প্রতিবছর ঢাকায় আসলে যে জিনিসটি ভোগায়, তা হচ্ছে ঢাকার সেই ঐতিহাসিক যানজট।
গাড়ী বাসায় রেখে যে হাটবো তাতে আরো ডাবল ভোগান্তি।
এসব নিয়ে প্রায়ই ভাবি কিছু একটা লেখা দরকার। এই পোষ্টটি লিখতে ১ মাস জাবত লিখছি আর মুছছি। আজ মোটামুটি রেডি করলাম।
আমার কিছু প্রস্তাব
ঢাকায় গণপরিবহন বলতে যা বোঝায়, তা নেই। বাস যা আছে বেশিরভাগ ছোট বাস, নিয়ম ছাড়া ফ্রীস্টাইল! যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতা বাসে বাসে ঘষাঘষি, ধাক্কাধাক্কি যাত্রী নামানোর সময় রাস্তার মাঝে স্লো করে নেমে যেতে বলা, যাত্রী রাস্তার মাঝে, আসপাস দিয়ে শা শাঁ করে মটর সাইকেল গাড়ী রিকসা। (সাইড করে নামালে পেছনের বাস ফস করে ওভারটেক, ফলাফল এই বাসের যাত্রী হারানো) রাজধানী ঢাকার অতি সাধাারণ চিত্র।
মেট্ররেল চালু হলে আবস্য কিছুটা নৈরাজ্য কমবে। তবে বাসের প্রয়জন ফুরবে না। আর ঢাকার যে জানজট।
ভোগান্তি কমাতে ঢাকা শহরে দরকার দোতালা বাস সার্ভিস। পৃথক বাস লেন ভিত্তিক একটি সার্ভিস।
সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রনে হলে ভাল হবে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্য কোন বাস থাকবে না। তারা ব্যাবস্থাপনা ও মনিটরিং করবে।
এই মনিটরিং, ক্যামেরা ভিত্তিক মনিটরিং। বাস দিবে পি পি পি ভিত্তিক বাস কম্পানী, বা ব্যাক্তি মালিক, মানসম্পন্ন দোতালা বাস সব নিয়ম মেনে যারা দিতে পারবে, তারাই লেন ভিত্তিক বাস সার্ভিস সদস্য হতে পারবে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বরাদ্দ হবে। বিআরটিসিও আসতে পারে নতুন দোতালা বাস দিতে পারলে।
থাকবে রাস্তায় দাগ দেয়া সম্পুর্ন পৃথক বাস লেন, এই লেনে অন্য কোন যানবাহন ঢুকবে না।
আমেরিকা সহ বেশিরভাগ দেশে রাইট ওয়ে ড্রাইভ। ট্রাফিক রাস্তার ডান দিকে। রাস্তার ডান দিকে বাস লেন।
পৃথক বাস লেন দরকার
বাংলাদেশে রাস্তার পরিমান খুবই কম ৯% মাত্র। থাকার কথা ২০-২৫%
এরপরও যা আছে সেটাই দক্ষতার সাথে সর্বত্তম সর্বচ্চ ব্যাবহার করতে হবে।
ঢাকার রাস্তা এমনিতেই জ্যাম। উন্নত দেশের ন্যায় প্রধান প্রধান রাস্তায় 'পৃথক বাস লেন' করা হলে মুল রাস্তার পরিমান কমে যানজট হয়তো আরেকটু বাড়বে, কিন্তু লেনে থাকা কোন বাস জামে পড়বে না। বাসযাত্রী সাধারন পাবলিক দ্রুত যেতে পারবে। গাড়ীওয়ালারাও বাসে যেতে উৎসাহি হবে।
ঢাকার সংকির্ন রাস্তায় বাস লেনের স্থানসংকুলান হবে?
