী না তাদেরকে যে ন্যায় বিচার পাওয়ার সু্যোগটা দেয়া হলো তা কি বড় উদারতা/বদান্যতা নয়? বিচারের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সুযোগটা তারা নিলো ঠিকই কিন্তু রায় পরবর্তী তাদের প্রতিক্রিয়াটা দেখুন। খুব স্বাভাবিক মনে হয়? বিচারিক সকল কার্যক্রমে আমি আছি কিন্তু রায় মানব না। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ, রায় পরবর্তী সময়ে কোন বাছবিচার ছাড়াই সাধারন মানুষের উপর তারা যে নৃশংসতার নজির স্হাপন করলো তা কি স্বাভাবিক? অথচ সাধারন মানুষ যুদ্ধপরাধী জামায়াত নেতাদের বর্তমান পরিনতির (প্রকৃতপক্ষে তাদের এ পরিনতির জন্য তাদের ৭১ এ করা মানবতা বিরোধী অপকর্মই দায়ী) জন্য কোনভাবেই দায়ী নয়।