somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন, জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন- প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাই এর প্রথম মৃত্যূবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমন জুবায়ের ভাই এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা আজকের দিনের অন্যতম সেরা লেখাটি ছিন্নস্মৃতিঃ ছেলেটির নাম ইমন জুবায়ের লিখেছেন অপু তানভীর। সবাইকে এই চমৎকার লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।



৪ জানুয়ারী, ২০১৩। সকাল বেলা সামহোয়্যারইনব্লগ খুলতেই চোখে পড়ল রেজোয়ানা আপুর পোষ্ট, বাংলা ব্লগিং জগতের অন্যতম নক্ষত্র, আমাদের প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাই আর আমাদের মাঝে নেই........। প্রচন্ড অবিশ্বাস এবং ব্যথিত মন নিয়ে পোষ্টে ঢুকে দেখি ঘটনা সত্য। বাংলা ব্লগের কিংবদন্তিতুল্য ব্লগার, নগরঋষি ইমন জুবায়ের ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। যে মানুষটা প্রচন্ড নিভৃতচারী মননশীল মেধাবী ব্লগার হিসেবে সকলের কাছে ছিলেন অত্যন্ত পছন্দের হঠাৎ সেই মানুষটাই আমাদের সবাইকে গভীর শোকের সাগরে ফেলে চলে গেলেন কোন এক না ফেরার দেশে। মৃত্যূর আগের দিন পর্যন্ত যে মানুষটা ব্লগে দারুনভাবে সরব ছিলেন, সেই মানুষটার এই অকাল প্রয়াণ কেউই সহজে মেনে নিতে পারেন নি।

আজ ৪ জানুয়ারী, ২০১৪। ইমন জুবায়ের ভাই এর প্রথম মৃত্যূবার্ষিকী। দেখতে দেখতে একটা বছর কিভাবে যেন পার হয়ে গেল। এই একবছর আগে আমরা কেউ কল্পনাই করতে পারিনি, এত দ্রুত আমাদেরকে এই গভীর শোকের বোঝাটি বহন করতে হবে। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে আজকে তাঁর এই প্রয়াণের দিনে আমাদেরকে তাঁর জন্য শোকগাঁথা লিখতে হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়েও তাকে অকালে হারাবার শোক আমরা পরিপূর্ন ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি নি। আমাদের হৃদয়ে তাঁর রেখে যাওয়া স্থানটিতে তিনি আজও আগেই মতই বেঁচে আছেন। শুধু রক্ত মাংসের মানুষটাই নেই। আমরা সান্তনা খুঁজি এই ভেবে যে, তিনি যেখানেই আছেন অনেক ভালো আছেন, আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ব্লগার ইমন জুবায়েরকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। তারপরও বলতে হয়, চিরকুমার এই মানুষটি ১৯৬৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবার নাম আবদুল মালেক পাটোয়ারী এবং মা’র নাম নুরুন্নেসা হামিদা বেগম। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। তারা ছিলেন, এক ভাই চার বোন।

ইমন জুবায়ের ভাই এর স্কুল জীবন কেটেছে ঢাকা উইলস লিটল ফ্লাওয়ারে (১৯৮৪), এরপর ঢাকা সিটি কলেজে কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।



স্বমহিমায় ভাস্বর নির্মোহ এবং ঋষিতুল্য এই ব্লগার ছিলেন বিগত ২০১১ ব্লগ দিবস পুরস্কারে ভূষিত একমাত্র ব্যাক্তি, যার পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়ে কোন রকম বিতর্ক তৈরি হয় নি। ইতোমধ্যে ইমন জুবায়ের তার বৈচিত্র্যপূর্ণ পোস্ট, তথ্যের আলোকচ্ছটায় ঋদ্ধ করেছেন বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, তুলনামূলক ধর্মতত্ব, চিত্রকলা, সঙ্গীত বিশ্বসাহিত্য ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। লেখার বৈচিত্র্যের কারনে অনেকের কাছেই তিনি ইমনোপিডিয়া নামে পরিচিত।

তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যান্ড দল 'ব্ল্যাক' এর গীতিকার হিসেবে প্রায় ৩০ টি গান রচনা করেছিলেন।ইমন জুবায়ের ভাই ইতিহাস চর্চা ছাড়াও ছোট গল্প এবং কবিতা লিখতেন। উনার মূল পরিচিতি উনার মননশীল পোস্ট গুলোর জন্য হলেও উনি গল্প লেখায় বেশ দক্ষতার ছাপ রেখেছেন এবং বাংলা ব্লগে সব চাইতে বেশি সংখ্যক মৌলিক ছোট গল্প লেখার কৃতিত্ব সম্ভবত তাঁরই ছিল।

বাংলা ব্লগ কালচারকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসতে ইমন জুবায়েরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ব্লগে যখন সাহিত্য ধারার লেখনী ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার অভাব ব্লগটিকে গ্রাস করেছে। ইমন জুবায়ের ক্লান্তিহীন লিখে গেছেন সকাল, দুপুর রাত্রে। উনার প্রকাশিত পোস্টের সংখ্যা দেড় হাজার। যার একটিও ফেলনা পোস্ট নয়। ইমন জুবায়ের ভাই শুধু সামহোয়্যারইন ব্লগে লিখেলেও তিনি ছিলেন পুরো বাংলা ব্লগ কমিউনিটির 'সম্পদ'।

ব্যক্তিজীবনে প্রচন্ড নির্মোহ ও অন্তর্মুখী ব্লগার ছিলেন 'ইমন জুবায়ের' ভাই। মৃত্যুর আগের দিনটি পর্যন্ত তিনি ব্লগে পোষ্ট দিয়েছেন। চার বছরের বেশি দীর্ঘ সময় জুড়ে অসংখ্য এবং বিবিধ বিষয়ে তথ্য সমৃদ্ধ লেখার মাধ্যমে বাংলা ব্লগ জগতকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন। তিনি তাঁর লেখালেখী নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন নিজের শরীরের প্রতি খুব বেশি একটা যত্ন তিনি নেননি। তাঁর ডায়বেটিসের সমস্যা ছিল। হঠাৎ শ্বাস কষ্টের সমস্যা নিয়ে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারী দিবাগত রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং আনুমানিক রাত দুইটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
(শেষ দেখা ইমন জুবায়ের - সৌজন্যে সুনীল সমুদ্র ভাই)


এই সৃজনশীল মানুষটি সম্পর্কে অল্প কথায় আসলে বলাটা ভীষন কঠিন ব্যাপার। আমাদের মত যাদের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত তেমন পরিচয় ছিল না তাদের জন্য তো বটেই যারা তাকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে চিনতেন তাদের জন্যও একটি কষ্টের ব্যাপার। আমরা শুধু চাই তিনি যেখানে আছেন, সেখানে যেন অনেক ভালো থাকেন। পরম করুনাময় আল্লাহপাক যেন তাঁর রুহের মাগফেরাত দান করেন। তাঁর প্রতি রইল আমাদের সকলের মনের গভীরতম স্থান থেকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। তিনি সব সব সময় বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ের অন্তর থেকে অন্তঃস্থলে।

--------------------------------------------------------------------
ইমন ভাই এর এই অকাল প্রস্থানে সেদিন সকল ব্লগারদের মাঝে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। অনেকেই এই ব্যাপারে সতন্ত্র পোষ্ট দিয়েছিলেন। ব্লগার রেজোয়ানা আপু এই সংক্রান্ত পোষ্টগুলোর একটা তালিকা তাঁর পোষ্টে সংযুক্ত করেছিলেন। এখানেও জানতে পারবেন প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাই এর প্রতি সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা। কবি রেজওয়ান মাহবুব তানিমের এই পোষ্টটিতেও ইমন জুবায়ের ভাই ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এই পোষ্ট তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য মূলত রেজোয়ানা আপু এবং অনুমুতি সাপেক্ষে কবি রেজওয়ান মাহবুব তানিমের ব্লগ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের প্রতি রইল অনেক কৃতজ্ঞতা।

এই পোষ্টগুলো সবাইকে বিশেষ করে নতুন ব্লগারদেরকে পড়ার অনুরোধ জানাই। বাংলা ভাষার একজন ব্লগার হিসেবে ব্লগার ইমন জুবায়ের সম্পর্কে অবশ্যই ধারনা থাকা উচিত।

এছাড়া ব্লগার অপু তানভীর ইমন জুবায়ের ভাই এর বিভিন্ন পোষ্ট নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ভাবে একটি চমৎকার সংকলন করেছিলেন। সেটা পড়ারও জন্যও বিশেষ ভাবে অনুরোধ রইল। তার পোষ্টের লিংকটি হলো,
ইমন জুবায়ের স্মৃতি লাইব্রেরী ! (ইমন ভাইয়ের সব লেখার সংকলন, সাথে তার প্রিয় পোষ্ট, শেষ কমান্ট এবং তাকে নিয়ে লেখা অন্যান্য ব্লগারদের পোষ্ট)

ইমন জুবায়ের ভাই এর ছবিগুলো নেয়া হয়েছে ইখতামিনের উন্মুক্ত ব্লগ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩০
১১১টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×