নিশ্চই হবে। হতেই হবে। রাস্তার উপর বসা হকার, মুরগীওয়ালা মাছওয়ালাদের উঠিয়ে দিলে এমনিতেই বাস লেনের যায়গা হয়ে যায়। বাস স্ট্যান্ডের যায়গাও সমস্যা হওয়ার কথা না।
অনেক বাঘা বুদ্ধিজীবি বলছেন ঢাকার সব বাস উঠিয়ে দিয়ে ৬ টি কম্পানীকে দিলেই বাস নৈরাজ্য কমবে।
আমি মনে করি এটাও ভুল সিদ্ধান্ত।
বুদ্ধিজীবিদের কথামত নগর পরিবহনে ফিক্সড ৫-৬ টি কর্পোরেট জায়েন্ট কম্পানীকে চান্স দিলে তারা সরকারি দলের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেটেড মাফিয়া হয়ে ভাড়া লাগামহীন করেদিতে পারে। বাস লেন ও দোতালা বাস সার্ভিস আমার মতে ভাল একটি সমাধান।
তাই বাস লেনে একজন ১টি বাস দিলেও আগে আসিলে আগে পাইবেন ভিত্তিতে বরাদ্দ দিতে হবে। নির্ধারিত ৫ হাজার বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করা পর্যন্ত। কম্পানী বা ব্যাক্তি যেই আগে আসুক। বেশী আসলেই ভাল। প্রতিযোগতামুলক ভাবে ভাড়া কম থাকবে।
যাত্রা শেষে যাত্রীদের রেটিং দেয়ার ব্যাবস্থা থাকবে, মাস শেষে খুব কম রেটিং প্রাপ্ত বাস বা কম্পানী বাদ দিয়ে অপেক্ষমান নতুন বাস বা কম্পানীকে সুযোগ দিবে।
কার্ড ভিত্তিক মান্থলি বা উইকলি টিকেটে ভাড়া ডিসকাউন্ট থাকবে। ক্রেডিট কার্ড মোবাইল ব্যাঙ্কিং বা মোবাইল এপ ভিত্তিক ভাড়া পরিশোধ ব্যাবস্থা থাকলে ভাংতি পয়শার ভ্যাজাল দূর হবে। স্কুল ছাত্রদের স্কুল টাইমে টিকেট হাফ দামে থাকতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টদের হাফ ভাড়া দেয়ার দরকার নেই।
বাঘা বুদ্ধিজীবিদের পরামর্শে বাস লেনের কথা নেই। কোন শুনলাম না।
তারা শুধু শহরের সব বাস বন্ধ করে ৬টি বাস কম্পানীর মাধ্যমে চালাতে বলছে!
এতে নাকি ঠেলাঠেলি বন্ধ হবে! আমার তো মনে হয় ৬টা কর্পোরেট মাফিয়া তৈরি হবে। যাই করুক লেন ভিত্তিক করা উচিত কিন্তু কেউ লেনের কথা বলছে না।
আরো একটা বিপদ। ওদের কথায় সব বাস বন্ধ করে দিয়ে শুধু ৬টা কর্পোরেট বাস কম্পানীকে ব্যাবসার সুযোগ দিলে হঠাৎ লাখখানেক বাসশ্রমিক বেকার কর্মহীন হয়ে যাবে, তারা বিক্ষোভও ভাংচুর শুরু করে দিতে পারে। তাই প্রথমেই প্রচলিত বাসসার্ভিস বন্ধ করা ঠিক হবে না। দুটোই চলবে, পরে লেন ভিত্তিক বাস জনপ্রীয় হয়ে গেলে এমনিতেই প্রচলিত সার্ভিস দুর্বল হয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। বা অল্পসংখক লেনবিহীন বাস টিকে থাকতে খুব কম ভাড়ায় যাত্রী নিবে। পরে সরকার বা সিটি কতৃপক্ষ হুকুম জারি করে বন্ধ করবে, বা অবস্থা বুঝে।
নিউইয়র্কে টাইম স্কোয়ারের কাছে চলন্ত গাড়ী থেকে তোলা। সরু রাস্তায়ও বাস লেন। গাড়ী ঢুকে গেলেও সেকেন্ডের ভেতর বের হয়ে লেন ফ্রী করে দিচ্ছে। ছবি কার্টেসি জাহাংগির ভাই।
বাস লেনে চলাচল করতে বর্তমান বাস মালিকদের সহ অন্যান্নদেরও অফার দেয়া যায়। কর্পোরেট জায়েন্টরা আসলেও সমস্যা নেই,
তবে তাদের মনোপলি সুবিধা দেয়া যাবেনা। সব নিয়ম মেনে বিআরটিসিও লেনে আসতে পারে।
শুধু দোতালা নতুন বাস প্রশিক্ষিত গ্রাজুয়েট চালক সহ সকল নিয়ম মেনে যারা নতুন দোতালা বাস দিতে পারবে তারাই শুধু বাস লেনে চলতে পারবে। কোটায় ৬০% নারী চালক দিলে ভালহয়। কানাডা ও আমেরিকায় সিটি সার্ভিসে অনেক নারীচালক বাস চালাচ্ছে। সেই নারীচালকদের ভেতর কিছু বাংলাদেশীও দেখেছি।
দোতালা বাস কেন?
ঢাকায় খুব কম রাস্তা, বিপুল ঘনবসতি। বিপুল যাত্রী। ডাবলডেকার বাস দরকার। কারন এতে একটি বাসই রাস্তা কম দখল করে দুটি বাসের সমান শতাধিক যাত্রি বহন করতে পারবে।
বাসষ্টান্ডে বাস ১ মিনিট থামবে। ম্যাক্সিমাম দেড় মিনিট। অন্যকোথাও থামবে না। এর অন্যথা হলে ক্যামেরা ভিত্তিক অটো মনিটরিঙ্গে ১ মিনিট বিলম্বের জন্য জরিমানা হবে ১ হাজার টাকা। ২ মিনিট দেরি হলে জরিমানা সহ ড্রাইভার ১মাস সাসপেন্ড। প্যানেলে একাধিক ড্রাইভার ওয়েটিংএ থাকবে। বেকারের দেশে গ্রাজুয়েট ড্রাইভার অভাব হবে না।
মাথাভারি ৪ হাজার ২শত কোটি টাকার নির্মানাধিন BRT. Gazipur-Airport rapid bus service
এই মামুলি বাস লেন ভিত্তিক সার্ভিস করতে এক মাথাভারি এক প্রজেক্ট দেখলাম (Airport-Gazipur BRT Line)
গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট মাত্র ২০ কিলোমিটার রাস্তা, 20.5km rapid bus service. খরচ কত জানেন? ৪ হাজার ২শত কোটি টাকা।
অর্ধেক টাকা শেষ। কাজ, ১/৩ ও হয় নি। উদ্ভট উটের পিঠে স্বদেশ!
রাস্তায় দাগ দিয়ে দিবে সিটি কর্পোরেশন, বাস লেন আইন করে দিবে, লিখে দিবে বাস লেন। ইংরাজি মারানোর দরকার নেই বাংলায় লেখা থাকবে। বাকিটা করবে বাস মালিকরা।
সরকার বা সিটি কতৃপক্ষ কোন বাস কিনবে না।
সরকার বা স্থানিয় সরকার (সিটিকর্প) নিয়োজিত টিম ক্যামেরা ভিত্তিক মনিটরিং করবে। হাজার কোটি লাগে নাকি, শত কোটি কেন দু-চার কোটিতেই হয়ে যাওয়ার কথা। টাকার তো অভাব নেই, যা লাগে খরচ করবে করুক। কিন্তু সবকিছু স্বচ্ছ থাকতে হবে।
বাস লেন শুধু শাদা দাগ দিয়ে দিলেই হবে, কংক্রিট ব্লক দিয়ে আলাদা করার দরকার নেই। কোন গাড়ী বাস লেনে ঢুকবে না। বিপদে বা ভুলকরে ঢুকে পরলে ৫৯ সেকেন্ডের ভেতর সরে যাবে, নতুবা প্রতি মিনিটে বাস লেনে অবস্থানের জন্য ক্যামেরা ভিত্তিক অটো ২০০টাকা বড় গাড়ী ৪০০ টাকা জরিমানা হবে। গাড়ী আটকে নাটক করার দরকার নেই, জরিমানার টিকেট ইমেইল, sms ও বাসার ঠিকানায় যাবে। জরিমানা পরিশোধ না করলে প্রতিমাস ২০% বিলম্ব ফি সহ পরিশোধ করতে হবে। নতুবা পুন রেজিষ্ট্রশনের সময়ে মোটা অংকের বিলম্ব ফি সহ দিতে বাধ্য।
স্কুল বাস, বিশ্ববিদ্যালয় বাস, সরকারি-বেসরকারি স্টাফ বাস বা মিলিটারি স্টাফ বাস বাস লেনে ঢুকবে না। ঢুকলেই জরিমানা। অটো।
আমেরিকায় যেখানে সাইকেল লেন নেই সেসব রাস্তায় বাস লেনে বাইসাইকেল চলার অনুমতি আছে। সমস্যা হয় না।
বাস লেন ভিত্তিক বাস সার্ভিস রাস্তার এহেন ফ্রীস্টাইল নৈরাজ্য কমিয়ে আনবে
পথচারি বিড়ম্বনা
একসাথে এত বিপুল মানুষের চিন্তাধারা এত সংকির্ন হয় কিভাবে ভেবে পাই না।
ট্রাফিক আইন হচ্ছে মুলত শুধু মাত্র গাড়ীর জন্য ও গাড়ী চালকের জন্য।
কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের পর মনে হচ্ছে ঢাকার রাস্তার ট্রাফিক মুল সমস্যা বেপরোয়া ড্রাইভার নয়, হতভাগ্য পথচারিরাই।
ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য পথচারিদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে না, কোন গ্রাউন্ডেই হতে পারে না। বাংলাদেশের আইনে নেই। পৃথিবীর কোথাও এরুপ আইন নেই।
টিভিতে, পত্রিকায় সবাই বলছে দেখছি, ঢাকার মুল সমস্যা নাকি 'মানুষ ফুটওভার ব্যাবহার করছে না কেন'?
আমি মার্কিন প্রবাসি হলেও ঢাকার একজন গাড়ীওয়ালা-বাড়ীওয়ালা প্লাস একজন ড্রাইভার। এরপরও আমাকে হাটতে হয়। স্বল্প দূরত্বে আমি হাটতে পছন্দ করি। পথচারির কষ্ট আমি বুঝি।
আমি না জেনে, না বুঝে কিছু লিখি না। একটি লেখা লেখার আগে আমি প্রচুর স্টাডি করি। ফলে আমি যা লিখি তা স্পষ্টভাবে আমার সুচিন্তিত অবস্থান। জানি এটি একটি প্রতিষ্ঠিত নৈরাজ্য-অবহেলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। জানি অনেকেই বিরোধিতা করবে। কারো দ্বিমত যুক্তিযুক্ত হলে মেনে নিবো।
যে যাই মনে করুক, আমি কঠিনভাবে পথচারিদের জোড়পুর্বক ফুটওভার ব্যাবহারের বিরুদ্ধে।
রাস্তা পারাপারের জন্য চাই সহজ ওয়াইড জেব্রা ক্রসিং।
ঢাকার রাস্তা বিভাজক উচু কংক্রিট ডিভাইডার ও ডিভাইডার ও ফুটপাতের সব এন্টিট্যাঙ্ক ব্যারিকেড রেলিং উঠিয়ে দিতে হবে।
এত জনবহুল পথচারির দেশে ১% প্রাইভেট কারের নির্বিঘ্ন চলাচল সুবিধা করতে ৯৯% পথচারিকে বিপাকে ফেলছে। একটা রাস্তা পার হতে আধামাইল হেটে ফুটওভার নামক পাহাড় টপকাতে বলা ..
উচু রোড ডিভাইডারে তো আছেই, এরপর যুদ্ধক্ষেত্রের ন্যায় মোটা এঙ্গেলের এন্টিট্যাঙ্ক রেলিং! ফুটপাতেও উচু রেলিং ব্যারিকেড!
ফকিন্নির বাচ্চারা রাস্তায় নামলে বড়লোকের গাড়ীতে হাত পড়লে গাড়ী ময়লা হয়ে যাবে না? তাই মোটা এঙ্গেল-রড দিয়ে ঘিড়ে ফেলতে হবে রাস্তা ফুটপাত। এমনিতেই রাস্তা গাড়ীতে জ্যাম, এই সব লোহার আবর্জনা মানুষকেও জ্যামে আটকে ফেলেছে।
অসুস্থ চিন্তার কিছু উম্মাদ মানুষদের বুদ্ধি। গাড়ীতে চড়া, যারা ইহজনমে কোনদিনও ফুটপাতে হাটেনি তাদেরি বুদ্ধি।
সিফাউল্লাকে ভাড়া করে অকথ্য গালাগাল করাতে ইচ্ছা হয়।
কিছু ফুটপাতও উচু এন্টি ট্যাঙ্ক রেলিং, সামনে হাইজ্যাকার দেখলেও পালানোর উপায় নেই। রাতের কথা আর বললাম না।
২০১৬ তে আমার নিজের তোলা ছবি।
নিউইয়র্কে এত পথচারি, এত গাড়ী, অসংখ্য জেব্রাক্রসিং, এখনপর্যন্ত কোন ফুটওভার ব্রীজ চোখে পড়েনি। ডালাস বা অরল্যন্ডোতেও নেই, ঢাকার কাছের ব্যাঙ্কককেও দেখিনি।
বিভিন্ন দেশে ফুট ওভার ব্রীজ গুলো মূলতো যেখানে রেলপথ আছে, একাধিক রাস্তার সংযোগ, বেশী প্রশস্ত মহাসড়ক সেরকম ঝুকিপূর্ণ সেসব জায়গায় হয় / হওয়ার কথা। অথচ আমাদের দেশে কিছুদুর পরপর এই ব্যায় সাপেক্ষ এইসব ছাদওয়ালা ফুটওভার ব্রীজ করা হয় হচ্ছে কিছু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করতেই। আর উচু লোহার রেলিং দিয়ে রাস্তা পারাপার স্থায়ী ভাবে বন্ধ। ছাদ সহ ফুটওভার ব্রীজ করা হচ্ছে হকারদের বসানো সুবিধা করতে, কিছু হকার-চাদাবাজ বখাটেদের আড্ডাবাজির জন্যই।
সরকারের কবে এত দয়া হইলো যে হেটেচলা মানুষদের মাথায় ছাতা ধরবে?
বিপুল পথচারিদের বাধ্য করা হচ্ছে ফূটওভারে উঠতে। কিন্তু নিচে গাড়ীওয়ালাদের বেআইনি পার্কিং, হকার, রাস্তা দখল কতৃপক্ষের কাছে সমস্যা নয়। শুধু পথচারিরা রাস্তায় নামলেই সমস্যা। ছবি আমার নিজের তোলা।
শুধু ফুটপাতে নয়, রাস্তায় উপর হকার, দোকান, মাছ-মুরগী, পসরা নিয়ে ভ্যানগাড়ী দাড়করিয়ে অর্ধেক রাস্তা দখল করতে পারবে, গাড়ীওয়ালারা যাতেচ্ছভাবে দুই রো পার্কিং করে রাস্তা সরু করে ফেলতে পারবে। কেউ কিছু বলবে না।
শুধু পথচারি রাস্তায় নামলে খবর আছে। রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করা হলে তো ৫ পুলিশ মার মার কাট কাট করতে করতে ছুটে আসবে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে দল বেধে সাংঘাতিকরাও। এতবড় সাহস। ফুটওভার থাকতে রাস্তায় নামা, যানজট ও দুর্ঘটনার তোরাই তো বড় কারন।
পুরো রাস্তার মাঝে ব্যারিকেড, কেউ রাস্তা পার হতে পারে না, কিন্তু হকার রাস্তায় বসা, চালু রোডের দুই লেন দখল করে গাড়ী পার্কিং। কেউ কিছু বলছে না। শুধু মানুষ রাস্তা পার হতেগেলেই ম্যাজিষ্ট্রট সহ ৫ পুলিশ ছুটে আসবে।
রাস্তায় হকার দোকান, পসরা ভর্তি ঠেলাগাড়ী, দুই রো প্রাইভেট গাড়ী পার্কিং ভ্যানগাড়ি নিয়ে হকার এসব পুলিশ বা সাংবাদিক টকবাজদের চোখে পরবে না।
এমনিতেই তো যানজটে সব রাস্তা ঘন্টার পর ঘন্টা থেমে থাকে। তাই বলে পায়ে হাটা পথচারিদেরও থেমে থাকতে হবে?
ভারি সওদাপাতি-ব্যাগ নিয়ে আধা মাইল হেটে এরপর পাহাড় টপকাতে হবে? আর হকার গাড়ীওয়ালারা রাস্তার উপর পার্কিং করে যতেচ্ছ রাস্তা সরু করুক। কোন সমস্যা নেই। শুধু গাড়ীবিহিন একটা ফকিন্নির বাচ্চাও যাতে রাস্তায় নামতে না পারে, গাড়ীতে হাত লাগিয়ে নোংড়া করতে না পারে। রাস্তা পার না হতে পারে, ম্যাজিষ্ট্রেট সহ ৫টা পুলিশ লাগাও। ছিনতাই ধরতে ১ পুলিশ খুজে নাপেলেও সমস্যা নেই।
জ্যাম ও জটের কারনে ঢাকায় অতি ধীর গতির যানবাহন। বেশিরভাগ সময় থেমেই থাকে। ফুটওভার বা জেব্রাক্রসিং ছাড়াও মানুষ ফাকে ফাকে ইজি দ্রুত রাস্তা পার হতে পারে। আর রাতে ও ভোর সকালে রাস্তায় কোন গাড়ী থাকেনা। এরপরও রাস্তা পার হতে অকারন মাইল হাটা, উচু শিড়ি পর্বতারহন। দিনমজুরের শ্রমঘন্টা নষ্ট।
ঢাকায় আমাকে একবার গভীর রাতে অফিসের গাড়ী থেকে একটি বাসার কাছে নেমে বিপাকে পরেছিলাম। রাস্তার যাষ্ট ওপেরেই গলির ভেতর বাসা, কিন্তু পুরো রাস্তা ও ফুটপাত এন্টিট্যাঙ্ক ব্যারিকেড। আধা মাইল দূরে একটি ফুটওভার। আমার মত বলিষ্ঠ পুরুষও মধ্যরাতে ছাদওয়ালা ভুতুরে অন্ধকার ফুটওভারে উঠতে সাহস হয়নি। রাতে মহিলা বা অন্যান্নরা কিভাবে যাচ্ছে জানি না।
আলোচিত এয়ারপোর্ট সড়কে দুর্ঘটনায় বেশী হতাহতের আরেকটি বড় কারন ফুটপাত এন্টিমানুষ নামের এন্টিট্যাঙ্ক ব্যারিকেড। এই উচু রেলিঙ্গের কারনেই উম্মাদের মত ধেয়ে আসা বাস দেখেও পালিয়ে বাচতে ফুটপাতে উঠেযেতে পারেনি স্কুলগামি অপেক্ষমানরা।
এই উচু ডিভাইডার ইমার্জেন্সি সময়ে (অগ্নি দুর্ঘটনা, ভুমিকম্পে বা ভবন ধ্বসে) দ্রুত ইভাকুয়েশন বাধাগ্রস্থ করবে। রাস্তার ওপারে ছিনতাই হচ্ছে উচু রেলিঙ্গের কারনে এপারে পুলিশ বা জনতা তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। এই লৌহ নির্মিত আপদের এখুনি অপসারন দরকার।
ফুটওভার ব্রীজ থাকবে। হতে হবে ছাদবিহীন উম্মুক্ত ফুটওভার ব্রীজ। উম্মুক্ত আলোকিত থাকলে নিরাপদ বোধ আসবে।
ফুটওভার ব্রীজ ব্যাবহার হবে অপসনাল। নীচে বিভিন্ন স্থানে জেব্রাক্রসিং থাকবে। যে রাস্তাপার নিরাপদ মনে করবেনা সে ফুটওভার ব্যাবহার করবে। যানজটে থেমে থাকা অবস্থায়, রাতে বা ভোরে যখন রাস্তা বেশীরভাগ সময় রাস্তা যখন যানবাহন শুন্য, তখন পথচারিরা জেব্রা ক্রসিং দিয়ে বা যেকোন স্থান দিয়ে সরাসরি সতর্কভাবে রাস্তা পার হবে।
মানুষ গাড়ির অবস্থান ও গতি দেখেই রাস্তা পার হয়, মানুষ রাস্তা অতিক্রম কারনে কোন জানজট হয়েছে এমনটা কোথাও দেখিনি
সারা বিশ্বেই পথচারিদের সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার। ঢাকায় তো বিপুল পথচারি।
রেলপথ একটি ভাল সমাধান।
মেট্ররেল হলে, পৃথক বাস লেন হলে জানজট কিছুটা কমে যাবে সত্য।
কিন্তু আরো কিছু করার আছে।
বর্তমান বিদ্যমান রেলওয়ের সঠিক ব্যবহার করে মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারে।
জয়দেবপুর-ঢাকা নারায়নগঞ্জ চালু ব্রডগেজ ডাবল রেললাইন আছে। ঢাকা নারায়নগঞ্জ অংশটিও ডাবল ব্রডগেজ করে দিল্লির মত দোতালা ব্রডগেজ মেট্রসার্ভিস রেলওয়ে করে ১৫ মিনিট পর পর ট্রেনের ব্যাবস্থা করা হলে। ঢাকা থেকে জানজট নেই হয়ে যাবে।
দোতালা বগি আসার আগে একজিষ্টিং বগি দিয়েই জয়দেবপুর-বিমানবন্দর-তেজগা-্কমলাপুর নারায়নগঞ্জ বিরামহীন সিটি ট্রেন সার্ভিস চালু করা দরকার। যদিও কমলাপুর নারায়নগঞ্জ একটি দায়সারা একটি সার্ভিস আছে। লাইন ওয়ান ওয়ে। এটাকে টুওয়ে ব্রডগেজ লাইন করতে হবে।
এই রুটে চট্টগ্রাম-কমলাপুর পর্যন্ত টুওয়ে ব্রডগেজ লাইন হয়ে গেছে। সমস্যা হওয়ার কথা না।
টুওয়ে আছেই। তাই অন্যান্ন রুটে প্রচলিত সার্ভিস বিঘ্ন হবে না।
এরপরও সার্ভিস লাইন হিসেবে আরেকটি লাইন করলে ভাল। ১০০% নির্বিঘ্ন সার্ভিস দেয়ার জন্য।
জয়দেবপুর - নারায়নগঞ্জ ট্রেনরুট সফল হলে বাকি লাইন সংস্কার করে সবগুলো রুটে ইন্টার ডিষ্ট্রিক্ট হাই স্পিড ট্রেন সার্ভিস চালু করতে পারে ইজিলি।
ট্রেন সার্ভিস কম রাস্তা দখল করে জানজট বিহীন সবচেয়ে নির্বিঘ্ন ভাল সার্ভিস।
উন্নত দেশে দুরপাল্লার ট্রেন অনেক সুন্দর। ট্রেন ভাড়া বিমান ভাড়া প্রায় সমান, অনেকসময় ট্রেন ভাড়া বেশী।
এক কথায় যা দরকার -
১। পৃথক বাস লেন ও লেনে উচ্চমানের দোতালা সিটি বাস সার্ভিস।
২। পথচারিদের সর্বচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফুটপাথে ও রাস্তা পারাপারে এন্টিমানুষ নামের সকল এন্টিট্যাঙ্ক ব্যারিকেড অপসারন করতে হবে।
প্রতিটি সিগনেলে, ইন্টারসেকসন ও প্রয়োজনিয় স্থানে থাকবে ওয়াইড জেব্রা ক্রসিং।
ফুটওভার ব্রীজ থাকবে, তবে ছাদবিহীন উম্মুক্ত হবে। ব্যবহার হবে অপসোনাল। পথচারিরা জেব্রা ক্রসিং বা ফুটওভার যে কোনটা বেছে নিবে।
৩। জয়দেবপুর-বিমানবন্দর-তেজগা-্কমলাপুর নারায়নগঞ্জ বিরামহীন উচ্চমান সিটি ট্রেন সার্ভিস চালু করতে হবে।