অনেক কষ্টে একটা বাসা ভাড়া করলাম। ঢাকা শহরে একদিনের মধ্যে নতুন বাসা ভাড়া করা খুবই কঠিন একটি ব্যাপার আর আমার মত একজন সদ্যপাস করা বেকারের জন্য তা এক ধরনের অগ্নিপরিক্ষাই বটে। বাড়িওয়ালাকে এক মাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে যখন চাবি বুঝে নিচ্ছিলাম, তখন নিজেকে অনেক আত্মবিশ্বাসী লাগছিল।
চাবি হাতে নিয়ে নতুন বাসায় ঢুকলাম। সাথে ঢুকলেন বাড়িওয়ালাও। পা টেনে টেনে হাঁটছেন আর বিভিন্ন নিয়ম কানুন সম্পর্কে বলছেন। ভদ্রলোক লুঙ্গিটি খুবই বিপদজনকভাবে পড়েছেন। যে কোন মূহুর্তে কোন একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। হাতাকাটা যে স্যান্ডো গেঞ্জিটা পড়েছেন, তার প্রতিটা সুতা টান টান হয়ে আছে প্রকান্ড ভূড়ির চাপে। আমার দেখে খানিকটা হাসি পেল, আমি তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে নিলাম, বাসার দিকে মনোযোগ দিলাম। টিনসেড মেঝে আর দেয়াল পাকা করা। দুই সারিতে মোট দশটা রুম নিয়ে একটা বাসা, মাঝখানে একটা প্যাসেজের মত জায়গা। লম্বা প্যাসেজের এখানে সেখানে স্ল্যাব ভেঙ্গে গিয়ে নর্দমা দেখা যাচ্ছে। প্যাসেজের শেষ মাথায় রান্নাঘর। সময় ধরে এখানেই নাকি সবাইকে রান্না করতে হবে। রান্নাঘরের পিছনেরই টয়লেট। সবাইকে এই টয়লেটই ব্যবহার করতে হবে। টয়লেট আর রান্নাঘরের সামনে জায়গাটা একটু স্যাতস্যতে।
আমি যে রুমটা ভাড়া নিয়েছি, তা প্রায় প্যাসেজের মাঝামাঝি। আমি রুমের সামনে এলাম। চাবি দিয়ে রুম খুললাম। দিনের বেলাতেও ভেতরে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না, বেশ অন্ধকার। কিছুক্ষনের মধ্যে চোখে আলো সয়ে এল দেখলাম, মাঝারি সাইজের একটা রুম। বড় জোড় দশ ফিট বাই দশ ফিট হবে। ছোট একটা জানালাও দেখা যাচ্ছে। আসলে এটাকে কি বাসা বলব, মেস বলব নাকি রুম বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। শহরের এই প্রান্তে নিম্নবিত্ত লোকদের বসবাস। এখানে অধিকাংশই সব গার্মেন্টসকর্মী আর নিম্ন আয়ের মানুষজন থাকে। এর থেকে বেশি এখানে অবশ্য আশাও করা যায় না। তবে যাই হোক না কেন, আমার জীবনের একটা গুরত্বপূর্ন অধ্যায়ের শুরু এখান থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। আমার আর রেশমির এই শহরে একটা মাথা গোঁজার ঠাই হতে যাচ্ছে, নিজেদের একটা বাসা-এটা ভাবতেই আনন্দ লাগছে।
রুমে তালা দিয়ে আবার বের হয়ে এলাম। পড়ন্ত বিকেলেও রোদের প্রচন্ড তাপ। এইবার নাকি গরমের রেকর্ড হয়েছে। গত ছাব্বিশ বছরে নাকি এত গরম আর পড়েনি। ছাব্বিশ বছর কথাটি মাথায় আসতেই নিজের বয়সের কথা মনে হল। হ্যাঁ আমার বয়সও ছাব্বিশ। মাকে জিজ্ঞেস করতে পারলে ভালো হত, আমার জন্মের সময় আসলেও কি এমন গরম পড়েছিল কিনা। অবশ্য আমার চুলার ধারে সারাজীবন কাটানো মায়ের কাছে প্রতিটি দিনই প্রচন্ড গরম।
