মেলবোর্ন, বিশাল স্টেডিয়াম, স্বপ্নের এমসিজি। ২০সে মার্চ ২০১৫।
বিশ্বকাপ কোয়াটার ফাইনালে বাংলাদেশ খেলছে! ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে উজ্জিবিত বাংলাদেশ। লক্ষাধিক উল্লোসিত দর্শকে গ্যালারি উপচে পরছে। অনেক দর্শকদের হাতে লালসবুজে জাতীয় পতাকা। হঠাৎ পিন পতন স্তব্ধতা, এরপর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বিশাল স্টেডিয়ামে বেজে উঠলো আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গিত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” এরপর আবেগে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারি নি।
মেলবোর্ন স্টেডিয়াম, স্বপ্নের এমসিজি
বাংলাদেশ টেষ্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ১৫ বছর পুর্তি হল এই নবেম্বরে। এই পাওয়াটা এত সহজ ছিলনা।
বাংলাদেশ – দেশভাগের আগে শিক্ষাদিক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও বাংলা অঞ্চলটি সাহিত্য সংস্কৃতিতে অবিভক্ত ভারতের অন্যান্ন সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে প্রাচীন কাল থেকেই ব্যাপক অগ্রগামি ছিল। রবিন্দ্র-নজরুল বাদেও বাংলা ভাষায় যত সাহিত্য, কাব্য, পুথি, যাত্রা, নাটক, গান, কবিগান, আধ্যাত্তিক-মুর্সিদি গান, উপন্ন্যাস, গল্প, বই, কাব্য গ্রন্থ রচিত হয়েছ্ পৃথিবীর অন্য কোন বড় ভাষায় এত বিপুল সাহিত্য কন্টেন্ট রচিত হয়েছে কি না জানি না। বা বাংলা, বাঙ্গালী সিপাহি বিপ্লব ও ব্রিটিষ বিরোধী স্বাধীকার আন্দোলনেও ভারতবর্ষের অন্যান্ন প্রদেশ থেকে ব্যাপক অগ্রগামি ছিল, বোম্বাইয়া-পাঞ্জাবীরা বীরত্ত্বের (আসলে দালালী-চামচামির খেতাব) খেতাব পেত, আর বাংলা ছিল সুর্যসেন, নানাসাহেব, খুদিরাম ও সিপাহি বিদ্রোহের সুচনাকারি, বিদ্রোহ আর সংগ্রামের প্রতীক।
৪৭এ দেশভাগ হয়ে ভারত-পাকিস্তান। এর পরও পুর্ব পশ্চিম উভয় বাংলায়ই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। ফুটবলে বাঙ্গালী প্রাধান্য কিছু থাকলেও ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট জাতীয় দলে বাংগালীর সংখ্যা শুন্যে থাকা অব্যাহত থাকে। ওরা বলতো বাঙ্গালী আবার খেলা জানে নাকি?
বহু ত্যাগ তিতিক্ষা ও একসাগর রক্তের বিনিময়ে ৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হল। ৭২ এ শুন্য রাজকোষ নিয়ে সুরু করা স্বাধীনতাপক্ষ মাত্র ৩ বছরের মত সময় পেয়েছিল, তখন ক্রিকেট তো দুরের কথা পেটে ভাতই জুটে না। বিধ্বস্ত হার্ডিঞ্জ, ভৈরব ব্রিজ মেরামত করবে না চট্টগ্রাম বন্দর মাইনমুক্ত করে চালু করবে, খাদ্য আমদানি করবে। এরপর সবই হল, হার্ডিঞ্জ, ভৈরব ব্রিজ চালুহল দ্রুতই, মাত্র ২ বছরেই মার্কিন ঠিকাদারের দ্বারা গাবতলী, নয়ার হাট ও কাঁচপুর এই ৩টি বৃহদাকার সেতু তৈরি হল। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ছিলনা বললেই চলে, খাম্বার মাধ্যমে রেডিও রিলে মারফত ভাঙ্গাচোরা টেলিযোগাযোগে এক্সচেঞ্জে বৈদেশিক ট্রাঙ্ককল করতে হত। গরিব দেশে ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র বসানো গরিবের ঘোড়া রোগই। এরপরও দুই দুটি ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশটি, বেতবুনিয়া কেন্দ্রটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩বছরেই চালুকরা হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাথমিক সুচনা সেখানেই। চট্টগ্রাম বন্দর মাইনমুক্ত করে চালু করতে ২ বছর লেগেছিল রুশ নৌবাহিনীর। ২ বছরে মাইন দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছিলেন ডজন খানেক অকুতভয় সোভিয়েট নাবিক, পতেঙ্গায় এখনো সেই অকুতভয় বীর সোভিয়েট নৌসেনাদের সমাধী আছে। সেসময়কালেই ফৌজদারহাটে তৈরি হয়েছিল দেশের প্রথম মিলিটারি একাডেমী। কিন্তু তখনো বিপুল সংখক সেনা সহ ৪ লক্ষ বাংগালী তখনো পাকিস্তানে আটক। ৩বছরের বেশী সময় আটকে জিম্মি করে রেখেছে। ১৯৫ যুদ্ধাপরাধী পাকি সেনা অফিসারের সাথে বিনিময় করে চড়া মুল্য দিয়ে ৪ লাখ আটক বাংগালী ছাড়িয়ে আনা হয়।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে স্বাধীন দেশটি ইতিমিধ্যে উঠে দাড়াচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত হয় আবাহনী ও ব্রাদার্সইউনিয়ন ক্লাব, ব্যাপক জনপ্রীয় হতে থাকে ফুটবল লীগ, একই সাথে ক্রিকেট লিগ, আবাহনী মোহামডানের সাথে আজাদ বয়েজ, এজাক্স, সুর্যতরুন ... ইত্যাদি
এরপর মুজিব হত্যা। মুজিব হত্যাকারি ও তার বেনিফিসারিরা পালাক্রমে ২১ বছর রাজত্ত্ব চালায়। অনেক সুযোগ পেয়েও বাংলার ক্রিকেটকে বিশ্ব দরবারে আনার তেমন কোন চেষ্টা করেনি বা পারেনি। সুধু পাকিস্তানের জয়লাভে লাফিয়েছে।
১৯৯৬এ স্বাধীনতাপক্ষ আবার ক্ষমতায়। ইতিমধ্যে সিমিত ভাবে ডায়ালয়াপ ইন্টারনেটের সুচনা, শৈরাচারের একক কুক্ষিগত মোবাইল ফোন উম্মুক্ত করে তিন কম্পানীকে বিনামুল্যে লাইসেন্স দেয়া হয়। যুগান্তকারি অনুমতি দেয়া হয় ৩ টি বেসরকারি টেলিভিশনকে। এসবের প্রভাব হয়েছিল মারাত্ত্বক। কর্মসংস্থান বাড়তে থাকে প্রতিটি সেক্টরেই। ক্রীড়াক্ষেত্রে কর্পোরেট স্পনসারিং সক্ষমতা বাড়তে থাকে। তখন ছিল ফুটবলের জয়জয়কার। ক্রিকেট বোর্ড অনেক ছোট। নতুন সরকার এসেই ক্রিকেট বোর্ডকে বেশী বাজেটে অধিক ক্ষমতা দিয়ে ঢেলে সাজায়, টেলিকম সহ কর্পরেট জায়েন্টরা এগিয়ে আসতে থাকে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হন উচ্চাকাংখি ডায়নামিক রাজনীতিবিদ সাবের হোসেন চৌধুরী।
এরপরের ইতিহাস সবারই জানা। ব্যাপক উদ্দিপিত জাতীয় ক্রিকেট দল। ১৯৯৭ সালের ১২ই এপ্রিলের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্ব আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে বাংলাদেশ। এর আগেও ৯৩এ নায়রোবিতে জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও হেরে গিয়েছিল নান্নু বুল্বুলরা। ২২টি দল নিয়ে ২৪ মার্চ ১৯৯৭ শুরু হওয়া সেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই পর্বে ফাইনালে খেলেছিল শক্তিশালি কেনিয়া আর উজ্জিবিত বাংলাদেশ। এবারও কি নায়রোবির ট্রাজেডি পুনরাবৃত্তি হবে?
