8/5/12
হঠাত্ করে ১০তারিখ কক্সবাজার যাওয়ার বন্দবস্ত হয়ে গেল ।ঘটনার আকস্মিকতায় মাথা ঠিক কাজ করছে না।কি নেব কি নেব না বুঝে উঠতে পারছিনা ।হাতে মাত্র একদিন ।শেষখবর হচ্ছে সব ছেড়েছুড়ে ফেবুতে লগইন করলাম যা আছে কপালে 8(
9/5/12
রংপুর-to-চট্টগ্ রাম , সন্ধ্যা৬ঘটিকা,শ ্যামলী পরিবহন ।ওহে সমুদ্র আমি আসছি ।
(সমুদ্র বলতে নিখাদ উত্তাল সমুদ্রকেই বুঝিয়েছি ।ইহা কোন মানব জাতির নাম নহে ।)
10/5/12
বাসে যাচ্ছি
১.জানালার পাশের সিটটা পাইনি তাইমনটা কিঞ্চিত খারাপ ।
২.তবে জানালার পাশে সিট পাওয়া সৌভাগ্যবান মহিলার মন আরো খারাপ ।ওনার স্বামী কিছুক্ষণ পরপর বাসের বর্তমান অবস্থান এবং আমার বর্তমান অবস্থান জানার জন্য ফোন দিচ্ছেন ।সম্ভবত ওনার স্বামী বাসের টিকিট কাটার সময় টিকিট কাউন্টারে পাশেরটা মহিলার সিট সিওরিটি নিয়ে টিকেট কেটে ছিলেন কিন্তু শেষ সময়ে . . . . . .
৩.বাস ড্রাইভারের লাঙ্গুয়েজ দেখে আমি টাস্কিত্ব ।হয়ত প্রথম প্রথম বলে এমন হচ্ছে । নাস্তিক আস্তিকের যুদ্ধের সময়ও এমন ল্যাঙ্গুয়েজ দেখিনি ।শেষ পর্যন্ত পেছন থেকে এক লোক বললেন"এইযে ভাই বাসে মহিলা আছে ।"
৪.বর্তমান অবস্থান 'যমুনা সেতু' ।
11/5/12
১.আজ সকালে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেছিলাম ।জাফর ইকবাল স্যারের ভাষায় এর চেয়ে "চমকপ্রদ" ঘটনা আমার দৈনন্দিন জীবনে আর হতে পারেনা ।উঠে দেখি কুয়াশায় চার দিক মোড়ানো ।শীত কবেই শেষ অথচ চট্টগ্রামের কুয়াশা এখনও যায় নি ।কুয়াশার লজ্জা বলে কিছু নেই নাকি !
২.কাল রংপুর থেকে চট্টগ্রাম আসারপথে রাত একটার দিকে ঢাকায় এসেছিলাম ।কেমন করে বুঝলাম বলেন দেখি ?না আমি সাইনবোর্ড ও দেখিনি,কাউকে জিঙ্গেসও করিনি তাহলে কেমন করে বুঝলাম !ফোনের এফ এম রেডিও সার্চ করে ।প্রথম ও দ্বিতীয় বার কোন স্টেশন না পেলেওতৃতীয় বার পেয়েছি আর তখন ঘড়িতে ১টা বাজে বাজে অবস্থা ।তখন এমন অনূভুতি হচ্ছিল যে অনেক বড় কিছু একটা জয় করে ফেলেছি ।তিনটা মাত্রস্টেশন ধরল ।একটায় লাভগুরু আর একটায় খবর ,শেষটায় আউখাউ মার্কা ব্যান্ডের গান ।আমার প্রিয় ABCরেডিওটা নাই । আফসোস নিয়ে রেডিও শুনতে হল ।
৩.আজ সাড়ে নয়টার সময় প্রথম বারের মত চট্টগ্রামে পদার্পণ করলাম ।এটা ফেবুতে স্বর্ণাক্ষরে না হোক কালোক্ষরে লেখা হয়ে গেল ।আমার আসায় চট্টগ্রামবাসী ধন্য না আমি ধন্য বুঝতে পারছি না ।যেইধন্য হোক চট্টগ্রাম আমার কাছে অনেক সুন্দর , গোছানো শহর লাগছে ।কি সুন্দর বৈচিত্রময় বড় বড় রাস্তা ।রাস্তায় যেতে যেতে কারো যাতে একঘেয়ে না লাগে এজন্য রাস্তার দুইপাশে ছোট ছোট সুইট সুইট পাহাড় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে (কথাগুলো অযুক্তিক হলেও আমার তাইমনে হচ্ছে)।মোট কথা আমার চট্টগ্রামকে খুব ভাল লাগছে ।