ফুটপাত ধরে হাঁটছি। সামনে একটা চায়ের দোকানে রেশমীকে বসিয়ে এসেছি। সেই সকাল থেকে এখানে সেখানে বাসা খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে বেচারী বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বাসায় যাই, আর হতাশ হয়ে ফিরে আসি। আমাদের বাজেটের মধ্যে কোন বাসাই পাওয়া যাচ্ছে না। দুপুরের মধ্যে আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, আজকে হয়ত রাতটা আমাদেরকে বাইরে কোথাও কাটাতে হবে। আজকে হয়ত আর বাসা খুঁজে পাব না। দুপুরে একটা টং দোকানে কলা রুটি আর কাপ চা খেয়েছি লাঞ্চ হিসেবে। দোকানের পাশেই পিলারে একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল, বাসা ভাড়া দেয়া হবে-ব্যাচেলর বা স্বামী স্ত্রী।
কিছুটা ঘিঞ্জি এলাকা দেখে রেশমিকে বসিয়ে রেখে বাসাটা দেখতে গিয়েছিলাম। দূর থেকে রেশমীর চিন্তিত চেহারা চোখে পড়ল। বার বার ঘড়ি দেখছে। লাল রঙের একটা সেলোয়ার কামিজ পড়ে আছে রেশমী। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় একে বারে যেন টগবগ করে ফুটছে। অবিন্যস্ত চুল খোপা বাধা। একগুচ্ছ চুল কানের পাশ দিয়ে মুখে এসে পড়ছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছে আর হাত দিয়ে চুল কানের পিছনে সরিয়ে দিচ্ছে। আমাকে দেখতে পেয়েই ছুটে এলো।
-এই নাও, তোমার সংসারের চাবি। আমি হাসতে হাসতে রেশমার হাতে চাবি তুলে দিলাম।
-মানে? বাসা পেয়েছ? সত্যি বলছ? ভাড়া কত? রেশমির কন্ঠে অবিশ্বাস আর আনন্দের সুর।
-আরে হ্যাঁ রে বাবা। এই যে দেখছ না বাসার চাবি? ভাড়া ১৫০০ টাকা। একমাসের এ্যাডভান্স দিয়ে বাসা পাকা করে এলাম। আজকেই উঠতে পারব আমরা।
রেশমির মাথার চুল হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিলাম আমি। কাঁপা কাঁপা হাতে রেশমি আমার কাছ থেকে চাবিটা নিল। পরম যত্নে ওড়নার খুটির সাথে বেঁধে রাখল চাবিটাকে। আকাশে দিকে চেয়ে চোখ বন্ধ করে একটা বড় নিশ্বাস ফেলল। মনে হল যেন সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
-আচ্ছা চলো, এখন আমাদের নতুন বাসার জন্য কিছু কিনে ফেলা যাক। আচ্ছা তুমি কি খাট ছাড়া কিছুদিন ঘুমাতে পারবে? আমি কিছুটা চিন্তিত হয়ে রেশমিকে জিজ্ঞেস করলাম।
-খাট লাগবে না, তুমি আছো না? তুমি থাকলে আমার আর ঘুমাতে কিছুই লাগবে না। এই বলে রেশমী আমার হাত টেনে ধরল।
আমি হাসতে লাগলাম। হাসতে হাসতে রেশমীর হাত ধরে হাটতে লাগলাম। আমাদের প্রথম সংসার। কত কিছু কেনাকাটা বাকি। সকাল থেকে অনিশ্চিত জীবনটা হঠাৎ করে খুব সুখী লাগছে।
আমি আর রেশমী দুইদিন আগে পালিয়ে বিয়ে করেছি। হঠাৎ করে রেশমীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আমি মাত্র পাস করেছি, সামান্য একটা পার্টটাইম চাকরী করি, এখনও তেমন কোন কাজ পাইনি। ফলে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় ছিল না। আমাদের বিয়ে কোন পরিবারই মেনে নেয় নি। নূন্যতম সৌজন্যটুকুও কেউ দেখায়নি আমাদের সাথে। চূড়ান্ত অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে আমাদের। আমার বন্ধুরা প্রায় সকলেই মেসে থাকে। বউ নিয়ে তো বন্ধুদের মেসে থাকা যায় না। তাও একদিন ছিলাম। তাই তাই হন্য হয়ে আজকে বাসা খুঁজছি......
