somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালাখাল। নদী আর পাহাড়ের মিলনমেলা।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিলেটে আছি ছয় বছর পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে কম ঘুরাঘুরি হয়নি। সম্ভব অসম্ভব অনেক যায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। একটা সময়ে মনে হয়েছিল আর বুঝি কিছু বাকি নেই। সব দেখা শেষ :)। বোকার মত ভেবেছিলাম আসলে। সিলেট অনেক বৈচিত্রময় জায়গা। আর এর বৈচিত্র গুলো সারা সিলেট জুড়ে এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে দেখতে অনেক সময় লেগে যাবে। এমনকি এমন কিছু যায়গাও হয়তো আছে যার নামই শুনিনি এখনও। শুনতে অবাক লাগলেও ব্যপারটা আসলেই সত্যি। যেমন লালাখাল। এর নাম প্রথম শুনেছিলাম মাত্র বছর দেড়েক আগে। প্রথম খুব একটা পাত্তা দেইনি। একটা খাল আবার দেখার কি হলো !! কিন্তু যারা ইতিমধ্যেই জায়গাটাতে গিয়েছেন তারা এমন প্রশংসা করতে শুরু করলো যে আমারও কৌতুহল তৈরি হতে দেরি হলো না :)। সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম। শেষ পর্যন্ত সুযোগটা আসলো গত বছরের মে মাসে। কলিগরা সবাই পরিকল্পনা করছিল সামনের উইক এন্ডে লালাখাল যাবে। আমিও সঙ্গী হয়ে গেলাম :)

লালাখাল যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার জানা ছিলনা। তাই প্রথমবার জায়গাটা চেনার পর একটু বোকা বনে গিয়েছিলাম। লালাখাল যেতে হলে জাফলং যাওয়ার পথে সারীঘাট নামে একটা জায়গা আছে সেখানে নামতে হয়। আমি সারীঘাট হয়ে অসংখ্য বার জাফলং গিয়েছি। অথচ কখনও এখানে নামা হয়নি! এটা ভেবেই একটু বোকাবোকা লাগছিল :D


সারীঘাট টু লালাখাল - সেটালাইট ভিউ


সারীঘাট - একচুয়েল ভিউ

যাই হোক, লালাখাল সারীঘাট থেকে আরো অনেকটা ভিতরে। অনেকগুলো ইন্জিন চালিত নৌকা বাধা আছে দেখলাম ঘাটে । বুঝলাম এভাবেই যেতে হবে। একজন গেলাম মাঝিদের সাথে কথা বলার জন্য। আসা আর যাওয়া মিলে ১৪০০ টাকা দাম হাঁকালো বেটারা! বুঝলাম ঠকানোর মতলব :) । শেষপর্যন্ত অবশ্য ১০০০ টাকায় রফা হলো। সবাই বেশ হইচই করে নৌকায় উঠে পড়লো। শুরু হলো লালাখাল এর উদ্দেশ্যে যাত্রা :)

নৌকা চলতে শুরু করার পর প্রথম যে জিনিসটা দৃষ্টি আকর্ষণ করলো সেটা হলো সারী নদীর পানি। খুব সুন্দর মিষ্টি একটা সবুজ বর্ণ। খুব অবাক লাগলো। বাংলাদেশে কোন নদীতে এই বর্ণের পানি দেখিনি। এটা নিশ্চিত ছিলাম রঙটা আকাশের রিফ্লেকশন থেকে আসেনি। তাহলে নীল হতো। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেও কোন সদুত্তর পেলাম না। এখনও জানিনা কারনটা :-*





আমরা এগিয়ে চললাম। মে মাস। বেশ গরম পড়ছে। তার উপর নৌকার ভিতরে বেশ হাসফাস লাগছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ছাদে উঠে বোসলাম। ফুরফুরে বাতাসে একটু স্বস্তি লাগলো। আর এখান থেকে ছবি তুলতেও সুবিধা :)

এই সময়টাতে সারী নদীতে মোটামুটি পানি আছে। হিমালয় হতে বয়ে আসা পানি। সচ্ছ টলটলে আর একটু ঠান্ডা। হাত দিলে শান্তির একটা পরশ অনুভব হয়। বেশ ভাল লাগে। নদীর দুই পাশে উচু উচু টিলা আর সাজানো সুন্দর চা বাগান। স্থানিয়রা নদীতে গোসল আর নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত। তারা এই নদীটার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। উজান হতে বয়ে আসা পাথর আর কয়লা সংগ্রহ করে অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু ভেবে খারাপ লাগলো এই নদী আর নদী পাড়ের মানুষগুলোর ভবিষ্যত সম্ভবত হুমকির মুখে। কারন কিছুদিন আগে সারী নদীর ইন্ডিয়া অংশে একটা ডেম নির্মান করা হয়েছে। খবরটা যদিও আমি প্রথম বিশ্বাস করিনি কিন্তু পরে গুগল আর্থের সাহয্যে এর সত্যতার প্রমান পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে সামান্য উজানে গেলেই এই নদীতে একটা ডেম এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। ডেমটির নাম লেখা আছে "লেসকা ডেম"। বেশ অবাক হয়েছিলাম। কারন টিপাইমুখে বাঁধ করা নিয়ে অনেকদিন ধরেই লেখালেখি হচ্ছে। আর এখানে ইতিমধ্যেই একটা বাঁধ তৈরি হয়ে আছে অথচ কেউ জানেই না ! অবশ্য ইন্ডিয়ানরা বাংলাদেশকে এই ব্যপারে কিছু জানিয়েছে কিনা তা সরকারই ভাল বলতে পারবে। ইন্ডিয়া এখনপর্যন্ত সতর্কতার সাথে পানি ব্যবস্থাপনার কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে। কারন এখনও এখানে খুব একটা বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেনি। কিন্তু কতদিন তারা এই সতর্কতা জারি রাখবে সেটা বলটা মুশকিল।


লেসকা ডেম। বাংলাদেশ হতে সামান্য উজানে


লেসকা ডেম। জুম ভিউ

যাইহোক, লালাখাল পৌছাতে ৪৫ মি: এর মত লাগলো। নামটা লালাখাল হলেও মজার ব্যপার হলো এখানে আসলে কোন খাল নেই :)। এটা 'চারিকাটা' ইউনিয়নের অন্তর্গত একটা সিমান্তবর্তী এলাকা। এর পাশ ঘেসেই সারী নদী ইন্ডিয়া হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখানকার মানুষজনকে দেখলে বুঝা যায় এটা একটু বিচ্ছিন্ন জনপদ। সুন্দর একটা চা বাগান রয়েছে। আর সেটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটা স্কূল, ছোট একটা হাসপাতাল আর বাজার। আমরা যখন যাই তখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। এখানেও নির্বাচনের উত্তাপ বেশ ভালই মনে হলো :)। আমরা ওদিকে না গিয়ে সংলগ্ন চা বাগানে ঢুকে পড়লাম। এখানটায় বেশ নিরীবিলী। একপাশে বাগান আর অন্যপাশে সরু একটা ছড়া প্রবাহিত হচ্ছে। হাটতে হাটতে অনেকটা দুর চলে গেলাম। ইতিমধ্যে বিকেল হয়ে আসছে। চা বাগানের শ্রমিকরা সব দল বেধে কাজ থেকে ফিরে আসছে। আমরাও তাই ফিরতি পথ ধরলাম। ফেরার সময় ঢুকলাম চা ফেক্টরিতে। কাছ থেকে দেখা হলো কিভাবে ধাপে ধাপে চা তৈরি হয়। পদ্ধতিটা খুব একটা জটিল মনে হলো না। ছোট ফেক্টরি টাতেই দেখলাম চা বানানো হচ্ছে।


ফটোগ্রাফি


চা বাগান ঘেঁসে রাস্তা


চা পাতা জড়ো করা হচ্ছে


চা

সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। আমরা লালাখাল ঘাটে এসে জড়ো হোলাম। নৌকায় উঠতে হবে আবার। শেষ বারের মত ভালভাবে তাকালাম চারদিকে। সবুজ পাহাড়ের সারি আর এর ভাঁজ ধরে একেবেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া নদীটিকে সন্ধ্যার অল্প আলোতে অপূর্ব দেখাচ্ছিল। ক্যামেরা টা সেট করে নিয়ে দিনের শেষ ছবিটি তুলে ফেললাম (নিচের ছবিটা)।


সারী নদী

তারপর নৌকায় চড়ে বোসলাম। মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ কাজ করছিল তখনও। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আবার আসতে হবে। আপাতত বিদায় লালাখাল ।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:১১
৪৫৬ বার পঠিত
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×