(মুছে যাক মানবতার বুক থেকে আগ্রাসী আঁচড়ের দাগ)
হ্যামিলেনের বাঁশিওয়ালা যেমন পারেনি তাঁর বাঁশিতে পুরানো সুর ফিরিয়ে আনতে শত চেষ্টার পরও, তেমনি লেলিনের ভাঙ্গা মুর্তি কিংবা অস্পৃশ্য কোন দেবতা পারবে না সেই পুরোনো ট্রয় নগরী কিংবা প্রাচীন কোন সভ্যতা সৃষ্টি করতে। তেমনি আমিও পারবো না আমার ভগ্ন হৃদয়ে হতাশা, ভোগান্তি, ভয় আর অত্যাচার-নির্যাতন থেকে প্রাপ্ত যে ভালোবাসার জন্ম হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে।
সৃষ্টির শুরু থেকে যা কিছু মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ, সেখান থেকেই ফোবিয়ার (ভয়) জন্ম। সভ্যতার অগ্রতি কি তোমার জন্য হুমকি স্বরূপ মি. ফ্যাট ম্যান? নাকি তোমার উচ্চাভিলাষ, সামাজিক শ্রেণীপ্রথা, বড় হতে চাওয়ার আকাঙ্খা, ধর্মীয় অহংকার, জাতীয়তার দম্ভ তোমার কাছে হুমকি স্বরূপ। তাহলে তোমার ভয় কিসে? অহংকার কিংবা কুসংস্কার কখনো হতে পারে না অলংকার। অধিকন্তু সেটা হয়ে উঠে কষ্টের ঝংকার। প্রহেলিকা মাত্র।
তুমি আগ্রাসী, তুমি ধ্বংসাত্মক, তুমি বিস্ফোরক, তুমি অন্ধ, তুমি ভীত, তুমি আত্মনির্ভরহীন, তুমি অশিক্ষিত, তোমার মন কুসংস্কারাচ্ছন্ন, তুমি ভুয়া সভ্যতা ও কুটিল সামাজিক শ্রেণীপ্রথার শিকলে বন্ধি, তুমি পরাধীন, তুমি অন্যের ইচ্ছার কাছে খেলার পুতুল, তুমি ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী, তুমি প্রাণহীন জড় পদার্থ, তুমি পাতা ঝরা বৃক্ষের মতো আবেগহীন।
একজন সত্যিকারের মানুষ চোখ দিয়ে নয়, সে দেখে অন্তরদৃষ্টি দিয়ে। সে ভালোবাসে আবেগ দিয়ে নয়, অনুভুতি দিয়ে। সে পিছিয়ে পড়ে না। সে মালা গাঁথে নতুন দিনের, নতুন স্বপ্নের, নতুন দিগন্তের; মুছে ফেলে পুরানো অকেজো সকল ধ্যানধারণা। শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিত করতে পারেনা, প্রকৃত শিক্ষিত হতে হয় বিবেক দিয়ে। আর মানবতা মানুষকে মুক্তির পথ দেখায় সামাজিক শ্রেণীপ্রথা, কুসংস্কার ও পরাধীন সভ্যতার শৃঙ্খল থেকে। মানবহিতৈষীতায় মহৎ হওয়া যায় কিন্তু মিথ্যা, অন্ধ ও পঙ্গু সভ্যতা আর ভ্রান্ত বিশ্বাসের সম্রাট হওয়া যায় না। মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রাণের সঞ্চার ঘটায়, প্রাণকে করে পুলকিত, দেহের প্রতি শিরা-উপশিরায় ও কোষগর্ভে শিহরণ জাগায়, আনন্দিত করে মনকে। মানবতা মানুষকে মহৎ হতে শেখায়, সাহস জোগায়। বুঝতে শিখায় ভুয়া সামাজিক শ্রেণীপ্রথা, জাতীয়তার দ্বন্দ্ব আর অন্যের কু-ইচ্ছার কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিজেকে ব্যর্থ, অযোগ্য, বিবেকহীন ও আত্মনির্ভরহীন প্রমাণ না করতে। ভালবাসা কোন যুক্তি মানে না, কোন আইন মানে না। সে স্বাধীন ও উন্মুক্ত। হৃদয় থেকে হৃদয়ে তার বিচরণ। বুকের ভীতরে তার বাস। তাই (মি. ফ্যাট ম্যান) তোমার জন্য আমার দীর্ঘশ্বাস।
এসো মি. ফ্যাট ম্যান, তোমার আগ্রাসী আর ধ্বংসাত্মক বা বিস্ফোরক সত্ত্বাকে, সকল প্রকার বাধা-প্রতিবন্ধকতা, ভয়-ভীতি, জটিলতা-কুটিলতা, রক্ত পিপাষু সভ্যতা ও শ্রেণীপ্রথা, ভুয়া জাতীয়তা প্রভৃতিকে থুথু দিয়ে অন্যর ইচ্ছার কাছে নিজেকে না বিকিয়ে এবং সর্বোপরি কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে, নিজেকে পবিত্র করে, দুরে অনেক দুরে মনকে প্রসার করে আমরা ভালোবাসি মানবতাকে । আমরা আলিঙ্গন করি পরস্পর গভীর শ্রদ্ধায়। ভেঙ্গে দেই ভেদাভেদ সৃষ্টিকারী দেবদেবী রুপী কাঁচের মুর্তি। এসো, আমরা পবিত্র হই ভালোবাসা আর মানবতায়। পৃথিবীকে উপহার দেই মানবতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। সবাইকে বুঝিয়ে দেই আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ, মুল্যবোধ, মানবতাবোধ, পারস্পরিক সহানুভুতি ও মমোত্ববোধ সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। ভালোবাসতে শিখো মানুষকে। তবেই দেখবে পৃথিবী কতো সুন্দর, জীবন কতো প্রসন্ন। দেখবে ভালোবাসা তোমাকে কতো মহান করে। অন্ততকাল তোমাকে বাঁচতে শিখাবে, তোমাকে রাখবে অক্ষয় করে আপন সত্ত্বায়। তখন তোমার দ্বিপ্তী ও উজ্জ্বলতা সবার মধ্যে অনুভূতি জাগাবে তোমাকে অনুসরণ করার। তুমি হবে যুগ-যুগ ধরে শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতর। সভ্যতা চলবে অনন্ত পথে বুক ভরা ভালোবাসায় মাথায় রেখে মুকুট মানবতার।
লেখকঃ মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