এই পর্যন্ত পড়ে আমি ডায়রীটা বন্ধ করলাম। অফিসের কাজে চট্রগ্রাম গিয়েছিলাম। রাতের ট্রেনে ঢাকা ফিরছি। আমার অফিস থেকে আমার জন্য একটা স্লিপিং বার্থ ফুল রিজার্ভ করা হয়েছে। লাগেজটা উপরের সিটে রাখতে গিয়ে দেখলাম, কোনায় একটা ডায়রী পড়ে আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, অন্য কেউ হয়ত এই বার্থে আছেন। কিন্তু ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পরেও যখন কেউ এলেন না, তখন নিশ্চিন্ত হলাম, নিশ্চয়ই ভুলে কেউ এই ডায়রীটা ফেলে গিয়েছেন। এক কাপ চা আর একটা সিগারেট খেয়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন এপাশও পাশ করেও ঘুম আসল না। হঠাৎ খেয়াল হলো ডায়রীটার কথা। ভাবলাম ডায়রীটা পড়ি। কিন্তু অন্যের ডায়রী পড়ব, কেমন যেন একটা অপরাধবোধ হচ্ছে। পরক্ষনে ভাবলাম, ডায়রিটা তার মালিকের কাছে পৌছে দিতে হলে তো আমাকে অন্তত দেখতে হবে, কোথায় নাম ঠিকানা কিছু পাওয়া যায় কিনা।
বাদামী রঙের চামড়ার সাদামাটা একটা ডায়রী। বেশ পুরানো। কিছু জায়গায় পাতা খানিকটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। কিছুটা ইতস্তত করে ডায়রীটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম। ডায়রীর প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে এক আশ্চর্য প্রেমের গল্প। দুই জন মানুষের ভালোবাসার লড়াই এর গল্প। অনেক ভালোবাসার গল্প শুনেছি, দেখেছি কিন্তু এতো প্রায় সিনেমাকেও হার মানায়। এখনকার যুগে এই ধরনের ভালোবাসা প্রায় অবাস্তব একটি ব্যাপার। আমি পড়ছি আর শিহরিত হচ্ছি, অদ্ভুত এক ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে মন।
ভদ্রলোকের নাম মেহদী হাসান , তার স্ত্রীর নাম রেশমী। বুঝাই যাচ্ছে ডায়রীটা ভদ্রলোক নিজেই লিখেছেন। একে অপরের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে ডায়রীর প্রতি পাতায় পাতায়। আছে কবিতা, আছে গান, আছে হাতে আঁকা স্কেচ। কিছু কিছু লেখা পড়ে আমার মত একজন কঠিন হৃদয়ের একজন মানুষের গলার কাছটায় কেমন যেন ধরে ধরে আসছে। মেহদী সাহেব তার ডায়রীতে লিখেছেন -
আমাদের প্রথম সংসারের দিনগুলো অনেক ভালো কেটেছে। আমি সর্বসাকুল্যে মাত্র ৫,০০০ টাকা বেতন পেতাম। সকালে আমরা ইচ্ছে করেই রান্না করতাম না। সকাল বেলা কর্মজীবী মানুষগুলোর রান্নার জন্য ছেড়ে দিতাম। আমি রাতে ফিরে এসে, দুজন মিলে এক সাথে দুই বেলার রান্না করতাম। সবাই আমাদের দেখে হাসত। প্রতি শুক্রবার আমরা ঘুরতে যেতাম। রেশমী চায়নীজ খেতে খুব পছন্দ করত। কিন্তু এখন আমাদের চায়নিজ খাওয়ার অবস্থা নেই। রাস্তার পাশে যে স্যুপের দোকান ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমরা খুব আরাম করে স্যুপ খেতাম। সেটাই ছিল আমাদের চায়নিজ স্যুপ।
প্রথম একমাস আমরা ফ্যান ছাড়া ঘুমিয়েছি। রাতে প্রচন্ড গরমে রেশমী প্রায় ভিজে যেত। আমারও অবস্থা খারাপ। আমরা তখন তোষক গুটিয়ে মাটিতে ঘুমাতাম। জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বাতাস আসত। আমরা কিছুক্ষনের জন্য সতেজ হতাম। প্রথম যখন আমরা ফ্যান কিনি, ফ্যান চলার পর রেশমি বাচ্চাদের মত হাত তালি দিয়ে উঠে। ফ্যানের প্রবল বাতাসে যখন রুমের চারপাশ আলোড়িত, রেশমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়। আমি হয়ে যাই পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ.......................
