এক) সাড়া জাগানো এবং বক্সঅফিস মাতানো সিনেমা ‘হোম এলোন ১-২’ এর ছোট্ট শিশু কেভিনের কথা কারও খেয়াল আছে? আহা! দুটো প্রাপ্তবয়স্ক ভিলেনকে কী নাস্তানুবাদই করেছিলো ছোট্ট শিশুটি! আমি সেদিনও দেখছিলাম স্টার মুভিজে। অথবা ‘রিচি রিচ’ সিনেমার সেই ধনীর দুলাল রিচির কথা মনে পড়ে? কীভাবে সে তার বাবা-মাকে স্বার্থলোভী সহকর্মীদের ফাঁদ থেকে রক্ষা করেছিলো! ছোটকাল থেকেই আমি কালকিন ম্যাকুলে’র ভক্ত। ১৯৯১ সালের এমি এওয়ার্ড বিজয়ী এবং হোম-এলোন-খ্যাত কালকিন বিবেচিত হয়েছিলো সফলতম শিশু তারকা হিসেবে। বলা বাহুল্য, এ লেখাটি তার উন্নতি নয়, অবনতি নিয়ে।
২০০০ সাল পর্যন্ত অভিনয় জীবন থেকে বিরত থাকার পর হঠাৎ ২০০৪ সালে কালকিন খবরে আসে খুবই খারাপভাবে। বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্যসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর! সেই ছোট ছেলেটি আর ছোট্ট নেই। খ্যাতিমানদের বিচার হয় সবচেয়ে দ্রুত। খুবই তাড়াতাড়িই সে বিচারের সম্মুখীন হয় এবং সংক্ষিপ্ত জেলজীবনও অতিক্রম করে এই কালকিন। ততদিনে কালকিন পরিণত হয়েছে নিয়মিত হেরোইন সেবক হিসেবে। ব্যক্তিগত জীবনে একবার স্ত্রী পরিবর্তন করেছে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে আছে। সেটাও বর্তমানে অনিশ্চিত অবস্থায় আছে। কিন্তু পশ্চিমে এসব কোন খবর নয়। খবর হলো, হেরোইন সেবক হয়ে মৃত্যুর সাথে তার ছেনালিপনা। নিজ হাতে নিজের সর্বনাশ কে মেনে নেয়?
২০১২ সালে জুলাই মাসে দ্য ইনকোয়ারার খবর প্রকাশ করে যে, হেরোইন-সেবী কালকিন ম্যাকুলে’র মাত্র ছ’মাস সময় আছে এই পৃথিবীতে। কিছু কিছু পত্রিকা তাদের হতাশা প্রকাশ করার জন্য আগাম শোকবার্তা প্রকাশ করে ঠিক এভাবে: “অ্যামেরিকান অভিনেতা কালকিন ম্যাকুলে (১৯৮০-২০১৩) মৃত্যুবরণ করেছেন; তার বন্ধু ও পরিবারবর্গ শোকাহত” ইত্যাদি। চিকিৎসকদের ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ি কালকিন ম্যাকুলে এবছর ৬ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করার কথা।
যা-ই হোক কালকিন এখনও মারা যায় নি। নিরব আত্মহননের পথ থেকে অনেকটাই ফিরে এসেছে সে। দিন কাটাচ্ছে ছবি এঁকে। কিন্তু ধ্বংস যা হবার তা হয়েই আছে, বাকী শুধু পরিণতি লাভের। পরিবারের সাথে বিশেষত বাবার সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিলো না কখনোই। পশ্চিমা পরিবারে যতটুকু বন্ধন থাকে, তার চেয়ে একটু কম ছিলো কালকিনের পরিবারে! তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলো অপরিণত বয়সের তারকাখ্যাতি।
দুই) কালকিনের জীবন থেকে অনেককিছুই শেখা যায়। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ সামাজিক এবং আইনগতভাবে শিশুই তাকে, কারণ এসময়ে তারা নিজের মঙ্গল-অমঙ্গল বুঝতে পারে না। কম বয়সে শিল্পী হওয়া খারাপ কিছু নয়, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, জীবনে একটি শক্ত ভিত তৈরি করা। মৌলিক পড়াশুনা শেষ না করেই শিশুরা যখন প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কৃতীত্ব পেয়ে যায়, তাদের পক্ষে তখন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পড়াশুনায় মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে অনেক ক্ষুদে শিল্পী গড়ে ওঠছে নাচ গান ইত্যাদি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। অথচ গণিত অলিম্পিয়াড বা স্পেলিংবি’র মতো পড়াশুনার সাথে প্রাসঙ্গিক আয়োজনগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না, আমাদের অভিভাবক বা স্পনসরদের কাছে।
শিশুদেরকে নিয়ে এসব নাচ-গান প্রতিযোগিতায় আমার ঘোর আপত্তি আছে, যদিও সকলকে তা বুঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কথিত ট্যালেন্ট হান্ট-এর আয়োজকেরা শিশুদের নিয়মিত পড়াশুনার বিষয়টিকে কতটুকু বিবেচনায় রাখছেন, তাতে আমার অনেক সন্দেহ। আমাদের দেশে তারকাখ্যাতি পাওয়া এক শিশু শিল্পীর মা হবার খবর শুনে আমি রীতিমতো চমকে ওঠেছিলাম। দশ-বারো বছর বয়সে তারা তারকাখ্যাতি লাভ করছে আর প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে অসম সামাজিকতায় জড়িয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে কতজন সঠিকভাবে তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা দিতে পারবে, ভেবে দেখার বিষয়।
*কালকিন ম্যাকুলে সম্পর্কে যাবতিয় তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১