
ভাবছি, ছোটবেলার স্মৃতিগুলো লিখে রাখবো। কিছুদিন থেকে মনে হচ্ছে সব ভুলতে বসেছি । :!> এরকমটা চলতে থাকলে একসময় দেখা যাবে কোন এককালে ছোট ছিলাম এটাও ভুলে যাবো!!


তাই মনে থাকতে থাকতে লিখে ফেলি!

ছোটবেলায়, নাহ... ছোটবেলায় না, ছোট থেকে আরেকটু বড়বেলায় একবার ভাবলাম পিঁপড়াদের জন্য ব্রীজের দরকার



সুতরাং যেই ভাবা সেই কাজ! আমরা দুই বোন মিলে একটা প্ল্যান করে ফেললাম। মানে ব্রীজটা কেমন হবে দেখতে, কোথায় হবে ইত্যাদি ইত্যাদি । জায়গা নির্বাচন করার জন্য বাগানে যখন এলাম তখন আমরা বুঝতে পারলাম ব্রীজ তো আর এমনি এমনি কেউ করে না, কোন নদীর ওপর করে । কিন্তু বাগানে তো আর নদী পাওয়া যাবে না । পুকুরও না । সুরমা বলল, আমরা একটা খাল বানায়, খালের ওপর ব্রীজ বানাবো । পরে ভাবলাম, খালের ওপর তো আর ব্রীজ হয় না। খালের ওপর কালভার্ট হয় । সুরমা বলল, তাতে কি? কালভার্টই হোক! দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি

যাইহোক, মালী চাচার কাছ থেকে খুন্তি নিয়ে আমরা একটা জায়গা কয়েকদিন ধরে গর্ত করে ফেললাম। যেদিন মোটামুটি গর্ত হয়ে গেছে বলে মনে হল, ওইদিন দুই মগ পানি ঢেলে দিলাম । হয়ে গেল আমাদের ছোট্ট নদী । আমরা ওটাকে আর খাল বলতে চাচ্ছিলাম না, তাছাড়া চিন্তা করে দেখলাম পিঁপড়াদের কাছে ওটা তো নদীই! ঠিক না? :>

পরেরদিন ইশকুল থেকে এসে দেখলাম পানি শুকিয়ে গেছে


একটা নদীর ওপর ব্রীজ করে ফেলেছি আমরা, আমাদের আনন্দ আর দেখে কে!!! আহা কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে




ভাল লাগাটা বেশিক্ষণ থাকলো না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু দেখি কোন পিঁপড়াই ব্রীজের ওপর দিয়ে যায় না

মেজাজ গেল খারাপ হয়ে!

আমার তখন মনে হল, ব্রীজের ওপাশে চিনি রাখি, তাহলে এপাশ দিয়ে চিনি নিতে গেলেও তো যাবে। চিনিও রাখলাম কিন্তু পিঁপড়ারা এতই ঘাড় ত্যাড়া!


আমরা তখন চিন্তা করলাম, পিঁপড়ারা কেনই বা এখান দিয়ে পার হবে, ওদের তো বাড়ি-ঘর নাই এখানে।

পরের দিন এসে দেখি বাড়ির যেদিকটায় ঢোকার জন্য ফাঁকা করে রেখেছিলাম ওখান দিয়ে না ঢুকে পিঁপড়া মহাশয়েরা বাড়ির ওপর, আশেপাশে ফুঁটো করে ঢুকেছে!


সুরমা বলল, ওরা তো কখনো এরকম বাড়িতে থাকেনি, জানেই না হয়তো কোন দিক দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হয় :-& তাছাড়া কখনো ব্রীজেও ওঠে নি তাই অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে! পন্ডিতি কথাবার্তা!

আমরা বাড়িটা ভাল করে ছোট ছোট ইট ও পাথর দিয়ে ঘিরে দিলাম । চিনিও রাখলাম বাড়ির ভেতর, ব্রীজের ওপরও। তারপরও দেখি ব্রীজ দিয়ে যায় না!

শেষমেষ রেগে গিয়ে আমরা কয়েকটা পিঁপড়াকে ধরে ব্রীজে উঠিয়ে দিলাম! উঠিয়ে দিলে হবে কি, ওরা ধপাস করে নদীতে পড়ে গেল! কয়েকটা পিঁপড়া নদীতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলো! ইন্নালিল্লাহ!! এতে আমাদের মন খুব খারাপ হয়ে গেল... আর যাই হোক, পিঁপড়ারা আমাদের বন্ধু ছিল



মালী চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে পিঁপড়াদেরকে ব্রীজের ওপর দিয়ে চলতে শেখাবো?! উনি গম্ভীর কন্ঠে পান চিবুতে চিবুতে বললেন, পিঁপড়ারা অবশ্যই জানে কি করে ব্রীজে ঊঠতে হয় কিন্তু তোমাদের তো ব্রীজটায় ভাল হয়নি




পরেরদিন ইশকুল থেকে এসে দেখি আমাদের ব্রীজ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে





এটা নিয়ে আমরা অনেক হাবিজাবি ভাবলাম । ভেবে ভেবে কূল না পেয়ে ব্রীজ বানানোর প্রজেক্টটা স্থগিত করা হল । আমরা ঠিক করলাম আমাদের পরীক্ষার পর আবার পিঁপড়াদের জন্য মজবুত ব্রীজ বানাবো যাতে কেউ এসে ভেঙ্গে ফেলতে না পারে।

দুঃখের বিষয়, আমাদের প্রজেক্টটা এখনও স্থগিতই আছে। ব্রীজ বানানোর আর কোন চেষ্টাই করা হয়নি

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪১