১।
গত বছরের শেষের দিকে আমাদের বাসায় বেশ কিছু 'ভৌতিক' ব্যাপারস্যাপার ঘটে। জিনিসগুলি যে ফ্লুক বলে উড়িয়ে দেব তা-ও সম্ভব হয়নি, ঘটেছে বেশ কনসিসটেন্টভাবে, আর আমি নিজেই তো প্রমান ছিলাম। আমার জীবনে 'আনন্যাচারাল' বা 'সুপারন্যাচারাল' ঘটনা এগুলিই প্রথম। জিনিসটা এমন কিছু মনে নাও হতে পারে হাইন্ডসাইটে, কিন্তু চিন্তাজীবনকে সেরকম ধাক্কা দিয়েছিল এই পর্বটা।
ঘটনা শুরু হয় বিভিন্ন জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ছয়-সাতটা জিনিসপত্র হারিয়ে যায়, যদিও প্রথমদিকে আমি পাত্তা দেইনি, শুধু ঘুম থেকে উঠে সকালে খাওয়ার সময় বাবা-মা-ফুপুর মুখে শুনতাম। ওরাও মনে হয় প্রথমে পাত্তা দেয়নি, সাধারন দুধ পাওয়া যাচ্ছে না, বা মিষ্টির নতুন প্যাকেটটা একদিনে পুরোটা কে খেল - এমন সব সাধারন ঘটনা দিয়ে শুরু। কিন্তু এক পর্যায়ে আসলে আর অবহেলা করা যাচ্ছিল না। এরপর ছুটির দিনে আমিই হাতেনাতে টের পাই এ উদ্ভট 'হারিয়ে যাওয়া' কান্ড। আগোরার ব্রাউন ব্রেড আমার আর আব্বার বেশ প্রিয়, সকালে ওটা খেয়ে দুপুরে উপরের ফ্রিজে নিজে রাখলাম, বিকালে খুঁজতে গিয়ে দেখি নাই। কি কান্ড!
এরকম 'হারাতে' থাকে বিভিন্ন জিনিস, নানা খাবার দাবার (একদিন আমার গ্লাসে কেউ দুধ খায়, তো আরেকদিন আম্মুর কাপে!), বোনের মোবাইল ফোনের চার্জার, আম্মুর মোবাইল ফোন। তারপর একদিন রাতে আমার আর আব্বু-আম্মুর রুমের বাইরের লক কে যেন আটকে দেয়! ড্রাইভারকে ফোন করে ফুপুকে দিয়ে খোলানো হয় (আমার বাসায় আমি, বোন আর বাবা-মা থাকি উপরে, ফুপু আর বুয়া নিচে)। ভয়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বোন বাড়ি ছেড়ে নানীর বাসায় গিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ওদিন রাতে আমরা সিদ্ধান্ত নেই সবাই মিলে একসাথে ড্রইংরুমে ঘুমাবো। অন্য সব রুম লক। কথাপ্রসঙ্গে বলে নেই আমাদের বাসা প্রায় তিন হাজার স্কয়ার ফিট, ডুপ্লেক্স। বাথরুমই আমাদের ৬টা!
ভোর চারটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম সেদিন আমি। [i]কাউকে নড়তে চড়তে দেখলাম না।[/i] ভোরে উঠে লক খোলা শুরু করলো আব্বু-আম্মু, প্রথমে ডাইনিংরুম। ওমা, দেখে ডাইনিং রুমের লক খুলতে পারে না। ভিতর দিয়ে কে জানি লক করে দিয়েছে। আবারো ফোন কর রে, বাইরে থেকে লোক আনিয়ে পিছনের উঠান দিয়ে লাঠি দিয়ে টানিয়ে ঠেকিয়ে ভেঙ্গে লক খোল রে। লক খুলে দেখি পুরা ডাইনিংরুম তছনছ! ফ্রিজ থেকে দুনিয়ার খাবার বের করে ডাইনিং টেবিলের ওপরে রাখা! দুধ, মিষ্টি, আপেল, ভাত (আমার আপেলের ছবি তোলাও ছিল; কেউ দাঁত দিয়ে কামড়ে খেয়ে নিয়েছে; দিলাম না কারন এটা সাধারন কামড়ের চেয়ে আলাদা কিছু মনে হবে না) কিছু বাদ নেই।
এটা ছিল আমার কাছে একটা বিশাল শক। এর আগের দিন আমি পুরো বাসা মোটামুটি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কোন 'দূর্বলতার' জন্য, বাসা, বাসার সামনের লন, বাগান সব। দুই একটা ঢিলা শিক ছাড়া কিছুই পাইনি। আমাদের বাসা বেশ সিকিউরড, দেখলে বুঝবেন। আর যেসব সাধারন ব্যাখ্যা, বিড়াল ইত্যাদি, বা অসাধারনই, যেমন স্লিপওয়াকিং বা স্প্লিট পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, ঠিক খাটে না। আমি নিজে নিজের রুমে টেপ লাগিয়ে ঘুমেছি দেখার জন্য যে আমি স্লিপওয়াক করি কি না। বাপ-মা আর ফুপুর আপত্তির মুখেও তাদের রুমে লাগানো হয়েছিল, আমরা 'নেক্সট জেনারেশন' না?
এ জায়গাটা বলতে কিছুটা লজ্জা লাগলেও বলতে হবে, এ পর্যায়ে আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। এ ভয় হল অনিশ্চয়তা আর ক্লান্তির একটা টক্সিক মিক্স; পর পর দুই রাত একেবারেই ঘুম হয়নি; অফিসে সারাদিন কাজ করে এসে বাসায় ভূতের ভয়ে ঘুমাতে না পারলে মেজাজ তো না খিঁচড়ে উপায় নেই। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নিলাম যে বড়ফুপ্পির বাসায় চলে যাবো, ওখানে থাকবো অন্তত শুক্রবারটা, ঘুমাবো। ওই দিনই আব্বা-আম্মার নতুন বাসা খোঁজা শুরু করার কথা; কিন্তু আমার বাপ-মা বলে কথা, তারা শেষ পর্যন্ত কিছুই করে নি ওই ফ্রন্টে। কিন্তু আমার আর বাপ-মার আলোচনায় আরেক ফ্রন্টে আমরা এগোচ্ছিলাম, ঝাঁড়ফুক পথ (আমার বস মোটামুটি শক্তভাবে এক পর্যায়ে এ পথে আগাতে বলেন; সব অপশন দেখতেই বা দোষ কি?)!
প্রথমে আমাদের ড্রাইভারের কথায় আব্বার দৌড় দেয়ার কথা গাজীপুরে এক মহা ক্ষমতাশালী 'হুজুরের' কাছে। কিন্তু হুজুর নাকি ব্যস্ত, আসতে পারবে না। তখন আব্বার ফোন ফার্মগেট মসজিদের ইমামকে। তাঁর উত্তরটা খুব ইন্টারেস্টিং, "মোফাক্কের সাহেব, আমাদের লাইনে তো আমরা এগুলির কিছু করতে পারি না, এরকম লোক খুব কমই আছে। একজনকে আমি চিনি এ ব্যাপারে আপনাকে ভাল হেল্প করতে পারবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের খতিব।" যেই কথা সেই কাজ, অফিস শেষ করেই জামের থোড়াই কেয়ার করে আব্বা-আম্মা দুজনের দৌড় ফুলার রোডে (ওরাও সেরকম ভয় পেয়েছিল তো; ডাইনিং রুম খোলার পরের কান্ড দেখে আমি আর আব্বা 'ভয়ে হেসে দিয়েছিলাম' )। ওইদিনই সন্ধ্যায় বৃদ্ধ খতিবকে টেনে-হিঁচড়ে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসা সরেজমিনে তদন্ত করে খতিব তাৎক্ষনিক কিছু টোটকা দেন, আর বাকিগুলি ডিটেইলে পরের দিন দিবেন আশ্বাস দিয়ে যান; এরকম নাকি বহু তিনি দেখেছেন।
দশ কথা এক কথায় আনি এবার - এরপর প্রবলেম সলভড! খতিবের ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার পর আর কোন সমস্যাই হয়নি, শুধু আরেকটা সমস্যা ছাড়া। ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার দুই-তিন সপ্তাহের মাথায় আমাদের বুয়ার বেডরুমের জানালায় নাকি কে যেন রাত দুটা বা তিনটার দিকে জুতার পাটি দিয়ে বাড়ি দিয়েছিল, পরের দিন সকালে সে জুতার পাটি জানালার পিছনে পাওয়াও গেছে। ব্যাপক ইনভেস্টিগেশন করে দেখা গেল বুয়ার রুমে খতিব সাহেবের যে তাবিজ লাগানো হয়েছিল (কাগজ মুড়িয়ে তাবিজের ভিতরে রেখে লাগানো হয়েছিল সব রুমে আর বারান্দায়) সেটা পড়ে গিয়েছিল!
কি কান্ড!
২।
ঘটনার সময় আমি ফেসবুকে পাঁচ ইনস্টলমেন্টে লাইভ নোটিং কাভারেজ দিয়েছি, ফলে বন্ধুমহলের সবাই জেনে গিয়েছিল। আত্মীয়রাও জেনে গিয়েছিল কিভাবে জানি (আমার মাধ্যমেই মনে হয়, আমি এগুলো লুকানোতে বিশ্বাস করি না, আব্বা-আম্মার প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও)। কাহিনীটা মনে হয় কমপক্ষে ৭০ বার নানা জন/গ্রুপকে বলতে হয়েছিল; মুখে রীতিমত ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। আমার ওয়েবসাইটে একটা পার্মানেন্ট পেজই আছে 'জিন এ্যাটাক' নামে, ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন পাবলিকের ডিমান্ডে (এবং সেটার সেরকম হিট!)। আমার বন্ধু জাকারিয়া কানাডায় চলে যাবে, ওর বাসায় আরো অনেক বন্ধুর দাওয়াত, ওখানে রীতিমত আসর বসিয়ে কাহিনী শোনা হল এবং আরো গোটা চার-পাঁচেক হাইপোথিসিস পাওয়া গেল; ফাঁকতালে জাকারিয়ার বিদেশ যাওয়াটা অত পাত্তা পেল না। হাই ডিমান্ডের কারনে আমার বন্ধু নাফিসের খালার বাসায় পর্যন্ত আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; কাহিনী শুনেই নাফিসের খালা ভয়ে পর্দা টানাটানি শুরু করে দিলেন! আমার খালাতো ভাই অস্ট্রেলিয়ায় এই কাহিনী মলি খালার কাছ থেকে ফোনে শুনে দু'রাত ঘুমাতে পারেনি। ওইসময় বন্ধু মাহমুদ ভার্জিনিয়া থেকে ঢাকায় আসছে, ওর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্সের প্রফেসরকে পর্যন্ত গিয়ে এ কাহিনী বলে আসতে হয়েছে! জানি, শুনে আপনাদের ব্যাপক হাসি পাচ্ছে, কিন্তু তখন আমিও এত ফ্র্যাজাইল ছিলাম যে নিজে আসলে হাসতে পারছি না। তবে একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি, মানুষের ব্যাপক এবং তীব্র আগ্রহ এ ধরনের কাহিনী শুনে নিজের (বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আবোল তাবোল) মতামত দেয়ায়। ভাইরে ভাই, কি যে কিছু আইডিয়া পাইছি! এখানে বলতে গেলে নোট বই হয়ে যাবে।
আস্তিক-নাস্তিক দুই সাইডের আত্নীয় স্বজনরা পুরোপুরি প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ আর্টিলারীর মত হাইপোথিসিস ছাড়তে লাগলো, মেইলে, ফোনে, দেখা করে! দুই সাইডই আমার প্রতি হতাশ (সে আরেক বিশাল গপ্পো; তর্কে গ্রামীনফোন মেইলবক্সের ক্যাপাসিটি ভরে যাচ্ছিল আর কি)। ডালাস থেকে সিডনী, কেপ টাউন থেকে লন্ডন, রিয়াদ থেকে চট্টগ্রাম, কোন জায়গা থেকে উপদেশ ইত্যাদি বাদ যায়নি। অনেকেই নাকি এরকম সুপারন্যাচারাল ফেস করেছে। আমি বেশ কিছু মেইল গ্রুপের মেম্বার, ভাবলাম এগুলি বলার পরে এরা আমাকে নিয়ে হাসবে, ওমা, লন্ডনের ব্যাংকার থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনার কম্পিউটার সাইন্সের তুখোড় পিএইচডি গ্র্যাজুয়েট নানা দিক দিয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাকে মেইল পাঠাতে থাকল। আর মেইলগ্রুপ গুলিতেও সেরকম আলোচনা! তবে এরকম কিছু মেইল আসলেই খুব কমফোর্টিং ছিল ওরকম সময়ে, যেমন ফেসবুকের কিছু মেসেজও। তবে উল্টা-পাল্টা, অযাচিত 'উপদেশের'ও অভাব ছিল না।
শেষদিকে কেউ চাইলেও আর কাহিনী বলতাম না। আমরা কি পরিস্থিতিতে ছিলাম ওটা না জেনে, না বুঝে ডানে-বামে হাইপোথিসিস এক পর্যায়ে বিরক্তিকরই হয়ে যাচ্ছিল। ভাই, আমরা এ বাসায় ৭ বছর থাকি, আমরা জানি না আমাদের বাসার কি দূর্বলতা??
আর ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখি এ নিয়ে আরেক বিশাল জগৎ। কেবল নিউ ইয়র্ক শহরেই আলাদা মনে হয় ডজন খানেক ঘোস্ট হান্টার সোসাইটি আছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সাথে পোল্টারগাইস্টকে কানেক্ট করে রিসার্চ পেপার আছে, অথেন্টিক! আর ইসলামী সাইটগুলার কথা তো না হয় বাদই দিলাম। তবে ইসলাম কিউ/এ-তে খুবই মিলওয়ালা একটা কেস পেয়েছিলাম, যদিও আদৌ সমাধা হয়েছে কি না জানি না; সালাফি বাবাজিরা বড় শুকনা টোটকা দেয়।
(আমি এখানে বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন আইডিয়াগুলো আলাপ করিনি হয়তো, কিন্তু মোটামুটি কিছু বাকি ছিল না। তারপরও আপনাদের কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন; গ্যাপ থাকতেই পারে। এখন ওরকম ক্লান্তও না আর আমি। ক্লোজারও দরকার।)
৩।
এরপর আরেকটা শকিং, কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা হল ডিসকভারী চ্যানেলে একটা অনুষ্ঠান দেখার সময়। 'দ্য হন্টেড' নামে ৪০ পর্বের একটা অনুষ্ঠান বানানো হয়েছিল এরকম বিভিন্ন সত্য ঘটনা নিয়ে। এখানে বোস্টন না কোন শহরের সাবার্বে ঠিক আমাদের মত একটা ঘটনা হয়েছিল, আরেকটু ভয়ানকই (আমি পরে নেটে ফলো আপ করেছি; কাহিনী যা বুঝি সত্য)। যাহোক, কাহিনীর মূলসার হল বাড়ির কর্ত্রী এক্ষেত্রে এক রেড ইন্ডিয়ান শামানের শরনাপন্ন হয়েছিলেন সমস্যার সমাধানের জন্য। রেড ইন্ডিয়ান শামান ওনাকে যেই প্রতিকার দিলেন সেটা দেখে আমি তড়াক করে খাড়া! আমাদের খতিব যা করেছেন তার সাথে বেশ মিল!
আমাদের খতিব আমাদের কিছু 'বিশেষ লবন' দিয়েছিলেন দৈনিক পোড়াতে, আর শামান ওই মহিলাকে এরকম ইনসেন্স দেন কিছু। যেভাবে ঘুরে ঘুরে পোড়াতে বলা হয়েছিল সেরকম আমাদেরও বলা হয়েছিল। অদ্ভূত মিল! এর অতিরিক্ত উনি কিছু কাগজে আরবীতে কিছু হরফ লেখে দিয়েছিলেন বিভিন্ন রুমে দেয়ার জন্য। ওগুলো তাবিজে ভরে রুমগুলোতে সুতা ইত্যাদি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল (এখনো আছে)। বোস্টনের ঐ মহিলার যেহেতু কেস ছিল অন্য সেহেতু ওনাকে বলা হয়েছিল এরকম লেখা কোনকিছু বেশ আন্তরিকভাবে পড়তে ওই স্পিরিটকে তাড়াতে।
৪।
এই ঘটনার পর আমি ওই খতিবের সাথে নিজে দেখা করে রীতিমত জেরা করেছি। আমার জীবনদর্শনে একটা গ্যাপ হয়ে যাচ্ছিল, সুপারন্যাচারালের কোন স্থান ছিল না ওখানে। খতিবের কাছে আমার খুব গুরুত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন ছিল যে তার এই প্রতিকার কি 'ধর্মনির্ভর' কি না, মানে শুধু মুসলিমরাই এ থেকে ফল পাবে, অন্যরা পাবে না এমন কি না।
খতিবের উত্তর হল যে হিন্দুদেরও খুবই এফেক্টিভ মেথড আছে এগুলোর ব্যাপারে, তিনি আমাকে উদাহারনও দিলেন। তারপর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমার বাবা তো বেশ ধার্মিক মুসলমান, তাহলে তার এ ব্যাপারে কিছু করার থাকলো না কেন? উনি যা বললেন তা থেকে মনে হল এই ব্যাপারটা মোটামুটি ইররেলেভ্যান্ট; উনি ওনার দ্বীনের জোড়ে এ কাজ করেন না, বরং উনি নাকি ছোট বেলা থেকেই এসব জিনিস টের পান। হয়তো ওনার এওয়ারনেস বেশি। ওনার বাবারও নাকি এরকম ছিল। ওনাকে এলাকার আরেক হুজুর যিনি এগুলো নিয়ে ওস্তাদ তিনি 'ট্রেইন' করেন। তার কথা হল ধার্মিক হওয়া আর এদের হাত থেকে বাঁচা দুটো বেশ ভিন্ন ব্যাপার।
আমার ধারনা ছিল এ ঘটনার পর আমার ওপর ধার্মিক হওয়ার প্রেসার আরো বাড়বে, কিন্তু কোনই পরিবর্তন দেখিনি। আসলে, আমার বাবা/মা-রও হয়তো মনে প্রশ্ন আছে, ঠিক কি হয়েছিল?
৫।
বিশাল ঘটনা, আরো অনেক খুঁটিনাটি আছে, অনেক ইন্টারেস্টিং টিডবিট আছে আপনাদের বলা হয়নি। পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সাইজের বেশি লেখা আপনারাও পছন্দ করবেন না। শুনি আপনাদের মতামত, সামনে হয়তো আরো লিখবো। তবে জিনিসটা আমার কাছে এখনো অমীমাংসিত। আমার ওয়ার্ল্ড ভিউকে বেশ একটা ধাক্কা এ কাহিনী দিয়ে গেল তা। নড়বড়ে হয়েছে, কিন্তু নতুন ডাইমেনশনও যোগ করেছে; অনেক মডারেটও করেছে। আমি এখন এধরনের কাহিনী হয়তো আরো সহানুভূতির সাথে, আরো খোলা মনে শুনবো।
তবে, একটা দফারফা করতে পারলে, একটা ক্লোজার পেলে ভাল হতো। কিন্তু কি আর করা, এই তো জীবন, হ্যাপিলি এভার আফটার তো খালি গল্পেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৯