
আমার মনে হয় সেই সংখ্যা খুব একটা বেশি হবে না যারা থানায় জিডি করতে যেয়ে হয়রান, পেরেশান না হয়ে থানা থেকে ফিরে এসেছেন। জিডি হইসে কি না হইসে সেইটা তো পরের কথা। আবার আমাদের মধ্যে এমন মানুষও আছেন যারা থানা পুলিশের কথা শুনলেই হাতে পায়ে পানি চইল্লা আসে, গলা শুকায় যায়। তাই বিপদে পড়লেও থানায় জিডি করতে যাওয়ার চেয়ে গল্লির চিপায় বইসা বিড়ি খাওয়াই উত্তম মনে করে।
আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষের উপস্থিতি রয়েছে যারা বড় বড় সমস্যা, অপরাধ বা ঘটনা গুলোকে গলির চায়ের দোকান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রেখে থাকে। শুধুমাত্র সেই সব মানুষ গুলোর অজ্ঞতা এবং অনিহার কারনে এমন অনেক সমস্যা, অপরাধ বা ঘটনা আছে যেগুলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট অবশ্যই পৌঁছানো উচিৎ ছিল কিন্তু পৌছায় নাই। এই সমস্যা, অপরাধ বা ঘটনা গুলোকে তুচ্ছ ব্যপার ভাবে সমাজের ভিতরে চেপে রাখার কারনে একদিন যখন বেক ফায়ারের মত ঘটনা ঘটে তখন সকল দায় গিয়ে বর্তায় পুলিশের উপর। সুতরাং কোন অপরাধ বা ঘটনাকে ছোট বা তুচ্ছ ভেবে বসে না থেকে যথাশিঘ্র সম্ভব পুলিশকে অথবা নিকটস্থ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করুন এবং যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশকে সহায়তা করুন।
এখন আসুন আপনাদের জিডি ভীতি দূর করার চেষ্টা করি। এই পোষ্টে জিডি কি? কোথায় করতে হয়? কেন করতে হয়? কি ভাবে করতে হয়? এর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেয়া হল। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
জিডি কি?
জিডি শব্দটি জেনারেল ডায়েরীর সংক্ষিপ্ত রুপ। প্রতিটি থানায় এবং ফাঁড়িতে একটি ডায়েরীতে ২৪ ঘন্টার খবর রেকর্ড করা হয়। প্রতিদিন সকাল আটটায় ডায়েরী খুলে পরের দিন সকাল আটটায় বন্ধ করা হয়। অর্থাৎ কার্যত এটি কখনই বন্ধ হয় না।
এই ডায়েরীতে থানার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন আসামী কোর্টে চালান দেয়া, এলাকার বিভিন্ন তথ্য, থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগমন ও প্রস্থানের তথ্য ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।
সাধারণ মানুষের কাছে জিডির গুরুত্বঃ
সাধারণ মানুষের কাছে জিডির গুরুত্ব ভিন্ন। কোন থানায় মামলাযোগ্য নয় এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ থানায় জিডি করে থাকেন। আবার কাউকে ভয় ভীতি দেখানো হলে বা অন্য কোন কারণে যদি তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, কিংবা কোন ধরনের অপরাধের আশঙ্কা করেন তাহলেও তিনি জিডি করতে পারেন। জিডি করার পর পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রয়োজনবোধে তদন্ত করা, নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও জিডির বিষয়টি মামলাযোগ্য হলে পুলিশ মামলা করে থাকে। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য জিডি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আদালতেও জিডিকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জিডি করাঃ
থানার ডিউটি অফিসার জিডি নথিভুক্ত করেন। এক্ষেত্রে তিনি একটি ডায়েরীতে জিডির নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। জিডির দুটি কপি করা হয়। একটি থানায় সংরক্ষণ করা হয় এবং অন্যটিতে জিডির নম্বর লিখে প্রয়োজনীয় সাক্ষর ও সীলমোহর দেয়া হয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। অভিযোগকারী নিজে জিডি লিখতে পারেন, আবার প্রয়োজনে থানার কর্মকর্তাও লিখে দিয়ে থাকেন।
প্রতিটি জিডির বিপরীতে একটি নম্বর দেয়া হয়, ফলে কোন অবৈধ প্রক্রিয়া মাধ্যমে কেউ আগের তারিখ দেখিয়ে জিডি করতে পারেন না।
অনলাইন জিডিঃ
আবার পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেবার প্রয়োজন নেই এমন ক্ষেত্রে যেমন পাসপোর্ট হারানো, বাখাটে বা মাদক সেবীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান বা এজাতীয় ক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করা যেতে পারেন বা সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরে ফ্যাক্স বা ই-মেইল করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করার পর ই-মেইল বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডি নম্বরটি জিডিকারীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ই-মেইল: bangladesh@police.gov.bd.
ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৯৫৫৮৮১৮
অনলাইনে জিডি করার জন্য www.police.gov.bd সাইটে গিয়ে ‘Citizens help request’ –এ ক্লিক করতে হবে।
হারানো বিষয়ের জিডিঃ
মোবাইল ফোনের সিম, পরীক্ষার সার্টিফিকেট, জমির দলিল প্রভৃতি হারিয়ে গেলে ঐ সব কাগজপত্র পুনরায় তুলতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হারানো সংবাদের জিডি চেয়ে থাকে, তাই ঐসব ক্ষেত্রে হারানো সংবাদের জিডি করে সেই জিডি নম্বরসহ কর্তৃপক্ষরে কাছে আবেদন করতে হয়।
সার্টিফিকেট হারানোর একটি জিডির নমুনা দেখুন।
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
...................... থানা
ডিএমপি, ঢাকা।
বিষয়: এসএসসি সার্টিফিকেট হারানো সংবাদ ডায়েরীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন।
মহোদয়,
আমি নিম্ন সাক্ষরকারী আপনার থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে জানাচ্ছি যে, আমার এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট আজ সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় ঢাকা কলেজের পাশের রাস্তার একটি ফটোকপি করার দোকান থেকে হারিয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় হারানোর বিষয়টি ডায়েরীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
সার্টিফিকেটের বিবরণ:
পরীক্ষার নাম...শিক্ষাবর্ষ...রেজিষ্ট্রেশন নং... রোল নং...
বিনীত নিবেদক
...............................
ঠিকানাঃ ..................
মোবাইলঃ ০১...............
।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>।>
Citizens Help request (CHR) বা ‘ও পুলিশ, বন্ধু আমার (বন্ধু পুলিশ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণ জরুরী নয় বা তাৎক্ষনিক সাড়ার প্রয়োজন নেই, এমন সব বিষয়ে সাধারণ ডায়েরী বা জিডি করার অনুরোধসহ আইন সহায়তা লাভ করতে পারবেন। জরুরী নয় বা তাৎক্ষনিক সাড়ার প্রয়োজন নেই, এমন সব বিষয়ে প্রবাসীগণও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকাস্থ প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক-এর সাথে যোগাযোগের জন্য এ ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবেন। উপরন্তু প্রবাসীগণ বাংলাদেশ পুলিশের প্রবাসী সহায়তা সেল-এর সাথে যোগাযোগের জন্য উপরে বর্ণিত ই-মেইল অথবা ফেক্স যে কোন একটি মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন।
জরুরী নয়, এমন কিছু বিষয়ের উদাহরণ হচ্ছেঃ
১/ পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র, ব্যাংকের চেকবই, সার্টিফিকেট বা অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারানো।
২/ বখাটে, মাদক সেবী বা অপরাধীদের আড্ডাস্থল বা অন্য কোন অবৈধ সমাবেশ সম্পর্কে তথ্য (তাৎক্ষনিক সাড়ার প্রয়োজন হলে মোবাইল বা অন্য কোন মাধ্যমে সরাসরি ডিউটি অফিসার বা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হবে)।
৩/ ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি, যখন নিরাপদ অবস্থানে বা তার আবাসস্থলে আছেন (ছিনতাইকারী গ্রেফতার বা মালামাল উদ্ধারের আশায় জরুরী বা তাৎক্ষনিক পুলিশী সাড়ার প্রয়োজন হলে ডিউটি অফিসার বা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলতে হবে।
৪/ জনসাধারণের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা আছে এমন কোন অবৈধ সমাবেশ সম্পর্কে আগাম তথ্য।
৫/ গৃহ পারিবারিক, নিয়োগ দারোয়ান, কেয়ারটেকার, নৈশপ্রহরী নিয়োগ (বা পলায়ন) সম্পর্কে তথ্য।
৬/ নতুন বা পুরোনো ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য।
প্রাথমিকভাবে পাইলট হিসেবে নিম্নবর্নিত থানা/ইউনিটসমূহ থেকে বা ‘বন্ধু পুলিশ’ বা ‘ CHR’-এর সেবা দেয়া হবে।
>> ঢাকা মহানগর-এলাকার সকল থানা
>> (কেবল প্রবাসীদের জন্য) প্রবাসী সহায়তা সেল, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা।
>> নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, PHQ
>> মানব পাচার প্রতিরোধ সেল, PHQ
জনসাধারণের ভাল সাড়া পাওয়া গেলে এবং কোনরূপ পদ্ধতিগত জটিলতা দেখা না গেলে পর্যায়ক্রমে তা অধিক সংখ্যাক থানায় বিস্তৃত করা হবে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
আমার পোষ্টটি আপনাদের ভালো লাগলে ফেসবুকের এই পেজে একটি লাইক দিবেন। এই মর্মে আপনাদের অবগত করা যাচ্ছে যে, ফেসবুক লাইকের আবেদন কোন ব্যক্তিগত বা আর্থিক লাভের জন্য করা হয় নাই। নিতান্তই আমার পোষ্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ইচ্ছে যদি কারো থাকে তবে তিনি একটি ফেসবুক লাইক দেয়ার মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
(বিদ্রঃ লাইক দেয়া না দেয়া আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার; এই ব্যাপারে কোনরূপ কটু মন্তব্য না করার জন্য লেখক আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছেন।)
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:০৯