Errors of Online Writing আধুনিক ব্লগারদের ১০টি প্রিয় ভুল। মাঈনউদ্দিন মইনুল।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১) অন্য ব্লগারকে অনুকরণের চেষ্টা: Aping Others
পত্রিকায় আর টিভিতে সহজেই সংবাদ পাওয়া যায়। ব্লগার হতে গিয়ে সাংবাদিক হতে চাইলে প্রথমত ব্লগসাইট ছেড়ে দিতে হবে। অন্য দশটি ব্লগপোস্টের মতোই যদি আমার লেখা হয়, তবে পাঠক কেন আমার লেখা পড়বে? অন্যগুলো পড়ে নিলেই তো হলো। অন্ধভাবে অন্যকে অনুকরণ করা, আর সৃজনশীলতাকে গলাটিপে মারা একই কথা। প্রচুর পড়ে ও দেখে খুঁজে নিতে হয় নিজের বিষয়টি। অনন্যতা-ই পাঠককে অনুপ্রাণিত করবে আমার লেখাটি পড়ার জন্য। (মনে থাকে না!)
২) কাদাছুঁড়াছুড়ি বা অন্যের সমালোচনায় অংশ নেয়া: Gossiping
এটি খুবই মজার ও আনন্দদায়ক এবং অভিন্ন শত্রু মানুষকে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেয়। অজান্তেই লিখিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি, যাকে বলে আজাইরা পেঁচাল, বুঝতেও পারি না। একেই বলে আদি পাপ, যাতে আমরা অবচেতনে আটকে পড়ি। অন্যের বিষয়ে আপনি ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত অন্যকে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক হবার প্রত্যাশা করা বোকামি। ( জ্ঞানের কথা!) ব্লগের সমাজ প্রেক্ষিতটি ভুলে গেলে হয় না। যেমন রোপণ সেরকম কর্তন, আপনি রোপণ না করলে কাটবেন কী? তাই ভালোবাসা সহানুভূতি শ্রদ্ধা রোপণ করুন, ঠিক সেটাই আপনার কাছে ফিরে আসবে। শতভাগ গ্যারান্টি! বাংলা ব্লগে প্রচুর সৃজনশীল লেখার সাথে আছে প্রচুর দলাদলি। লেখার মান বাড়লে এসব শেষ হবে এক দিন।
৩) রাতারাতি সফলতার প্রত্যাশা: Dreaming for Rapid Exposure
লেখালেখি একটি শ্রমসাধ্য বিষয় – আমি সেটা বলতে চাই না, কারণ যারা লেখতে ভালবাসেন তাদের কাছে এটি কষ্টদায়ক নয় মোটেই। রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, লেখতে লেখতে আমি লেখা শিখেছি। লেখে-ই নিজেকে আবিষ্কার করা যায় একজন বিদগ্ধ লেখক হিসেবে। পাঠকপ্রিয়তা শুধু ভালো লেখাতেই আসে না, এরজন্য সময়েরও প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় লেখার জন্য বরাদ্দ করলে, সফলতা আসবেই! তবে অতি শিঘ্রই সফলতা আশা করলে হতাশ হয়ে অকালেই লেখা বন্ধ করে দেবার যোগার হয়। (ব্লগারের আবার সফলতা কী?)
৪) পাঠকের বিষয়টি উপেক্ষা করে যাওয়া: Ignoring the Attitudes of the Audience
একটি নির্দিষ্ট সময় ব্লগে অতিক্রম করার পর অনেক ব্লগার নিজেকে আত্মকেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ করে ফেলেন। তারা কী করেছেন, কতদিন ধরে ব্লগিং করছেন, কী পছন্দ করেন, কী তাদের ভালো লাগলো, কী ডিসগাস্টিং লেগেছে, কী তার অনুভব, তিনি কত মহৎ, কত আদর্শবান – ইত্যাদি বিষয়ে নিজেকে আটকে ফেলেন। একটি ব্লগ পোস্ট সাধারণত পাঠকের পড়ার জন্য। তাই তার প্রয়োজনটাও ভুলে গেলে হবে না।
৫) অগণিত ভুল করে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরক্তি উৎপাদন করা: Irritating Mistakes in Language, Spelling and in Presentation
লেখার স্টাইল খুবই উন্নতমানের, বিষয়ও দরকারী, ভাষাও সরল এবং পাঠক-বান্ধব। কিন্তু বানানের ভুল, ব্যাকরণের ভুল, অনাকাঙ্ক্ষিত ছোট ভুল, বিরামচিহ্নের অবিরাম ভুল, তথ্যের ভুল, সূত্রের ভুল, অপ্রাসঙ্গিক ছবি – হরেক রকমের ভুল দিয়ে এই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, আপনি পাঠককে খুব থোরাই কেয়ার করেন।
৬) দিনে একশ’বার মতামত স্ট্যাট দেখা: Killing Time Seeing Hit Stats
কতগুলো মন্তব্য পড়লো আমার লেখায়? কে মতামত দেয় নি? কেন দেয় নি? এতো ভালো লেখা পোস্ট দিলাম, পাঠক আমারটি না পড়ে কী করছে এখন? ( নিজের কথাই কইতাছি!) বারবার নিজের রূপকে দেখার এই নার্সিসিজম আপনার লেখক সত্ত্বাকে কুঁকড়ে মারবে। শেইক্সপিয়রের লেখা আমরা এখনও পড়ে ভিমরি খেয়ে বলি, আহা কত চমৎকার কথা! তিনি তার ৫শ’ বছর পরের পাঠকের কথা মনে রেখেছিলেন? চিন্তিত হয়েছিলেন তার পাঠকপ্রিয়তার কথা?
৭) কৃতীত্বকে স্বীকার না করা: Ignoring Other People’s Credit/Contribution
যেখানে যার কৃতীত্ব, সেটা লেখকের হোক বা পাঠকের হোক, তা স্বীকার না করা অতি স্বাভাবিক মানসিকতা। সাধারণত অন্যের ভালো দিক সহজে আমাদের চোখে পড়ে না; চোখে পড়লেও মনে থাকে না; মনে থাকলেও মুখে তা স্বীকার করি না; স্বীকার করলেও তা উদারভাবে প্রকাশ করি না। উত্তম যদি হতে চান তবে অন্যের উত্তম দিকটি ভালোমত সনাক্ত করুন, এবং তা স্বীকার করুন (এহেম!)।
একসময় দেখবেন সকলের উত্তম গুণগুলো কীভাবে আপনার মধ্যে চলে এসেছে। তাই প্রশংসা করুন উদার হস্তে এবং পকেট খালি করে। (একখান খাঁটি কথা কইলাম!)
৮) মন্তব্যের উত্তর না দেওয়া: Non-responsive to Readers’ Comments
এবিষয়টি রহস্যময়, কেন জানি না উত্তর দিতে মন চায় না। (অর্থাৎ মুন্চায় না!) অথবা একই কথা দিয়ে সকলকে একটি দায়-সারা ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করে দিই। মাঝে মাঝে সকলের মন্তব্যের নিচে একটি ‘গণ ধন্যবাদ’ দিয়ে দিয়ে বলি, “যারা আমার লেখায় মতামত দিয়েছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ।” এর অর্থ অনেকটা এরকম: “আরে, আমার লেখা পড়বেন না তো, কার লেখা পড়বেন? আমার লেখা তো পড়বেনই, এটাই স্বাভাবিক।” এখানে বলে রাখি: ব্লগে অনেক ভালো ভালো পোস্ট মাত্র দু’একটি মতামত নিয়েই তলিয়ে যায় লেখকের নিজ আরকাইভে। তাই ভালো লেখা দিলেই যে পাঠকে তা গোগ্রাসে গিলবে, এরকম আশা করা অনেকাংশেই ভুল।
৯) মিথ্যা, অনুমান-নির্ভর এবং প্লেজিয়ারাইজড পোস্ট দেওয়া: Plagiarized Post/Information
পাঠকের পর্যবেক্ষণশীলতার ব্যাপারটি অনেকেই আঁচ করতে পারি না। মনে করি পাঠক বুঝি খুবই বোকা-সোকা, কিছুই বুঝে না। ‘লেখা’ মানে হলো দলিলভুক্ত করা, এটি কত বছর ধরে কত সহস্র পাঠক পড়বেন তা আর লেখকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মিথ্য আর ধার-করা লেখা প্রকাশ করলে, আজ নয় কাল তা প্রকাশিত হবে এবং লেখক না জানলেও নবীণ প্রজন্ম ধিক্কার দেবে লেখককে। একটি বিষয় লেখকের নিয়ন্ত্রণেই থাকে চিরদিন। তা হলো, লেখক তার লেখারকনটেন্ট ও কোয়ালিটি দিয়ে কালোত্তীর্ণ মনোভাব তৈরি করতে পারেন পাঠক-হৃদয়ে।
১০) পইন্টলেস রাইটিং বা উদ্দেশ্যহীন লেখা: Pointless Writing – Writing Without any Purpose
বিশাল বড় একটি প্রবন্ধ লেখে একদিন দেখলাম, এর মূল বক্তব্য নিজেই খুঁজে পাচ্ছি না! অথবা দেখি, সারবক্তব্য থাকলেও তা অস্পষ্ট। কোন মেসেজ নেই, বিশ্লেষণ নেই। লেখকদের কী করতে হবে তা বলা মুশকিল, তবে ব্লগারদেরকে সুনির্দিষ্ট বিষয় ও বিশ্লেষণ ছাড়া লেখা দিলে পরে পস্তাতে হয়। (কী আর কমু!)
[ পাবলিক ব্লগে লিখতে গিয়ে কিছু উপলব্ধি আসলো - সেটাই শেয়ার করলাম। হয়তো সকলেরই এরকম ভুল হয় না। পাঠক ব্রাকেটের কথাগুলোতে লেখকের অবস্থান বুঝতে পারবেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আধুনিক ব্লগারদের শক্তি সামর্থ্যে আর সম্ভাবনায়। বিশ্বাস করি, ছাপার অক্ষরের চেয়ে ব্লগারের লেখার শক্তি অন্যরকমভাবে বেশি, কারণ এখন বইয়ের পাতার চেয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মানুষ বেশি দৃষ্টি রাখে। তাই, এবিষয়ে সামু’তে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। বাকি তেনার ইচ্ছা ]
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন