ধর্ষকের মুখে যেমন শালীন পোশাকের আলোচনা মানায় না, সেরকমভাবে ধর্ষণের ঘটনার সময় ‘নারীর শালীন পোশাক’ নিয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক নয়। কোন মেয়ে তার নিম্নরুচির কারণে অশালীন পোশাক পড়লে আমি যদি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি, তবে আমার রুচি আর মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকে? তাই, পোশাকের শালীনতা নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করা যাবে।
ছোট্ট একটি দৃশ্যপট তুলে ধরছি। কোন এক ক্ষয়িষ্ণু সমাজে একটি বিদ্যালয় শিশু ধর্ষিত হলো এক শালীন পোশাকের ধর্ষকের হাতে। ধর্ষককে সমাজের মুখোমুখি করা হলে, সে বললো, “মেয়েটি আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো অশালীন পোশাকে। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। আমার কী দোষ? বলুন?” সেই সমাজের কর্তৃপক্ষ তা মাথানিচু করে মেনে নিলো। মুরুব্বিরা বললেন, “হ, তা তো হতেই পারে। মেয়েরা আজকাল যা বেপর্দা হয়েছে! ধর্ষণ তো হবেই।” মেয়েটিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবার সুপারিশের মাঝখানে একটি ‘প্রগতিশীল সুপারিশ’ দিলেন অন্য একজন মুরুব্বি। তারপর তিনি মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে বললেন, “যাও মেয়ে! বেপর্দা কাপড় পড়ো আবার বিচার নিয়ে আসো! এরপর থেকে সাবধানে থাকবে।” সেই ধর্ষকের যে শাস্তিই হোক না কেন, তা সে গৌরবের বলেই মনে করেছে, কারণ একজন অশালীন পোশাকের মেয়েকে শালীন হবার বাস্তব শিক্ষা সে দিতে পেরেছে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে আপনার কী অবস্থান হবে? তবে কি অশালীন পোশাকের মেয়ের সংখ্যা অনুপাতে ‘শালীন ধর্ষকের’ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয়? কোথায় গেলো আমাদের নীতিবোধ আর আত্মনিয়ন্ত্রণ?
“তুমি অধম বলে আমি উত্তম হবো না কেন?” নারীর পোশাক খাটো বলেই তাকে ধর্ষণ করতে হবে - এ হলো বিকৃত মানসিকতা, যা পশুর সাথে আমাদের পার্থক্যকে কমিয়ে দিচ্ছে দিনকে দিন। অন্তত ধর্ষণের সময় নারীর পোশাকের আলাপ করা উচিত নয়, তাতে অপরাধী প্রশ্রয় পায়। সমাজে শালীনতা, ব্যক্তিগত রুচিবোধ, পারিবারিক মূল্যবোধ - ইত্যাদি আলাপের সময় পোশাকের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক, ধর্ষণের আলোচনায় নয়। ধর্ষক হলো নরপশু, তাকে ঘৃণা ও শাস্তি পেতে হবে। যারা ধর্ষণের ঘটনায় নারীর পোশাকের আলোচনা তুলেন, তারা প্রকারান্তরে ধর্ষকেরই পক্ষ নেন।
ধর্ষকের শাস্তি হতেই হবে, নারী বিবস্ত্র থাকলেও অপরাধ ধর্ষকেরই। ধর্ষককে দিতে হবে তাৎক্ষণিক শাস্তি আর আন্তরিক ঘৃণা।