একদিন রাত বারোটার সময় সারা শহর চষে বেরিয়েছিলাম ঘাসফুলের জন্য ... ফুলের দোকান খোলা ছিল বেশ কয়েকটাই ... কিন্তু যে ছোট ছোট গুড়িগুড়ি ঘাসফুলের সন্ধানে ছিলাম সেটা ছিল না ... এক দোকানে পাওয়া গেল ... কিন্তু সেটা বিক্রির জন্য না ... অন্য ফুলের সাথে ফিলার ফিসেবে তোড়া বাঁধার জন্য ... কি আর করা ... তিনটা গোলাপ আর একগাদা ঘাসফুল দিয়ে একটা ছোটাখাট তোড়া বানালাম ... তারপর গোলাপ তিনটা খুলে বাড়িয়ে দিলাম দোকানির দিকে ... আপনার পছন্দের কোন মানুষ থাকলে তারে দিয়ে দিয়েন, আমার লাগবে না :-)
ফুলওয়ালাকে একটা চমক দিতে চেয়েছিলাম ... সে উল্টা আমাকে চমকে দিল ... শুধু তোড়া বানানোর খরচ হিসেবে পাঁচ টাকা রাখল ... আর কিছু না ... গোলাপ তো নেন নাই দাম রাখব ক্যান ... আর গুড়িগুড়ি গুলাতো ফ্রী ...
ফুলের ব্যবসা তো করে অনেকেই, হৃদয়ে সেই ফুলের সৌরভ ধারন করতে পারে কয়জন? সেই ফুলওয়ালা তাই আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ ... যখনই ওর জন্য ফুল কিনি চলে যাই সেই দোকানে ... এখন সে আমাকে দেখলেই হাসে ... জিগ্যেস করে,আসেন ভাই, বসেন, চা খায়া যান ... তারপর বলেন আপা ক্যামন আছে?
খুব চমতকার একটা রাত ছিল সেটা ... জোছনা ঘেরা ... রাত্রি সাড়ে বারোটায় হলের সামনের গেটে দাঁড়িয়েছিলাম ওর জন্য ... কেয়ারটেকার ব্যাটা বিরক্ত চোখে তাকাচ্ছিল ... মেডিকেল হলে সূর্যাস্ত আইন টাইপ কিছু নেই বলে কিছু বলতেও পারছিল না ... হু কেয়ারস অ্যাবাউট হিম ... ও এসেছিল ঘুম ঘুম চোখে ... অবাক হয়েছিল খুব ... এবং খুশি ...
আধঘন্টা বসেছিলাম ফুটপাতে ... খুব কম কথা হয়েছিল সেদিন ... কেন জানি বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমরা কেউই...
ফিরতে হয়েছিল একঘন্টা হেঁটে ... খুব একটা কষ্ট হয়নি অবশ্য ... পথ কখন শেষ হবে সেটা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন না হলে পথ শেষ হতে কখনোই খুব একটা দেরি হয়না ...
২...
আর একদিন ...
লাস্ট সেমিস্টার ফাইনাল ... একটা পরীক্ষা বাকি ... কঠিনতম ... আমি ব্যক্তিগতভাবে কঠিন পরীক্ষাগুলি আগে দিয়ে ফেলতে চাই ... কিন্তু আঁতেলের তো অভাব নাই ... তাদের হিসেবে এইটা লাস্টে দেয়াই নাকি ভাল ... দুইদিন বন্ধ আছে ... প্রিপারেশন ভাল হবে ...
