ক) লিংকড ইন: পেশাগত অগ্রগতির সহজ মাধ্যম
২০ কোটি সদস্যের লিংকড ইন নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে ৮জন করে নতুন যোগ হচ্ছে। প্রতিদিন ১ কোটি এনডোর্সমেন্ট বা ‘যোগ্যতার অনুমোদন’ বিনিময় হচ্ছে। উন্নত দেশের মতো এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও চাকরি দেবার পূর্বে অথবা পরে প্রার্থীর লিংকড ইন তথ্যকে মূল্যায়ন করা হয়। সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন বায়োডাটা বা সিভি না চেয়ে প্রার্থীর লিংকড ইন সংযোগ চাওয়া হবে। অবশ্য এটি আর চাওয়ার বিষয় নেই, প্রার্থীর নামটি ধরে অনুসন্ধান চালালেই তা মনিটরে ভেসে ওঠে।
আমাদের দেশেও অনেককেই পাওয়া যায় লিংকড ইনে, যদিও নিয়মিত নন। ‘আমার তো চাকরি আছেই, তবে কেন লিংকড ইন’ এরকম একটি সিনড্রোম আছে, যা শুধু এদেশেই পাওয়া যায়। উন্নত দেশে পেশাদাররাই দখল করে রেখেছে লিংকড ইন নেটওয়ার্ক।
.
খ) লিংকড ইন কেন আলাদা
ফেইসবুক নিয়ে যত মাতামাতি লিংকড ইন নিয়ে আমাদের দেশে তত আলোচনা হয় না। একটি উন্নয়নশীল দেশের কর্মহীন মানুষদের জন্য এর চেয়ে আফসোসের বিষয় আর কী হতে পারে! সময় নষ্ট করার অনেক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন আছে, তেমনি আছে নিজের কর্মজীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কিছু দরকারি সাইট। লিংকড ইন হলো এমনই এক অনলাইন সংগঠন যেখানে চাকুরিজীবী এবং চাকরিপ্রত্যাশী উভয় পক্ষই উপকৃত হচ্ছে।
ফেইসবুক হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আর লিংকড ইন হলো পেশাগত যোগাযোগের মাধ্যম। পেশাগতভাবে যারা এগিয়ে যেতে চান এবং পরিচিতি পেতে চান, তারা ফেইসবুকে পড়ে থাকলে শুধুই সময় ও মগজের অপচয় হবে। ফেইসবুকের ব্যবহারকারী অনেক মানে এই নয় যে, ওটা পেশাগত উন্নয়নের জন্য লিংকড ইনের চেয়ে ভালো। পেশাগত উন্নয়ন করতে চাইলে দরকার একটি লিংকড ইন একাউন্ট, কারণ এটি দেয় পেশাজীবী ও সম্ভাব্য চাকুরিদাতার মধ্যে পরিচিত হবার সুযোগ। এখানে বেনামী বা ছদ্মনামে থাকার কোন সুযোগ নেই, যেমন সুযোগ নেই অহেতুক ট্যাগিং বা আড্ডাবাজির। আছে অগণিত পেশাজীবি গ্রুপ, যাতে যুক্ত থেকে নিজের পছন্দের ক্যারিয়ারে ‘নতুন থেকে অভিজ্ঞ’ এবং অভিজ্ঞ থেকে পুরোপুরি পেশাদার হিসেবে গড়ে ওঠা যায়।
.
গ) লিংকড ইন এগিয়ে থাকার কয়েকটি বাস্তব কারণ:
ফেইসবুকের পরীক্ষীত ফিচারগুলো লিংকড ইন নিয়ে নিয়েছে: পূর্বে লাইক বাটন ছিলো না, ছবিও আপলোড করা যেতো না। এখন ছবি তো আপলোড করাই যায়, তাতে কর্মজীবনে ঘটিত সফলচিত্রগুলো সংরক্ষণ করা যায় আর পেশাদারদের মধ্যে অর্জন করা যায় সমাদর।
অভিজ্ঞতার নির্যাশ এখন লিংকড ইন প্রোফাইলে: পেশাজীবীদের কর্মজীবনে তৈরিকৃত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা(পিপিটি)গুলোও এখন সহজেই যুক্ত করা যায়। তাতে পেশাজীবি অপেশাজীবি সকলেই উপকৃত হচ্ছে। এটি ফেইসবুকে নেই।
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং: করপোরেট ব্র্যান্ডিং এর পাশাপা্শি ব্যক্তিগত নাম দিয়ে ব্র্যান্ড ডিভেলপমেন্ট করার সুযোগ এসেছে। অভিজ্ঞতা আছে, ভালো রেকর্ড আছে – তবে তা দিয়ে নিজেকে সম্ভাব্য নিয়োগকারীদেরকে ইমপ্রেস করারও এখন সহজ। ব্যক্তিগত ঈর্ষার কারণে কেউ কারও যোগ্যতাকে চেপে যাবার দিন শেষ।
বিশ্বব্যাপী কর্মহীনতায় লিংকড ইন এখন একমাত্র অনলাইন সমাধান: অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেকারত্ব এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। উন্নত-অনুন্নত সকল দেশে কর্মসংস্থানের একমাত্র অনলাইন সমাধান হলো লিংকড ইন নেটওয়ার্ক।
লিংকড ইনের তথ্য অধিক নির্ভরযোগ্য: পেশাগত সততা রক্ষার করার স্বার্থে স্বভাবতই বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। ফেইসবুকের মতো এখানে নিক নেইম প্রথা নেই। সবগুলো ফিল্ডে তথ্য না দেওয়া পর্যন্ত আপনাকে নিয়মিত ‘নির্ভরযোগ্যতার হার’ দেখিয়ে তাগিদ দেবে।
.
ঘ) লিংকড ইনে একাউন্ট পরিচালনার জন্য কয়েকটি কুইক টিপস:
এই ভিডিও গাইডটি প্রাথমিক ইউজারদের কাজে আসতে পারে
1) শুরু করুন, রাস্তা তৈরি হবে: যোগ্যতা অনুযায়ি একটি পেশাকে উদ্দেশ্য করে আজই একাউন্ট খুলুন । অন্যদের প্রোফাইল দেখে ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো যুক্ত করুন।
2) শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক/সার্বজনীন টার্মে লিখুন। যেমন: এসএসসি, এইচএসসি ইত্যাদি না লিখে টেনথ ক্লাস, টুয়েলফথ ক্লাস ইত্যাদি লিখুন। যেকোন প্রকার এভ্রিবিয়েশন ব্যবহার করলে ব্রাকেটের মধ্যে পুরো নামটি লিখুন।
3) নিজের পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট গ্রুপে যোগ দিন। তাতে যেমন পরিচয় বাড়বে, তেমনি বাড়বে আন্তর্জাতিক মানের অভিজ্ঞতা।
4) বাস্তব জীবনের বন্ধুদেরকে লিংকড ইনে যুক্ত করুন। চাইলে পারবেন! পরে দেখতে পাবেন তারা আপনাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।
5) নিজেকে ব্যতিক্রমী হিসেবে গড়ে তুলুন: দেখুন সমপেশার পেশাজীবীরা কী দিচ্ছেন তাদের প্রোফাইলে। নিয়মিত অনুসন্ধান করে নিজেকে আলাদা উপায়ে উপস্থাপনের উপায় বের করুন। তবে শুরুতেই এ নিয়ে অস্থির হবার দরকার নেই।
6) নিয়মিত লগইন করুন। নিয়মিতভাবে লিংকড ইনে প্রবেশ করলে সেখান থেকেই অনেক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। কারা আপনার নেটওয়ার্কে এসেছেন, বা কারা আপনার প্রোফাইল দেখেছেন তাদেরকে জানার জন্য নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট সময় লিংকড ইনে দিন। ব্যস্ত জীবনেও এতটুকু সম্ভব।
7) বিশ্বাসযোগ্যতা: কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো একটি একটি করে যুক্ত করুন। শুদ্ধ ইংরেজিতে লেখার জন্য প্রয়োজনে বন্ধুর সহায়তা নিন। এজন্য প্রথমে ওয়ার্ড ফাইলে লিখে স্পেলচেক দিয়ে নিন। যা মিথ্যা তা যুক্ত করবেন না। মিথ্যা তথ্যের চেয়ে ফিল্ড ফাঁকা রাখাও ভালো।
একটি অনলাইন জরিপে ৫৯ শতাংশ ব্যবহারকারী লিংকড ইনকে নেটওয়ার্কিং এর জন্য বেশি কার্যকর বলে মত দিয়েছে। এ অবস্থা আগে ছিলো না। গত বছর এটি ছিলো মাত্র ৪১ শতাংশ। ফেইসবুকের ফেইক নিক এবং ইনসিকিউরড তথ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ইতিমধ্যেই এর ব্যবহার-উপযোগিতা কমেছে। এখন শুধু সংবাদ আর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে এর কদর টিকে আছে। সিরিয়াস যোগাযোগ বলতে লিংকড ইনকেই বুঝানো হয়।
**কর্মসংস্থান ও কর্মজীবন নিয়ে অন্যান্য পোস্টগুলো:
-মানুষ দু’প্রকার চাকুরি প্রার্থী এবং চাকুরিদাতা
-কর্মসংস্থানের নামে মেধা শোষণ
___________________________________________________
তথ্যসূত্র:
ক. দ্য ডেইলি স্টার
খ. সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং গবেষণা বিষয়ক একটি সাইট
গ. ক্যারিয়ারিয়েলিজম – পেশাগত গবেষণা সাইট
ঘ. বিবিধ উৎসে ব্যক্তিগত অনুসন্ধান
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪৮