বর্ষায় যমুনার রূপ স্বাভাবিক থাকে না। ভরা নদি, বিস্তির্ণ জলরাশি ও দূরের তীর এক মায়াময় আবহ তৈরি করে। মেঘলা আকাশে গভীর যমুনা পানি সত্যিই কালো এবং ঝাপ দেওয়ার আহ্বানে পরিপূর্ণ! মন চায় দেই ঝাপ!
২০০৫ সালের সেপটেম্বর। অবস্থান টাঙ্গাইলের ঘাটাইল। আধা-বৃষ্টি আধা-রোদের একঘেয়ে এক দিনে ইচ্ছে হলো যমুনায় নৌকা ভ্রমণ করার। অবস্থান ২ঘণ্টার কাছাকাছি থাকায় আয়োজন করতে বেশি দেরি হয় নি। জামালপুর এলাকার সাথে যাতায়াতে অভ্যস্ত এক বন্ধুর নির্দেশনায় বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে।বাসে মধুপুর ও ধনবাড়ি হয়ে তারাকান্দি (সরিষাবাড়ি, জামালপুর) যমুনা সার কারখানায় চলে গেলাম। সেখান থেকে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট কাছেই। জগন্নাথগঞ্জ হলো একটি শাখা নদির মাথা যা যমুনায় এসে মিলেছে। এক পাড়ে নৌকাঘাট, অন্যপাড়ে বর্ষার পানিতে ভাসমান একটি গ্রাম দেখা যায়। নৌকা আমাদের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। যোগাযোগ করা হলো। নৌকা আছে তো মালিক নেই। মালিক আছে তো ইঞ্জিনের তেল নেই।
জিরজির বৃষ্টি নেমে আমাদের ভ্রমণের এডভেন্চার বাড়িয়ে দিলো। আমরা অপ্রতিরোধ্য: তারাকান্দি পর্যন্ত আসতে পেরেছি, এবার যমুনায় ভাসবোই। অনিশ্চয়তা পর্ব কাটানোর পর অবশেষে এক মুরুব্বি চাচার নৌকা পাওয়া গেলো। আমাদেরকে একনজর দেখে মনে হয় তার একটু মায়াই হলো।
প্রায় ঘণ্টা খানেক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখলাম আবহকালের যমুনাকে। অদক্ষ হাতে ছবি তুললাম এপাড়ের ওপাড়ের সামনের। এ যেন অন্য এক যমুনা যা লেখাপড়া করে জানার চেষ্টা নিছকই বোকামি। উপন্যাসে কবিতায় আর প্রবন্ধের যমুনার চেয়েও আকর্ষণীয় এক যমুনাকে দেখে বৃষ্টির কথাও ভুলে গিয়েছিলাম। গোপালপুরের (টাঙ্গাইল) নলিন বাজারে এসে আমরা নামলাম। মাঝি চাচাকে ভাড়া পরিশোধ করে তাকিয়ে থাকলাম তাকে শেষবারের জন্য দেখে নেওয়ার জন্য। চাচা আমাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নৌকা প্রস্তুত করছিলেন আবার জগন্নাথগঞ্জে ফিরে যাওয়ার জন্য। তার সাহায্য না হলে সেদিন তারাকান্দি থেকে চোখে হতাশার তারা নিয়ে ফিরতে হতো।
বাকি কথা ছবিতেই বলতে চেষ্টা করলাম:
রাস্তার পাশে সরিষাবাড়ির প্রকৃতি দেখে যাচ্ছি।
জগন্নাথগঞ্জ নৌকাঘাটে এসে কতক্ষণ কাটলো অনিশ্চয়তায়: নৌকা পাবো তো!
ঘাটের ওপাড়ে বর্ষার পানিতে ভাসমান এক গ্রাম: ওইগ্রামের মানুষগুলো কীভাবে জীবনধারণ করে? হাটবাজার স্কুল কোথায় তাদের? ভাবছি।
মাঝিচাচাকে পেলাম কাণ্ডারি হিসেবে। কোন যুবক সাহস করে নি মেঘলা দিনে!
জগন্নাথগঞ্জ নৌকাঘাটের সাথে ইতিমধ্যেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। কবে আবার দেখবো!
ইঞ্জিনে একটি সমস্যা দেখা দিলেও তা সেরে ওঠেছেন আমাদের মাঝিচাচা। নিশ্চিতভাবে বসলেন।
একটি যাত্রিবাহী নৌকা অতিক্রম করে গেলো আমাদেরকে ঢেউয়ের দোলা দিয়ে!
ওপাড় দেখা সহজ নয়! এ যেন প্রেম যমুনা: সাঁতার দিতে মন চাইছিলো, কিন্তু কার জন্য?

ভাঙন দেখে কিছুক্ষণের জন্য মন অস্থির হলো। বাসিন্দারা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেয়?
শেষ হলো যমুনা ক্রুজ। মাঝিচাচা কথা না বাড়িয়ে নৌকা ফের প্রস্তুত করছেন ফিরে যাবার জন্য।
গোপালপুরের নলিন বাজারে এসে আমরা আবার গাড়িতে ওঠলাম।
ঢাকা (মহাখালী) থেকে সরাসরি তারাকান্দির বাসে ওঠলে একেবারেই যমুনা সার কারখানায় ও জগন্নাথগঞ্জে যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকা। আবহাওয়া ভালো থাকলে সহজেই নৌকা পাওয়া যায়। তবে টাঙ্গাইল শহরে এসে একদিন থাকার পরিকল্পনা থাকলে ভ্রমণে স্বস্তি পাওয়া যাবে।
---------------
[পোস্টটি অন্য কোন পাবলিক ব্লগে প্রকাশিত নয়]

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০১