এমন হাজারটা দারুন খন্ড খন্ড দৃশ্যে ভরা আমার হাতে ধরা এই ডায়রী। আমার প্রবল চায়ের তৃষ্ণা জাগে। ভালোবাসাময় এই ডায়রীটি আমি নিজের অজান্তেই খুব সাবধানে বন্ধ করি। বার্থ থেকে বের হয়ে চায়ের খোঁজ করি। গভীর রাতে ছুটে চলেছে ট্রেন। সবাই ঘুম। আমি প্রবল ভালোবাসাচ্ছান্ন হয়ে ট্রেনের দরজার কাছে এসে দাঁড়াই। জানালার ফাক দিয়ে আসছে প্রবল বাতাস। একটা সিগারেট ধরাই আমি। আধো আলো ছায়াতে পড়তে থাকি ভালোবাসার সেই মহাকাব্য। এই ডায়রী প্রায় বছর পাঁচেক পুরানো। আমি ডায়রীর প্রায় শেষের দিকে। তাদের বিয়ের প্রায় ২ বছর পরের ঘটনা। ভদ্রলোকের স্ত্রী তখন গর্ভবতী। তিনি লিখে চলেছেন-
গত একমাস হলো আমি প্রচন্ড ব্যস্ত। আল্লাহ রহমতে আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরী পেয়েছি। প্রত্যাশার চাইতে ভালো বেতন। আগের দুই রুমের ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে নতুন বড় ফ্ল্যাটে উঠেছি।নতুন ফার্নিচার কিনেছি, সব কিছুই প্রায় নতুন করে কিনেছি। কিন্তু সবই একা করতে হচ্ছে। রেশমি অসুস্থ। ডাক্তার বলেছে, আমরা বাবা-মা হতে চলেছি।
কি যে প্রচন্ড আনন্দ লাগছে বলে বুঝাতে পারব না। বাবা হবার অনুভূতিটা আসলেই অন্য রকম। আমার জন্মের সময় আমার বাবার এমন কোন অনুভূতি হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। এই কয় বছরে আমাদের পরিবারের কেউ আমাদের কোন খোঁজ নেয় নি। এত বড় একটা পৃথিবীতে আমাদের দুজনের দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। আমরা দুজনই আমাদের পৃথিবী। আমাদের পৃথিবীতে নতুন একজন অতিথি আসছে। এত বছর পরে হয়ত আমি কাউকে বাবা বা মা বলে ডাকতে পারব। কিন্তু এই সময়ে কাউকে পাশে পেলে ভালো হত। আমি অফিসে থাকি, রেশমীর দেখাশোনার কেউ নেই, তাছাড়া অনেক মেয়েলী ব্যাপারও আছে, আমি তার কিছুই জানি না। নিজের জন্য না হলেও রেশমির জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে। রেশমি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আমি থাকতে তোমার কোন চিন্তা নেই। আমি সব সামলে নিব ..............
আমার হাতের সিগারেট শেষ। বার্থে ফিরে গেলাম। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে। নিজের অজান্তেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি কমলাপুর চলে এসেছি। চারিদিকে মানুষের হাকডাক। আমি ডায়রীটা সযত্নে আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখি। তারপর ফিরে যাই নিজের জগতের ব্যস্ততায়।
ঢাকায় ফিরে আমি প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অফিসের নতুন একটা প্রজেক্ট নিয়ে নানা রকম ব্যস্ততায় আমার দিন রাত এক। এর মধ্যে বস আমাকে দায়িত্ব দিলেন নতুন বছরের জন্য ক্যালেন্ডার আর ডায়রী বানাতে। হঠাৎ মনে পড়ল, আমার সেই ডায়রীর কথা। দ্রুতই বাসায় ফিরে এলাম। ড্রয়ার থেকে ডায়রীটা বের করি। কোন একটা ঠিকানার জন্য ভালো করে পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকি। হঠাৎ দেখি শেষের দিকে একটা পাতায় ভদ্রলোক তার অফিসের নাম লিখেছেন। ভদ্রলোক একটা ব্যাংকে চাকরী করেন। তারপর দিন অফিসে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিলাম। মেহদী নামের একজনকে খুজেও পেলাম। সব কিছু ঠিক ঠিক মিলে গেল।
দুই দিন পর। শুক্রবার আমি দাঁড়িয়ে আছি, মিরপুরের একটি বাসার সামনে। আমার হাতের ঠিকানা এই বাড়িকেই নির্দেশ করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এই বাড়ির চার তলায় সেই ভদ্রলোকের থাকার কথা। আমি আস্তে আস্তে চারতলায় উঠলাম। বেল টিপ দিলাম। ভেতরে ছোট বাচ্চাদের খেলার আওয়াজ। দুর থেকেএকটা মহিলা কন্ঠ শুনতে পেলাম-
-এ্যাই মেহদী , দেখতো কে এসেছে? উফ তোমরা রুমটাকে কি বানিয়ছ?
গেট খুলার আওয়াজ। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে জনাব মেহদী । কোলে একটা ছোট বাচ্চা। বাচ্চাটা অবাক হয়ে আমাকে দেখছে। মেহদী সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনি?
-এই প্যাকেটটা আপনার জন্য। আমি ডেলিভারি দিতে এসেছি।
-কি এখানে? ভদ্রলোকের কন্ঠে কিছুটা দ্বিধা।
আমি তার কথার জবাব দিলাম না। আস্তে আস্তে প্যাকেট খুলে তাকে ডায়রীটা দেখালাম।
ভদ্রলোক খানিকটা কাঁপতে কাঁপতে ডায়রীটা হাতে নিলেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। আমি কিছুক্ষন বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর কিছুটা মন খারাপ করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি দরজাটা খুলে গেল। ভদ্রলোক পাগলের মত সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। দরজার পাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলা উকি দিলেন। তার কোলে ছোট বাচ্চাটা অবাক হয়ে বড় বড় চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ভদ্রলোককে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন। আমি তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছি। নিজের অজান্তেই আমার চোখটা কেন যেন ভিজে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩৫