somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাঈনউদ্দিন মইনুল
উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী। শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার এবং নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার জন্য কাজ করি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কৌতূহলী।

হুইটম্যানের ‘ঘাস’ - অনুবাদ মাঈনউদ্দিন মইনুল।

১৭ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটি শিশু জিজ্ঞেস করলো, “ঘাস কী?”
একমুঠো ঘাস তার হাতে।

কী উত্তর দেবো আমি শিশুটিকে?
ঘাস যে কী, আমি তো তার চেয়ে বেশি জানি না।

আমার ধারণা এটি আমার মনোভাবের প্রতিবিম্ব,
আমার আশাবাদি চেতনার সবুজ বুনন।

অথবা, হতে পারে ঈশ্বরের হাতের রুমাল,
একটি সুগন্ধী উপহার এবং স্মৃতিজাগানিয়া
যা পরিকল্পিভাবে দেওয়া,
যার কোন এক কোণায় হয়তো লেখা আছে মালিকের নাম,
যা দেখে আমরা মন্তব্য করতে পারি,
আর জিজ্ঞেস করতে পারি, “এটি কার?”

অথবা, হতে পারে ঘাসটি নিজেও একটি শিশু,
উদ্ভিদজগৎ থেকে জন্মলাভ করা এক নাবালক।

অথবা, হতে পারে এটি একটি অভিন্ন চিত্রলিপি,
যার অর্থ হলো: প্রশস্থ এবং সংকীর্ণ জায়গায় একইভাবে গজিয়ে ওঠা,
বেড়ে ওঠা কৃষ্ণাঙ্গ আর শ্বেতাঙ্গদের প্রাঙ্গণে সমভাবে,
কানুক, টুকাহি, কংগ্রেসম্যান বা কাফ*;
সবাইকে আমি এক রকম দেই,
সবার থেকে আমি একই রকম করি গ্রহণ।

এবং এখন আমার মনে হয় এটি হচ্ছে
কবরে গজিয়ে ওঠা একগুচ্ছ অখণ্ড চুল।
কোমলভাবে তোমায় স্পর্শ করবো হে কোঁকড়ানো ঘাস,
হয়তো তুমি যুবকদের বুক থেকে ওঠেছো গজিয়ে,
হয়তো আমি জানলে বুঝতাম যে তাদেরকে আমি ভালোবেসেছিলাম,

হয়তো বৃদ্ধদের থেকে এসেছো, অথবা এমন সন্তানদের থেকে
যাদেরকে আগেই কেড়ে নেয়া হয়েছিলো মা’য়ের কোল থেকে,
আর এখন আছো তোমরা মায়ের কোলে,
এই ঘাস এত গাঢ় যে তা বৃদ্ধ মা’দের
ধূসর (চুলের) মাথা থেকে আসতে পারে না,
বৃদ্ধ পুরুষদের বিবর্ণ দাড়ি থেকেও তা গাঢ়,
এমন গাঢ় বর্ণ যা মুখের ভেতরের ধূসর লাল তালু থেকে আসে।

হ্যাঁ উললব্ধি করেছি আমি, এতগুলো সরব জিহ্বার মধ্যেও,
এখন উপলব্ধি করেছি (গাঢ় বর্ণটুকু)
মুখভ্যন্তরের ধূসর লাল তালু থেকে এমনিতেই আসে নি।

পারতাম যদি সেসব মৃত যুবক ও মৃত নারীদের
ইঙ্গিতটুকু ব্যাখ্যা করতে,
যদি পারতাম, ব্যাখ্যা করতে সেই বৃদ্ধ পুরুষ আর মা’দেরকে যাদের
সন্তানদেরকে কোল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো।

(ঘাসকে সুধাই) কী হয়েছিল সেই মৃত যুবক আর বৃদ্ধদের?
আর, কী হয়েছিল সেই নারী আর তাদের সন্তানদের?

তারা জীবিতই এবং ভালোই আছে অন্য কোথাও,
ছোট্ট এ ঘাস দেখিয়ে দিলো মরণ বলতে আসলে কিছু নেই,
আর মরণ যদি থাকেই তা জীবনকে সামনের দিকে নিয়ে যায়,
এবং তা ধরা পড়ার অপেক্ষায় থাকে না,
এবং জীবন ফিরে আসার জন্য মুহূর্তও থেমে থাকে না।

(ঘাসের মতো) সব জীবনই ওপরে বাইরের দিকে বের হয়ে যায়,
কিছুই পড়ে যায় না,
আর মরণ সকলের ধারণা থেকে আলাদা, তা সৌভাগ্যেরই বিষয়।

--------------------------
টীকা: কানুক, টুকাহি ইত্যাদি হলো অধিকার-বঞ্চিত রেড ইনডিয়ান ও নিগ্রোদের বিভিন্ন গোত্রের নাম। কংগ্রেসম্যান বা কাফ দ্বারা অভিজাত শ্রেণী তথা শ্বেতাঙ্গদের বুঝানো হয়েছে।

কবিতা সম্পর্কে: কবিতাটি হুইটম্যানের ‘সং অভ্ মাইসেল্ফ’ এর ষষ্ঠ পদ থেকে অনূদিত, যাকে কবি শিরোনাম দিয়েছেন ‘গ্রাস/ঘাস’।
কবিতাটি হুইটম্যানের সাড়াজাগানো কাব্যগ্রন্থ ‘লিভ্স অভ্ গ্রাস’ থেকে নেয়া। সবুজ ঘাস একদিকে কবির আশাবাদী চেতনার প্রতীক, অন্যদিকে পায়ের তলার এ ঘাস সমাজের বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি। কবি ছিলেন নিগৃহীত কৃষ্ণাঙ্গ আর ক্রীতদাস প্রথার বিপক্ষে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। এই বারবার গজিয়ে ওঠা ঘাস হলো অমরত্ব আর পুনর্জনমের প্রতীক।

কবি সম্পর্কে: আমাদের সাম্যের কবি কাজী নজরুলকে বিভিন্ন জায়গায় ‘বাংলার হুইটম্যান’ বলে যে উল্লেখ করা হয়, তা যথার্থই। ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২) সাম্য, গণতন্ত্র আর অধিকারের গান গেয়েছেন তার সমস্ত কবিতায়। তার ‘সং অভ্ মাইসেল্ফ’ মলূত সং অভ্ হিউম্যানিটি, মানবতার গান। ওটি চিরকুমার হুইটম্যানের ব্যক্তিগত জীবনগাঁথা নয়। তিনি গেয়েছেন আদর্শবাদ আর সার্বজনীনতার গান। হুইটম্যান মানবতার কবি (Poet of Humanity), যেমন আমাদের নজরুল। ‘ঘাস’ হুইটম্যানের একটি প্রিয় রূপক। বস্তুত তার বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘লিভস অভ্ গ্রাস’ (১৮৫৫)।

এ কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে একটি মজার তথ্য আছে, হুইটম্যান দশবার সংশোধন করে গ্রন্থটি দশবারই প্রকাশ করেছেন। জীবনের দুর্দশার কারণেও হুইটম্যান আর নজরুল এক ঘরানার কবি। হুইটম্যান সম্পর্কে এতকিছু বলার আছে যা এখানে শেষ করা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
১৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×