৪.আজ সারাদিন চট্টগ্রামে ভাইয়ার হোস্টেলে শুয়ে বসে কাটালাম ।কাল(মানে আজ) চারটার দিকে কক্স বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেব ।টিকিট কাউন্টারের মামার ভাষ্য মতে কক্স-বাজার যেতে পাঁচ ঘন্টা (!!!) লাগবে ।
৫.ভাইয়ার ভাষ্য মতে তার ভ্যাটেনারি ইউনিভার্সিটি এবং হোস্টেল দেশের একমাত্র ধুমপান এবং রাজনীতি মুক্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ।কথাটা প্রথমে বিশ্বাস না হলেও সকাল থেকে এ পর্যন্ত হোস্টেলে থাকার পর মনে হচ্ছে 'নাহ , ভাইয়া ঠিকই বলেছে ।'এত বড় একটা ব্যাপার !আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয়টি কে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া উচিত ।
12/5/12
১.চট্টগ্রাম থেকে চারটার বাসে কক্স বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম ।বাসের নাম "সৌদিয়া" ।
২.বাসের ডিজিটাল ঘড়ি আমাকে আজ চরমবিনোদন দিয়েছে ।যখন বাসে উঠলাম তখন বাজে পোনে চারটা আর বাসের ডিজিটাল ঘড়িটায় কাটায় কাটায় বারটা বাজছিল ।চৌকোনা বাক্সের মাঝে ,লাল রংএর সরল রেখার জ্বলা নেভার মাধ্যমে সংখ্যা তৈরি করে সময় দিচ্ছিল ।এরকম জ্বলা নেভা খুব সহজেই যাত্রীকে আকৃষ্ট করতে পারে ।বাসে বসে থাকা ছাড়া করার কিছু নেই । ইচ্ছে করে আমি ঘড়ির দিকে চেয়ে রইলাম এবং আবিষ্কার করলাম ঘড়ির দিকে চেয়ে থাকলে ঘড়ির সেকেন্ডের কাটা স্লো হয়ে যায় । ঘড়িটা ভালই চলছিল যখন ঘড়িতে বারটা বার বাজে বাসটা জ্যামের মাঝে পড়ল এবংগাড়ির নতুন করে স্টার্ট দেয়ার সাথে সাথে ডিজিটাল ঘড়ি আবার কাটায় কাটায় বারো ।এভাবে যতবার নতুন করে স্টার্ট দিতে হয়েছে ততবার ঘড়িতে বারটা বেজেছে ।এতে হায়েস্ট বার টা বত্রিশ পর্যন্ত বেজেছিল ।এভারেজ ছিল সতের-আঠারো।আমার বিনোদন হয়েছে এই কারণে যে সব সময়ই মনে হচ্ছিল যে এই বুঝি বারটা বাজল ।টানা উত্তেজনায় বাস ভ্রমণ পার করলাম ।
৩.হোটেল সি প্যালেসে উঠেছি ।এর সম্পর্কে বলার কিছু নেই ।হোটেল যেমন হবার কথা তেমনি ।তবে একটা বড় সমস্যা ।রুমের মাঝে একটাই ফোনের চার্জার ডোকার মত জায়গা আছে যেটা দিয়ে টিভি চলে ।তাই ফোনে চার্জে দিলে টিভি দেখা সম্ভব না ।
৪.কাল ভোরেই সী বিচে যাবার প্লান আছে ।এখনও যেহেতু ঘুমাইনি তাই প্লানের মাঝে আমার অবস্থান সাগরের বালুবেলায় থাকার বদলে বিছানার উপরই থাকার সম্ভাবনা বেশি দেখা দিয়েছে ।
13/5/12
শুভ সকাল ।অনেকদিন পর এত সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ।
>>
১.সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠেই আপু ভাইয়া সবাই মিলে হোটেল থেকে সি-বিচের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সমুদ্র দেখতে ।
২.দেখলাম । অভিভূত হলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত যুক্ত বঙ্গোপসাগর কে দেখে ।এর বিশালতা চোখ ধাদিয়ে দেয় ।
৩.আপনমনে নিজের সাথে যুক্তি থাটালাম অবিরাম এই বিশাল ডেউ গুলোর সৃষ্টি নিয়ে ।নিজে নিজে একটা সমাধানও বের করে ফেললাম ।
৪.নাস্তা করে বীরদর্পে সবাই সমুদ্রে জাপিয়ে পড়লাম ।গোসলের সময় মুখের মধ্যে নোনা পানির ফ্রি ইনকামিং আউটগোয়িং শুরু হয়ে গেল ।নোনা পানি ওয়াক থুঃ
৫.গোসলের মাঝপথে হঠাত্ প্রচন্ড ঝোড়ো বাতায় বহা শুরু হয়ে গেল ।সমুদ্র থেকে প্রথম দিকের চেয়ে দ্বিগুন বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছিল ।সাথে প্রচন্ড বাতাসের কারণে বীচের বালিও উড়ছিল ,বালি ঝড় ,চোখ খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছিল না ।গোসল একচতুর্থাংশ বাকি রেখে উঠে যেতে হল ।এসময় শুরু হল অঝোর ধারায় বৃষ্টি ।বীচ থেকে বের হয়ে সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজলাম ।
৬.দুপুরে খেয়ে গেলাম দেখতে হীমছড়ি ।হীমছড়ি যাবার রাস্তাটার একপাশে পাহাড় অন্যপাশে সমুদ্র ।কোন দিকে তাকাবো বুঝেউঠতে পারছিলাম না ,দুপাশই যে অপরুপ সুন্দর ।একসাইডে তাকালে মনে হত ইশ ঐসাইডের না জানি কত কিছু মিস করে যাচ্ছি ।
৭.হীমছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় চড়ে সমূদ্রটাকে দেখলাম ।প্রকৃতি যেন রূপের ডালা নিয়ে আমার অপেক্ষায় ছিল এবং আমাকে পাওয়ার সাথেই মেলে ধরল ।সেটা এই সেই ডালা অসীম মুগ্ধতার ডালা ।পাহাড় থেকে অনেকদূর পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ের পানির আছড়ে পড়া দেখা যায় ।সাদা ফেনার আসা যাওয়া ।
পাহাড় থেকে নিচে নেমে গেলাম তার নিচে অবস্থিত ঝরনাটা দেখতে ।ঝরনাটায় বিভিন্ন পোজে ছবি তুললাম ।ফেবুতে আপলোড দিলাম পাইলাম ২১খানা লাইক [

14/5/12
১.আজ উঠলাম বেলা করে নয়টার দিকে ।আজকের প্লানিং "ইনানী বিচ" যাওয়া ।
২.হীমছড়ির রাস্তাদিয়েই ইনানী বিচ গেলাম ।
৩.ইনানী বিচ আমাকে "সেন্ট মার্টিন" এবং "নারিকেল জিন্জিরা" না যেতে পারার দুঃখ ভুলিয়ে দিল ।সেন্টমার্টিনের প্রবাল এবং নারিকেল জিন্জিরার সারি সারি নারিকেল গাছ ইনানী বীচে দুটোই বিদ্যমান ।সবকিছু একসাথে পাওয়ায়. . . . .
আমার ভাষায় "সাপও মরল লাঠিও ভাঙ্গল না ।"
আমার আপুর ভাষায় "দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ।"
৪.ইনানী বিচে যখন যাই তখন সূর্য মোটামুটি মাথার উপর ।বিচের বালির উষ্ণতা আমাকে আবারো বাংলা ২য় পত্রে ফিরিয়ে নিয়ে গেল "সূর্যের চেয়ে বালির গরম বেশি ।"
৫ইনানী বীচ থেকে আসার সময় দেখলাম বীচে শুটিং হচ্ছে ।শুটিংয়ের কাছে গিয়ে দেখলাম নায়ক নাইকা কাউকেই চিনিযে একসাথে ছবি তুলব ।শেষে নিজেরাই নিজেদের ছবি তুলে হোটেলের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম ।
৬.আমাদের দুইদিনের কক্সবাজার ভ্রমণ ।তাই এই দিনটাই শেষ দিন ।সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাস ,কক্সবাজার টু ঢাকা ।বিকেলটায় বার্মিজ মার্কেটে গেলাম ।বাজারটা ঘুরে বুঝলাম এখানে শুটকি ,আচার ,ছেলেদের থ্রিকোয়াটার প্যান্ট ছাড়া বিশেষ কিছু পাওয়া যায় না ।
15/5/12
জীবনটাকে এখন আমার কাছে একটা ধাধা মনে হয় ।অনেক বিস্তৃত এক ধাধা ।যার উত্তর খুজতেই আমি সময় নামক এক মহাজাগতিক যানে চড়েছি ।এইবিস্তৃত ধাধাকে আরো জটিল করতে আমার মাঝে আবেগ , ভালবাসা , সুখ-দুঃখ,স্বপ্ন এইসব বিপরীতমূখী বিষয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ।এগুলো আমাকে পদে পদে হেনস্থা করছে ,লক্ষ্য থেকেসরিয়ে দিচ্ছে ,আমার দুর্বলতা গুলো উন্মুক্ত করছে আর অন্যরা এসব দেখে করুণা করছে।আমার সহযোগী যে নেই তা নয় তবে তাদের যতটা পারি এড়িয়ে চলি । সব সময় চেষ্টা চালাইআমি যাতে তাদের কাছে নতুন এক ধাধা না হয়ে দাঁড়াই ,তাদেরআমি আমার স্বযতনে রাখা অশ্রুগুলো দেখাই না ,তারা দেখতে চাইলেও না ।আমি জানি এর মাঝে থেকেই আমাকে ধাধার উত্তর খুজতে হবে অন্তত আমার সহযোগীদের জন্য হলেও এবং . .. . . আমি খুজছি ।
....................................................
কক্সবাজারের পুরো ভ্রমণটায় আমার প্রাকৃতিক দর্শনের চেয়ে মানবিক দর্শন বেশি হয়েছে ।কিছু নতুন অনুভূতির স্বাদ পেয়েছি যে অনুভূতি গুলো আগে আমাকে ছুঁয়েও যেত না ,আমি এবার তাদের সন্ধান পেয়েছি ।এত গভীর গভীর সব অনুভূতিগুলো আসলে সবার মাঝেই থাকে ,সবাই ওগুলো নিয়ে খেলে ,আদর করে ,নিজের করে রাখে অথচ আমারি কিনা এগুলোর ঘাটতি ছিল । সমুদ্র ,পাহাড় ,বালুবেলা ,ডাব গাছের সারি ,ছোট ছোট কাকড়ার ছোটাছুটি এ সব পেয়েছি ।কিন্তু যে নতুন আবেগ বা অনুভূতির খোজ পেয়েছি তা এগুলোর ধারে কাছেও নেই ।আমি আমার জীবনটাকে যখন বাকিদের থেকে ক্ষুদ্র হিসেবে আবিষ্কার করি তখনি জীবনের পরিধিটাকেও ক্ষুদ্র বানিয়ে ফেলেছিলাম ।সেই ক্ষুদ্র পরিধিতে জন্মানো নতুন অনুভূতিগুলোকে ধরে রাখার ক্ষমতা আমার মাঝে নেই ।ধরে রাখতেই যখন পেলাম না মুক্ত করে দিলাম ওগুলোকে ।আমার মনের আশেপাশে এখনও সেই পোড়া অনুভূতি গুলো ঘোরাঘুরি করছে ,রইতেও পারছি না সইতেও পারছি না ,পোড়া ছাই এর পাশে বাঁচার শিক্ষা ছোট থেকে পেয়েছি তাই ওগুলোকে তোয়াক্কাও করছি না ।তবুও মাঝে মাঝে বুকটা হু হু করে ওঠে ,আমার ক্ষুদ্রতাকে আমার সামনে এনে আমাতেই খঞ্জর চালানো শুরু করে আমি তখন বোকার মত কষ্ট পেতে শুরু করি ,প্রচন্ড কষ্ট ।