১২ এপ্রিল ১৯৯৭ বৃষ্টি বিঘ্নিত কুয়ালালামপুরে টসে জিতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকরাম কোন দ্বিধা ছাড়াই ফিল্ডিং নিলেন। কিন্তু তেমন সুবিধা হলনা, নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে কেনিয়া তুলেফেল্লো ২৪১ রানের বিশাল স্কোর। টিকালো ১৪৭ অধিনায়ক মরিস ওদুম্বে ৪৩ রান। তারপর বৃষ্টি। খেলা বন্ধ। পরদিন নিয়ম মাফিক ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জন্য ২৫ ওভারে ১৬৬ রানের টার্গেট ধার্য করা হয়। বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বিপত্তি। সুজি'র করা ওভারের প্রথম বলেই (নাঈমুর রহমান) দুর্জয় শূন্য রানে বোল্ড। পরে একটু সামলে উঠে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১১৮। কিন্তু অধিনায়ক আকরাম ঝুকি নিলেন খালেদ মাসুদ পাইলটের বদলে উইকেটে পাঠালেন বোলার সাইফুল ইসলামকে। মাত্র ৫ রান যোগ হবার পর বাংলাদেশের রান যখন ১২৩ তখন আবার বিপদে টাইগার সাবকরা, ৬ উইকেট তখন মাত্র ১২৩ রান। এবার ৭ বলে ৫ রান করা এনামুল আউট। কঠিন বিপদে ব্যাট হাতে ক্রিজে আসলেন উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ পাইলট। সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে বিধস্ত অবস্থা সামাল দেবার চেষ্টা চালান পাইলট। কিন্তু দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় আবার সেই আসিফকরিমের আঘাত। ১৩ বলে ১৪ রান করে ওদুম্বের কাছে ক্যাচ দেন সাইফুল। ১৩৯ রানেই বাংলাদেশের ৭ উইকেটের পতন। এরপর সূজনও টিকতে পারলেন না। ৫ বলে ৫ রান করে ওদুম্বের বলে ওটিয়েনোর ক্যাচে ধরা সূজন। বাংলাদেশের রান তখন ৮ উইকেটে ১৫১। জিততে দরকার আরো ১৫ রান। হাতে আছে মাত্র দুই উইকেট। সেদিন রোজার মাসে ইফতারের আগে সেই উত্তাল বিকেলটা অনেকেরই মনে থাকার কথা। সারা বাংলাদেশ তখন স্তব্ধ হয়ে রেডিওতে খেলার ধারাবিবরনি শুনছে। কোন স্পন্সার এগিয়ে না আসাতে মালয়িরা অবহেলা করে লাইভ টেলকাষ্ট করে নি।
চরম উত্তেজনা.. আতাহার আলী যেহেতু ব্যাট করার মত অবস্থায় নাই, তাই একটি উইকেট পরলেই ম্যাচ জিতে যায় কেনিয়া। ২৪.৫ ওভারে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ তখন ১৬৫ রান। স্ট্রাইকিংয়ে পাইলট। অপর প্রান্তে হাসিবুল হোসেন শান্ত। গোটা বাংলাদেশ কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠের সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে তাকিয়ে। শেষ বল চলছে! মাত্র একটি রান দরকার! নইলে সুধু পরাজয় না, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নেরও মৃত্যু। চরম স্বাসরুদ্ধকর একটি মিনিট। পাইলট ব্যাটটা চালিয়ে চোখবন্ধ করে দৌড়, একরান হয়ে গেল! বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ। দেশকে আনন্দে ভাসিয়ে দিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হাতে বাংলাদেশ। সেই সাথে বহু আকাংখিত স্বপ্নের বিশ্বকাপে টাইগার সাবকরা।
আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নিয়মমাফিক ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ওয়ান্ডে স্ট্যাটাসও পেয়ে যায়। আইসিসি ট্রফির ফাইনালে আর কাপ নিয়ে পরদিন ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের সকালে দেশে ফিরেছিল আকরাম বাহিনী। গোটা বাংলাদেশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেই সাফল্যে তখন এক হয়ে গিয়েছিল। শেরে বাংলা নগরে সংসদ ভবনের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে বীরের সংবর্ধনা দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তারপর গোটা রাজধানী জুড়ে চলেছিল বিজয় মিছিল। ট্রাকের উপর বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যাতা অর্জনকারি জাতীয় দলের ক্রিকেটারগণ।
তারপর ইংল্যান্ডে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলছে। প্রথম খেলাতেই তৎকালিন অনেকের সাধের পাকিস্তানকে ধরাসায়ী করে বিশ্বকাপে নবাগত শক্তি বাংলাদেশ। তখনো কিছু নৈরাজ্যবাদি এদেশী পাকি সমর্থক এই বিজয় মেনে নিতে পারেনি। মেনে নেয় নি। ভারতীয় একটি ফান পত্রীকার অনুমান ভিত্তিক খবরেরসুত্র ধরে তারা এই গৌরবময় বিজয়টিকে পাতানো বলেছিল। যদিও আইসিসি পরে তদন্ত করে ‘কথিত ম্যাচ পাতানো দাবি’ সম্পুর্ন নাকোচ করে দিয়েছিল। কেউ জেনেশুনে নিজ দেশের গৌরব সম্মান অস্বীকার করে? এই মীরজাফরের দেশে এসবও দেখতে হয়েছিল। বাংলাদেশ টেষ্টমর্যাদা পাওয়ায় দেশের একটা বড় উপকার হয়েছে। এদেশে পাকিপ্রেমী কুলাঙ্গারদের দৌরাত্ত্ব প্রায় সম্পুর্ন বন্ধ হয়েছে। এইসব পাকি কুলাঙ্গারদের কুৎসিত উল্লাশে খেলার সময় টিভিরুমে বসে থাকার উপায় ছিলনা।
এই নৈরাজ্যবাদি কুলাঙ্গাররা দেশের টেষ্ট স্ট্যটাস আনাতেও অসন্তুষ্ট ছিল।বলছিল - কি দরকার ছিল এত তারাতাড়ি .. .. “খেলা বুঝেনা আবার টেষ্ট ষ্টেটাস নিছে .. বিশ্বকাপে লোক হাসাইতে যাবে ..!! পরে বাংলাদেশ টিম কয়েকটি খেলায় হেরে যাওয়াতে অনেক ব্যাংগ করা হয়েছিল। পত্রিকায় বেঙ্গ করে কার্টুনও ছাপে।
অতচ ব্যপক রাজনিতিক লব্বিং ও ICC প্রেসিডেন্ট ডালমিয়াকে ম্যানেজ করে Test status নেওয়া না হলে তালিকায় এক নম্বর প্রাপ্য কেনিয়া তা পেয়ে যেত। আমরা ক্রিকেটে ২০-২৫ বছর পিছিয়ে পরতাম। কেনিয়ার মত পথে পথে ঘুরতাম। এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ক্ষেত্র বিসিবির অবকাঠামো কত শক্ত, ক্রিকেট অর্থনীতি এখন কত বিশাল ...!! কত নতুন তরুন ক্রিকেটার বেরিয়ে আসছে!
সেই কেনিয়া এখনো টেষ্ট স্ট্যটাস না পেয়ে পথে পথে ঘুরছে, শত লবিঙ্গেও ফল হচ্ছে না। ক্রিকেট হতাসা থেকে খেলার মানও পরতে থাকে। তখন এইসব নৈরাজ্যবাদি কুলাঙ্গারদের কথায় কান দিলে বাংলাদেশের অবস্থাও কেনিয়ার মত হত।
গত বিশ্বকাপে বিমাতাসুলভ আচরনে ICC সভাপতি থেকে বাংলাদেশ পদত্যাগ করাতে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি অনেক বেড়েছে, মাফিয়া শ্রীনিবাসনের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব হয়েছে, এখন একদম শেষ হয়েগেছে। পাকি ও ভারতকে বাংলা ধোলাই দেয়ার পর বাংলাদেশের অবস্থান এখন যেকোন সময়ের চেয়ে উচ্চে। Ranking এ পাকিস্তানের চেয়ে একধাপ উপরে।
এখন টিভিরুমে আর কেউ পাকি জয়ে প্রকাশ্যে উল্লাস করার সাহস পায় না।
সেই দিনটির স্মৃতিচারন - খালেদ মাসুদ পাইলট
২০ বছর আগের সেই স্মৃতি কতটা আবেগে ভাসায় আপনাকে?
: ২০ বছর আগের কথা সাধারণত অনেকের সেইভাবে মনে থাকে না। কিন্তু আমাদের জন্য সেই দিনটি, সেই সফরটি ভোলা অসম্ভব। আমার মনে আছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর সেবার হয়ে উঠেছিল যেন বাংলাদেশেরই একটা অংশ। আমরা যে হোটেলে উঠেছিলাম সেই হোটেলে অনেক বাংলাদেশি কাজ করতো। আশেপাশের শহরেও অনেক বাংলাদেশি ছিল। সবাই এসেছিল আমাদের খেলা দেখতে। শুনেছি খেলা দেখতে আসায় কেউ কেউ চাকরিও হারিয়েছিলেন। হোটেল থেকে শুরু করে মাঠ পর্যন্ত মনে হয়নি দেশের বাইরে আছি। এটিই ছিল আমাদের স্বপ্ন জয়ের পথে বড় অনুপ্রেরণা, অনেক বড় শক্তি। জয় নিয়ে দেশে ফিরে আসার পর সেবারই বুঝতে পারলাম কত মানুষ ক্রিকেটকে ভালোবাসে, আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে ক্রিকেটের জন্য ভালোবাসার চেয়ে দেশকে কতটা ভালোবাসে সেটাই প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ঢাকায় ফিরে এত মানুষ দেখে ভয়ই পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছে আমাদের গাড়ির নিচে পড়ে যেতে পারে দুই একজন। এরপর যখন মানিক মিয়া এভিনিউতে সংবর্ধনাতে যোগ দিলাম, মঞ্চের পিছন থেকে শুধু পা দেখা যাচ্ছিল। যখন সামনে আসলাম তখন দেখলাম মানুষ আর মানুষ। সত্যি এই দিনটি ভোলার নয়। আমাদের ক্রিকেটের পথ চলার আবেগতো সেই দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সেদিন ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার চারা রোপণ হয়েছিল। সেই জয়ই বলবো আজকের বাংলাদেশের ক্রিকেট।
প্রশ্ন: সেবার কতটা আত্মবিশ্বাস ছিল যে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারবেন?
খালেদ মাসুদ: আসলে সেবার প্রতিটি ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভাগ্যও আমাদের সঙ্গে ছিল। শুরু থেকেই আমাদের বিশ্বাস ছিল এবার আমরা কোয়ালিফাই করেই দেশে ফিরবো।
সেমিফাইনালের আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে বৃষ্টির কারণে আমরা হারতে বসেছিলাম। আকরাম ভাই ৬৮ রানে অপরাজিত থেকে দারুণ এক ইনিংস খেলে জয় এনে দিলেন।
ফাইনালে শেষ ওভারে প্রয়োজন ১১ রান। আমি আর হাসিবুল হোসেন শান্ত ক্রিজে। আমি প্রথম বলেই ছয় মারলাম। শেষ বলে শান্ত ব্যাট হাতে। ও তখন নতুন। আমরা অনেকক্ষণ কথা বললাম। বললাম শান্ত যা হবার হবে, বল যেখানে লাগুক দৌড় দিবি। আমি অন্যপ্রান্তে আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম। বলটা সম্ভবত পায়ে লেগেছিল। সেটি দেখার সময় ছিল না। আমরা দৌড়ালাম। সেই দৌড় থামলো না। জয়ের আনন্দে আমরা গোটা মাঠ দৌড়েছি। সঙ্গে মাঠে আসা বাংলাদেশের দর্শক আর সংবাদিকরাও। বলে বুঝাতে পারবো না, এত ক্লান্ত হওয়ার পরও আমাদের দৌড়ানো থামছিল না। ট্রফি নিয়েও একই কাজ করেছি। আমরা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলাম। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা টেস্ট মর্যাদা পেয়েছি। আজ বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মতো দল হওয়ার।
প্রশ্ন: জয়ের পর কীভাবে আনন্দ ভাগাভাগি করেছিলেন?
খালেদ মাসুদ: জয়ের পর আমাদের একেক জন উপহার দিচ্ছিল রিঙ্গিত (মালয়েশিয়ান মুদ্রা)। কেউ চিকিৎসক কেউ চাকরি করে, বোর্ডের সভাপতি এমন কেউ বাদ নেই যারা আমাদের মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত উপহার দেননি। তখন মালয়েশিয়া আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত দেশ। তাই জয়ের আনন্দে সবাই চিন্তা করলো অনেক কেনাকাটা করবে। হঠাৎ খবর এল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ফোন দিয়েছেন। আমিও ডিভিডি প্লেয়ার কিনি। ছোট্ট একটি বিমানে আমরা বাংলাদেশে আসবো। কিন্তু সবার সঙ্গে এত জিনিস কার্গোতে জায়গা হবে না। তাই বাসে যেমন সিটে মালামাল রাখে আমরা বিমানেও টিভি থেকে শুরু করে সব রাখলাম। আকাশেই উড়ছি না, যেন বাসে সফর করছি! আমরা পাইলটের সঙ্গে ককপিট পর্যন্ত চলে গিয়ে ছবি তুলেছি।
প্রশ্ন: এই স্মৃতিগুলো নতুন প্রজন্মকে জানাতে বিসিবির উদ্যোগ আশা করেন?
খালেদ মাসুদ: আমরা স্বাধীনতা, দেশের, পৃথিবীর ইতিহাস পড়ি। স্কুলে পড়ানো হয় কেন? যেন আমরা দেশকে ভালোবাসতে পারি, জানতে পারি। তেমনি ক্রিকেটের এসব ঘটনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে বই আকারে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের ক্রিকেটের প্রতি আরো ভালোবাসা বাড়বে সবার। তারা জানবে কীভাবে আজ ক্রিকেটে এতটা পথ এল। তাদের দেশাত্মবোধটাও বাড়বে। মোহাম্মদ রফিক আমাদের সেরা স্পিনার সেই সময়ের। তখন তার পাশেতো কেউ ছিল না। নিজের প্রচেষ্টাতে এত কিছু করেছেন।
কতজন ক্রিকেটার ভালোভাবে জানেন মোহাম্মদ রফিকের অবদান কী?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:২৯