চাকুরীতে বৈষম্য মূলক কোটা বাতিল করে মেধা ভিত্তিক নিয়োগের জন্য আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য William Shakespeare এর জুলিয়াস সিজার উপন্যাস থেকে সিজারের একটি উক্তি কোট করছি “A coward dies a thousand times before his death, but the valiant taste of death but once. It seems to me most strange that men should fear, seeing that death, a necessary end, will come when it will come.”
ঘুম থেকে উঠে সকল সামাজিক গণমাধ্যমে দেখি চাকুরীতে বৈষম্য মূলক কোটা বাতিল করে মেধা ভিত্তিক নিয়োগের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন করেছে তার ছবি ঝুলছে সকলের ওয়ালে কিংবা সকলে ঐ আলোচনায় সরব। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রধান-প্রধান গনমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে এই আন্দোলনের কোন সংবাদ বা ছবি নাই। যদিও ঐ সকল পত্রিকা অফিস থেকে মানববন্ধন করা ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্হান কয়েক-কদম দূরত্বে।
নিজের অভিজ্ঞতার দেখেছি গত ফখরুদ্দিন ও মইন উদ্দিন এর সরকারের সময় একই রকম একটা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ক্যাম্পাসে। ঐ সময় গবেষনার প্রয়োজনে সিলেট থেকে ঢাকা এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বন্ধুর সাথে ছিলাম কিছুদিন বাংলা একাডেমীর পাশে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে গবেষণার জন্য। আমি নিজেও যেহেতু চাকুরীর দরখাস্ত শুরু করবো কয়েক মাস পড়েই তাই নিজেও কয়েক রাতে ফজলুল হক হল ও শহিদুল্লা হলের ছাত্রদের কোটা বাতিল আন্দোলনে গিয়েছিলাম ও সেই আন্দোলন প্রচণ্ড বেগবান হয়েছিল। কিন্তু ৭ দিনের মধ্যে সেই আন্দোলনকে জামাত-শিবিরের আন্দোলন বলে পুরো বিষয়টাকে সাবোটাজ করে কিছু সাংবাদিক ও সম্পাদক নামক শুয়োরের বাচ্চারা (সবাই না, হাতে গোনা কয়েকজন)।
"বিদ্যমান কোটা অনুযায়ী, কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে পিএসসি যদি ১০০ জন লোক নিয়োগ করে, তাহলে মাত্র ৪৫ জন নিয়োগ পাবেন মেধার ভিত্তিতে, ৩০ জন নিয়োগ পাবেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মধ্য থেকে, ১০ জন নারী কোটায়, ১০ জন জেলা কোটায় এবং পাঁচজন নিয়োগ পাবেন উপজাতি কোটায়।"
***** এবারের আন্দোলনকেও যে ঐ সকল সাংবাদিক ও সম্পাদক শুয়োরের বাচ্চারা আবারও ভিন্ন পথে পরিচালিত করবে সেটা অনুমান করার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হতে হয় না।
**** এবারের মানব-বন্ধ ও আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর সরকারি পেটোয়া বাহিনী ও ব্যাংক-বীমা-শেয়ার বাজার লুটেরা বাহিনীর হামালা-মামলা থেকে রক্ষা পাবে না অনুমান করার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হতে হবে না।
***** পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস বা শট গানের গুলোতে চোখ হারাবে কিংবা লাঠির আঘাতে হাত-পা ভেঙ্গে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাবে সেটাও হলফ করিয়া বলা যায়।
****** যদিও এই আন্দোলনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়েছে আজকে বা ভবিষ্যতেও হবে কিন্তু তাদের জন্য পাতিল ভর্তি ফখরুদ্দিন বা নান্না বিরিয়ানির যাবে না সেটাও হলফ করিয়া বলা যায়।
এত কিছু অনিশ্চয়তা ও ক্ষয়-ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনার পরেও চাকুরীতে বৈষম্য মূলক কোটা বাতিল করে মেধা ভিত্তিক নিয়োগের জন্য পথে নেমে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিজের শর্তহীন সমর্থন থাকল।
সরকার প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে ১ কোটি টাকা করে ফিক্সড ডিপোজিট করে দিক; প্রতিমাসে সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্ছ পদ সিনিয়র সচিব পদের সমমান বেতন দিক তাতেও নিজের শর্তহীন সমর্থ থাকবে কিন্তু সরকারি চাকুরীতে না।
বাংলাদেশের কোন মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যে সরকারি চাকুরীর মতো বাংলাদেশে ক্রিকেট টিমের ১১ সদস্যের দলে সাকিব, তামিম, মুশফিকের পরিবর্তে খেলোয়াড় যে কোন যোগ্যতার হউক না কেন ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতি-নাতনি; উপজাতি কোটায় ১ জন; জেলা কোটায় ১ খেলোয়াড় নেওয়া হয় আপনি কি সেই ক্রিকেট দল মেনে নিবেন। মহিলা কোটার কথা বদ দিলাম যেহেতু মহিলা ক্রিকেট টিম আছে। সকলের কাছে প্রশ্ন করতে চাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমই কি শুধু বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে? বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা করে না?
হার্টের রোগে আক্রান্ত আর্থিক ভাবে সামর্থবান একজন রোগীর সামনে যদি সার্জারিতে সবচেয়ে সফল ও ব্যর্থ ডাক্তার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়ে তবে সেই রোগী কোন ডাক্তারের সেবা নিবে? একই ভাবে দেশের মানুষদের সবচেয়ে যোগ্য ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে সার্ভিস নেওয়া সুযোগ থাকা স্বত্বেও কেন তাদের বাধ্য করা হবে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতার মানুষদের কাছ থেকে সরকারি সেবা নিতে?
জনপ্রশাসনে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটা প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। গত আট বছরে পাঁচটি বিসিএসের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট এক হাজার ১৮৯ জন প্রার্থীকে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। তাঁদের মধ্যে ৫৬০ জনকে মেধায় আর বাকি ৬২৯ জনকে বিভিন্ন কোটা থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সময়ে পুলিশ ক্যাডারের জন্য ৭৫৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পিএসসি। এর মধ্যে ৩৫৫ জনকে মেধা আর ৩৯৮ জনকে বিভিন্ন কোটা থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। পিএসসির এই সুপারিশ অনুসারেই নিয়োগ দেয় সরকার।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৭