আর একটা পরীক্ষা দিলেই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট ... কেমন জানি অদ্ভূত একটা অনুভূতি ... পড়ালেখা করিনা ... ক্লাস করা তো ছেড়ে দিয়েছি আরও আগে ... সিলেবাস সম্বন্ধে ধারণা খুবই অল্প ... পরের দুইদিন জানপ্রাণ দিয়ে পড়তে হবে এটুকু জানি ... পরদিন সকালে ও চলে যাবে ঢাকা ছেড়ে ... সবসময়ই পৌছে দিয়ে আসি ওকে ... এবার পারব না ...আর কখনো পারবো কিনা কে জানে ... হল লাইফ শেষ হয়ে যাচ্ছে ... কর্মজীবন শুরু হবে ... তখন আর চাইলেও এত সময় বের করা যাবে না ... মন খারাপ তাই দুই জনেরই ...
রাত একটা পর্যন্ত্ কথা বললাম ... তারপর মুভি দেখলাম একটা ... ভোর সাড়ে ছয়টায় ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে খুব ঠান্ডা মাথায় আর একটা পাগলামির সিদ্ধান্ত নিলাম ... পৌনে সাতটায় হল থেকে বের হলাম ... সাড়ে সাতটায় এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে এসে পৌনে আটটার ট্রেনে চেপে বসলাম ...
একদম ঠান্ডা মাথার পাগলামী ... কিন্তু পাগলামী যে তাতে কোন সন্দেহ নাই ...
৩...
এই লিস্ট শেষ হবে না কোনদিন ...
গত দুইবছর কম পাগলামি তো করি নাই দুইজনে ... প্রচন্ড বৃষ্টিতে রিকশা করে পুরো শহর ঘুরে বেড়ানো ... রাত এগারোটায় গাজীপুর থেকে ঢাকা রওনা দেয়া ওর বাসার সামনে দাঁড়ানোর জন্য ... ভুল ট্রেনে উঠে শেষ মূহুর্তে দুজনের লাফিয়ে নামা ...
কিংবা একই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে একসাথে ঘুরতে ঘুরতে হঠাত দুজন দুদিকে ... কারণ ওর সেজখালার আবির্ভাব ... ও শ্যাম্পু কিনে ... আমি চকলেট ... কেউ কাউকে চিনি না ... তাকিয়ে দেখি সেলসগার্ল ঠোঁট টিপে হাসে ...
সারারাত লেকের ধারে ফোন কানে নিয়ে হাঁটাহাটি তো কোন বিষয়ই না ...
কোন একদিন বিয়ে করার মত পাগলামিটাও সেরে ফেলবো ...
৪...
লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট কনসেপ্টটায় বিশ্বাস করি না ... প্রথম দেখায় প্রেম হয় না ... প্রবল অ্যাট্রাকশন বা মোহের জন্ম হতে পারে ... পরে কপাল ভাল থাকলে প্রেম ... আমার সৌভাগ্য যে প্রেমে পড়ার আগে লম্বা একটা সময় আমরা একজন আরেকজনকে পেয়েছি শুধুই বন্ধু হিসেবে ... নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করেছি একে অন্যকে ... পাশে দাঁড়িয়েছি ঠিক যখন প্রয়োজন তখন ...
তারপর একদিন বুঝলাম আমরা বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু হয়ে গেছি ... খুব শান্তভাবে চিন্তা করলাম ... বাবা-মা ওকে মেনে নেবে না ... ওর ফ্যামিলিও আমাকে না ... একটা সম্পর্ক গড়তে গিয়ে আরও অনেক সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়বে ... সো বেটার নট ডু দিস ...
ভাবলামই শুধু ... করলাম না ... বদলে ঘাসফুল কিনতে বের হলাম ...
৫ ...
দেখবো আকাশ ... দেখবো পাহাড় ...
দেখবো নদীর ঐ অন্য পাড় ...
আঁকবো ছবি নিজের মত ...
রংতুলি হাতে আর কতকাল ...
আমরা স্বপ্নে বাঁচি ...
স্বপ্ন গড়ি ...
স্বপ্ন বুকে নিয়ে ...
দেব পাড়ি ...
বহুদূর ...
(রাগ ইমন আপুর পাগলামি বিষয়ক পোস্ট পরে অনুপ্রাণিত হয়ে)