বক্সিবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত অস্থায়ী জজ আদালতে বিদ্রোহি বিডিআরদের বিচার চলছে। অনেক গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন। নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, তৎকালিন পুলিশের আইজি সহ অনেকে। তাদের আদালতে দেয়া বক্তব্য পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
২৬/৭/১২ তারিখে মানবজমিনে ছাপা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট
তাদের বেশিরভাগ মন্তব্য আমার আলোচিত দুটি পোষ্টের মুল বক্তব্য সমর্থিত হয়েছে।
ময়না তদন্তকারি ডাক্তার ডাঃ আ খ ম শফিউজ্জামান খায়ের পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট পেশ করেছেন। যা ২৬/৭/১২ তারিখে মানবজমিনে বিস্তারিত ছাপা হয়েছে, অন্যান্ন পত্রিকায় সংক্ষেপে খবরটি এসেছে।
আদালতে দাঁড়িয়ে ডাঃ শফিউজ্জামান বলেন ডিজি মেজর জেনারেল সাকিলের লাশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত ছিল। আগে শতাধিক পোষ্টমর্টেম করলেও এত ক্ষতবিক্ষত লাশ নাকি তার চাকুরি জীবনে একটিও দেখেন নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্টিটিতে মোট ছয়টি গুলি বিদ্ধ হয় বলা হয়। বুকে-পেটে চার টি, গলা ছুঁয়ে থুতনিতে একটি, হাতে একটি।
তাকে বেওনেট চার্জ করা হয়নি।
তার শরীরে বেয়নেট, ছুরিকাঘাত বা অন্য কোন অস্ত্রের আঘাত ছিল না বলা হয়েছে। মাথায়ও কোন গুলি বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করেছেন খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়েছিল, যদিও এর সমর্থনে গুলির ক্ষতস্থানে কর্ডাইটের (গুলির বারুদ) অস্তিত্ত পাওয়া গেছে কিনা বলা হয়নি।
সাকিলের দেহ সবার শেষে পাঁচদিন পর পাওয়া গিয়েছিল। ফোকাস বাংলার তোলা ছবিটি দেখেছি, সাকিলের কম্পোজড হয়ে যাওয়া বিভৎস মৃতদেহটি মোটেই ক্ষতবিক্ষত মনে হয়নি। ডান বুক ও মাঝ বুকের নিচে দুটি গুলির দাগ, লাল হয়ে আছে দেখা যায়, ছিদ্র বোঝা যায় না, হয়তো মৃতদেহ ফুলে যাওয়ার কারনে, বাকি আঘাতগুলো কম্বলে ঢাকা হয়তো।
বুকে-পেটে গুলি করা হলেও ভাইটাল স্থানে মানে মাথায় বা বুকের বাঁ পাসে হার্ট বরাবর কোন গুলির দাগ নেই। বলা হয়েছে খুব কাছে থকে গুলি করা হয়েছিল, ভারি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করা হলে গুলির ক্ষতস্থানে প্রচুর কর্ডাইটের (গুলির বারুদের ছিটা) অস্তিত্ত থাকারর কথা যা সহযেই সনাক্তযোগ্য। কিন্তু এব্যাপারে ময়নাতদন্তকারি ডাক্তারেরের কোন মন্তব্য নেই।
আমার ধারনা কিছুটা কাছে থেকেই দরবার হলের জানালা দিয়ে গুলি করা হয়েছিল,২৫-৩০ গজ,
(যেখানে সীমান্তে আধা মাইল দুরের শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাই এই দুরত্বকে কাছেই বলা যায়)
লক্ষস্থির করেও গুলি করা হয়নি, প্রশিক্ষন পাওয়া অভিজ্ঞ সৈনিক লক্ষস্থির করা ব্যারেল এতটা নড়ে যেতে পারেনা। কালাশনিকভ সাবমেশিনগান অটোমেটিক মোডে তিন সেকেন্ডে ৪০ রাউন্ডের ম্যাগাজিন খালি হয়ে যায়। ব্যারেল একসেকেন্ড লক্ষস্থির থাকলেও তার বুকে কমপক্ষে ১৫টি গুলি লাগার কথা।
টাইপ 56 কালাশনিকভ সাবমেসিনগান, গুলি 7.62 mm.
জেনারেল সাকিলের দেহে মাত্র ৬টি গুলি লেগেছিল, ৬টি মধ্যে ৪টিই মিস। হাতে, পেটের পাশে ও গলা-থুতনিতে, এসব স্থানে লাগলে 'টার্গেট মিস' বলা যায়। সম্ভবত গুলিবর্ষনকারি সৈনিকের মেসিনগানের ব্যারেলটি উচু থেকে ডানে মেঝের দিকে নেমে আসে, (এলোপাথারি ভাবে) দুটি গুলি ডান বুকে ও মাঝ বুকে লাগে, যার রক্তক্ষরনে তার মৃত্যু হয়েছিল, যদিও এইরুপ আঘাতে যথাসময়ে হাসপাতালে নিতে পারলে বেঁচে যেত। কারন বাম বুকে বা মাথায় কোন গুলি লাগেনি।
এতে কর্নেল কামরুজ্জামানের প্রথমে দিকে গনমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য -
"বিদ্রোহী সৈনিকরা বাহির থেকে এলোপাথারি গুলি করছিল"
এই বক্তব্য সমর্থন করে। লক্ষস্থির করে হত্যার উদ্দ্যেস্যে গুলি করেছে বলা যাচ্ছে না।
পেশাদার আততায়ি সাধারনত টার্গেটকে গুলি করে ভুপাতিত করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় গুলি করে। চলন্ত টার্গেট হলে বাম বুকে, আর সুরক্ষিত বিপদজনক টার্গেট হলে ব্রাষ্টফায়ার।
জিয়াউররহমানের গায়ে দেড়শো গুলি করা হয়েছিল, জিয়ার খুনি সন্দেহে জেঃ মতিয়ুরের মাথায় একটি গুলি করে হিত্যা করা হয়েছিল। মুরগি মিলনকে ২০০০ সালে হত্যা করা হয় আদালতের সামনে এক ঝটিকা হামলায়। আততায়ি ছিল৪-৫ জন, মাথায় ও হৃৎপিন্ডে সহ মোট ৩০ টি গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
মেজর জেনারেল সাকিল সহ ৫৭ জন অফিসারকে সুপরিকল্পিত ভাবে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে? নাকি কিছু হটকারি বিদ্রোহীর এলোপাথারি ছোড়া গুলিতে মারা গেছে?
এ সত্য হয়তো একদিন ঠিকই বেরিয়ে আসবে।
ময়নাতদন্তকারি ডাক্তার সাহেবের রিপোর্টটি আমার কাছে অসম্পুর্ন মনে হয়েছে। কি অস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে বা একাধিক অস্ত্র ব্যাবহার করা হয়েছে কিনা এব্যাপারে কোন মন্তব্য রাখেন নি। সবগুলো গুলি কি একই সময় লেগেছে ? না মাঝে বিরতি ছিল? এসব অনেককিছুই বলা হয়নি। অস্ত্রটি পরে খুজে পাওয়া সম্ভব হয়েছিল কি না, কত নং অস্ত্র? কিছুই বলা হয় নি।
ফোকাস বাংলার তোলা জেনারেল সাকিলের মৃতদেহের ছবিতে সুধু মাঝ বুকের একটি বুলেটের ছিদ্র দেখা যাচ্ছে বুকে আরো দুটি গুলি লাগলেও সেগুলো অস্পষ্ট। গলার পাসে একটি আঘাতের মত, বাকি দেহ অক্ষতই বলা যায়। এতে ময়নাতদন্তকারি ডাক্তারেরের আদালতে দেয়া মন্তব্য "শতাধিক পোষ্টমর্টেম করলেও এত ক্ষতবিক্ষত লাশ নাকি তার চাকুরি জীবনে একটিও দেখেন নি।" আদালতে দাঁড়িয়ে ডাঃ শফিউজ্জামান বলেছিলেন ডিজি মেজর জেনারেল সাকিলের লাশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত ছিল (বাকি মৃতদেহগুলোর চেয়ে!)
ছবির সাথে ডাক্তার সাহেবের মন্তব্যে কোন মিল পেলাম না।
ছবিটি অত্যন্ত বিভৎস বিধায় সরাসরি দিলাম না।
Click This Link
সাকিলের মৃতদেহের ছবি
হুমায়ুন আহাম্মেদের একটি লেখা যা আমার বক্তব্যকে কিছুটা সমর্থন করে
আমার আগের দুটি পোস্ট।
কি ঘটেছিল সেদিন দরবার হলে.?
বিডিআর বিদ্রোহ। উদ্ধার পর্ব, যে কারনে সেনা অভিযান সম্ভব হয়নি