somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাইরোবির সপিংমলে হামলা, আমাদেরও সতর্ক হতে হবে

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু দিন আগে (21-9-13) কেনিয়ার নাইরোবি শহরের একটি অভিজাত জনবহুল সপিংমল ওয়েষ্টগেইট এ একটি ভয়াবহ সন্ত্রসি হামলা হয়। বিকেলে পিক টাইমে ১০-১৫ জন সন্ত্রাসি ভারি অস্রসস্ত্র নিয়ে ভবনটিতে ঢুকে পরে। এরপর নির্বিচারে লোকজনদের উপর গুলি চালাতে থাকে। তারা আগেই ৪ তালা সপিং সেন্টারের সবগুলো বহির্গমন পথ বন্ধ করে দেয়। অল্প কিছু লোক অবস্য তার আগেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। ৪-৫ দিন অবরুদ্ধ থেকে শতাধিক নিহত হওয়ার পরও আমাদের মিডিয়াতে অতি সামান্যই প্রাধান্য পেয়েছিল।

যেভাবে শুরু
মুখোশধারি ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রসি গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভবনটির প্রধান গেট দিয়ে ঢুকে পরে। ভেতরে দোকানে ও লবিতে এলোপাথারি গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে থাকে


যেভাবে খুনে সন্ত্রাসিরা শপিংমলে তান্ডোব চালিয়েছিল, নৃশংস ভাবে শতাধিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল।

তারা নির্বিচারে যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই গুলি করেছে। এজাবৎ প্রাপ্ত তথ্যে সন্ত্রাসিরা পার্শবর্তি সোমালিয়ার আলকায়দার সহযোগি আল-সাবাব মৌলবাদি, তারা ভাঙ্গা ইরেজিতে কথা বলছিল। তাদের সাথে থাকা স্মার্টফোনে কিছুক্ষন পরপর টুইট করছিল। প্রথম দিন কিছু মুসলিমকে ডেকে প্রধান গেট দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল।
এই আত্নঘাতি জঙ্গিদের মুলত কোন দাবি ছিল না। কাউকে জিম্মি করার ইচ্ছেও ছিলনা। কোন নিগোসিয়েশনের চেষ্টা করেনি। কাজ ছিল সুধু খুজে খুজে খুন করা, মহিলা কেন .. শিশু বাচ্চারাও রেহাই পায় নি।



সিসিটিভি তে ধরা পরা কয়েকজন খুনি .. পৈশাচিক হাসি!




নৃশংস! ফুড কোর্টের দোকানি, পরিবার-পরিজন সহ খেতে আসা লোকজন আসবাবের নীচে ঢুকেও বাচতে পারেনি। আহতদের আর্তনাদ!


মৃত্যুর আগে সঙ্গিকে নিজের পিঠ দিয়ে গুলি ঠেকানোর চেষ্টায় জড়িয়ে ধরেছিল সপিং এ আসা এক যুগল



গুলিবর্ষনের মুখে অনেকে এসির ডাক্টিঙ্গের ভেতর দিয়ে বের হয়ে আসে


জিম্মি মুক্ত করতে পরে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। সেনাবাহিনীর দেখা পেয়ে বেপরোয়া ভাবে জিম্মিদের দিকে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে থাকে, বোমা বিষ্ফোরন ঘটায়। কিছু জিম্মি পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকে। নিরুপায় কেনিয় সরকার ইসরাইলি কমান্ডোদের তলব করে। দ্রুতই একদল ইসরাইলি কমান্ডো চলে আসে কিন্তু তারা কোন অপারেশনে অংশগ্রহন করেনি, সুধু টেকনিক্যাল ও ইন্টেলিজেন্স সহায়তা দেয়।





আবদুল হাজির দল ঢুকছে মৃত্যুপুরিতে ...


পিলারের আড়ালে লুকিয়েও গুলির হাত থেকে বাঁচতে পারেনি শিশুটি


পুলিশ অফিসার আবদুল হাজি, পিস্তল হাতে কাভার দিয়ে বের করে আনছেন একজনকে

অকুতভয় কয়েকজন সাদা পোষাকে পুলিশ বিপদজনক অভিযান চালিয়ে প্রথমেই অনেককে বের করে আনতে সক্ষম হয়।
ছবিতে এই চেক শার্ট পরা লোকটির নাম আবদুল হাজি। নায়রোবি সিটি পুলিশ আফিসার। সেনা বাহিনীর কমান্ডোরা যখন হিমসিম খাচ্ছিল, ভেতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিলনা, তখন এই আবদুল হাজি একাই ভেতরে ঢুকতে রাজি হয়। তার সাহসি ইচ্ছা তার সহকর্মিদেরও অনুপ্রানিত করে তার দুই সহকর্মিও তার সাথে মৃত্যুপুরিতে ঢুকতে ইচ্ছা প্রকাশ করে। আবদুল হাজিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ভেতরে ঢুকতে বলেছিল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা, কিন্তু সে রাজি হয় নি। হাজি বলেছিল এতে মুভমেন্ট, ক্ষিপ্রতা কমে যাবে। হাজি খুব সন্তর্পনে ভেতরে ঢুকে এক অস্ত্রধারি সন্ত্রাসিকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে টেবিলের নীচে লুকিয়ে থাকা একটি পরিবারকে নিরাপদ পথ দেখিয়ে বের করে আনে। এভাবে আরো অনেককে বের করে আনা হয়।


গ্রেনেডে আহত একজনকে বের করে আনা হচ্ছে




গো ...গো .. কিপ ইয়োর হেড ডাউন ..



মৃত্যুপুরি থেকে ফিরে আসার আনন্দাশ্রু

দুঃসাহসি পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল হাজি কেনিয় গনমাধ্যমের কাছে রিতিমত সুপার হিরো তে পরিনত হয়েছিল। যদিও আমাদের দেশে কেউ সুপার হিরো হতে পারে না। কিছু একটা ঘটলে সেটাকে 'সাজানো ঘটনা' বলার প্রতিযোগিতা সুরু হয়ে যায়।
চান মিয়া ১০০ ফিট পানির নীচে নিজের লাইফ লাইন খুজে পাওয়া বাসে বেধে নিজের জীবনের গুরুতর ঝুকি নিয়েছিলেন, রানাপ্লাজায় কায়কোবাদ, খায়েররা নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে শাহিনাকে উদ্ধার করতে ড্রিল মেশিন নিয়ে ৪০ ফুট নীচের পাতালে নেমেছিল। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল অকুতভয় কায়কোবাদ।
আমারা তাকে সেই পরিমান সম্মান দেইনি, বরং রানা প্লাজার লাশ লুকানো হচ্ছে বলেছি, রেশমা ঘটনাও সাজানো বলেছি। পিলখানায় নানক একাই ঢুকেছিল একটি সাদা পতাকা হাতে নিয়ে, কেনিয়ায় আবদুল হাজির কাছে অস্ত্র ছিল, সাথে ছিল দুই-তিনজন সসস্ত্র সহকারি। নানকের সাথে কেউই ছিলনা এরপরও নানককে সুধু 'সাজানো'ই বলা হয় নি, খুনিদের সহযোগী বলে অপবাদ দেয়া হয়েছিল।
কেনিয়াতে হাজি সুপার হিরো বলে সম্মান পেয়েছে, কারন সে দেশটি আমাদের মত মুক্তিযুদ্ধ পন্থি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধি বলে বিভক্ত না, সে দেশে আমাদের দেশের মত রাজাকার প্রতিপালন করা হয় না। তাই সে দেশে আবদুল হাজিরা বিনা বিতর্কে সুপার হিরো।


পরাজিত হওয়ার আগে সন্ত্রাসিরা বিল্ডিংটি উড়িয়ে দেয়ার জন্য বিষ্ফোরন ঘটায়, এতে ভবনটির একটি অংশ ধসে পরে।


৫ দিন পরেও নিরাপদ হয়নি ওয়েষ্টগেট সপিংমল, লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খোজে সৈনরা।

কেনিয় সামরিক বাহিনী কয়েক বার সপিংমলটি জঙ্গি মুক্ত নিরাপদ ঘোষনা করার পরও ভেতর থেকে জংগিদের চোরাগুপ্তা গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
ওয়েষ্টগেট সপিংমলটিতে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ছিলনা বললেই চলে, অপর্যাপ্ত cctv তাও বেশির ভাগ ছিল বিকল। cctvর নিয়ন্ত্রন ভবনটির ভেতরে হওয়ায় কোন কাজে আসে নি। নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালানোর সময় জংগিদের অবস্থানের ব্যাপারে অন্ধকারেই ছিল পুলিশ।

আমাদেরও সতর্ক হতে হবে
মুম্বাই গ্রান্ডতাজ হোটেল হামলা, রাশিয়াতে স্কুলে চেচেন হামলা ও সম্প্রতি নায়রোবি ওয়েষ্টগেট সপিং মলে হামলা থেকে আমাদেরও শিক্ষা গ্রহন করা উচিত।
বসুন্ধরা সহ দেশের বড় বড় সপিংসেন্টার, সংসদভবন, বাইতুলমকারম মসজিদ ও বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন ভবনের cctv নিয়ন্ত্রন ভবনের বাহিরে একটি গোপন যায়গায় করতে হবে। ভেতরে সাদা পোষাকে দোকানির ছদ্দবেশে নিরাপত্তা কর্মি থাকা বাধ্যতামুলক করতে হবে, তাতে পুরনো পদ্ধতির তার যুক্ত যোগাযোগ থাকবে যাতে ভবনে জ্যামার দিয়ে সন্ত্রসিদের মোবাইল বা বেতার যন্ত্র অকেজো করা হলেও নিরাপত্তা স্টাফদের যোগাযোগ অটুট থাকে। প্রতিটি ফ্লোরের অন্তত একটি দেয়াল গোপনে চিহ্নিত করে রাখতে হবে, যে দেয়ালটি রিয়েল অপারেশনের সময় বিষ্ফোরনে উড়িয়ে দিয়ে কমান্ডো প্রবেশ করবে ফায়ারব্রীগেডের লিফটার দিয়ে।

আমাদের অবস্য একটি প্রশিক্ষিত এন্টি টেরোরিষ্ট স্কোয়ার্ড আছে, 'সোয়াট' মার্কিন সহযোগিতায়। আরো দরকার।

ছবির কপিরাইট: - রয়টারস, সানডে টেলিগ্রাফ ও এসোসিয়েটেড প্রেস। কিছু গুগল থেকে প্রাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪
১৬টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×